রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮ – আর্জেন্টিনাঃ মেসিরা কি পারবে ৩২ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে?

1

বিশ্বকাপে বরাবরই জনপ্রিয় দল “লা আলবিসেলেস্তেরা”। বড় তারকাদের নিয়ে গড়া দল নিয়ে হট ফেভারিটের তকমা লাগিয়ে আর্জেন্টিনা দল প্রায় প্রতিটি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করে আসছে। ব্যতিক্রম শুধু ডিয়েগো ম্যারাডোনার ১৯৮৬ ও ১৯৯০ সালের আর্জেন্টিনা দল। দলটি এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলেছে ৫ বার। কিন্ত ট্রফি এসেছে মাত্র দু’টি! “আর্জেন্টিনা” নামটার সাথে যা সত্যিই বেমানান। যাইহোক, আজ বলব ৩০ বছর ধরে বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়া সেই বড় দল আর্জেন্টিনা র আসন্ন বিশ্বকাপে ট্রফি জেতার সম্ভাবনা কতটুকু তা নিয়ে। সাথে সম্ভাব্য স্কোয়াডটাও দেখে নেয়া যাবে।

আর্জেন্টিনার কোচ:

প্রথমেই আসি কোচের কথায়। বর্তমানে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ “হোর্হে সাম্পাওলি”। সাম্পাওলির মূল ট্যাকটিক্স হাইপ্রেসিং ফুটবল। তাঁর অধীনে ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকায় চিলি এই আর্জেন্টিনাকে হারিয়েই কোপা আমেরিকা শিরোপা জেতে। ২০১৬-১৭ সিজনে সেভিয়ার কোচ ছিলেন এই মাস্টার-মাইন্ড কোচ। তবে তাঁর অধীনে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে ধুঁকতে ধুঁকতে উঠলেও বিশ্বকাপে ভালো কিছুর প্রত্যয় নিয়েই রাশিয়া যাবে আর্জেন্টিনা দল, আপাতত সে আশাই করছে আর্জেন্টিনা সমর্থকগোষ্ঠী। সাম্পাওলি মূলত দলকে ৩-৪-৩ ফর্মেশনে খেলাতে পছন্দ করেন। তবে ম্যাচের অবস্থা বুঝে ফর্মেশন পালটে ৪-২-৩-১ কিংবা ৪-৩-৩ এও খেলাতে দেখা যায় টাক মাথার জাঁদরেল এই কোচকে।

হোর্হে সাম্পাওলি
হোর্হে সাম্পাওলি; Source:

আর্জেন্টিনার স্কোয়াড:

আর্জেন্টিনার চূড়ান্ত বিশ্বকাপ স্কোয়াড এখনো ঘোষিত হয়নি। সময় নিচ্ছেন কোচ, করছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আর্জেন্টিনা দলের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষনার আগে তা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। কারন প্রায় প্রত্যেকবারই দেখা যায় কোচেরা উদ্ভট সব সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের দুই-একজন বড় তারকাকে ছাঁটাই করে দেন। এবারো তাঁর ব্যতিক্রম হতে হবে কিনা তা এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। ফর্মে থাকা ইন্টারমিলান তারকা “মাউরো ইকার্দি” যে এবার দলে চান্স পাবেন না, তা এক প্রকার অনুমেয়ই ছিলো। কিন্তু ইকার্দিকে ৩৫ সদস্যের দলে রাখা “অন্য কিছুরই” ইঙ্গিত দিচ্ছে।  এছাড়া বাকি সব মোটামোটি ঠিক আছে। তবুও বলা যায়না কিছুই নিশ্চিত করে। শত হোক, আর্জেন্টিনার কোচ বলে কথা!

