চিন্তার ইঞ্জিনঘরে…

0

ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। এমন সময় বিপরীত দিক থেকে আসা লোকটির দিকে একবার তাকিয়ে, পাশ কেটে চলে যাবার সময় আপনার মনে হল লোকটা খুবই রাগী। কিন্তু মজার বিষয় হল কেউ কিন্তু আপনাকে বলে দেয়নি সে অনেক রাগী। আবার সেই লোকটিও কিন্তু আপনাকে ডেকে বলেনি, ভাই আমি কিন্তু অনেক রাগী। তাহলে? কিভাবে বুঝলেন??

অথবা ব্যাঙ্কে গেছেন। একাউন্ট খুলবেন। কাজের ফাকে অফিসার এক ঝলক দেখে নিল আপনার দিকে। ১ বা ২ সেকেন্ড। হ্যাঁ, এই অল্প সময়ে আপনার সম্পর্কে তার মস্তিষ্কে একটা ছবি তৈরি করে যায়।

ভাবছেন, এটা আবার কি? কিভাবে তৈরি হয়?

অনেকেই আবার হেসে উড়িয়ে দিতে পারেন এমন সব আবার হয় নাকি?

হয় বৈকি। এটাকে বলে র‍্যাপিড কগনিশন ( এটার বাংলা করলাম না, কারণ অনেক ইংলিশ শব্দের এমন জবড়জং বাংলা হয় যে সেদিকে না যাওয়াই ভাল।)

মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী বেশ জটিল
মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী বেশ জটিল Source: :www.colourbox.com

আসুন শুরু থেকে শুরু করি।

বড় করে দেখতে গেলে আমাদের চিন্তার দুইটা স্তর রয়েছে। সচেতন (conscious) আর একটা অবচেতন (subconscious) মন। আমরা যখন সজাগ ভাবে চিন্তা করি তখন এই সচেতন মনকে কাজে লাগাই। যেমন কাউকে ১০০ টাকা দিতে হবে, আবার এই অঙ্ক টা করতে হবে এরকম ইচ্ছা পূর্বক চিন্তাগুলো কাজ করে সচেতন মনে।

আবার হঠাৎ একটা ফুল এর দিকে চোখ যেতেই মনে হল ফুলটা খুব সুন্দর। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মাথায় কাজ করে এই চিন্তাটা। এটাই অবচেতন মনের চিন্তা। আমাদের মনে  বেশিরভাগ সময়ই কাজ করে সচেতন অংশ। খুব অল্প সময়ে কাজ করে অবচেতন অংশ। আর আমাদের এই অবচেতন মনই আমাদের র‍্যপিড কগনিশন এর জায়গা।

অবচেতন মনে লুকিয়ে রয়েছে অনেক রহস্য
অবচেতন মনে লুকিয়ে রয়েছে অনেক রহস্য
Source: :mattselley.com

সহজ কথায় যদি বলি,  র‍্যাপিড কগনিশন বা দ্রুত চিন্তন হল আমাদের মস্তিষকের এমন এক ধরনের প্রক্রিয়া যা অপর মানুষ বা বস্তু সম্পর্কে খুব স্বল্পতম সময়ে আমাদের অবচেতন মনে একটা ইম্প্রেশন বা প্রতিচ্ছবি তৈরি করে। শুধু তাই নয় এটা আমাদের দ্রুত কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতেও সাহায্য করে। পরিবর্তন লক্ষ করা যায় তার আচরণেও। অথচ সে হয়ত নিজেও সচেতন ভাবে এই আচরণ করছে না।

আচ্ছা এসব আমাদের ব্রেইনের কোথায় হয়?

আমাদের মস্তিষ্কের কোথায় এই সচেতন আর অবচেতন অংশ অবস্থিত এটা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। তবে অনেকের মতে সচেতন (conscious) অংশটি মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল (frontal) এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (prefrontal cortex) অঞ্চলে অবস্থিত। এখান থেকে সে আমাদের চারপাশের পরিবেশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং যুক্তি তর্ক, পরিকল্পনা ইত্যাদি সচেতন কাজ করে থাকে।

অবচেতন (unconscious) মনের বেশিরভাগ অংশ হাইপোথ্যালামাসে (hypothalamus) অবস্থিত। এখান থেকে সে আমাদের সব অনৈচ্ছিক কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে যেমন হাতের নড়াচড়া, খাদ্যহজম। এছাড়া অবচেতন মন আমাদের সকল মেমরি এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে রাখে। সচেতন আর অবচেতন মন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগও রক্ষা করে।

আচ্ছা আমরা কি দেখে এই ধরণের ইম্প্রেশন তৈরি করি?

