মাটির গভীরে বিভিন্ন শিলাস্তর ভেদ করে গড়ে তোলা হয়েছিল এক সুবিশাল নগরী। মানুষের জীবন ধারনের জন্য সব রকমের সুব্যবস্থা ছিল সে নগরীতে। তাই মাটির নিচ থেকে না বেরিয়েই সেখানকার অধিবাসীরা অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারত অনেক দিন।
এরকম নগরীর সচরাচর দেখা মেলে বিভিন্ন হলিউড সিনেমায়। সিনেমা ছাড়াও সাইন্সফিকশন, কল্পকাহিনী, কিংবা পুরাতন পুঁথির মধ্যে গল্প আকারে এর টুকরো টুকরো দেখা মেলে। আমাদের কাছে বাস্তবে তো এরকম পাতাল শহরের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। শুধু অকল্পনীয়ই নয়, বরং বিস্ময়করও বটে। আর আমাদের সেই বিস্ময় আরো ঘনীভূত হবে ডেরিনকুয়ু পাতাল শহরের নামটি শুনলে।
হ্যা বাস্তবের সেরকম একটি বিস্ময়কর পাতাল শহরের কথাই বলব আজ। এটি কোন হলিউড সিনেমা কিংবা পুরাতন পুথির কথা বলছি না। বলছি তুরস্কের নেভশেহির প্রদেশের কাপাডোশিয়ার মাটির নিচের ডেরিনকুয়ু পাতাল শহরের কথা।
ডেরিনকুয়ু পাতাল শহর, তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নেভশেহির প্রদেশে কাপাডোশিয়ায় অবস্থিত। এর ভূগর্ভস্থ গুহাগুলো যে কাউকে বিস্মিত করে। গুহাগুলো সম্পূর্ণভাবে মানবশ্রমে নির্মিত, যা আজো কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। শত্রুপক্ষের হামলা থেকে নিরাপদে থাকার জন্য এসব গুহা নির্মিত হয়।
তুরস্কের এই ভূগর্ভস্থ শহরে একসঙ্গে ২০ হাজার লোক আশ্রয় নিতে পারত। তুরস্কের প্রাচীন আনাতোলিয়ান সভ্যতার বিস্ময়কর স্থাপত্যের মধ্যে উন্নতির ব্যাপক ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়। উন্নতস্কুল, গির্জা, ঘোড়া রাখার আস্তাবল ছিল সেখানে। তবে সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যপার হচ্ছে, এই শহরের স্থানীয়দের সভাস্থলগুলো- যা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০ থেকে ৮০মিটার নিচে অবস্থিত এবং এর স্থাপত্য নকশা দেখার মতো। এই সভাস্থলগুলোর দেয়াল নরম আগ্নেয়শিলা দিয়ে তৈরি করা হয়।
খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গুহাগুলো নির্মাণ করা হয়। মূলত লুটতরাজ ও শত্রুপক্ষের হামলা থেকে শহরবাসীকে রক্ষার জন্য এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিলো। যদিও এটি একটি গুপ্ত আস্তানা ছিল। তবে গুহাগুলোর গাঠনিক সৌন্দর্য অনেক আকর্ষণীয়।
এছাড়া গুহাগুলোতে জীবন যাপনের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ছিল। মাটির উপরে প্রায় ৬০০টি দরজা ছিল, যা দিয়ে এই ভূগর্ভস্থ শহরে প্রবেশ করা যেত। পাতাল শহরে বায়ু চলাচলের জন্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৫০০টি চোঙা। এ ছাড়া অসংখ্য সুড়ঙ্গ, গলি ও রাস্তা তৈরি করা হয় এমনভাবে যেন যেকোনো মানুষের কাছেই শহরটি একটি জটিল ও দুরুহ বিন্যাসবিশিষ্ট বলে মনেহয়।