আর্জেন্টিনা
Source: Mundo Albiceleste

যাইহোক, এবার চলুন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার স্কোয়াড  কেমন হতে পারে, কিংবা কারাই বা হতে পারেন তুরুপের তাস, তার একটা আন্দাজ করে ফেলি।

আক্রমণভাগ:

লিওনেল আন্দ্রেস মেসি:

লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনা
লিওনেল মেসি Source:

আর্জেন্টিনার নাম আসার সাথে সাথেই লিওনেল মেসির নামটা চলে আসে। এটা নিশ্চিত যে লিওনেল মেসিই হবেন ২০১৮ বিশ্বকাপের আক্রমনভাগের মূল মন্ত্র। বাঁচাইপর্বে ধুঁকতে থাকা আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই তুলেছেন বিশ্বকাপে, করেছেন ৭ গোল। শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে প্রথমে পিছিয়ে পড়া আর্জেন্টিনাকে হ্যাট্রিক করে নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপ-মঞ্চে। “গতি, ড্রিবলিং, ডিফেন্স-ছেঁড়া নিখুঁত পাস, দুরপাল্লার শট, গোল-স্কোরিং ক্ষমতা, এসিস্ট করার ক্ষমতা, প্লে-মেকিং এবিলিটি” এসবের কি নেই তাঁর মধ্যে?!  তাইতো আকাশী-সাদা সমর্থকেরা মেসির ঘাড়ে চড়েই বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখছে। দলের বাকি তারকাদের দেশের জার্সিতে পারফর্ম্যান্সের যে অবস্থা, তাতে অবশ্য ফুটবল যে একটা দলীয় খেলা তা ভূলতে বসেছে আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা। তাইতো তারা ভরসা রাখছে আর্জেন্টাইন কাপ্তানের উপর। মেসিও আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ৩৪ গোল করে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শ্যু টা নিজের করে নিয়েছেন। এবছর ব্যলন ডি অর জেতারও ভালো সুযোগ আছে তাঁর। আর বিশ্বকাপটা যদি নিজের করে নিতে পারেন, তাহলে ব্যলন ডি অর যে তিনিই জিতবেন এ ব্যপারে সন্দেহ করার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবেনা।

সার্জিও কুন আগুয়েরো:

সার্জিও আগুয়েরো হচ্ছেন ম্যানচেস্টার সিটির সর্বকালের সেরা খেলোওয়াড় ও গোলদাতা।

আগুয়েরো; আর্জেন্টিনা
আগুয়েরো; Source:mcfcwatch.com

“আর্জেন্টিনার জার্সিতে ভালো খেলেন না” টাইপের বদনাম আছে তাঁর। তবে সত্যি কথা বলতে আগুয়েরোর ইঞ্জুরি আর আর্জেন্টিনার কোচদের অতিরিক্ত হিগুয়েইন-প্রীতিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আগুয়েরো এবং আর্জেন্টিনা উভয়ের জন্যই। সার্জিও আগুয়েরো হলেন এনার্জিটিক খেলোয়াড়। অনেকটা গায়ের জোড়ে খেলেন। তবে এই এনার্জিটিক খেলোওয়াড়ের বড় শত্রু ইঞ্জুরি। ইঞ্জুরির কারনে ইংলিশ লীগে কয়েকবার গোল্ডেন বুটের দৌড় থেকে ছিটকে গেছেন। তবে ইঞ্জুরি যদি কাল হয়ে না দাঁড়ায়, এবার বিশ্বকাপে আগুয়েরোই হতে পারেন আর্জেন্টিনা দলের মূল স্ট্রাইকার। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ২০৬ ম্যাচে ১৪৩ গোল করেছেন প্রোলিফিক এই স্ট্রাইকার। আর্জেন্টিনার হয়ে করেছেন ৮৪ ম্যাচে ৩৬ গোল!

গঞ্জালো হিগুয়েইন/ মাউরো ইকার্দি:

গঞ্জালো হিগুয়েইন! নামটা শুনলেই আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মাথায় যেনো আগুন ধরে যায়। পর পর তিনটি মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে সহজ সুযোগ মিস করে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের কাছে রীতিমত “ভিলেন” বনে যাওয়া এই নাম্বার নাইন কিন্তু ক্লাবে যথেষ্ট উজ্জ্বল। বর্তমানে খেলছেন জুভেন্টাসে। সিরি এ তে নিয়মিত গোল পাচ্ছেন তিনি। শরীর ভারী হওয়ায় গতি কিছুটা কম হলেও এরিয়াল বলে তাঁকে কাজে লাগবে তাঁর হাইটের জন্য।

হিগুয়েইন
হিগুয়েইন Source: talksport.com

ইউরোপীয় ক্যারিয়ারে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে করেছেন ১৯০ ম্যাচে ১০৭ গোল, নাপোলির হয়ে ১০৪ ম্যাচে ৭১ গোল এবং জুভেন্টাসের হয়ে এখনো পর্যন্ত ৭০ ম্যাচে ৪০ গোল করেছেন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে করেছেন ৭০ ম্যাচে ৩১ গোল।

