বিশ্বকাপ ২০১৮ এর হট ফেভারিটদের তালিকায় আছে ব্রাজিল। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের এবারের লক্ষ্যও শিরোপা। হেক্সা জয়ের মিশন নিয়েই এবারের বিশ্বকাপ যাত্রা তাদের। কোয়ালিফায়ার ও প্রীতি ম্যাচে ভাল করে এখন উড়ছে ব্রাজিল।
গত বিশ্বকাপে জার্মানির সাথে হতাশাজনক ম্যাচ থেকে শিক্ষা নয়ে বদলে গেছে অনেকটাই ব্রাজিল দল। সবার আগে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাইই বলে দেয় কতটা বদলে গেছে ব্রাজিল দল। কোচ তিতের এতে অবদান সবচেয়ে বেশী। জোগো বোনিতোর সাথে ইউরোপীয় ফুটবলের মিশ্রণে তিনি গড়ে তুলেছেন এক অনবদ্য এক দল।
তবে ইতিহাস তাদের পক্ষে না। ১৯৫৮ সালের পর ইউরোপে হওয়া কোন বিশ্বকাপে ব্রাজিল জিততে পারেনি। ব্রাজিল বরং জার্মানির কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে। গতবার তাদের মাটিতেই তো জার্মানি জিতে ভেন্যুর ব্যাপারটা নতুন করে গড়ল। ইউরোপে বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র টিম তো ব্রাজিলই।
গ্রুপ ই এর প্রথম ম্যাচে ১৭ জুন রাত ১২ টায় মুখোমুখি ব্রাজিল ও সুইজারল্যান্ড। ফিফা র্যাংকিং এ ব্রাজিলের অবস্থান দুই নাম্বারে আর সুইজারল্যান্ডের ছয়।
তবে প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে হারানো প্রতিপক্ষের জন্য কঠিনই। ২০১০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে প্রথম ম্যাচেই থামিয়েছিল এই সুইজারল্যান্ডই। প্রথম ম্যাচেই হারিয়েছিল স্পেনকে।
পরিসংখ্যানঃ
সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করলে ব্রাজিল এগিয়ে থাকলেও খুব একটা পিছিয়ে নেই সুইজারল্যান্ড। সুইজারল্যান্ড আর ব্রাজিলের পরিসংখ্যানও সেই কথাই বলে।
ব্রাজিলের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচঃ
ব্রাজিল সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে জার্মানি, চিলি, রাশিয়া আর জাপানের সাথে জয়। ইংল্যান্ডের সাথে ড্র।
ব্রাজিল ৩-০ অস্ট্রিয়া
ব্রাজিল ২-০ ক্রোয়েশিয়া
জার্মানি ০-১ ব্রাজিল
ব্রাজিল ৩-০ রাশিয়া
ব্রাজিল ৩-০ চিলি

সুইজারল্যান্ডের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচঃ
সুইজারল্যান্ড সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে তারা গ্রীস, পানামা আর জাপানের সাথে জিতেছে। ড্র করেছে স্পেন আর নর্দান আয়ারল্যান্ডের সাথে।
সুইজারল্যান্ড ২-০ জাপান
স্পেন ১-১ সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ড ৬-০ পানামা
সুইজারল্যান্ড ১-০ গ্রীস
সুইজারল্যান্ড ০-০ নর্দান আয়ারল্যান্ড

মুখোমুখিঃ
ব্রাজিল আর সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি দেখা হয়েছে মোট আটবার। ব্রাজিল জিতেছে তিনটি, ড্র তিনটিতে আর হার ২ টিতে।
মুখোমুখি সর্বশেষ তিন ম্যাচঃ
সুইজারল্যান্ড ১-০ ব্রাজিল(২০১৩)
ব্রাজিল ২-১ সুইজারল্যান্ড(২০০৬)
ব্রাজিল ১-০ সুইজারল্যান্ড (১৯৮৯)

বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সাথে সুইজারল্যান্ডের দেখা হয়েছে একবারই। সেটাও ১৯৫০ সালে। এটি শেষ হয়েছিল ২-২ ড্র তে।
এ তো গেল পরিসংখ্যানের কথা। পরিসংখ্যান দেখে কিন্তু বোঝাই যায় ব্রাজিলের সুইজারল্যান্ড বধ খুব একটা সহজ হবেনা। তবে প্রতিপক্ষের মনে ভয় জাগাতে নেইমার, কৌতিনহো, মার্সেলো, জেসুস, সিলভা, এলিসন, উইলিয়ান ফিরমিনো নামগুলোই যথেষ্ট।বাছাইপর্বে এদের সবাইকেই দেখা গেছে পারফর্ম করতে। তাই ব্রাজিল সমর্থকরাও আছে ফুরফুরে মেজাজে।

