“এইতো সেদিন ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখলাম!” আপনার মত অনেকেই এমনটাই ভাবছেন! কিন্তু যেটা সত্য সেটা হলো “বিশ্বকাপ এসে গেছে!” হ্যাঁ! দেখতে দেখতে কেটে গেছে 8 বছর । আর আপনার ড্রয়িং রুমের হঠাৎ হঠাৎ চালু হওয়া টিভিটাও প্রস্তুত হচ্ছে পুতিনের দেশের বিশ্বকাপের উত্তেজনার পারদটা আপনার মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আরতো মাত্র একটা মাস!!
যাইহোক, মস্কোর স্টেট ক্রেমলিন প্যালেসে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হলো। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সর্বকালের সেরা দুই কিংবদন্তি পেলে, ম্যারাডোনা এবং ইংলিশ কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকারসহ আরো অনেকেই। এসব আপনাদের সবারই জানা। তাই ঘ্যান-ঘ্যানানি বাদ দিয়ে চলুন দেখেনিই রাশিয়া বিশ্বকাপ এর কোন গ্রুপে কোন কোন দল একে অন্যের মোকাবেলা করতে যাচ্ছে।

Group ‘এ’: এই গ্রুপের দলগুলো হলো “রাশিয়া, সৌদি আরব, মিসর, উরুগুয়ে”।
নি:সন্দেহে উরুগুয়ে এই গ্রুপের ফেভারিট। স্বাগতিক রাশিয়া ছাড়া দু’বারের চ্যাম্পিয়নদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে বাকি দলগুলোর “মিরাকল” টাইপের কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলেই মনে হচ্ছে! এই গ্রুপে সুয়ারেজ-কাভানির পরই সবচাইতে আলোচিত তারকা মিশরের “মুহম্মদ সালাহ”।

Group ‘বি’: “পর্তুগাল, স্পেন, মরক্কো, ইরান”
পর্তুগাল, স্পেন, মরক্কো, ইরান” নিয়ে গড়া গ্রুপ ‘বি’ এর ফেভারিট, স্পেন। তবে রামোস,বুস্কেস্টস,পিকেদের একটু আলাদা করে নজর রাখতে হবে সদ্য ইউরোজয়ী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নানিদের পর্তুগালের দিকে। মরক্কো এবং গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে চমক দেখানো ইরানকেও খাটো করে দেখার কিছু নেই। মরক্কো কোচ হার্ভে রেনার্ড গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতে ইরানের ওপর পাখির চোখ করেছেন। তিনিতো বলেই দিলেন, “ইরানের সাথে প্রথম ম্যাচটা হবে ভাগ্য নির্ধারনী।” ইরানও হয়তো তেমনটাই ভাবছে!

Group সি: এই গ্রুপে আছে “ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পেরু, ডেনমার্ক”।
এই গ্রুপ নিয়ে কিছু বলার আগে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির কথাটা শোনা যাক, “কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এখানে কাউকে বিচার করতে যাওয়া ঠিক হবে না। প্রতিপক্ষকে সহজভাবে দেখে বিশ্বকাপে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটা হবে দারুণ এক ভুল।”—ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নোয়েল লে গ্রায়েত।
লে গ্রায়েত যাই বলুন না কেনো আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সহজেই পার পেয়ে যাবে ১৯৯৮ এর চ্যাম্পিয়নরা। সাম্প্রতিক ফর্ম আর শক্তিমত্তার বিচারে শুধু এই গ্রুপেই নয়, আসরেরও অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্স। দলে মোটামোটি “অটোচয়েস” হিসেবে থাকছেন ম্যান ইউ তারকা পল পগবা, পিএসজি তারকা এম্বাপ্পে, বায়ার্ন মিউনিখ তারকা রিবেরি ও আর্সেনালের ওলিভার জিরুডসহ ইউরোপ মাতানো আরো অনেকেই।

