হাতের লেখায় যখন ব্যক্তিত্ব প্রকাশ

0

ধরুন, আপনি কাউকে চিঠি লিখে পাঠালেন। আর প্রাপক আপনার চিঠি পড়েই বুঝে ফেলল আপনার পার্সোনালিটি সম্পর্কে।  কি চমকে গেলেন? সে  কিভাবে বুঝলো? ভাবছেন ,সে শার্লক হোমস গোছের কেউ?  নাহ্.. এর জন্য শার্লক হোমস হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিছু পড়াশোনা থাকলেই সম্ভব। কেননা গবেষণা করে দেখা গেছে হাতের লেখার মাধ্যমে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনেকাংশে ধারণা করা যায়।

হাতের লেখা নিয়ে গবেষণার এই ক্ষেত্রটি  গ্রাফোলজি/ গ্রাফোঅ্যানালাইসিস নামে পরিচিত। এর সাধ্যমে একজন মানুষের হাতের লেখা দিয়ে লেখকের ব্যক্তিত্ব এবং লেখার সময়ে ঐ লেখকের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব। ১৬২২ সালের দিকে গ্রাফোলজির চর্চাটা শুরু হলেও, উনবিংশ শতাব্দীতে এসে এটি অনেক মানুষের কাছে বেশ আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠে। কেননা এই সময়ে মনোবিজ্ঞানকে পেশাগতভাবে নেওয়া শুরু হয়। আর মনোবিজ্ঞান অনুসারে, মানুষের হাতের লেখার সাথে তার মনস্তাত্ত্বিক দিকটির  সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিশিষ্ট গ্রাফোলজিস্ট ক্যাথ ম্যাকনাইট এর মতে- মানুষের হাতের লেখা অ্যানালাইসিস করে একজন গ্রাফোলজিস্ট পাঁচ হাজারেরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন।

আমেরিকানরা সাধারণত জানুয়ারির ২৩ তারিখটি ‘National Handwriting Day ‘ হিসেবে উদযাপন করে থাকে। ১৯৭৭ সালে Writing Instrument Manufacturer s Association  জন হ্যানককের জন্মদিনের দিনটিকে Handwriting day হিসেবে নির্ধারণ করে।জন হ্যানকক হলেন  আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের প্রথম সিগনেচারকারী।

চলুন জেনে নেয়া যাক, মানুষের ব্যক্তিত্ব নির্ণয়ে গ্রাফোলজিস্টদের কিছু কৌশল সম্পর্কে।

লেখার আকারঃ-

কেমন আপনার হাতের লেখা? আকারে বড়? অথবা ছোট?  আমেরিকার National Pen Company এর মতে, যাদের লেখা আকারে ছোট,  তারা সাধারণত লাজুক, সুবিবেচক  হয়। এরা কাজে মনযোগী এবং সতর্ক থাকে সবসময়। তারা তাদের বিষয়গুলো সবসময় ব্যাক্তিগত রাখতে চায় এবং কাজকর্মে পারফেক্ট হতে চায়।এরা মিতব্যয়ী ও হয়ে থাক।

লেখার আকার
লেখার আকার

আর আকারের দিক থেকে বড় লেখা যাদের, তারা সাধারণত মানুষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পছন্দ করে।  এরা দলবদ্ধ হয়ে ঘুরতে পছন্দ করে।  মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চেষ্টা করে থাকে। আর স্বভাবে এরা মোটেও কৃপণ নয়।

আর যাদের লেখা মধ্যম আকারের,  তারা আচরণে সাধারণত নমনীয়। যেকোন পরিবেশে এরা সহজেই মানিয়ে নিতে পারে।

দুটো  অক্ষরের  মধ্যবর্তী  দূরত্বঃ-

লেখার শব্দের অক্ষরগুলো যদি একটি অপরটির সাথে লাগানো থাকে,  তাহলে ধারণা করা যায় মানুষটি যুক্তিতে বিশ্বাসী এবং নিয়মনিষ্ঠ।  সে তার বিভিন্ন ধরনের  সিদ্ধান্তগুলো নেয় খুবই সতর্কভাবে।

আর অক্ষরগুলো যদি আলাদা আলাদা হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে মানুষটি বুদ্ধিমান। যে কোন ব্যাপারে সে নিজের সিদ্ধান্তকেই সাধারনত প্রাধান্য দেয়।

 

দুটো  শব্দের  মধ্যবর্তী  দূরত্বঃ-

যাদের লেখাতে দুটো শব্দের মধ্যবর্তী দূরত্ব বেশি,  তারা সাধারণত একটু স্বাধীনচেতা হয়। এরা খুব একটা ভীড় পছন্দ করে না।