আর থাকবেইনা কেন তিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২১ ম্যাচে হার মাত্র একটিতে। ১৭ টিতে জয়। গোল করেছে ৪৭ টি। জার্মানি জুজু কাটিয়ে কদিন আগে জিতেছে তাদের বিপক্ষেও যদিও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই তার প্রথম ম্যাচ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে ব্রাজিল গোল খেয়েছে দুবার।
এদিকে শক্তিশালী স্পেনের বিপক্ষে ড্র করে সুইজারল্যান্ডও কম যায়না। সুইজারল্যান্ড কোচ পেটকোভিচ তো বলেই দিলেন নেইমারকে থামাতে তার কৌশল ঠিক করা আছে। নেইমারই ব্রাজিলের মুল তারকা কিনা।
ব্রাজিল টিমঃ
দলে মূল গোলরক্ষক হিসেবে থাকবেন রোমার অ্যালিসন, এছাড়া আছেন ম্যাসিটির মোয়ারেস।ডিফেন্সে আছেন অভিজ্ঞ রিয়াল মাদ্রিদ তারকা মার্সেলো, এটিএমের লুইস, ম্যানসিটির দানিলো, স্বদেশী ক্লাব করিন্থিয়াসের ফাগনার, পিএসজির থিয়াগো সিলভা, মার্কুনিয়োস, ইন্টারের মিরান্ডা। মিডে আছেন রিয়াল তারকা ক্যাসেমিরো, বার্সা তারকা কৌটিনহো, পাওলিনহো, চেলসির উইলিয়ান, ম্যানসিটির ফার্নান্দিনহো। অ্যাটাকে আছেন দলের সবচেয়ে বড় তারকা পিএসজির নেইমার, এছাড়া আছেন ম্যানসিটির জেসুস, লিভারপুলের ফিরমিনো, যুভেন্তাসের ডগলাস কস্তা।

এডভান্টেজঃ
- নেইমারের প্লেমেকিং সহ গোল স্কোরের ক্ষমতা।
- এটাকিং মিডফিল্ডার হিসাবে কৌতিনহোর পারফরম্যান্স
- সিলভা মিরান্ডা জুটির সলিড ডিফেন্স।
ডিসএডভান্টেজঃ
- মার্সেলোর উপরে উঠে যাওয়ায় রক্ষণে ঘাটতি হয়ে যায়।
- পাউলিনহোও মিডে খুব একটা ভাল কিছু করে দেখাতে পারেননি।
- উইলিয়ান নজরকাড়া পারফরম্যান্স কম।
সুইজারল্যান্ড টিমঃ
এবারের বিশ্বকাপে দলে মূল গোলরক্ষক হিসেবে থাকবেন মনগ্লাডবাখের সুমের কিংবা ডর্টমুন্ডের বুরকি। ডিফেন্সে আছেন যুভেন্তাস তারকা মিডফিল্ডার এবং দলের অধিনায়ক স্টিফেন লিশেখসটেনার, এছাড়া থাকবেন ডোজোউরো, লাংগ, এসি মিলানের রিকার্ডো রদ্রিগুয়েজ, লা করুনার স্খার, তুলুজের মোউবান্ডেজি। মিডে আছেন স্টোক সিটি তারকা শাকিরি, উদিনেসের বেহেরমি, বোলোগনোর ডেজামাইলি, আর্সেনাল তারকা গ্রানিত শাকা, ফ্রাংফুর্টের গেলসন ফার্নান্দেজ, হফেনহামের জুবের। অ্যাটাকে আছেন তারকা হারিস সেফেরোভিচ, মনগ্লাডবাখের ড্রিমিচ, গাভারানেভিচ।

