বিশ্বকাপ ফুটবল-১৯৮২: পাওলো রসির কৃতিত্বে আন্ডারডগ ইতালির তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়

4

স্বাগতিকঃ

১৯৬৬ সালেই ঠিক হয়েছিল ৮২ এর আয়োজক হবে স্পেন। পূর্বের কথামত পশ্চিম জার্মানি ভোট দিয়েও জানান দেয় নিজেদের সমর্থন।

স্পেন বিশ্বকাপ এর অফিশিয়াল লোগো, পোস্টার, মাসকট
স্পেন বিশ্বকাপ এর অফিশিয়াল লোগো, পোস্টার, মাসকট

ভেন্যুঃ

১৪টি শহরকে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নির্বাচন করা হয়। মোট ১৭টি স্টেডিয়ামে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়, ২০০২বিশ্বকাপ এর আগ পর্যন্ত যা একটি রেকর্ড ও ছিল।

 অংশগ্রহণকারী দলঃ

১৬টি দলে পরিবর্তে প্রথমবারের মত ২৪টি দল নিয়ে বিশ্বকাপ এর মূলপর্ব শুরু হয়। ফলে এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে অংশগ্রহণ করা দলের সংখ্যাও বেড়ে যায়। দলের সংখ্যা বাড়াতে অঞ্চলভিত্তিক স্লটও বেড়ে যায়। নতুন ফরম্যাটে তা গিয়ে দাড়ায় ইউরোপ-১৪, কনমেবল-৪, ওশেনিয়া-১, আফ্রিকা-২, কনক্যাকাফ-২, এশিয়া-১।

ফরম্যাটঃ 

স্পেন বিশ্বকাপের জন্য একটি নতুন ফরম্যাট দাড় করানো হয়। প্রথম রাউন্ড এর জন্য ২৪টি দল যোগ্যতা অর্জন করে এবং মোট ছয়টি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে প্রতিটি জয়ের জন্য দুই পয়েন্ট এবং ড্র এর জন্য এক পয়েন্ট দেয়া হয়। পয়েন্ট সমান হলে গোল ব্যবধান আলাদা করতে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় পর্বের জন্য প্রতি গ্রুপের ১ম ও ২য় স্থান অর্জনকারী ১২টি দলকে পুনরায় প্রতি গ্রুপে ৩টি দল রেখে মোট ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। ৪গ্রুপের ৪টি চ্যাম্পিয়ন দলকে নিয়ে পরবর্তীতে সেমি-ফাইনাল, ৩য় স্থান নির্ধারণী এবং ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম রাউন্ড গ্রুপ পর্বঃ

ইতালি-ক্যামেরুন গ্রুপ পর্বে সমান পয়েন্ট নিয়ে শেষ করে। তাদের গোল ব্যবধান ও ছিল একই, ড্র সংখ্যা একই, মুখোমুখি দেখায় ও ফল ছিল ড্র। গোল পক্ষে এগিয়ে থাকায় ইতালি উৎরে যায় গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে। হুবহু একই ঘটনা ঘটে গ্রুপ৫ এ স্পেন এবং ইয়োস্লোভাকিয়ার মাঝে। গোল পক্ষে এগিয়ে থাকায় স্বাগতিক স্পেন উঠে যায়। অস্ট্রিয়া-আলজেরিয়ার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে কিন্তু গোল ব্যবধানে স্পষ্টতই এগিয়ে থাকায় অস্ট্রিয়া পশ্চিম জার্মানির সাথে উঠে যায়।

দ্বিতীয় রাউন্ডঃ

দ্বিতীয় পর্বের জন্য ঠিক করা ছিল যদি একাধিক দলের পয়েন্ট সমান হয় তবে তাদের ক্ষেত্রে দেখা হবে প্রথম রাউন্ড এর গ্রুপ পর্বে কারা বেশি পয়েন্ট পেয়েছে, গ্রুপ পর্বের গোল ব্যবধান, গ্রুপ পর্বে বেশি গোল পক্ষে এর সংখ্যা। ইতালি সেবার খুব ভাগ্যবান!!! গ্রুপেও পড়েছিল বলা যায়। ইতালি-আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল নিয়ে ছিল গ্রুপ সি। দুটো দেশকেই হারিয়ে পুরো ৪পয়েন্ট নিয়েই পরের রাউন্ড এ ওঠে ইটালি। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের অপর ম্যাচে সক্রেটিসদের ব্রাজিল ৩-১ গোলে হারায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে।

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে ব্রাজিলের সক্রেটিস
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে ব্রাজিলের সক্রেটিস

ব্রাজিলের এই দলটিকে বিশ্বকাপের আরেকটি  সেরা দলগুলোর একটি ধরা হয় যারা বিশ্বকাপ না জিতেই ফিরে গেছে। ইতালির তোপে সেবার ম্লান হয়ে গিয়েছিল তারাও। পোল্যান্ড-সোভিয়েত ইউনিয়ন এর মাঝেই শুধু পয়েন্ট সমান হয় কিন্ত পোল্যান্ড গোল ব্যবধানেই এগিয়ে ছিল অনেক। আলাদা করে ১ম রাউন্ড দেখার দরকার পড়েনি আর। পোল্যান্ড এর সাথে, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স সেমি-ফাইনাল এ উন্নীত হয়।