দুটো শব্দের মধ্যবর্তী দূরত্ব
দুটো শব্দের দূরত্ব

আর দূরত্ব কম যাদের লেখায়, তারা বন্ধুদের সাথে থাকতে পছন্দ করে অর্থ্যাৎ এরা ভীড় পছন্দ করে। তবে সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এরা খুব বেশি সচেতন নয়। তারা তাড়াহুড়ো  করে একইসময়ে অনেক কিছু করে ফেলার চেষ্টা করে।

দুটো লাইনের মধ্যবর্তী দুরত্বঃ-

লেখার লাইনগুলোর মধ্যে যারা নিয়মিত দূরত্ব বজায় রাখে, তারা সবসময় যে কোন ক্ষেত্রে তাদের সীমা বা লিমিট সম্পর্কে সচেতন থাকে। তারা খেয়াল রাখে ঠিক কতটুকু পর্যন্ত তার যাওয়া উচিত বা করা উচিত।

দুটো লাইনের মধ্যবর্তী দূরত্ব
দুটো লাইনের মধ্যবর্তী দূরত্ব

যাদের লাইনগুলোর মাঝে দুরত্ব কম, তারা সাধারণত সময় সম্পর্কে একটু কম সচেতন।

লেখার তীর্যকতাঃ-

লেখা যদি ডানদিকে হেলানো হয়, তাহলে মানুষটি বন্ধুত্বপরায়ণ, সংবেদনশীল এবং আবেগপ্রবণ। সে যে কোন ব্যাপারে হৃদয়বৃত্তিকে প্রাধান্য দেয়। সে সবকিছুতেই পরিবার এবং বন্ধুদের আগে মূল্যায়ন করে থাকে।

লেখা বামদিকে হেলানো মানে মানুষটি অন্তর্মুখী বা আত্মকেন্দ্রিক। নিজের বিষয়গুলো সে নিজের মধ্যেই রাখতে পছন্দ করে।

লেখার তীর্যকতা
লেখার তীর্যকতা

আর যদি লেখাগুলো কোনদিকেই হেলানো না হয় অর্থ্যাৎ সোজা হয়, তাহলে বুঝতে হবে মানুষটি যুক্তিবাদী। আবেগকে প্রশ্রয় দেয় না। সে খুবই কর্মতৎপর এবং দৃঢ়চেতা।

লেখার ধরণঃ-

লেখার ধরন যদি সূক্ষ্ম  বা পয়েন্টেড হয়,  তাহলে ধরে নিতে হবে মানুষটি সুচতুর, উচ্চভিলাষী। যেকোন নতুন বিষয়ে দারুণ আগ্রহী। নিজেদের বেশির ভাগ বিষয়েই এরা নিজেদের সবচেয়ে কড়া সমালোচক। তারা নিজেদের ব্যাপারে খুব দৃঢ় হলেও অন্যদের ব্যাপারে ধৈর্য্যশীল।

গোটা গোটা হাতের লেখা বা রাউন্ডেড হাতের লেখার মানুষগুলো সাধারণত সৃজনশীল এবং শিল্পমনা হয়।  তারা পারতপক্ষে যে কোন ধরনের ঝামেলা এড়িয়ে চলে।  তারা অবশ্য মানুষের গুণের কদরও করে থাকে।

পেন প্রেশারঃ-

যারা লেখার সময় লিখনীতে খুব প্রেশার দেয়, তারা কথা দিয়ে কথা রাখার মত মানুষ। তারা যেকোনো বিষয়কে ই সিরিয়াসভাবে দেখে থাকে।

যাদের প্রেশার আরো বেশি দেয়, তারা প্রায় সময় নার্ভাস থাকে। যে কোন সমালোচনায় এরা খুব তাড়াতাড়ি প্রতিক্রিয়া দেখায়।

যারা হালকা প্রেশার দিয়ে লিখে, তারা সংবেদনশীল এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।  তবে এরা মানুষ হিসেবে খুব বেশি প্রাণবন্ত হোন না।

ধীর / দ্রুতঃ-

 তাড়াতাড়ি লিখতে পারা মানুষগুলো অধৈর্য্য হয়ে থাকে। তারা সময় অপচয় করা যেমন পছন্দ করেন না ,তেমন সময় অপচয়কারীকেও পছন্দ করেন না।

যাদের লেখা একটু ধীর গতির, তারা সাধারণত একটু গোছানো প্রকৃতির এবং নিয়মনিষ্ঠ। তারা স্বাবলম্বী হতে পছন্দ করে।

