গত মাসেই সমাপ্ত হল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা বিশ্বকাপ ফুটবল। ফুটবল ছাড়াও ক্রিকেট, বেসবল, গলফ, রাগবি ইত্যাদি বিভিন্ন জনপ্রিয় খেলাধুলা প্রচলন রয়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে। সারা বছর জুড়েই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত হয় জনপ্রিয় খেলা গুলোর প্রতিযোগিতার আসর। বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় দশটি খেলার জন্ম ইতিহাস নিয়ে থাকছে আজকের আয়োজন।
১০. রাগবি
জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে রাগবি অন্যতম। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, গলফ খেলা শুরু হয় ২০০০ বছর পূর্বে চীন ও গ্রীক অঞ্চলে। কিন্তু তখনো রাগবি কোন স্বীকৃত খেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরবর্তীকালে, ১৮২৩ সালে ব্রিটেনে রাগবি একটি খেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

স্কুল বালক উইলিয়াম ওয়িব এলিস রাগবি খেলার প্রচলন করে বলে ধারণা পাওয়া যায়। রাগবি খেলার নিয়ম কানুন লিখিত আকারে প্রকাশ পায় ১৮৪৫ সালে এবং ১৯৭১ সালে রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন গঠিত হয়। আধুনিক রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন রাগবি বিশ্বকাপের নামকরণ করা হয় উইলিয়াম ওয়িব এলিস ট্রফি হিসেবে।
৯. বাস্কেটবল
বাস্কেটবল, খেলা হিসেবে জন্ম হবার একটি অদ্ভুত গল্প রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিংফিল্ড, ম্যাসাচুসেটস (YMCA) ট্রেনিং স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৮৯১ সালে তৎকালীন ক্রীড়া শিক্ষক ড. জেমস নাইজস্মিথ কে নির্দেশ প্রদান করে ফুটবলের মত একটি ইনডোর খেলার উদ্ভাবন করতে।

ড. নাইজস্মিথের হাতে সময় কম ছিল, তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কৌশল এবং চতুরতার প্রয়োজন হয় এমন একটি খেলার উদ্ভব করেন এবং বাস্কেটবল হিসাবে নাম করণ করেন। বর্তমান সময়ে বাস্কেটবল খেলায় ১৩ টি প্রধান নিয়ম রয়েছে যা পূর্বের চেয়ে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। বাস্কেটবল, ১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিকে স্থান করে নেয়।
৮. হকি
অন্যান্য খেলার মত হকি একক কোন ব্যক্তি বা জাতির মাধ্যমে উদ্ভব হয় নি। ইতিহাস অনুসারে দেখা যায় ৪০০০ বছর পূর্বে মিশরে হকির সাদৃশ্য এক ধরনের খেলার প্রচলন ছিল। ১৬০০ শতকের দিকে নেদারল্যান্ডসে বরফের উপর লাঠি দিয়ে খেলার আয়োজন হত।

পরবর্তীকালে উত্তর আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে একই দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আধুনিক হকির জন্ম হয় ১৮০০ সালে কানাডার ছোট্ট শহর উইন্ডসরে। হকি থেকে বর্তমান সময়ের আইস হকির উদ্ভব হয়েছে।
৭. বেসবল
বেসবল অনেকটা ক্রিকেটের মত বল ও ব্যাটের সমন্বয়ে খেলা হয়। আজ থেকে ২০০০ বছর পূর্বে প্রাচীন মিশরে ব্যাট ও বল দিলে খেলার প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। সতের শতকের দিকে বেসবল ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয় বলে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মতামত দেন। একই সময়ে ইংল্যান্ডে প্রায় সদৃশ খেলা ক্রিকেটের প্রচলন ছিল।

১৭৯১ সালে অফিশিয়াল ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের পুরাতন কোর্ট হাউজে বেসবল নাম ব্যবহারকৃত নতি পাওয়া যায়। নতি তে জনসাধারণকে নতুন হল ভবনের ৮০ গজের ভিতরে, ক্রিকেট, বেসবল খেলতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বর্তমান কালে যুক্তরাষ্ট্রে বেসবল খুবই জনপ্রিয় একটি খেলা। তাছাড়াও, বেসবল উত্তর আমেরিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলগুলোতে জনপ্রিয়।
৬. বক্সিং
সহজাত খেলা গুলোর মধ্যে বক্সিং খেলা অন্যতম। অতি প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ একে অপরের সাথে হাতের মাধ্যমে লড়াই করত। সূত্র মতে, মেসোপটেমিয়া তে ৭০০০ বছর পূর্বে কাদা মাটিতে বক্সিং সদৃশ খেলার প্রচলন ঘটে। প্রাচীন রোমান ও গ্রীক অঞ্চলেও এ ধরনের খেলার প্রচলন ছিল। হোমারের ইলিয়াড গ্রন্থেও বক্সিং সদৃশ খেলার উল্লেখ রয়েছে। খেলোয়াড়েরা খালি গায়ে থাকত এবং তাদের হাতে চামড়ার আবরণ সদৃশ বস্তু মোড়ান থাকত।

