নাটক, ট্রাজেডি, থ্রিলারে পরিপূর্ণ ২য় বিশ্বযুদ্ধ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এমনকি বিশ্বযুদ্ধের খন্ড খণ্ড অসংখ্য সত্য ঘটনা অবলম্বনে ভরপুর চলচ্চিত্র জগৎ। চলচ্চিত্র নির্মাতারা এখনো খণ্ড খণ্ড ঘটনা নিয়ে নির্মাণ করে যাচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির সিনেমা। ২য় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপ্তিকাল ও ঘটনা এত বিস্তৃত যে, একটা প্রবন্ধে বা গল্পে এমনকি একটা চলচ্চিত্রেও সংক্ষিপ্ত আকারে দেখানো সম্ভব নয়। চলচ্চিত্র ইতিহাসে একটা নির্দিষ্ট টপিককে কেন্দ্র করে এত বেশি চলচ্চিত্র আর কোন টপিককে কেন্দ্র করে হয়নি। অসংখ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে এমন কিছু চলচ্চিত্র রয়েছে, যে চলচ্চিত্রগুলো না দেখলে ২য় বিশ্বযুদ্ধের অনেক কিছুই অজানা রয়ে যাবে। ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে কয়েকটি বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো, যে চলচ্চিত্রগুলো না দেখলে যেমন বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র অদেখা রয়ে যাবে, তেমনি ২য় বিশ্বযুদ্ধের অনেক আশ্চর্য তথ্যও অজানা রয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
Hitler: The Rise of Evil (2003)
২য় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত যদি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই শুরু হয়, তবে এই চলচ্চিত্রেই সেই ঘটনা প্রবাহ পূর্ণাঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। ১ম বিশ্বযুদ্ধের শেষ থেকে হিটলারের উত্থান ও এত কঠিন মাত্রায় উগ্র জাতীয়তাবাদ চর্চার পেছনের কারণ ও ঘটনা দীর্ঘ সময় নিয়ে দেখানো হয়েছে। Hitler: The Rise of Evil কে সাধারণত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র না বলে মিনি টিভি সিরিজ বলে। কারণ এটি দুটি পর্বে ভাগ করে তৈরি করা হয়েছে।
চলচ্চিত্রটি হিটলারের বাল্যকাল থেকেই শুরু হয়। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের মানসিক পরিবর্তন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক জীবনে যোগদান এবং বিশ্বের অন্যতম প্রতাপশালী রাজনীতিবিদ হয়ে উঠা পর্যন্ত তুলে ধরা হয়েছে। হিটলার দ্যা রাইজ অব এভিলকে হিটলারের আংশিক আত্মজীবনী বলা যায়। হিটলারের জার্মানির ক্ষমতা গ্রহণ পর্যন্ত এ চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য। রবার্ট কার্লিল দেখিয়েছেন অভিনয়ের জন্য কত পরিশ্রম করতে হয়। পুরোপুরি হিটলারের চরিত্র নিজের মধ্যে ধারণ করার ও তা যথার্থভাবে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমেই প্রমাণ করেছেন। হিটলারকে পুরোপুরি জানতে হলে এ সিরিজটি অন্যতম একটি মাধ্যম।
Schindler’s list (1993)
মূলধারার হলিউড মুভি হওয়া সত্ত্বেও, স্টিভেন স্পিলবার্গের হান্টিং স্কিন্ডারারের তালিকায় হোলোকাস্টের ভয়াবহতাগুলির অসামান্য অভিনয়ের জন্য নতুন ভূমিকায় নতুন স্থান মাল্টি-পুরস্কার-বিজয়ী চলচ্চিত্র অস্কার শিন্ডলারের একটি অসাধারণ বাস্তব জীবন কর্ম বিবরণ তুলে ধরেছে। একজন শিল্পপতি এবং নাৎসি দলের সদস্য হোলোকাস্টের সময় প্রায় ১২০০ ইহুদিদের জীবন রক্ষা করেছেন বলে বিশ্বাস করেন। Schindler নাৎসি-দখলকৃত পোল্যান্ডের ইহুদী শ্রমিকদের তার কারখানাগুলিতে নিযুক্ত করে এবং নাৎসি কর্মকর্তাদের নির্বাসন থেকে ঘন ঘন ক্যাম্পে তাদের রক্ষা করার জন্য ঘুষ দিয়েছিলেন। তিনি সংরক্ষিত সাতটি তালিকা তৈরি করেছেন বলে মনে করা হয়, সেগুলির সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তিনি তাদের নাম দিয়েছিলেন, যা আজও আজ পর্যন্ত বেঁচে আছে।
