১৯২৬ সালে ভারতে স্বনামধন্য পত্রিকা “The Stateman” এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সাড়া পড়ে যায় সমগ্র ভারতবর্ষের মনোবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানী মহলে।
ঘটনাটির উৎপত্তি ১৯২০ সালে। কিন্তু দীর্ঘ ৬ বছর পর ১৯২৬ সালে “The Stateman” পত্রিকার মাধ্যমে সেটি সবার গোচরে আনেন অমৃতলাল সিং নামের এক অনাথাশ্রমের পরিচালক।
১৯২০ সালের ৯ অক্টোবর উত্তর ভারতের এক জঙ্গলে ভাল্লুকের গুহায় ২টি মানব শিশু খুঁজে পায় এক ব্যক্তি। দুইটি শিশুই ছিল মেয়ে। একজনের বয়স ৮ বছর, আরেকজনের বয়স ২ বছর। ঐ ব্যক্তি বাচ্চাদুটিকে নিয়ে কোন উপায়ন্তর না দেখে, অবশেষে মেদেনীপুর জেলার গোদামুড়ি গ্রামে অমৃতলালসিং এর অনাথাশ্রমে দিয়ে যান। ভাল্লুকের গুহা থেকে আনা মেয়ে দুটির নাম রাখেন অমৃতলাল সিং নিজেই। ৮ বছর বয়সী বড় মেয়েটার নাম রাখেন কমলা এবং ২ বছর বয়সী ছোট মেয়েটার নাম রাখেন অমলা।
বাচ্চা দুটি দীর্ঘ দিন ভাল্লুকের গুহায় থাকার ফলে তাদের আচার-আচরন সম্পূর্ন ভাল্লুকের মত হয়ে যায়। অমৃতলাল সিং অমলা আর কমলাকে পাওয়ার পর ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে ডায়েরি লেখা শুরু করেন। তার ডায়েরির শিরোনাম দেন, “Day after day during the life of two wolf girls”
তিনি তার ডায়েরিতে অমলা আর কমলার অদ্ভুদ আচরনের বর্ননা দিয়ে গেছেন।তাতে লেখা ছিল –
“অমলা এবং কমলা দিনের বেলা ঘুমায় এবং সারারাত ছটফট করে। রাত হলেই তীব্র স্বরে গোঙাতে থাকে। রাত বাড়ার সাথে সাথেই তাদের গোঙানীর মাত্রা বেড়ে যায়। তাদেরকে কোন পোষাক পড়ালে তা খুলে ফেলে। তারা দুজনেই জন্তুদের মত উলঙ্গ থাকতে পছন্দ করে। সবসময় কেমন একটা অদ্ভুদ বন্য আচরন করে। অনাথাশ্রমের আশেপাশে কোন মুরগী দেখলেই তা তারা খপ করে বেশ সুকৌশলে ধরে ফেলে। একবার অনাথাশ্রমের আঙিনায় মুরগীর কিছু অন্ত্র এবং নাড়িভুড়ি পড়েছিল। অমলা এবং কমলা সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে কাঁচা কাঁচাই খেয়ে ফেলে। এমনকি তাদের আচরনে সবসময় ভাল্লুক এবং নেকড়ের বৈশিষ্ট প্রকাশ পেত। আস্তে আস্তে অবশ্য তাদেরকে মানুষের ভাষা এবং আচার আচরন শেখানো হয়েছিল।একসময় তারা কিছু কিছু রপ্তও করে ফেলেছিল।”
এরকম আরো অনেক কিছু অমৃতলাল সিং তার ডায়েরিতে লিখে গেছেন।

দুই বছর পর ১৯২১ সালে অমলা Kidney Infection এ মারা যায়। এরপর ১৯২৬ সালে কলকাতার “The Stateman” পত্রিকায় অমলা এবং কমলার কাহিনী প্রকাশ পেলে ভারতের মনোবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানী মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়।তারা কমলাকে এবং তার আচরন বৈশিষ্ট নিয়ে গবেষনা করতে থাকে।
কমলার উপর গবেষনা করে তারা পরিবেশের সাথে মানুষের বৈশিষ্ট এবং আচরন সম্পর্কে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে। ভারতীয় মনোবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানীদের ধারনা আরও পোক্ত হয় যে, শুধু জেনেটিক্স ( Genetics) ই মানুষের আচরন তৈরীতে প্রভাব ফেলেনা। পরিবেশ এ ক্ষেত্রে অন্যতম মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
