‘সভ্যতার লীলাভূমি প্যারিস নিয়ে বিস্ময়কর ও মজার তথ্যসমূহ’
আইফেল টাওয়ার একটি মেলার প্রবেশপথ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিলো –
প্যারিস শহরের অন্যতম আকর্ষণ আইফেল টাওয়ার মূলত ১৯৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য “বিশ্ব প্রর্দশনী” (Exposition Universelle ) নামক একটি আন্তর্জাতিক মেলার প্রবেশপথ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিলো। বিখ্যাত প্রকৌশলী আলেকসঁদ্র গুস্তাভ এফেল (Alexandre Gustave Eiffel) আইফেল টাওয়ার ডিজাইন করেন।
অদ্ভুত হলেও সত্যি, ১৮৮৭ সাল থেকে ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত মোট দুই বছর, দুই মাস, দুই দিনে আইফেল টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং ১৯৩০ সাল পর্যন্ত আইফেল টাওয়ারই ছিলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা। বিশ্ববাসীর অন্যতম আকর্ষণ হয়ে থাকা এই স্থাপনাটির উচ্চতা ৩২০ মিটার (১০৫০ ফুট)। মজার ব্যাপার হচ্ছে দিনের বেলায় সূর্যের তাপে প্রসারণের ফলে আইফেল টাওয়ারের উপরের দিকের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
প্যারিসকে সিটি অফ লাইট ( City Of Light ) বলার মূল কারণ প্যারিসে বুদ্ধিবৃত্তিক বা জ্ঞানচর্চা –
অনেকেই ভাবেন প্যারিসের রাস্তায় রাতের বেলায় শত শত লাইট জ্বালানোর কারনে হয়তো প্যারিসকে আলোর শহর বা সিটি অফ লাইট বলা হয়। কিন্তু এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে প্যারিস একসময় সারা বিশ্বের অন্যতম জ্ঞানচর্চার তীর্থস্থান ছিলো। প্যারিসে অনেক আগে থেকেই দর্শন,শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা হয়ে আসছে। শত শত সৃষ্টিশীল মানুষ এই শহরে তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করেছেন এবং বিভিন্ন সৃষ্টির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন প্যারিসকে।
প্যারিস সিনড্রোম (Paris Syndrome) – পর্যটকদের এক অদ্ভুত সাময়িক মানসিক ভারসাম্যহীনতা –
প্যারিস সিনড্রোম হচ্ছে প্যারিসে প্রথমবার ঘুরতে আসা কিছু পর্যটকদের ক্ষণস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা। প্যারিস শহরের ব্যাপক সাংস্কৃতিক ভিন্নতায় বিস্মিত হয়ে কিছু পর্যটকের মধ্যে সাময়িক বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া, হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টিভ্রম লক্ষ করা যায়। মূলত কল্পনায় প্যারিসকে যেমন ভাবা হয়েছিলো তার সাথে বাস্তবের প্যারিসের অমিলের কারণে এটা ঘটে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্যারিস সিনড্রোম সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যণীয় জাপানি পর্যটকদের মধ্যে।
পুরো প্যারিস শহরের কোথাও রাস্তায় কোন থামুন চিহ্ন (Stop Sign) নেই –
পুরো প্যারিসের এতো এতো রাস্তার কোথাও থামার জন্য ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। ২০১২ সাল পর্যন্ত পুরো প্যারিস শহরে মাত্র একটি স্থানে থামুন চিহ্ন (Stop Sign) ছিলো, যা তুলে নেয়া হয়। প্যারিস শহরে ব্যাপক দ্রুত গতিতে গাড়ি চলে এবং তবুও থামার জন্য ট্রাফিক সিগন্যালের প্রয়োজন হয়না। এর মূল কারণ হচ্ছে প্যারিসের রস্তাগুলোর ব্যাপক প্রশস্ততা। তবে একটি নিয়ম প্যারিসে সবাই জানে যা হচ্ছে দুই রাস্তার সংযোগস্থলে ক্রসিং এর সময় রাস্তার ডান দিক থেকে যে আসবে তার প্রায়োরিটি বেশি, অর্থাৎ যে বামে থাকবে তার যানবাহনটির গতি কমিয়ে ডানের যানবাহনের জন্য যায়গা করে দিতে হবে।
প্যারিসের সবচেয়ে পুরনো ব্রিজের নাম নতুন ব্রিজ (Pont Neuf ) –