সার্জিও আগুয়েরোর অবর্তমানে গঞ্জালো হিগুয়েইনই হতে পারেন কোচের প্রথম পছন্দ। এছাড়াও আপাতত ৩৫ সদস্যের দলে থাকা ইন্টার মিলান তারকাকেও চোখে রেখেছেন সাম্পাওলি। একজন পার্ফেক্ট নাম্বার নাইনের মধ্যে যেসব গুন থাকা দরকার, তার প্রায় সবকিছুরই প্রমান রেখেছেন ইন্টার মিলানের জার্সি গায়ে। এবার সুযোগ পেলে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নিজেকে প্রমান করার পালা।

ইকার্দি
ইকার্দি; Source: Dhaka Tribune

তরুন প্রতিভাবান এই স্ট্রাইকার সিরি এ তে ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৩৪ ম্যাচে করেছেন ২৮ গোল! দেখা যাক, সামনে সাম্পাওলি হিগুয়েইন আর ইকার্দির মধ্যে কাকে বেছে নেন। সমর্থকদের ভোট ইকার্দিকে ঘিরে থাকলেও সাম্পাওলি বোধয় হিগুয়েনকেই পরিকল্পনায় রেখেছেন! তবে এর উল্টোটাও হতে পারে। একেতো আর্জেন্টাইন কোচ, তারউপর তিনি খুব কুশলী। দেখা গেলো চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষনার আগের ধারনা পালটে মূল একাদশে বিশাল এক চমক দেখিয়ে প্রতিপক্ষদের সাথে “মাইন্ড গেম” খেলে বসে আছেন! কাজেই, আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মধ্যে যারা হিগুয়েনকে একাদশে চাননা, তারা এটা ভেবে অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও “নিশ্চিন্ত” থাকতে পারেন।

পাওলো দিবালা:

আর্জেন্টিনার এটাকিং থার্ডে মেসি-আগুয়েরোদের পরেই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে “পাওলো দিবালা” এর নাম। দিবালা হলেন ভার্সেটাইল খেলোওয়াড়। তবে তাঁর প্রধান পজিশন হচ্ছে রাইট উইং, যে জায়গাটা দখল করে বসে আছেন “লিওনেল আন্দ্রেস মেসি”! তাই কোচ পড়েছেন মধুর সমস্যায়।

দিবালা
দিবালা Source: FootTheBall

একারনে ইউরোপিয়ান ফুটবলের এত বড় তারকার মূল দলে জায়গা পাওয়াটাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয় সাম্পাওলি এর সমাধানে কি করেন। আর্জেন্টিনার হয়ে এখনো তেমন কিছু করে না দেখাতে পারলেও জুভেন্টাসের সোনার ডিম পাড়া হাঁস তিনি। গোল করতে, গোল করাতে এবং দুরপাল্লার শটে তিনি দারুন! ড্রিবলিংয়েও অবশ্য কম যান না। জুভেন্টাসের হয়ে এখনো পর্যন্ত ৯২ টি ম্যাচে করেছেন ৫২ গোল। আর্জেন্টিনার হয়ে ১২ ম্যাচ খেলে এখনো একটি গোলও করতে পারেননি। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের আশা এবার মেসি-ডিবালা জুটি বিশ্বকাপ মাতাবে।

মধ্যমভাগ:

এঞ্জেল ডি মারিয়া:

এঞ্জেল ডি মারিয়া এমন একজন খেলোওয়াড় যিনি কিনা খুব পরিশ্রমী। গতি, ড্রিবলিং সব আছে তাঁর মধ্যে। অনেকেই তাঁকে তিন ফুসফুসওয়ালা খেলোওয়াড় বলে থাকেন। তাঁর দুর্বলতা শুধু ফিনিশিংয়ে। তাই লেফট উইংয়ের চাইতে লেফট কিংবা রাইট মিডেই বেশি কার্যকর হতে পারতেন ডি মারিয়া।

