প্রাক-ইসলাম আরবের ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যবচ্ছেদ

11

ইসলামের আগমনের পূর্বেকার সময় প্রাচীন আরব ছিল সাংস্কৃতিক বৈচিত্রে ভরপুর। তাদের সেসময়ের বিশ্বাস ও চর্চাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ঢালাওভাবে তাদের উপর দোষ দেওয়ারও পক্ষপাতী নন বর্তমান অনেক ঐতিহাসিক। কারন প্রাচীন আরব উপদ্বীপের অঞ্চলভেদে সামাজিক ভারসাম্য বজায় ছিল। কোন কোন অঞ্চলে সামাজিক অস্থিরতা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও শহরাঞ্চলে মোটামুটি ধরণের উন্নত সভ্যতার উপস্থিতি বিদ্যমান ছিল। আরব উপদ্বীপের ধর্মীয় বিশ্বাসও ছিল এমন বৈচিত্র্যময় । ইহুদি ও খ্রিষ্টানগণ এক ঈশ্বরেও বিশ্বাসী হলেও আস্তে আস্তে তারা ধর্মের মূল ভিত্তি থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে। একটা শ্রেণী ব্যস্ত ছিল পৌত্তলিকতায়, মূর্তিপূজাই ছিল তাদের ধ্যান৷ ছিল প্রকৃতিপূজক, কাহিন নামধারী কিছু দরবেশসম কবিরাজ যারা কিনা জ্বিনের সাহায্যে সাধারণের রোগ নির্মূল করে দেয়ার দাবি করত। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় এই আরব পৌত্তলিকতার স্বর্ণযুগে একেশ্বরবাদী হানাফী সম্প্রদায় এবং কিছুসংখ্যক পুরোদস্তুর নাস্তিকেরও উপস্থিতি ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বের আরবের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়েই আজকের আলোচনা।

ইসলামপূর্ব আরবের মানচিত্র
ইসলামপূর্ব আরবের মানচিত্র; Source: lostislamichistory.com

প্রাচীন আরবের ধর্মীয় বিশ্বাসের রকমফের

এত এত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আরবের ইতিহাসে ঘুরেফিরে আলোচিত হয় পৌত্তলিকদের নামধাম, তাদের ক্রিয়াকলাপ। এর কারন হিসেবে বলা যায় মক্কাকে কেন্দ্র করে এই পৌত্তলিকরাই যশখ্যাতিতে এগিয়ে গিয়েছিল, হজ মৌসুমকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যে দাপট খাটিয়ে তারা আরব ইতিহাসে যথাযথ ভাবেই তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নেয়। তাদের ইচ্ছামত আকৃতি দিয়ে মূর্তি বানিয়ে পূজা করত। মূর্তিপূজা ছাড়াও চন্দ্র, তারা, সূর্য, বায়ূকেও তারা পূজা করত। এমনকি কেউ কেউ বালু, পাথরখন্ড, গাছকেও পূজা করতে ছাড়তো না। বানু কুরাইজা গোত্রের মাধ্যমে সর্বপ্রথম মক্কার কাবা ঘরে দেবমূর্তি প্রতিস্থাপন হয়৷ যা শেষপর্যন্ত ৩৬০ পর্যন্ত গিয়ে পৌছায়৷

ইবনে হিশামের মতে, মেসোপটেমিয়া হতে সর্বপ্রথম  আরবে দেবমূর্তির আগমন ঘটান আমর ইবনে লুহাই নামের এক ব্যক্তি। মক্কার উপাসনালয়ের সর্বপ্রথম মূর্তির নাম ছিল হোবল৷ ভবিষ্যত গণনার জন্য এ মূর্তির চারপাশে তীর রাখা হত। আল উজ্জাহ, আল লাত ও আল মানাহ ছিল আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেবী। এই তিন দেবীকে তারা ঈশ্বরের কন্যা মনে করত। মানাহ ছিল ভাগ্যের দেবী৷ মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী কুবেদ নামক স্থানে মানাহ দেবীর আলাদা মন্দির ছিল৷ তায়েফের নিকটবর্তী স্থানে ছিল লাত দেবীর মন্দির। মক্কা ও অন্যান্য অঞ্চলের লোকরা সেখানে গিয়ে পূজা করে আসতো। আর উজ্জাহ দেবীর মন্দির ছিল মক্কার পূর্বদিকে নাকলা নামক জায়গায়। কুরাইশরা উজ্জাহকে বিশেষ শ্রদ্ধা করত। প্রধান দেবদেবীর বাইরেও ওয়াদ, ইয়াগুস, ইয়ায়ুক ও নসর দেবদেবীর কথা পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে৷ অনেক সময় কোন বিশিষ্ট নর-নারীও মূর্তিরূপে পূজিত হত। নারীমূর্তি শুয়া ছিল হামদান গোত্রের পরম পূজিত এক দেবী। মাজহিদ গোত্রের সিংহীমূর্তি ইয়াগুস, হিমাইয়ারী গোত্রের শকুনির মূর্তি নসর প্রাক ইসলামি যুগের পৌত্তলিকতার জীবন্ত উদাহরন বহন করে চলেছিল৷ আরব পৌত্তলিক সমাজে নারী বিগ্রহের বর্তমানতার কারনে মনে করা হয় প্রাচীন আরবে বোধহয় মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।