খাবারের মজুদসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষের আশ্রয়ের জন্য এটি যথেষ্ট ছিল। সুদীর্ঘ সময় ধরে এই মাটির নিচের শহর আজো অনেক ভালো অবস্থায় টিকে আছে। ভেতরের অবকাঠামো এখনো অনেক মজবুত।
সুসজ্জিত ডেরিনকুয়ু শহরঃ
ডেরিনকুয়ু শহরটি এমন পরিকল্পিতভাবে সুসজ্জিত করে তৈরী করা হয়েছিল যাতে এর মধ্যে প্রায় ২০০০০ (বিশ হাজার) মানুষ অনায়াসে তাদের প্রাত্যহিক জীবন যাপন করতে পারে।
শহরের বিভিন্ন তলাতে খুঁজে পাওয়া গেছে মদ তৈরীর সরঞ্জাম, তেলের ঘাঁনি, আস্তাবল, ভূগর্ভস্থ ভান্ডার এবং গুদামঘর, ভোজন কক্ষ, নিজস্ব প্রর্থনা কক্ষ ইত্যাদি। শহরটির দ্বিতীয় তলায় খুঁজে পাওয়া পাওয়া গেছে কিছু সমাধী। দ্বিতীয় তলার এই বিচিত্র সমাধীগুলো এবং এর অন্যান্য স্থাপনাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রত্নতত্ত্ববিদরা নিশ্চিত হয়েছেন যে দ্বিতীয় তলাটা প্রার্থনা এবং ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হতো।
শহরটির বিভিন্ন পাশ দিয়ে আছে প্রায় ৫৫ মিটারের লম্বা লম্বা বিশালাকার বায়ু চলাচলের চিমনি। এটি লুকানো ছিল, যাতে উপর থেকে কেউ দেখে এটির অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছু বুঝতে না পারে। পাতাল শহরটির বিভিন্ন পাশ দিয়ে নলাকৃতির রাস্তার অস্তিত্ব খুজে পাওয়া গেছে। ধারনা করা হয়, এখান দিয়ে শহরের বাসিন্দাদের জন্য পানীয় সরবারহ করা হতো।
নির্মাণ ইতিহাসঃ
তুরস্কের সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের দেয়া তথ্যমতে, শহরটি তৈরী করেছিল কাপাডোসিয়া অঞ্চলের ইন্দো-ইউরোপীয় ফ্রিজিয়ান জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা ৭ম-৮ম খ্রিস্টপূর্ব সময়ের মধ্যে। কেননা এই শহরেরর গুহাগুলোর মধ্যে পাওয়া গেছে ৭ম-৮ম খ্রিস্ট্রপূর্ব সময়ের অনেকগুলো শিলালিপি, যা লেখা হয়েছে বর্তমানে বিলুপ্ত ফ্রিজিয়ান ভাষায়।
ডেরিনকুয়ু শহরটি সম্পূর্নভাবে তৈরী হয়েছিল বাজেনটাইন যুগে। তখন এখানকার অধিবাসীদের সাথে আরবের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যুদ্ধ প্রতিনিয়ত লেগেই থাকতো। ধারনা করা হয় যখন (৭৮০-১১৮০) খ্রিস্ট্রপূর্ব সময়ে “আরব বাজেনটাইন” যুদ্ধ হয়েছিল তখন এখানকার অধিবাসীরা এই পাতাল শহরটি ভীষনভাবে ব্যবহার করতো। আরবরা আক্রমন করলেই সাধারন অধিবাসীরা এখানে তাদের তল্পিতল্পা নিয়ে লুকিয়ে পড়তো।
এই ডেরিনকুয়ু পাতাল শহরটি আশপাশের আরো বেশ কয়েকটি পাতাল শহরের সাথে যুক্ত থাকতো এর কয়েক মাইল ব্যাপী লম্বা গুপ্ত রাস্তা তথা টানেল দ্বারা। “কায়মাকলি” বা “ইনিগাপ” তেমনই আরেকটি পাতাল শহর, যেটি ডেরিনকুয়ু থেকে ৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত। এই দুই শহরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য রয়েছে প্রায় ৫ কি.মি. লম্বা টানেল।
কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিক এই পাতাল শহরটির মধ্যে কিছু আলামত আবিস্কার করেছেন, যা মধ্য বাজেনটাইন যুগ, ৫ম এবং ১০ম শতাব্দীর চিহ্ন বহন করে। কিছু কিছু প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে ১৪ শতাব্দীতেও এই পাতাল শহরটি এখানকার খ্রিস্টান অধিবাসীরা ব্যবহার করতো মঙ্গোলীয়দের বহিরাক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
রহস্যের চাদরে ঘেরা ডেরিনকুয়ুঃ
অটোম্যান সাম্রাজ্যের সময়ে এ শহরটি তুর্কি মুসলিম শাসকেরা শরনার্থীদের জন্য ব্যবহার করতো। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই পাতাল শহরটি ব্যবহৃত হতো টর্চার সেল হিসেবে। অটোম্যান শাসকগন এখানে কাপাডোসিয়ান-গ্রীক অধিবাসীদের ধরে এনে নির্যাতন করতো।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানী R. M. Dawkins ১৯০৯-১৯১১ সাল পর্যন্ত এই পাতাল শহরের কাপাডোসিয়ান-গ্রীক অধিবাসীদের উপর গবেষনা করেন। তার গবেষনায় এ বিচিত্র তথ্য উঠে আসে।
৩৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রীক ইতাহাসবিদ এবং সৈনিক Xenophon তার অভিজ্ঞতার আলোকে এই ডেরিনকুয়ু পাতাল শহরটি সম্পর্কে একটি বই লেখেন। বইটির নাম “এনাবেসিস”
এই পাতাল গুহার মধ্যে কিভাবে তখন মানুষ বিভিন্ন পশু (ভেড়া, ছাগল) পালন করতো এবং জীবন ধারন করতো তার বিশ্লেষনমূলক বর্ননা দিয়েছেন গ্রীক ইতিহাসবিদ সৈনিক Xenophon.
১৯২৩ সালে গ্রীস এবং তুরস্কের মধ্যে জনগন বিনিময় হয়। তখন এই পাতাল শহরের খ্রিস্টান অধিবাসীগন চুড়ান্তভাবে ডেরিনকুয়ু পাতাল শহর ত্যাগ করে। এই পাতাল শহরটি পুনরায় নতুন ভাবে ভিন্ন আঙ্গিকে আবিস্কার করা হয় ১৯৬৩ সালে। তখন একে একে বেরিয়ে আসে এর বিভিন্ন রহস্যময় এবং গোলকধাঁধাপূর্ন সুসজ্জিত কক্ষ।
এই ডেরিনকুয়ু পাতাল শহরটি ১৯৬৯ সালে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত এই শহরের প্রায় অর্ধেক অংশ দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশযোগ্য করে রাখা হয়েছে। বাকি অর্ধেক বিপজ্জনক জায়গা বলে বন্ধ রাখা হয়।
আদিম মানুষের বিচিত্র মেধার সংমিশ্রনে নির্মিত এ ডেরিনকুয়ু পাতাল শহর। নিরেট রহস্যের চাদরে মোড়ানো তুরস্কের এ পাতাল শহরটি পৃথিবীর সৌন্দর্য পিপাসুদের যেন সর্বদাই টানে। অমোঘ সে সৌন্দর্য, অমোঘ সে সৌন্দর্যের টান।
তথ্যসূত্রঃ
Wikipedia
https://www.historicmysteries.com/derinkuyu-underground- city-cappadocia/
purchase rybelsus for sale – order desmopressin online cheap how to get desmopressin without a prescription
what is the difference between zyprexa and zyprexa zydis
memory loss with wellbutrin
how long does zetia stay in your system
does zofran take a few days to work
buy prandin 1mg online cheap – buy empagliflozin 25mg for sale empagliflozin 10mg without prescription