ডি মারিয়া
ডি মারিয়া Source: Getty Images

তবে দলে অটোচয়েস হিসেবে থাকবেন। যদিও সাম্পাওলি তাঁকে মিডফিল্ডার হিসাবেই দলে রেখেছেন, তবে ফর্মেশনের কারনে খুব সম্ভবত লেফট উইং সামলাবেন এই পিএসজি তারকা। ক্লাবে অবশ্য রাইট উইং দিয়ে তাঁকে দৌড়াতে দেখা যায়। স্বার্থপর প্লেয়ার হিসাবে তাঁর বেশ দুর্নাম আছে। তবে ইকুয়েডরের বিপক্ষে কোয়ালিফাইয়ারের শেষ ম্যাচে তাঁকে ফিনিশিং টাচ নেওয়ার চেষ্টা করতে খুব বেশি দেখা যায়নি। উলটো মেসিকে বল বানিয়ে দিয়েছেন ডিবক্সে। ঠিক এমনটাই করতেন রিয়াল মাদ্রিদে খেলার সময় এবং সেখানেও ছিলেন বেশ সফল। আর এই কাজটাই যদি বিশ্বকাপে নিয়মিত করতে পারেন, তাহলে আর্জেন্টিনাকে আর ঠেকায় কে?!

এভার বানেগা:

বর্তমানে সেভিয়ার হয়ে খেলা এভার বানেগারও রাশিয়া যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এটাকিং মিডফিল্ডে এই তারকা ছাড়া সাম্পাওলির হাতে আপাতত কোন অপশন নেই (যদি মেসি কিংবা দিবালা তাদের জায়গা বদল করে না খেলেন)।

বানেগা
বানেগা Source: impulsonegocios.com

তিনি কিন্তু পাসে বেশ দক্ষ। ফ্রি-কিক ও দুরপাল্লার শটেও দক্ষ। ছোট ছোট পাসে খেলাটাকে বিল্ড আপ করার জন্য বেশ কাজের প্লেয়ার তিনি যা আর্জেন্টিনার চিরাচরিত খেলার ধরন। তবে সাম্পাওলির হাই-প্রেসিং ফুটবলের সাথে তিনি কতটা মানিয়া নিতে পারেন, তাই এখন দেখার বিষয়। মূলত ‘গোল করা ও করানো’ এই দু’টিতেই তিনি বেশ দক্ষ। তাছাড়া ড্রিবলিং করেন ভালো। মাঠে খেলার পজিশন এক না হলেও তাঁর পাসিং এবিলিটিত জন্য বিশ্বপফুটবলে কিছুটা “আন্ডাররেটেড” এই তারকাকে ২০১০ সালের বিশ্বকাপের আগে জাভির সাথে তুলনা করেছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি “ডিয়েগো ম্যারাডোনা”!

লুকাস বিগ্লিয়া:

ডিফেন্সিভ মিডে সাম্পাওলির প্রথম পছন্দ লুকাস রদ্রিগো বিগ্লিয়া। সেন্ট্রাল মিডেও বেশ কার্যকরী এই খেলোয়াড়।

বিগ্লিয়া
বিগ্লিয়া Source: Getty Images

এই এসি মিলান তারকা মধ্যমাঠ সামলাতে ভালোই জানেন। খুব বেশি উঁচু মানের খেলোয়াড় না হলেও বিগ্লিয়ার ক্ষমতা আছে সেরাটা দিয়ে ম্যাচ বের করে আনার। সবকিছু মিলিয়ে তাঁর পজিশনে আর্জেন্টিনার কোচের হাতে তেমন ভালো কোন বিকল্প নেই। তাই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্য-মাঠের দু:শ্চিন্তা দূর করতে বিগ্লিয়ার উপরই অনেকটা ভরসা রাখতে হবে। পাস ডিস্ট্রিবিওশন ও ডিফেন্সিভলি কন্ট্রিবিউশনে এতটা খারাপও না আর্জেন্টিনার হয়ে ৫৭ টি ম্যাচ খেলা এই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার।

লিয়ান্দ্রো প্যারেদেস:

মধ্যমাঠের ডানপাশে সাম্পাওলি সম্ভবত লিয়ান্দ্রো প্যারেদেসকেই খেলাতে পারেন। ৫ ফিট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার এই মিডফিল্ডার বর্তমানে রাশিয়ান ক্লাব “জেনিত সেইন্ট পিটারবার্গ” এর হয়ে খেলছেন।