৮ বছর বেঁচে থাকার পর ১৯২৯ সালে কমলাও যক্ষ্মা (Tuberculosis) রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। পরিবেশের দ্বারা মানুষের আচরন এবং বৈশিষ্ট ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, অমলা এবং কমলার কাহিনী তারই বাস্তব উদাহরন।
আমরা সাধারনত সিনেমায় এরকম কাহিনী দেখে থাকি, কিংবা রোমাঞ্চকর গল্প হিসেবে শুনে থাকি অন্য কারো কাছে। কিন্তু অমলা এবং কমলার কাহিনী কোন গল্প নয়, সম্পূর্নই বাস্তব।
এরকম ঘটনা যে একটা ঘটেছে তা না। এরকম অনেক অনেক ঘটনা আছে। তেমনই আরেকটি ঘটনা হচ্ছে কলম্বিয়ান নাগরিক মারিনা চ্যাপম্যানের।
মারিনা চ্যাপম্যানের কথাও হয়তো এর আগে অনেকে শুনে থাকবেন। যাকে কিনা ১৯৫৪ সালে বাড়ি থেকে চুরি করা হয়েছিল। একদল চোর তাকে নিয়ে চুরি করে পালানোর সময় তাড়া খায় পুলিশের। ফলে ৪ বছরের বাচ্চাটাকে জঙ্গলে ফেলেই সটকে পড়ে চোরগুলো। কিন্তু বাচ্চা মারিনার কান্না শুনে এগিয়ে আসে একদল কাপুচিন বানর। বানরগুলো মারিনাকে তাদের আবাসস্থলে নিয়ে যায়। লালনপালন করে দীর্ঘ ৫ বছর।এই ৫ বছরে শিশু মারিনা কোন মানুষের দেখা পায় নি, কিংবা শুনেওনি কোন সভ্য মানুষের মুখের ভাষা।
এরপর একদল শিকারী বনে শিকার করতে গিয়ে দেখা পায় ৯ বছরের বালিকা চ্যাপম্যানের। শিকারীরা তাকে উদ্ধার করে একটি পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়।
কয়েকদিন পর সে অনেক কষ্টে পতিতালয় থেকে পালাতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন ঘটনা চক্রের মধ্য দিয়ে ফিরে আসে সভ্য দুনিয়া কলম্বিয়াতে। সেখানে এসেও সে পড়ে এক মহামুসকিলে। কারন সে সারাক্ষন চার হাতপায়ে ভর দিয়ে হাটে, এমন কি বানরের মত শব্দ করে। তার আচরনে বানরের বৈশিষ্ট প্রকাশ পেতে থাকে। এতদিনে কোন ভাষা সে শেখেনি।
তবে সভ্য মানুষের সংস্পর্শে এসে আস্তে আস্তে ভাষা এবং আচার-ব্যবহারও রপ্ত করে ফেলে। কিন্তু এজন্য তাকে অনেক মানসিক চিকিৎসা নিতে হয় । মনোবিজ্ঞানীদের দ্বারা কাউন্সিলিং করাতে হয়েছে অনেক। ম্যারিনা চ্যাপম্যান এখন বেশসুখে- শান্তিতেই আছে।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবিহীন ভাবে সে বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু মানুষের মত বেঁচে থাকতে পারেনা। সে যে সংস্কৃতির ভিতরে থাকে সেই সংস্কৃতিকেই আকড়ে ধরে বেঁচে থাকে।মানুষ যেমন প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, তেমনি সেই প্রবৃত্তিকে আবার নিয়ন্ত্রন করে তার সংস্কৃতি (সে যে সংস্কৃতির মধ্যে অবস্থান করছে)।
সুতরাং উপরের দুইটি ঘটনা থেকে এটি প্রমানিত হয় যে, শুধুমাত্র জেনেটিক্স (Genetics) নয়, বরং সমাজ এবং মানুষের অবস্থানরত পরিবেশ দ্বারা তার আচরন এবং মনস্তত্ত্ব নিয়ন্ত্রিত হয়।
তথ্যসূত্রঃ
★Wikipedia
★সমাজবিজ্ঞান সমীক্ষণ – ড. এ কে নাজমুল করিম।
dutasteride drug flomax price oral ondansetron 8mg
levaquin online generic levaquin 250mg
order levaquin without prescription purchase levofloxacin without prescription