 

ছোট হাতের  ‘i’  এর ডটঃ-

ইংরেজী ছোট হাতের i এর ডট যারা ঠিক উপরেই দেয়, তারা গোছানো প্রকৃতির এবং সহানুভূতিশীল।

যাদের ডট  একটু বামদিকে সরে যায়, কল্পনাপ্রবণ হয়ে থাকে।

আর যদি ডানদিকে ডটটা দিয়ে থাকে,  তাহলে তারা কল্পনাপ্রবণের সাথে শিশুসুলভও।

যাদের  i এর ডট অনেক উপরে থাকে, তারা সাধারণত অনেক উচ্চভিলাষী হয়। এরা সাধারনের বাইরে  ভাবতে পছন্দ করে।

আর ডটটা যদি i এর ডানদিকে স্ল্যাশ (/) এর। মত করে দেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে তারা কম ধৈর্য্যশীল। তারা তাদের জ্ঞান স্বল্পতার কারণে সৃষ্ট ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে আগ্রহী হয় না।

এছাড়াও বড় হাতের I যদি অন্যান্য অক্ষরগুলোর চেয়ে অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়,  তবে বুঝতে হবে মানুষটি অহংকারী এবং নিজের মতামতকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।

 

ছোট হাতের t এর ক্রসঃ-

ইংরেজী ছোট হাতের t এর ক্রস যারা একদম উপরে দেয়, তারা মুলত উচ্চভিলাষী এবং সবকিছুতে আশাবাদী হয়ে থাকে। এদের আত্মসম্মানবোধ অন্যদের তুলনায় একটু বেশি হয়।

t এর ক্রস যারা মাঝ বরাবর দেয়, তারা নিজেদের মধ্যে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যদিও এরা মানুষ হিসেবে আত্মবিশ্বাসী হয়।

t এর ক্রস
t এর ক্রস

T এর ক্রসটা যাদের একটু দীর্ঘ, তারা খুবই সংকল্পবদ্ধ, উদ্যমী এবং জেদী প্রকৃতির হয়।।

Tএর ক্রস ছোট করে যারা দেয়, তারা সাধারনত অলস এবং এরা খুব একটা সংকল্পের প্রতি দৃঢ়তা দেখাতে পারে না।

ছোট হাতের  l এর লুপঃ-

লেখার সময় ইংরেজী ছোট হাতের l এর লুপটা যদি একটু  চওড়া হয়,  তাহলে বুঝতে হবে মানুষটি সবসময় নিরুদ্বেগ এবং স্বতঃস্ফূর্ত থাকে। এরা কিছুটা উদারমনা ও হয়ে থাকে।

L এর লুপ
L এর লুপ

l এর লুপ যদি ছোট  বা সরু  হয়, তবে এরা হচ্ছে সন্দেহপ্রবণ। দুঃশ্চিন্তা করতে হবে, এমন কোন কাজ এরা সাধারনত এড়িয়ে চলে।

 

ছোট হাতের yএর হুকঃ-

যাদের ইংরেজী ছোট হাতের y এর হুক লম্বা, তাদের বেশির ভাগ ভ্রমণপিপাসু হয়ে থাকে। যাদের লেখায় খাটো হুক আছে, তারা ঘরপ্রিয় মানুষ।

y এর হুক
y এর হুক

y এর হুক যদি সরু হয়,  তবে বুঝতে হবে মানুষটি পক্ষপাতীত্ব করে। আর চওড়া হলে, ধারনা করা যায়, মানুষটির বন্ধুর সংখ্যা অনেক বেশি।

সিগনেচারের স্পষ্টতাঃ-

যাদের সিগনেচার অস্পষ্ট,  তারা সাধারণত প্রাইভেসি বজায় রেখে চলে। তারা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেই ভালবাসে। নিজেকে খুব বেশি প্রকাশ করে না। এরা খুব সাবধানতা রেখে মানুষজনকে বিশ্বাস বা ভরসা করে।

স্পষ্ট সিগনেচারের মানুষ সাধারণত খুব আত্মবিশ্বাসী হয়। তারা সবার মাঝে  নিজেকে প্রকাশ করতে ভালোবাসে।

এখনকার অনেক গ্রাফোলজিস্টদের মতে, হাতের লেখার মাধ্যমে কিছু কিছু রোগাক্রান্ত রোগীর লক্ষণও বোঝা যায়।

এছাড়াও মানুষ যখন কোন মিথ্যা কথা লিখে, তখন তার লেখা স্বাভাবিক লেখাগুলোর চেয়ে আলাদা হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More