প্যারেদেস
প্যারেদেস Source: InfoGlitz

রাশিয়ান আবহাওয়া ও সেখানে খেলার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেই মূলত সাম্পাওলি তাঁকে দলে ভিড়িয়েছেন। বল কন্ট্রোল, পাস ডিসট্রিবিউশনে তিনি ভালোই করে এসেছেন এ পর্যন্ত। জেনিতের হয়ে এখনো অব্দি ২৭ টি ম্যাচ খেলেছেন মধ্যমাঠের এই সেনানী। লিয়ান্দ্রো প্যারেদেসকে বুঝতে হলে আপনাকে নিয়মিত রাশিয়ান লীগে চোখ রাখতে হবে। রাশিয়ান লীগের উঠতি তারকাদের মধ্যে প্যারেদেস অন্যতম।

হাভিয়ের মাশ্চেরানো:

হাভিয়ের মাশ্চেরানো হলেন আর্জেন্টিনা দলের অঘোষিত নেতা। গত বিশ্বকাপে দারুন পারফর্ম করেছেন। আর্জেন্টিনা দলে পিভট (হোল্ডিং মিডফিল্ডার) পজিশনে খেললেও দলের ডিফেন্সের প্রান যেনো মাশ্চেরানোই! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।

হাভিয়ের মাশ্চেরানো
হাভিয়ের মাশ্চেরানো Source: dnisalta.com

মেসি যেমন স্ট্রাইকার না হয়েও দলের মূল প্লে-মেকার কাম গোল স্কোরার, তেমনি মাশ্চেরানো একই সাথে মিডফিল্ডার এবং ডিফেন্ডার! ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রোবেনকে যেভাবে ট্যাকলটা করলেন, জাস্ট মাস্টার ক্লাস ছিলো ওটা! মাশ্চেরানো মাঠে যতক্ষন আছেন ততক্ষন বোঝার উপায় নেই তিনি আসলে মিডফিল্ডার, নাকি ডিফেন্ডার! এটাকে বল ডিস্ট্রিবিউশনেও সমান দক্ষ মাশ্চে! বর্তমানে চীনের হেবেই ফর্চুনের হয়ে খেলছেন আর্জেন্টিনা দলের মাঝমাঠের এই যোদ্ধা যিনি সাবেক লিভারপুল ও বার্সেলোনা খেলোওয়াড়। বয়স আর সাম্প্রতিক ফর্ম অবশ্য অনুকূলে নেই। তবুও মাশ্চেরানো মাশ্চেরানোই। আর্জেন্টিনা দলে তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে কল্পনা করাটাই যে বড় মুশকিলের কাজ! সম্ভবত এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। দেখাযাক, এবার ফুটবল-ঈশ্বরের মন গলে কিনা!

রক্ষনভাগ:

গ্যাব্রিয়েল মার্কাদো:

রাইট-ব্যাকে যে মার্কাদোই থাকছেন, সেকথা মোটামোটি অনুমেয়ই। রিভার প্লেটের হয়ে ৯৪ এবং সেভিয়ার হয়ে ৪০ ম্যাচ খেলা এই ফুল ব্যাককে নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। গতি আছে বটে এই প্লেয়ারের! দৌড়াতে পারেন ভালো, সাথে আছে ভালো ক্রস করার ক্ষমতা।

 মার্কাদো
মার্কাদো Source: Sevilla FC

রাশিয়া বিশ্বকাপে  ডিফেন্সের ডান দিকটা সামলানোর দায়িত্বও তাঁর ঘাড়েই এসে পড়েছে। আর্জেন্টিনার জার্সিতে কিন্তু তিনি সবসময় সেরাটা দিতেই চেষ্টা করেন। এখন দেখার পালা রাশিয়ায় তাঁর জন্য কি অপেক্ষা করছে।

মার্কোস রোহো/ নিকোলাস টাগ্লিয়াফিকো:

লেফট-ব্যক পজিশনে এই মূহুর্তে মার্কোস রোহো ছাড়া ভালো কোন অপশন নেই। এই ম্যানইউ তারকা অবশ্য আর্জেন্টিনার হয়ে সেরাটাই দিয়ে আসছেন। এটাক এবং ডিফেন্সে সমানতালে লড়ে যান এই খেলোওয়াড়। তাঁর ট্যাকলিং চমৎকার।