প্রশ্ন টা সহজে করে ফেললেও উত্তরটা বেশ জটিল।

স্বীকার না করে উপায় নেই, কি ধরণের ইম্প্রেশন তৈরি হবে এটা অনেকাংশে আমার নিজের উপর নির্ভর করে। যেমন, মানসিক অবস্থা, পূর্ব অভিজ্ঞতা। যখন প্রচণ্ড রাগ হয় দেখবেন আশেপাশের সব মানুষ কেই তখন ক্ষতিকর মনে হতে থাকে, কোন কারণ ছাড়াই। আবার টুপি পরা সব মানুষকেই মনে হবে নামাজী এবং পরহেজগার। কারণ আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা তাই বলে।

অবচেতন মন ৯০ ভাগ এলাকা দখল করে থাকে
অবচেতন মন ৯০ ভাগ এলাকা দখল করে থাকে Source: http://www.fisherslandinghypnotherapy.com

তবে অবশ্যই কিছু অন্যান্য বিষয় তো রয়েছেই। যেমন এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে শারীরিক গঠন, পোশাক পরিচ্ছদ,  তার চলাফেরা, কথা বার্তার ধরণ, অঙ্গভঙ্গি  ইত্যাদি। উঁচু লম্বা গঠন প্রকৃতি এবং  সুন্দর পরিপাটি মানুষের প্রতি স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের একটু সমীহ কাজ করে।

যেমন প্রথম উদাহরণের ক্ষেত্রে সামনের মানুষকে দেখে মনে হয়েছিল সে অনেক রাগী। কারণ তার অঙ্গভঙ্গি, মুখের ভাবই বলে দিচ্ছিল সে অনেক রাগের মধ্যেই আছে।

কিভাবে তৈরি হল এই চিন্তা:

মানুষের এই চিন্তার উৎপত্তি সাধারণত কিছুটা নিয়মনীতি ও সামাজিক প্রথা থেকে এসেছে।  প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ সুঠাম দেহী বলিষ্ঠ কণ্ঠের মানুষকে নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাই নেতার কথা চিন্তা করলেই আপনার অবচেতন মনে লম্বা বলিষ্ঠ একজন মানুষের চিত্র ফুটে ওঠে। আবার কাউকে কোর্ট টাই পরে থাকতে দেখলে মনে হবে লোকটা বড় অফিসার। কেউ বলে নি লোকটা বড় অফিসার কারণ আপনি দীর্ঘদিন ধরে জানেন আপনার আশে পাশে বড় অফিসাররা কোর্ট টাই পরে থাকে। আবার এর ব্যত্যয় কিন্তু আপনি সহজে মেনে নিতে পারবেন না। যেমন যদি দেখেন যে একজন কোট-টাই পরা মানুষ চুলে গোলাপি রঙ করে আছে,  তবে তাকে অবশ্যই বড় অফিসার মনে হবে না আপনার। কিন্তু যদি দুই মিনিট পরে সে লোকটা তাকে সেই অফিসের সবচেয়ে বড় অফিসার হিসেবে পরিচয় দেয়, তাহলে তাকে সচেতন মনে হয়ত মেনে নিতে পারবেন কিন্তু মনের কোথায় যেন একটা খুত থেকে যাবে কারণ আপনার অবচেতন মন এটা দেখে পরিচিত না।

সচেতন মনের এলাকা সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানলেও আজও অনাবিষ্কৃত থেকে গেছে অবচেতন মনের অনেক কিছু। বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা করে যাচ্ছেন কিভাবে কাজ করে এই অবচেতন মন,  কিভাবে তৈরি হয় আমাদের এই র‍্যাপিড কগনিশন? যদি আগ্রহ থাকে আপনিও ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন অবচেতন মনের এই রঙ্গিন দুনিয়াতে। কে জানে, আপনার হাতেই হয়ত হবে এর অনেক রহস্যের সমাধান।

Source Featured Image
Leave A Reply

Your email address will not be published.

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More