আধুনিক বক্সিং এর শুরু হয় সতের শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে। জেমস ফিগ প্রথম স্বীকৃত কোন বক্সিং টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। বলা হয়ে থাকে তিনি জীবনে একটি মাত্র খেলায় হেরেছে এবং ১৯৯২ সালে তাকে বক্সিংয়ের জন্ম দাতার মর্যাদায় ভূষিত করা হয়।
৫. টেনিস
টেনিসের উদ্ভব সম্পর্কে শক্তিশালী কোন নতি পাওয়া যায় নি। অনেকে মতামত দিয়েছে প্রাচীন গ্রীক বা মিশরে টেনিস খেলার প্রচলন ছিল। তবে শক্তিশালী সূত্র মতে দশম শতকে ফ্রান্সে টেনিসের প্রচলন হয়। সন্ন্যাসী গন মঠের প্রাচীরের দুই পাশে বল দিয়ে খেলা করত। এক পাশ থেকে বল ছুড়ে তারা টেনজ ( গ্রহণ কর) বলে চিৎকার করত। তের শতকের দিকে টেনিস ফ্রান্সে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং আটার শতকের দিকে টেনিস কোর্টের ব্যবহার শুরু হয়। ফ্রান্সে টেনিস এত জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে, রাজা সপ্তম লুইস এটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করতে ব্যর্থ হন।

রাবার আবিষ্কার হবার পূর্বে টেনিস বল পশম দ্বারা তৈরি করা হত এবং কাঠের মাধ্যমে র্যাকেট তৈরি করা হত। ১৮৭৪ সালে আন্তর্জাতিক ভাবে টেনিসের নিয়ম কানুন সিদ্ধ হয় এবং ১৮৭৭ সালে প্রথম উইমিলডন চালু হয়।
৪. গলফ
গলফ খেলার প্রচলন হয় আজ থেকে খ্রিষ্ট পূর্ব ১০০ বছর পূর্বে রোমান ও চীন সাম্রাজ্যে। পরবর্তীকালে ডাচ, বেলজিয়াম ও ফ্রান্সে লাঠির মাধ্যমে বলকে তাড়িত করার খেলা প্রচলন ছিল। গলফ নামটি উদ্ভব হয়েছে স্কটিশ ভাষা থেকে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার শুরু হয় ১৪৫৭ সালে।

একই বছর রাজা দ্বিতীয় জেমস এটিকে নিষিদ্ধ করে এবং কারণ হিসেবে সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলাকে উল্লেখ করা হয়। ১৭৭৪ সালে এডিনবার্গে গলফ খেলার ১৩ টি নিয়ম কানুন লিপিবদ্ধ করা হবে।
৩. দাবা
জনপ্রিয় খেলা গুলোর মধ্যে একমাত্র দাবা খেলাই ভারতীয় উপমহাদেশে উদ্ভব হয়েছে। ইতিহাসবিদ দের মতে তখন গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসন চালু ছিল। সংস্কৃত শব্দ শতরঞ্জ থেকে দাবা নামটি এসেছে। পরবর্তী কালে, ভারত বর্ষ থেকে পারস্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

পনের শতাব্দীর মাঝামাঝি তে ইউরোপ থেকে পরিমার্জিত হয়ে আধুনিক দাবা খেলার সঞ্চালন হয়। কথিত আছে যে, রাবণের স্ত্রী রাবণকে যুদ্ধে নিবৃত্ত করার জন্য দাবা খেলত।
২. ক্রিকেট
ক্রিকেট, অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়াতে। ক্রিকেট খেলার উদ্ভব হয় তের শতকে ইংল্যান্ডে। প্রাথমিক যুগে রাখাল বালকেরা ক্রিকেট খেলা খেলত বলে প্রচলিত রয়েছে। উইকেট হিসেবে কাঠের লাঠি ও বল হিসেবে ভেড়ার পালক গোলাকার করে ব্যবহার করা হত।

১৬৯৭ সালে ইংল্যান্ডের সাসেক্সে ৫০ গিনি প্রাইজ মানির বিনিময়ে ১১-জন করে প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ১৭৪৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেট খেলার নিয়ম লিপি বদ্ধ করা হয় এবং ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজনের রীতি চালু হয়।
১. ফুটবল
বর্তমান সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল। প্রাচীন চীনে খ্রিষ্ট পূর্ব ৪৭৬- ২২১ পর্যন্ত এক ধরনের খেলার প্রচলন ছিল, যার নাম ছিল কুজু। কাপড়ে দিয়ে তৈরি গোলাকার বলের মত মোড়ান বস্তু পায়ের মাধ্যমে লাথি মেরে খেলা হত। সৈনিকেরা দেহ সবল রাখার জন্য কুজু খেলত। রোম সাম্রাজ্যেও এ ধরনের খেলার প্রচলন ছিল বলে ধারনা পাওয়া যায়।

পরর্বতীকালে, ১৮৬৩ সালে ব্রিটেনে আধুনিক ফুটবলের রুপায়ন ঘটে এবং ফুটবল এসোসিয়েশন গঠিত হয়। ফুটবল এসোসিয়েশনের কর্তা ব্যক্তিরাই সর্ব প্রথম ফুটবল খেলার নিয়ম লিপিবদ্ধ করে যার ধারাবাহিকতায় আগমন ঘটে আজকের আধুনিক ফুটবল। ফুটবলকে আমেরিকাতে সকার বলে অভিহিত করা হয়।