টমাস কেনিলির ১৯৮২ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাস Schindler’s Ark অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। ২য় বিশ্বযুদ্ধের এমন অসাধারণ ঘটনা দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে অস্কার সহ অনেক পুরষ্কার অর্জন করে নেয়।
The Great Escape (1963)
জেল থেকে পালানো সত্য অসত্য কাহিনী অবলম্বনে অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। তন্মধ্যে ১৯৬৩ সালে নির্মিত হওয়া ২য় বিশ্বযুদ্ধের সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত The Great Escape কে সবার উপরে রাখতেই হয়।
জার্মান নাৎসি বাহিনীর হাতে ধরা পড়া ইহুদি, মিত্র বাহিনীর অফিসার সকলকে ক্যাম্পে বন্ধী করে রাখা হতো। অস্থায়ী ওসব ক্যাম্প থেকে যে কেউই পালাতে চেষ্টা করতো। একটা ক্যাম্পে মিত্র বাহিনীর কিছু অফিসার বন্দী অবস্থায় আছে। সে ক্যাম্প থেকে অনেকে খুব হাস্যকরভাবে পলায়নের নানান উপায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ধরা পড়ে। তারপর আমেরিকান (কাল্পনিক) ক্যাপ্টেন ভার্জিল হিল্টস এবং ব্রিটিশ স্কোয়াড্রন লিডার রজার বার্টলেট এর নেতৃত্বে সকলের একসাথে পালানোর জন্যে টানেল খুঁড়া শুরু করে। জেল থেকে উদ্ধারের থ্রিলিং ঘটনাই এ চলচ্চিত্রের অন্যতম আকর্ষণ।
একটা হলিউড সিনেমার প্রয়োজনীয় সমস্ত নাটক, উত্তেজনা এবং ট্র্যাজেডি ছিলো এই সত্য ঘটনায়। যদিও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র কোম্পানি প্রাথমিকভাবে দ্য গ্রেট এস্কেপ (সম্ভবত একটি গ্ল্যামারস মহিলা প্রেমিকা চরিত্রের অভাবে) পিছনে অনিচ্ছুক ছিল, তবে এটি ছিল ১৯৬৩ সালে বক্স অফিসে হিট। প্রকৃতপক্ষে, চলচ্চিত্রটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চলচ্চিত্রের অনেক ভালো মানের ক্লাসিক হয়ে উঠেছে – ১৯৬৩ টাইম ম্যাগাজিনের পর্যালোচনাতে বলা হয়েছে: “The Great Escape is simply great escapism”.
Saving Private Ryan (1998)
জেমস প্রাইভেট রায়ান এক হতভাগ্য মায়ের ৪ নম্বর সন্তান যার অপর তিনটি সন্তান ২য় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যায়। তিন সন্তানের মৃত্যুর টেলিগ্রামটি তাদের মায়ের কাছে পাঠাতে হবে। এমন সময় ইউএস আর্মি চিফ দেখতে পান তার আরেক সন্তান জেমস রায়ান এখন নরম্যান্ডিতে এক যায়গায় যুদ্ধ করছেন। তখন ইউএস আর্মি চিফ সিদ্ধান্ত নিলেন জেমস রায়ানকে উদ্ধার করে মায়ের কাছে ফেরত পাঠাবেন।
তখন তিনি সেকেন্ড রেঞ্জার থেকে ক্যাপ্টেন মিলারকে (টম হ্যাংকস) প্রধান করে একদল যোদ্ধা পাঠালেন জেমস রায়ানকে খুঁজতে। যুদ্ধের এমন ভয়াবহতার মধ্যে এমন একটি মর্মস্পর্শী ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয় সেভিংস প্রাইভেট রায়ান। অসাধারণ নির্মাণ কৌশল আর যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যে জেমস রায়ানকে উদ্ধারের জন্য লড়াই এ সিনেমার অন্যতম আকর্ষণ।
Life Is Beautiful (1997)
Life Is Beautiful দেখার পর বড় নিশ্বাস নিয়ে আপনাকে বলতেই হবে, জীবন আসলেই সুন্দর। ২য় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্টের মধ্যে থেকেও পুত্রের আনন্দের জন্য পুরো ক্যাম্প যখন এক লুকোচুরি খেলার ক্যাম্পে পরিণত করেন পিতা তখন ঐ পুত্রের জীবন সুন্দর না হয়ে পারে!