মার্কোস রোহো;
মার্কোস রোহো; Source: skysports.com

তবে কার্ড খাওয়ার দুর্নাম আছে। ভুগছেন ইঞ্জুরিতে। এখনো ১০০% ফিট নন। আর সেজন্য বিকল্প হিসেবে আছেন আয়াক্সের হয়ে মাত্র ১৪ ম্যাচ খেলা এবং আর্জেন্টিনার হয়ে মাত্র তিন ম্যাচ খেলা ২৫ বছর বয়সী অনভিজ্ঞ “নিকোলাস টাগ্লিয়াফিকো”।

নিকোলাস টাগ্লিয়াফিকো
নিকোলাস টাগ্লিয়াফিকো Source: bolavip.com

নিকোলাস ওতামেন্দি:

আর্জেন্টিনার হয়ে ৫৩ ম্যাচ খেলা নিকোলাস ওতামেন্দি ২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের ডিফেন্সের সবচেয়ে বড় তারকা। তাই ডিফেন্সের গুরুদায়িত্বটা এসে পড়েছে সদ্য ইপিএল জেতা এই ম্যানসিটি তারকার ঘাড়েই।

ওতামেন্দি
ওতামেন্দি Source: Complete Sports Nigeria

বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার তথা সেন্টার-ব্যাক তিনি। এরিয়াল বলে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে তাঁর জুড়ি নেই। সেই সাথে হেডে গোল করতেও বেশ পটু তিনি। তাই সাম্পাওলির ডিফেন্সের তুরুপের তাস এই নিকোলাস ওতামেন্দি।

ফেদেরিকো ফাযিও/ফুনেস মরি:

এই দুইজনের মধ্যে কে স্টার্টিং ইলেভেনে থাকবেন বলা মুশকিল। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে ফুনেস মরি (অন্তত জাতীয় দলে) এগিয়ে আছেন। তবে মরির চাইতে ফেদেরিকো ফাযিওকে বেশি পছন্দ সাম্পাওলির।

ফেদেরিকো ফাযিও
ফেদেরিকো ফাযিও Source: zimbio.com

সাম্পাওলি চারজন ডিফেন্ডার খেলালে ফেদেরিকো ফাযিওই হতে পারেন সেন্টার-ব্যাকে ওতামেন্ডির সঙ্গী। ফুনেস মরির এরিয়াল এবিলিটি ভালো। তাঁর উচ্চতা ৬ ফুট ১ ইঞ্চি। এদিক দিয়ে ফাযিও অবশ্য অনেকটাই এগিয়ে আছেন। তাঁর উচ্চতা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি! পারফর্ম্যান্সতো আছেই, মূল একাদশে সুযোগ পাওয়ার জন্য এটা খুব কাজে লাগবে বলে মনে হচ্ছে। ট্যাকলিংয়ে বেশ ভালো ফাযিও। তবে এ দিক দিয়ে ফুনেস মরি আরো ভালো। তবে যিনি যে দিক দিয়েই ভালো হোননা কেনো, সাম্পাওলি যে ফাযিও প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন তা একপ্রকার জানা খবরই। এখন দেখা যাক একাদশে সুযোগ পেলে রোমার হয়ে ২৬ এবং আর্জেন্টিনার হয়ে ৮ ম্যাচ খেলা এই ডিফেন্ডার কোচের আস্থার কতটা প্রতিদান দিতে পারেন।

ফুনেস মরি
ফুনেস মরি Source: Royal Blue Mersey

অন্যদিকে ফুনেস মরি এভারটনের হয়ে খেলেছেন ৫৪ ম্যাচ এবং আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেছেন ১৯ ম্যাচ।

গোলরক্ষক:

সার্জিও রোমেরো:

গোলকিপার হিসাবে আমার মত অনেকের পছন্দ ম্যানচেস্টার সিটি তারকা “উইলি ক্যাবেয়ারো” হলেও অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে সাম্পাওলির একাদশে সার্জিও রোমেরোর জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা একশোতে নব্বই ভাগ। বাকি দশ ভাগ একশো ভাগে রূপ নিতে পারে যদি সাম্পাওলি দুজনের সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স বিবেচনায় আনেন।