আল লাত
আল লাত; source: mabtribune.com

কাহিন সম্প্রদায়

আরবের সরলপ্রাণ মানুষগুলোর তন্ত্রমন্ত্র ও যাদুটোনায় অগাধ বিশ্বাস ছিল। ভবিষ্যদ্বাণী ও ভাগ্য গণনাকে তারা খুব গুরুত্ব দিত। পরকাল সম্বন্ধে কোন ধারণা না থাকায় তারা হয়ে উঠে জড়বাদী। তাদের এমন বিশ্বাসকে পুঁজি করে সমাজে গড়ে উঠে এক দৈবজ্ঞ শ্রেণী। এ শ্রেণীকে বলা হত কাহিন। তারা দাবি করত জ্বিনকে কাজে লাগিয়ে তারা যেকোনধরণের রোগমুক্তি ঘটাতে পারে। কাহিনরা মন্ত্রতন্ত্রে বিশেষ পারদর্শী ছিল এবং কাব্যিক ছন্দে মন্ত্র উচ্চারণ করে ভূতে পাওয়া রোগীদের রোগ নিরাময় করতে পারত। ভবিষ্যতবাণী প্রদান করত বলে কাহিনগণ সমাজে সম্মান পেত।

আস্তিক সম্প্রদায়

পৌত্তলিকতার এমন উর্বরভূমিতেও তৎকালীন আরবে স্রোতের বিপরীতে কিছু মানুষ চলার চেষ্টা করত। তারা মূর্তিপূজা এবং প্রকৃতিপূজাকে প্রত্যাখান করে একত্ববাদের বিশ্বাস ধারণ করত। কিন্তু তারা এক আল্লাহর স্বরূপ কিংবা ইবাদাত সম্পর্কে কোন নির্দিষ্ট চিন্তার গোড়াপত্তন করতে পারে নাই যার কারনে মক্কায় তাদের প্রভাবও ছিল সীমিত এবং তাদের কেউ ঘাটাতো না।  উমাইয়া বিন আবি সালত এবং তারকা বিন নওফেল নামের মুহাম্মদ (সাঃ) এর দুই জ্ঞাতি ভ্রাতা এই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন। এদেরকে হানিফ বলা হত।

নাস্তিক সম্প্রদায়

ধর্মীয় বিশ্বাসের এমন বৈচিত্র্যের মাঝে আরব উপদ্বীপে কিছুসংখ্যক নাস্তিকের অবস্থানও ছিল। ধর্ম, ঐশ্বরিক বিষয়সমূহে তারা ছিল নিরাসক্ত। এই সম্প্রদায়ের বিশ্বাসী মানুষদের সংখ্যা কম থাকার কারনে এরা আর পাদপ্রদীপের আলোয় আসেনি বা আসার চেষ্টাও করেনি।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়াত প্রাপ্তির পর পুরো আরব উপদ্বীপে সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে সব রকমের পরিবর্তন সংঘটিত হয়। আর ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর সেই কথিত জাহেলিয়া যুগেরও অন্ত ঘটে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গায় ইসলামের একাধিপত্য কায়েম হয়।

Source Feature Image
Leave A Reply
11 Comments
  1. MichaelLIc says

    http://mexicoph24.life/# medicine in mexico pharmacies

  2. StevenJeary says

    best online pharmacy india: buy medicines from India – top 10 pharmacies in india

  3. MichaelLIc says

    http://mexicoph24.life/# pharmacies in mexico that ship to usa

  4. StevenJeary says

    reputable indian pharmacies: buy medicines from India – п»їlegitimate online pharmacies india

  5. StevenJeary says

    purple pharmacy mexico price list: Online Pharmacies in Mexico – reputable mexican pharmacies online

  6. MichaelLIc says

    http://indiaph24.store/# best online pharmacy india

  7. StevenJeary says

    canada pharmacy online: Large Selection of Medications from Canada – canadian valley pharmacy

  8. MichaelLIc says

    https://mexicoph24.life/# mexican mail order pharmacies

  9. MichaelLIc says

    http://indiaph24.store/# india online pharmacy

  10. MichaelLIc says

    https://canadaph24.pro/# onlinecanadianpharmacy

  11. MichaelLIc says

    https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy online ship to usa

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More