হ্যাঁ, প্যারিস শহরে অবস্থিত সবচেয়ে পুরনো ব্রিজটির নাম হচ্ছে নতুন ব্রিজ (Pont Neuf) । এই ব্রিজটিই সর্বপ্রথম প্যারিস শহরকে একটি আধুনিক পর্যটন শহরে পরিণত করে। বর্তমানে প্যারিস শহর বলতেই চোখে ভেসে উঠে আইফেল টাওয়ার, কিন্তু একসময় প্যারিস শহর বলতেই এই ব্রিজটি বুঝাতো। প্যারিসের মানুষ এই ব্রিজটিকে শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন স্থান মনে করতো। এই ব্রিজ দিয়েই চলতো ব্যাপক যানবাহন ও মালামাল পারাপার।
প্যারিস শহরেও একটি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি (Statue of Liberty) আছে! –
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের লিবার্টি আইল্যান্ডে অবস্থিত বিখ্যাত স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ভাস্কর্যটি ফ্রান্সের জনগণ ১৮৮৬ সালে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলো। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির একটি অবিকল প্রতিরূপ প্যারিসেও আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্যারিসে অবস্থিত ভাস্কর্যটি নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ভাস্কর্যের দিকে মুখ করে আছে যা ফ্রান্স-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব প্রকাশ করে।
প্যারিস শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান আইফেল টাওয়ার নয় বরং নটর ডেম ক্যাথেড্রাল (Notre Dame Cathedral) –
প্যারিস শহরের আইফেল টাওয়ারের বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিচিতির কারণে অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন প্যারিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান আইফেল টাওয়ার, কিন্তু বাস্তবে ২০১৪ সালের জরিপে দেখা যায় প্রতি বছর দর্শনার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী আসে নটর ডেম ক্যাথেড্রালে। নটর ডেম ক্যাথেড্রাল হচ্ছে প্যারিসের সবচেয়ে পুরনো স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি। মজার ব্যাপার হচ্ছে নটর ডেম ক্যাথেড্রালে এমানুয়েল (Emmanuel) নামক একটি দৈত্যাকার ঘণ্টা আছে যার ওজন প্রায় ১৩ টন।
প্যারিস শহরের রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার! –
হা হা, হ্যাঁ, এটা সত্যি। প্যারিস শহরে রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফের সংখ্যা প্রায় দশ হাজারের কাছাকাছি! আপনি যদি প্রতিদিন একটা করে রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফেতে যান তাহলে প্রায় ২৭ বছর লাগবে সবগুলো রেস্টুরেন্ট শেষ করতে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অফিসে দুপুরে খাওয়ার বিরতিতে আমাদের দেশের মত লাঞ্চবক্স থেকে খাবার খাওয়া হয়না। সবাই রেস্টুরেন্টে যায় খাওয়া দাওয়া করতে।
প্যারিস শহরের প্রতিটি গাছের হিসাব রাখা হয় (অবস্থান এবং আকৃতিসহ)! –
অদ্ভুত হলেও সত্যি, এই শহরে অবস্থিত প্রতিটি গাছের হিসাব রাখা হয়। প্রতিটি গাছের আকৃতি ও অবস্থান সম্পর্কে তথ্য আছে। ৩ বছর আগের এক জরিপের তথ্যমতে প্যারিসে অবস্থিত গাছের সংখ্যা প্রায় ৪৭০,০০০ টি।
আপনি চাইলে বিনামূল্যে ডিনার করতে পারবেন প্যারিসের জিম হায়নেসের (Jim Haynes) বাসায়! –
হ্যাঁ, আপনি চাইলে জিম হায়নেস-এর অতিথি হিসেবে তাঁর বাসায় ডিনার করতে পারবেন। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, জিম হায়নেস নামের এই ব্যাক্তি প্রায় ত্রিশ বছর ধরে সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষজনকে প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় তাঁর বাসায় খওয়ান। তাঁর একটি ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট আছে (http://www.jim-haynes.com) যেখানে আপনি ডিনার এর জন্য মেসেজের মাধ্যমে তাঁকে জানাতে পারেন এবং তাঁর আতিথেয়তা গ্রহণ করতে পারেন।
buy semaglutide 14 mg generic – rybelsus pill buy DDAVP generic