এডভান্টেজঃ
- সুইস অধিনায়ক লিচেনস্টাইনার ও রদ্রিগেজ এটাকে সহযোগিতা।
- জার্দান শাকিরি এবং জুবেরের মিডে অবস্থান
ডিসএডভান্টেজঃ
- ভাল ফিনিশারের অভাব
ব্রাজিল ফ্যাক্টঃ
- ব্রাজিল তাদের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ে শেষ ১২ ম্যাচে কখনো হারেনি। তার মধ্যে ১০ টিই জয় আর দুইটি ড্র। গ্রুপ পর্যায়ে শেষ হেরেছিল ১৯৯৮ সালে নরওয়ের কাছে।
- ১৯৮২ সালের পর প্রত্যেকটি বিশ্বকাপে ব্রাজিল তাদের গ্রুপে শীর্ষে থেকে গ্রুপ পর্যায় পার হয়েছে। গ্রুপ পর্যায় পার হতে পারেনি শেষ ১৯৬৬ সালে।
- ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ১৮ টি ম্যাচের ১৬ টিতেই জিতেছে। শেষ হরেছিল ১৯৩৪ সালে স্পেনের বিপক্ষে।
- ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ১১ গোলের পাচটিতে অবদান ছিল নেইমারের।
- ব্রাজিল বর্তমানে ফিফা র্যাংকিং এর দুই নাম্বার দল।
- ব্রাজিল কনেম্বল কোয়ালিফায়ারে শীর্ষে অবস্থান করে বিশ্বকাপে এসেছে।
সুইজারল্যান্ড ফ্যাক্টঃ
- সুইজারল্যান্ড তাদের গ্রুপে প্রথম হয়েছিল একবারই ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে। সেই বছর তারাই একমাত্র দল ছিল যারা কোন গোল হজম করেনি। ৪ ম্যাচে তাদের জালে কোন বল ঢুকেনি।
- সুইজারল্যান্ড তাদের কোয়ালিফায়ারে পর্তুগালের বিপক্ষে একটি ম্যাচ ছাড়া আর কোন ম্যাচ হারেনি।
- জার্দান শাকিরি বড় টুর্নামেন্টগুলিতে সুইজারল্যান্ডের শেষ ৬ টি গোলের পাচটিতেই তার অবদান ছিল। গত বিশ্বকাপে হন্ডুরাসের বিপক্ষে তার হ্যাটট্রিকও আছে।
- গত চার বিশ্বকাপের কোনটিতেই নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারেনি সুইসরা। ২০১০ আসরে স্পেন ও গত আসরে ইকুয়েডরকে হারিয়ে শুরু হয়েছিল তাদের বিশ্বকাপ।
কি বলছেন কোচ আর অধিনায়করা?

ব্রাজিল কোচ তিতে বলেছেন, “সুইজারল্যান্ড গত কয়েক বছর ধরেই দারুণ খেলছে। তাদের মূল শক্তি রক্ষণ। প্রচন্ড গোছানো একটা দল তারা। মাঝমাঠের সাথে রক্ষণ এবং আক্রমণ- দু’বিভাগের বোঝাপড়াও দারুণ। আর সেটপিস থেকেও তারা বেশ কার্যকরী। গ্রুপে আমাদের প্রতিওক্ষদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী তারাই। কোনোভাবেই তাদের খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।”
ব্রাজিল অধিনায়ক মার্সেলো বলছেন, “আমরা ওদের (সুইজারল্যান্ড) শক্তি, দুর্বলতার ব্যাপারে বেশ ভালমত হোমওয়ার্ক করেছি। প্রত্যেক বিভাগেই ওদের দারুণ কিছু ফুটবলার আছে। এই পর্যায়ে এসে কাউকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তবে কাল আমরা জয়ের জন্যই মাঠে নামব।”

সুইস কোচ পেটকোভিচ বলছেন ‘আমাদের নিজেদের ভাগ্যকে নিজেদেরই আহবান করতে হবে। আর রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলে সেটা সম্ভব না। আমরা জয়ের জন্যই খেলব। ড্র আমার কাছে কেবল অর্ধেক ফলাফলের সমান। আমরা সর্বোচ্চ পয়েন্টই পেতে চাই।’
সুইস অধিনায়ক স্টেফান লিখস্টেইনার তাঁর সতীর্থদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘কাদের বিপক্ষে খেলছি সেটা এত ভাবার কিছু নেই। নিজেদের খেলা নিয়েই বেশি ভাবতে হবে আমাদের। আমাদের দলটা মানসিকভাবে বেশ শক্তিশালী, আজ মাঠে সেটা প্রয়োগ করে দেখানোর পালা।’
ব্রাজিল আর সুইজারল্যান্ড দুই দলেরই রয়েছে ডিফেন্সে অনন্য রেকর্ড। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দুইদলই চাইবে সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রেখে জেতার। এটাকের চেয়ে রক্ষণের লড়াইটাই হবে বেশী।
গতকাল নবাগত আইসল্যান্ড যেভাবে আর্জেন্টিনাকে আটকিয়ে দিল সুইজারল্যান্ড কি পারবে সেভাবে ব্রাজিলকে থামাতে। কিছুক্ষন পরই জানা যাবে। তবে নেইমার জেসুস কৌতিনহো মার্সেলোকে সামলানো সুইজারল্যান্ডের রক্ষণের জন্য কঠিনই।
Source:
skysports.com
Daily Star