লাইব্রেরিয়ান গুইডো অরিফিস (রবার্তো বেনিনি) স্কুল শিক্ষিকা ডোরার প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করেন। সবটাই কমেডি ধাঁচের চলতে থাকে। তাদের এক পুত্র সন্তান যশোয়াকে নিয়ে ভালই দিন কাটছিল। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরো পরিবার নিয়ে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে আটকা পড়েন গুইডো। সেখানে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গুইডো তার ছেলে যশোয়ার বন্দী জীবনের নিষ্ঠুরতাকে একটা লোভনীয় খেলা বানিয়ে ফেলেন। খেলার রুলস অনুযায়ী যশোয়া জিততে পারলে পুরষ্কার হিসেবে পাবে একটি ট্যাঙ্ক।
একজন প্রেমিকের অসাধারণ প্রেমকাহিনী, একজন মহান বাবার পুত্র স্নেহের তীব্র আবেদনে নির্মল আনন্দ বেদনার অসাধারণ চলচ্চিত্র। জীবন আসলেই সুন্দর।
The Boy in the Striped Pajamas (2008)
একজন নাৎসি কমান্ডারের ৮ বছরের পুত্র ব্রুনোর কাহিনী। কমান্ডারের হাতে দায়িত্ব পড়ে একটি বন্দী শিবিরের। তাই বাসা পরিবর্তন করে ক্যাম্পের পাশের বাংলোতে উঠেন কমান্ডার। ব্রুনো ছেড়ে আসে তার অতীত বন্ধুদের। জানেনা কোথায় এসে উপস্থিত হয়েছে। কারণ তার এখনো বোঝার বয়স হয়নি যুদ্ধের ভয়াবহতার।
বাড়ির পাশেই ব্রুনো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে কাটা তারে ঘেরা বন্দী শিবির। ব্রুনো দেখে সেখানে বন্দীরা কাজ করে, বিকেলে ফুটবল খেলে। একদিন দেখা হয় কাটা তারের ভেতরের ৮ বছরের স্যামুয়েলের সাথে। সে ইহুদী, বাবার সাথে বন্দী। ব্রুনো কমান্ডারের পুত্র। যুদ্ধের ভয়াবহতা তার গায়ে লাগার কথা না। স্যামুয়েল জানে তার অবস্থা। তারপরেও দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। সেই বন্ধুত্ব থেকেই কমান্ডারের পুত্র ব্রুনোকেই সইতে হয় যুদ্ধের ভয়াবহতা। ২য় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার এক বিষাদময় রূপ ফুটে উঠে এই চলচ্চিত্রে।
Downfall (2004)
চলচ্চিত্রের ঘটনা শুরু হয় হিটলারের বার্লিন যখন নিশ্চিত পতনের মুখে দাড়িয়ে। ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসের দিকে রুশ বাহিনী বার্লিনের কাছাকাছি চলে আসে। ২০ এপ্রিল সকালে বার্লিন শহরের রুশ আর্টিলারি বোমা নিক্ষিপ্ত হয়। প্রবল প্রতাপের সাথে এগিয়ে আসা রুশবাহিনীকে আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে জার্মান বাহিনী ব্যর্থ। হিটলার জরুরি সভা ডেকে নানান আদেশ দিলেও সেই মূহুর্ত জার্মান বাহিনীর আর কিছুই করার ছিলো না।
বাঙ্কারের নিচে অবস্থান করা হিটলার নিশ্চিত পরাজয় দেখে রুশ বাহিনীর হাতে নিজেকে সমর্পণ করবেন না বলে স্ত্রী ইভা ব্রাউনকে সাথে নিয়ে আত্মহত্যা করেন। বাঙ্কারে থাকা হিটলারের অন্যান্য কর্মকর্তারাও অনেকেই হিটলারের মত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। প্রবল প্রতাপশালী হিটলারের পরাজয় বরনের সময়টুকু নিয়েই ডাউনফল। অভিনেতা ব্রুনো গ্যানজকে দেখে আলাদা করার উপায় নেই হিটলার ও অভিনেতা ভিন্ন মানুষ। ব্রুনো গ্যানজ পুরোপুরি হিটলার হয়ে উঠেছিলেন এই চলচ্চিত্রের জন্যই।
zyprexa overdose symptoms
zofran in ireland
buy glucophage – hyzaar online order cheap acarbose 25mg
wellbutrin bij adhd