Group ডি: এই গ্রুপে আছে “আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া, আইসল্যান্ড, নাইজেরিয়া”।
২৮ বছর ধরে শিরোপাহীনতায় ভোগা আলবিসেলেস্তেরা মুখিয়ে আছে মেসির হাত ধরে এবার শিরোপাটা ঘরে তুলতে। অনেকের মতে এটাই বিশ্বকাপের সবচেয়ে কঠিন গ্রুপ। তবুও নি:সন্দেহে আর্জেন্টিনা এই গ্রুপের ফেভারিট। এবারই প্রথম বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া আইসল্যান্ড দলের অধিনায়ক অ্যারন গুনারসন বলেন, “এটা অবিশ্বাস্যরকমের কঠিন গ্রুপ। দারুণ এক কঠিন অভিজ্ঞতা হবে”।

Group “ই”: “ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা, সার্বিয়া”
ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা, সার্বিয়া” নিয়ে গড়া এই গ্রুপে নি:সন্দেহে ফেভারিট ব্রাজিল। গত বিশ্বকাপের দু:স্মৃতি ভুলে এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই লড়বে আসরের “হট ফেভারিট” নেইমার দ্য জুনিয়রের ব্রাজিল।

Group “এফ”: এই গ্রুপে আছে “জার্মানি, মেক্সিকো, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া”।
এই গ্রুপের এবং আসরের অন্যতম ফেভারিট দল হলো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন “জার্মানি”। ওজিল, হামেলস, নুয়্যারদের নিয়ে গড়া জোয়াকিম লো’র দল চাইবে টানা দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলতে।
তবে দক্ষিন কোরিয়া স্ট্রাইকার সং হিউং-মিন ভাবছে ‘অন্যকিছু’।
তিনি বলেন, “বলটা দেখতে গোলাকার। কঠোর পরিশ্রম করে উন্নতি করতে পারলে আমার মনে হয় ২০১৪ বিশ্বকাপের অশ্রু রূপান্তরিত হবে হাসিতে”। এতকিছুর পরেও সবার চোখ থাকবে ইব্রাহিমোভিচের সুইডেনের উপর। চল্লিশ পেরোন এই সুইডিশ তারকা নিজের শেষ বিশ্বকাপটা স্মরনীয় করে রাখতে চাইবেন।

Group জি: এই গ্রুপে আছে “বেলজিয়াম, পানামা, তিউনিসিয়া, ইংল্যান্ড” এর মত দল।
এই গ্রুপে ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম ফেভারিট। তবে পানামা এবং তিউনিশিয়াও চাইবে সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে খেলার। অঘটন ঘটাতে পারলেই যে হ্যারিক্যান কিংবা ডিব্রুইন, হ্যাজার্দেরকে পেছনে ফেলে তারা দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করতে পারবে! তবে এটা আপাতদৃষ্টি ‘অসম্ভব’ বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু একটা কথা আছেনা, “impossible is nothing”!

Group এইচ: “পোল্যান্ড, সেনেগাল, কলম্বিয়া, জাপান”!!!
নামগুলো শুনেই বুঝতে পারছেন এই গ্রুপটা হচ্ছে আসরের সহজতম গ্রুপ।
এই গ্রুপের ফেভারিট হামেস রদ্রগেজের কলম্বিয়া। কলম্বিয়ার কোচের কথা শুনে তাকে খুশিতে ‘গদগদ’ই মনে হলো, “একটা ভারসাম্যপূর্ণ গ্রুপ চেয়েছিলাম, সেটা পেয়েছি। বিশ্বকাপে আসলে অতীত কোনো বিষয় নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, কলম্বিয়া খেলছে।” – কলম্বিয়ার কোচ হোসে প্যাকারম্যান।
এই হলো আপাতত বিশ্বকাপ সমাচার। বাকিটা ছয়মাস পরে দেখা যাবে। তবে আমার মত অনেকেই হয়তো ভাবছেন, “ইশ! নেদারল্যান্ডস, ওয়েলস, ইতালি যদি বিশ্বকাপে থাকতো!”
তথ্যসূত্র: গোল ডট কম, সকারনেট।