ইতিহাস বারবার ফুটে উঠে গল্প, কবিতায়, প্রবন্ধে, উপন্যাসে। সেসব ইতিহাস নিয়ে নির্মাণ হয় অসংখ্য পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা৷ গল্প, কবিতা, উপন্যাস সবার কাছে না পৌঁছালেও বর্তমান আধুনিক সময়ে সিনেমার অধিক প্রসারে ভিজুয়াল হিস্টোরি অধিক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ একের পর এক এখনো তৈরি হচ্ছে ১ম বিশ্বযুদ্ধ, ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা। যে ইতিহাস যত বেশি সমৃদ্ধ, সে ইতিহাস নিয়ে তত বেশি কাজ হচ্ছে বর্তমানে৷ ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ নির্যাতিত শাসনের বিরুদ্ধে দিল্লি, কলকাতায়, বাংলায় গড়ে উঠেছিলো একের পর এক বিদ্রোহ। গান্ধীজী, ভগত সিং, নেতাজি সহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা তৈরি হলেও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাস্টারদা সূর্যসেন কে নিয়ে অনেক পরে সিনেমা তৈরি হয়।
২০১২ সালে দেবব্রত পাইন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, চট্টগ্রামে ব্রিটিশ অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নেতৃত্বদানকারী একজন শিক্ষক মাস্টারদা সূর্যসেনকে নিয়ে ‘চিটাগাং’ নামে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা তৈরি করেন। যদিও এর আগে আশুতোষ গোয়ারিকের মাস্টারদাকে নিয়ে ২০১০ সালে ‘খেলেঙ্গে হাম জি জান সে’ নামে এক সিনেমা তৈরি করেন। ওই সিনেমার গল্পকাহিনী ও চিত্রনাট্যের তুলনায় চিটাগাং অনেক বেশি উপভোগ্য, সত্য উত্থাপন করে।

পুরো ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। তখন চট্টগ্রামে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেন। কয়েকজন তরুণ ও কিশোর বয়সী ছেলে নিয়ে ব্রিটিশ অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে চট্টগ্রামকে কয়েকদিনের জন্য ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করেছিলেন মাস্টারদা। যদিও ব্রিটিশ পুলিশ আবার তা দখল করে নেয়।
চিটাগাং:
চট্টগ্রামে যখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন মাস্টারদা, তখন ব্রিটিশ এক সরকারি লয়ারের পুত্র ঝংকু রায় দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন তার কি করা উচিত? ব্রিটিশ সরকারের সুযোগ নিয়ে কি ব্রিটিশ পাড়ি দেবে, নাকি মাস্টারদার দলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেবে? ঝংকু রায় মাস্টারদার আলোচনায় মুগ্ধ ছিলো সবসময়। অপরদিকে পিতার জন্যে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছিল কি করবে। এরকম সময়ে পুলিশ অফিসার জনসনের গুলিতে মারা যায় তার বন্ধু সুখেন্ধু। ঝংকু তার বন্ধু হত্যার বিচার চাইতে ব্রিটিশ নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন, তাতে লাভ হয়নি। উপরন্তু জনসনের প্রমোশন মেলে। তখন ঝংকুর সিদ্ধান্ত নিতে আর সময় লাগেনি। ঘর ছেড়ে মাস্টারদার দলে যোগ দেয়। ঝংকুর বর্ণনায় মাস্টারদার পরবর্তী ঘটনা বর্ণিত হয়।
মাস্টারদা নির্মল সেন, অম্বিকা, লোকনাথ, অনন্ত সিং, গণেশ ঘোষ এদের সাথে বারবার আলোচনা করে ব্রিটিশদের আক্রমণের ছক তৈরি করেন। আক্রমণে তাদের সহযোদ্ধা হিসেবে যোগ দেয় কিশোর বয়সী ছেলেরা।

আন্দোলনকে চারভাগে ভাগ করে নেয় মাস্টারদা। একেকটি গ্রুপে একেকজন নেতৃত্ব দেয়। একটি গ্রুপ মাস্টারদা নিজেই, অন্য তিনটি গ্রুপে অম্বিকা চক্রবর্তী, অন্তত সিং ও গণেশ ঘোষ এবং নির্মল সেন। রাতের অন্ধকারে চারদল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একদল চট্টগ্রামের রেল লাইন উপড়ে ফেলে, যাতে চট্টগ্রামের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আরেকদল চট্টগ্রামের টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিস হামলা করে ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়। আর দুটি দল পরিকল্পনা অনুযায়ী রেলওয়ে অস্ত্রাগার ও পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখল করে নেয়। শুক্রবার ছিল বলে ব্যারাকে কোন ইংরেজ ছিল না, অন্যদিকে অস্ত্রাগারে অস্ত্র পেলেও কোন গুলি পায়নি নির্মল সেনের দল।
একদিকে হতাশাগ্রস্ত হলেও অন্যদিকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একরকম বিজয়ও নিয়ে আসে মাস্টারদা। পুরো ৪দিন ব্রিটিশ শাসন মুক্ত ছিল চট্টগ্রাম। মাস্টারদার দল পাহাড়ে আশ্রয় নিলেও বেশিদিন টিকতে পারেনি। ব্রিটিশদের সাথে সরাসরি অস্ত্রযুদ্ধে বিদ্রোহী অনেকেই নিহত হয়। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে পালিয়ে যায়।