রোমেরো
রোমেরো; Source:Sportskeeda

যাই হোক, ম্যান ইউয়ের হয়ে সিজনের বেশিরভাগ ম্যাচে বেঞ্চ গরম করলেও আর্জেন্টিনার গত বিশ্বকাপে খেলেছেন দারুন। তাঁর শক্তির জায়গা হচ্ছে কঠিন কঠিন বল সেভ করতে পারেন ভালো। দুর্বলতা হচ্ছে মাঝে মাঝে গোলপোস্টের সামনে সহজ বল মিস করে বিপদ ডেকে আনেন। মানে বল গ্রিপিংয়ে কিছুটা দুর্বলতা আছে তাঁর। আর্জেন্টিনার হয়ে ৯৪ ম্যাচ খেলেছেন অভিজ্ঞ এই গোলকিপার। অনেকেই হয়তো মনে মনে এমনটা ভাবতে পারেন, “আমি কোচ হলে অবশ্য উইলি ক্যাবেয়ারোকেই নিতাম!” কিন্তু সাম্পাওলি অবশ্যই আমাদের চাইতে অনেক বেশি বোঝেন। তাই যাকে খেলান না কেনো, তাঁর উপরই আস্থা রাখতে হবে আকাশী-সাদা সমর্থকদের।

৩০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু শিরোপার দেখা মিলছেনা। দলটা নামের সাথে সুবিচার করতে পারছেনা বহু বছর ধরে। এই স্কোয়াড নিয়ে কি বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব?! উত্তরটা “হ্যাঁ বা না” দু’টোই হতে পারে। তবে যে দলে আছেন “লিওনেল মেসি”, সে দলকে আগেভাগেই টুর্নামেন্ট থেকে ভাগিয়ে দেওয়া এত সহজ না! আর্জেন্টিনার রঙে আছে নীলের ছোঁয়া। বেদনার রঙও কিন্তু “নীল”। এই নীলে মিশে থাকা সাদা মেঘ ব্যর্থতার দায়ে কালো হয়ে আছে অনেক দিন। ৩০ বছর ধরে নীল বিষে ম্লান হয়ে থাকা আলবিসেলেস্তেরা কি পারবে মেসি নামক ঘোড়ায় চড়ে সেই বেদনার নীলে অনেকখানি সাদা মিশিয়ে রাশিয়াকে আক্ষরিক অর্থেই আকাশি-সাদাময় করে তুলতে?! এর উত্তর মিলবে রাশিয়ায়। সেজন্য বেশ কিছুদিন অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকুন। আপাতত সম্প্রতি ঘোষিত আর্জেন্টিনার ৩৫ সদস্যের স্কোয়াডের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

আর্জেন্টিনা স্কোয়াড : গোলরক্ষক: সার্জিও রোমেরো, নাহুয়েল গুজম্যান, উইলফার্ডো ক্যাবায়েরো ও ফ্রাঙ্কো আরমানি।

রক্ষণভাগ : গ্যাব্রিয়েল মার্কাদো, এডুয়ার্ডো সালভিয়ো, জাভিয়ার মাশ্চেরানো, ফেড্রিকো ফাজিও, মার্কোস রোহো, রামিরো ফুয়েনস মোরি, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, মার্কোস আকুনা, নিকোলাস ওটামেন্ডি , জার্মান পেজ্জেল্লা ও ক্রিস্টিয়ান আনসালদি।

মধ্যমভাগ : ম্যানুয়েল লানজিনি, রিকার্ডো সেঞ্চুরিওন, এনজো পেরেজ, এভার বানেগা, জিওভানি লো সেলসো, লিওনার্দো পারেদেস, রদ্রিগো বাট্টাগলিয়া, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, ক্রিস্টিয়ান পাভোন, ম্যাক্সিমিলিয়ানো মেজা, লুকাস বিগলিয়া, গুইদো পিজারো  ও পাবলো পেরেজ।

আক্রমণভাগ: লিওনেল মেসি, গঞ্জালো হিগুইন, মাওরো ইকার্দি, দিয়েগো পেরোত্তি, পাওলো দিবালা, সার্জিও আগুয়েরো ও লাউটারটো মার্টিনেজ।

 

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, সকারনেট, ইএসপিএন, গোল ডট কম।

Source Featured Image
Leave A Reply
1 Comment
  1. MichaelLIc says

    https://indiaph24.store/# п»їlegitimate online pharmacies india

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More