দাঁত থাকতে দাঁতের যথাযথ মর্যাদা আমরা অনেকেই দিতে পারিনা। প্রাপ্ত বয়সে এসে দেখা যায় সাধের দাঁত এবড়োথেবড়ো, উঁচুনিচু হয়ে বসে আছে। তখন আফসোস হয় ইশ সময় থাকতে যদি দাঁতকে তার ন্যায্য সম্মান দিতাম তাহলে আজ হাসতে গেলে আমার মুখ চেপে ধরে রাখতে হত না৷ পাঠক, আমাদের মাঝে অনেকের দাঁত নিয়ে এমন হাপিত্যেশ, হতাশা। বাঁকা দাঁত সোজা করতে কত দৌড়াদৌড়ি আমাদের, হলুদাভ দাঁতের জন্য আমাদের খেতে হয় নাকানিচুবানি । কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে খুব সহজেই আমাদের দাঁত ফিরে পেতে পারে তার হারানো গৌরব কিংবা এই নিয়মগুলো অনুসরণ করলে যাদের ঝকঝকে দাঁত রয়েছে তাঁদেরও হলুদ হওয়ার ভয় থাকবে না। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক দাঁতের যত্নের কিছু টিপস।

Source: Phys.org
জাংক ফুড এড়িয়ে চলা
জাংক ফুড বা জঞ্জাল খাদ্য আমাদের অনেকের অতি পছন্দের খাদ্যাভ্যাস হলেও এ ধরণের খাদ্য দাঁতের সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে৷ অতিরিক্ত চর্বি ও শর্করা থাকার কারণে হৃদপিণ্ড ও দাঁত ভয়ংকর ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। চকলেট, চুইংগাম, লজেন্স, আইস্ক্রিম ও মিষ্টি জাতীয় যেকোনকিছু খুব তাড়াতাড়ি দাঁত ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। দাঁতের ক্ষয়রোগ এড়াতে অভিভাবকদের উচিত শিশুকাল থেকে বাচ্চাদের জাংক ফুড গ্রহণ থেকে বিরত রাখা

দাঁত ব্রাশ করবেন কি দিয়ে?
দাঁত পরিস্কার করার বহুল প্রচলিত মাধ্যম হচ্ছে পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজা। ব্রাশ ও পেস্টের সাহায্য ছাড়াও দাঁত পরিস্কার রাখা যায়। এজন্য নিমের ডালকে ব্রাশের মত করে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। ব্রাশ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা খাদ্যকণা পরিস্কার হয়েছে কিনা। বছরে ন্যূনতম দুইবার দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভাল।
সকালের নাস্তার পর দাঁত মাজুন
সকালে ঘুম থেকে উঠেই তড়িঘড়ি করে আমাদের প্রথম কর্তব্য সম্পাদন করার নাম দাঁত মাজা। কিন্তু রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে যদি দাঁত ব্রাশ করে ঘুমান তাহলে সকালে নাস্তার আগে ব্রাশ না করে বরং পরে করাই শ্রেয়৷ কেননা রাতে ব্রাশ করলে পুরো রাতই আমাদের দাঁত পরিস্কার থাকছে। তাই সকালে অযথা তাড়াহুড়ো না করে নাস্তার পর ব্রাশ করলে দাঁতের ময়লা দূর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Source: Dr. Adrian
মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করুন
দাঁতের মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা জরুরি। এরজন্য অবশ্যই সকাল ও রাতে খাবার পর ব্রাশ করা জরুরি। প্রতিবার খাবারের পর ভালভাবে কুলকুচি করা যাতে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমা না থাকে। প্রতিদিন খাবারের সাথে সালাদ, গাজর, টমেটো, লেটুস পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে মাড়ির রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব। মনে রাখবেন দাঁতের মাড়ির রোগ মুখের ক্যান্সার সৃষ্টি করে ফেলতে পারে।
মুখের দূর্গন্ধ ও প্রতিরোধ
মুখের দূর্গন্ধের পেছনেও দাঁত কালপ্রিট হিসেবে কাজ করে। গতিশীল জীবনে মুখের দূর্গন্ধ একইসাথে বিরক্তিকর এবং অসহনশীল। যার মুখে দূর্গন্ধ সে অবলীলায় কথা বলে যেতে থাকলেও আশেপাশের মানুষদের এর মূল্য দিতে হয়। এটি এমন একটি সমস্যা যে, আমাদের চলার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করে দেয়। মুখে দূর্গন্ধের পেছনে কিছু কারণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। যেমন, প্রতিবার খাবার গ্রহণে মুখের ভেতরে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে খাদ্যকণার অবস্থান, মুখে যেকোনধরণের ঘা, আঁকাবাঁকা দাঁত ইত্যাদি৷ মুখের দূর্গন্ধ দূর করতে প্রাথমিক উপায়ে আপনি যা করতে পারেন,
*তিনবেলা খাবারের পর ভাল মানের ব্রাশ ও পেস্ট দিয়ে দাঁতের সবগুলো অংশ পরিস্কার করুন।
*জিহ্বা পরিস্কার করার জন্য জিব ছুলা ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে প্লাস্টিকের জিবছুলা পাওয়া যায়।
*অল্প গরম লবণপানিতে প্রতিদিন সকাল ও রাতে খাওয়ার পর কুলকুচি করুন।
*সময় পেলে মুখের ভেতর লং বা এলাচির দানা রাখুন
*ধূমপান, জর্দা, পান খাওয়া পরিহার করুন।
*আলকোহল জাতীয় পানীয় পরিহার করা।

Source: mujallarmu
দাঁতের জন্য খাদ্য
দাঁতের জীবনীশক্তি বাড়ানোর জন্য নির্বাচিত কিছু খাদ্যের প্রতি নজর বাড়াতে হবে। ফল জাতীয় খাবার যেমন, আমলকি, কামরাঙ্গা, কলা, আপেল, বরই খেতে হবে, এতে মাড়ি ও দাঁত শক্ত হয়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যেকোন ধরণের শাকসব্জি রাখুন, দাঁত ও হাড়ের জন্য শাকসবজি দারুণ উপকারি। মাংস খাওয়ার পর অবশ্যই যতদ্রুত সম্ভব দাঁতের ফাঁক থেকে মাংসকণা বের করে আনতে হবে। যেসব ফলে এসিড আছে যেমন, তেঁতুল, আমড়া, কামরাঙ্গা ইত্যাদি খাওয়ার পর কুলি করে নেয়া ভাল। যেসব খাবার খেলে পেটে সমস্যা হয় সেসব খাবার পরিহার করা উচিত। দেহের জন্য অনিরাপদ খাবার সন্দেহাতীতভাবে দাঁতের জন্যও অনিরাপদ।