মাস্টারদা ও প্রীতিলতা আরেকটি আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। এবার আন্দোলনের নেতৃত্বে প্রীতিলতা ওয়েদ্দার। আক্রমণের স্থান ইংরেজ ক্লাব। এক সন্ধ্যায় প্রীতিলতা পুলিশের পোশাক পরে তার দল নিয়ে ইংরেজ ক্লাবে ডুকে পড়ে। তাদের এলোমেলো গুলিতে অনেক ইংরেজ গুলিবিদ্ধ ও নিহত হয়। প্রীতিলতা নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। ইংরেজদের হাতে বন্দী হওয়ার চাইতে প্রীতিলতা স্বেচ্ছামৃত্যু বেঁছে নেয়। পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করে প্রীতিলতা ওয়েদ্দার।
ব্রিটিশদের হাতে অনেকে নিহত হয়, আবার অনেকে গ্রেফতার হয়। মাস্টারদা গ্রেফতার হলে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে চট্টগ্রামে।

অন্যদিকে ঝংকু রায়, লোকনাথ, অনন্ত, গণেশ ঘোষ এদের গ্রেফতার করে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কারাগারে প্রেরণ করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। ঝংকু রায় কিশোর ছিল বলে মাত্র ৭ বছরের সাজার পর মুক্তি পেয়ে চট্টগ্রামে ফিরে এসে আবারো ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে কৃষকদের ফসল ব্রিটিশ গুদাম ঘর থেকে উদ্ধার করেন ৭ বছর পর জেল থেকে ফিরে আসা ঝংকু রায়।

আলোচনা-সমালোচনা:
মাস্টারদা কে নিয়ে আগেও সিনেমা তৈরি হয়েছে। সেখানে অভিষেক বচ্চন মাস্টারদা চরিত্রে অভিনয় করেন। সে সিনেমার গুণগত মান বিচারে পরবর্তী সদ্য নতুন পরিচালক দেবব্রত পাইন মাস্টারদার বিপ্লবী ভাব ভালভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সিনেমার ডায়ালগ গুলো মাস্টারদার চরিত্রের বিপ্লবী দিককে অসাধারণ করে তুলেছে।
মাস্টারদা চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপাই। যার অভিনয়ের নতুন করে প্রশংসা করার কিছু নেই, অন্যদিকে নওয়াজ উদ্দিন সিদ্দীকি, রাজকুমার রাও, বিজয় বার্মার মত অসাধারণ অভিনেতা তো রয়েছেনই। ঝংকুর ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন দিলজাদ হিওয়ালে। মাস্টারদার ভাষা বাংলা হলেও সিনেমা দুটিই নির্মিত হয় হিন্দি ভাষায়। বাংলা চলচ্চিত্র এখনো পারেনি বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করতে। আদৌ কোন সময়ে বাংলা ও বাংলা চলচ্চিত্র তার এই ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে পারবে কিনা , এ উত্তর কারো জানা নেই।
ব্রিটিশ ভারতে বাংলার আকাশে স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিল মাস্টারদার মাধ্যমে। দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙ্গার যে ডাক মাস্টারদা দিয়েছেন, সেই ডাকেই ব্রিটিশদের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলো ঝংকু রায়, প্রীতিলতা, নির্মল সেনের মত সাধারণ জনগণ। ভারতবর্ষের ছোট একখণ্ড চট্টগ্রামেই উদিত হয়েছিলো প্রথম স্বাধীনতার সূর্য।
order generic levaquin buy levaquin 500mg online cheap
I conceive you have observed some very interesting points, thanks for the post.
Its like you learn my thoughts! You seem to understand so much about this, like you wrote the guide in it or something. I feel that you just could do with a few p.c. to force the message home a little bit, but instead of that, this is magnificent blog. An excellent read. I will definitely be back.
hello there and thank you for your information – I’ve certainly picked up anything new from right here. I did however expertise some technical points using this website, since I experienced to reload the website lots of times previous to I could get it to load properly. I had been wondering if your web hosting is OK? Not that I’m complaining, but slow loading instances times will often affect your placement in google and could damage your quality score if advertising and marketing with Adwords. Anyway I’m adding this RSS to my email and could look out for much more of your respective intriguing content. Ensure that you update this again very soon..