নক আউট স্টেজঃ

পাওলো রসির কাঁধে চেপে সেবার ইতালির জয়যাত্রা চলছিল। সেমিতেও তার ২ গোলেই ছিটকে যায় পোল্যান্ড।

৫৪ বিশ্বকাপ এর হাঙ্গেরি, ৭৪~৭৮ বিশ্বকাপ এর হল্যান্ড এর বিশ্বকাপ না পাওয়ার মতই সম্ভবত আরেকটি অভাগা দল ছিল ফ্রান্স/ব্রাজিল এর দলটি। ফ্রান্স এর সোনালি প্রজন্মের দলটি সেবার প্রত্যাশার পারদের তুলনায় নিজেদের সবটাই ঢেলে দিয়েছিল। নির্বিঘ্নে চলেও এসেছিল সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত। ৭৪এর হল্যান্ড হন্তারক এর ভূমিকায় আবর্তিত হওয়া জার্মানি এবারও পরে ফ্রান্সের সামনে। ৯০মিনিটের খেলা ১-১ গোলে শেষ হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯৮ মিনিটে ফ্রান্স এগিয়েও যায় ৩-১ গোলে। কিন্তু ১০মিনিটের মাঝে ২ গোল শোধ করে খেলা টাই-ব্রেকারে নিয়ে যায় জার্মানি। ৫-৪ এ নিষ্পত্তি হয়, প্লাতিনিদের ফ্রান্স এর সোনালি প্রজন্মের যাত্রা সেবার সেমিতেই আটকে যায়। পোল্যান্ডের কাছে হেরে ৪র্থ হয়ে তারা দেশে ফেরত আসে। এই জার্মানিই আবার গ্রুপ পর্বে আলজেরিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল।

ফ্রান্স-জার্মানি পেনাল্টি শুটের এক মুহূর্ত
ফ্রান্স-জার্মানি পেনাল্টি শুটের এক মুহূর্ত

ফাইনালঃ

১১ জুলাই ৯০হাজার দর্শকের সমাগম হয় ফাইনাল দেখতে। ইতালির সাথে জার্মানরা বরাবরই দুর্বল। সেবার ফাইনাল এর তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ৫৭মিনিটে রসির গোল দিয়ে শুরু এরপর টারদেল্লি, আল্টোবেল্লির গোলে ৩-০ গোল দিয়ে বসে ইটালি।

ফাইনাল ম্যাচের একটি গোল এর মুহূর্ত
ফাইনাল ম্যাচের একটি গোল এর মুহূর্ত

৮৩মিনিটে একটি সান্ত্বনার গোল শোধ করে জার্মানরা।

সর্বোচ্চ গোলদাতাঃ

পুরো টুর্নামেন্ট এ ১০০ জন প্লেয়ার গোল করেন (মোট ১৪৬টি গোল)। ৬টি গোল দিয়ে ইটালির পাওলো রসি সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।

৮২ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ইটালির পাওলো রসি(৬টি), ছবিতে ব্রাজিলের বিপক্ষে বল নিয়ে ছুটছেন তিনি, এই ম্যাচে হ্যাট্রিক করেছিলেন তিনি
৮২ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ইটালির পাওলো রসি(৬টি), ছবিতে ব্রাজিলের বিপক্ষে বল নিয়ে ছুটছেন তিনি, এই ম্যাচে হ্যাট্রিক করেছিলেন তিনি

এক নজরে ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৮২

স্বাগতিকঃ স্পেন

সময়কালঃ ১৩ই জুন থেকে ১১ জুলাই

ব্যবহৃত বলঃ Adidas Tango Espana

অংশগ্রহণকারী দলঃ ২৪টি

সর্বোচ্চ গোলদাতাঃ ইটালির পাওলো রসি(৬টি(

চ্যাম্পিয়নঃ ইটালি(৩য় শিরোপা)

রানার্সআপঃ পশ্চিম জার্মানি

তৃতীয়স্থানঃ পোল্যান্ড

চতুর্থঃ ফ্রান্স

মোট ভেন্যুঃ ১৭টি

মোট ম্যাচঃ ৫২টি

মোট গোল সংখ্যাঃ ১৪৬

উপস্থিতিঃ ২১,০৯,৭২৩

সেরা খেলোয়াড়ঃ ইটালির পাওলো রসি

উদীয়মান তরুন খেলোয়াড়ঃ ম্যানুয়েল আমরস

Source Featured Image
Leave A Reply
4 Comments
  1. Ykaicn says

    buy rybelsus 14 mg pill – order generic desmopressin buy cheap generic desmopressin

  2. Iqcqiy says

    purchase terbinafine generic – buy fulvicin 250mg pills order grifulvin v generic

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More