সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণঃ পুরাণ, কুসংস্কার ও বিজ্ঞান (পর্ব-১)
হাইস্কুলে উঠে মাথায় কমিকের নেশা চেপেছিলো। ঐসময় হার্জের বিখ্যাত কমিক টিনটিন সিরিজের Prisoners of the Sun (সূর্যদেবের বন্দী) বইয়ে পড়েছিলাম- প্রোফেসর ক্যালকুলাসকে উদ্ধার করতে গিয়ে টিনটিন ও তার বন্ধু ক্যাপ্টেন হ্যাডক ইনকা অধিবাসীদের হাতে বন্দী হয়। ইনকা’রা ছিলো সূর্যের পূজারী। ইনকা রাজার মমিকে অসম্মান করার অপরাধে তিনজনকেই বলি দেয়ার জন্য সূর্যদেবের মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দীদশা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে গিয়ে টিনটিন তার পকেটে থাকা খবরের কাগজের টুকরোতে সূর্যগ্রহণের শিডিউল দেখতে পায়। সৌভাগ্যক্রমে সূর্যগ্রহণের ঠিক আগমুহূর্তে তাদেরকে বলির মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন বুদ্ধিমান টিনটিন চিৎকার করে বলে ওঠে- তোমরা যদি এক্ষুনি আমাদের ছেড়ে না দাও, তাহলে তোমাদের সূর্যদেবতাকে গায়েব করে ফেলবো। তার কথা শুনে ইনকা’রা হেসে ওঠে। কিন্তু খানিক বাদেই যখন চারদিক অন্ধকার করে পূর্ণগ্রহণ শুরু হয়, তখন সবাই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে টিনটিনের পায়ে লুটিয়ে পড়ে এবং নিঃশর্ত মুক্তির বিনিময়ে সূর্যকে ফেরত দিতে অনুরোধ করে। কিছুক্ষণ পর প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই গ্রহণ কেটে যায় এবং টিনটিনের কল্পিত ক্ষমতায় ভীত হয়ে ইনকা’রা সবাইকে সসম্মানে মুক্তি দেয়। গল্পটা পড়ে মনে হয়েছিলো, টিনটিনের মুক্তির পেছনে তার নিজের উপস্থিতবুদ্ধির পাশাপাশি ইনকাদের অজ্ঞতা ও কুসংস্কারও দায়ী ছিলো।
আরেকটু বড় হয়ে হলিউড সাই-ফাই Transcendence –এর একটি দৃশ্যে জনি ড্যাপকে আক্ষেপ করে বলতে শুনেছিলাম- People fear what they don’t understand. They always have. আদিম গুহামানবেরা অন্ধকারকে প্রচন্ড ভয় পেতো। কারণ অন্ধকারের স্বরূপ তারা জানতো না। তাছাড়া রাত নামতেই জঙ্গলের হিংস্র সব জন্তুজানোয়ার শিকারের সন্ধানে বের হয়ে আসতো। ফলে আদিম মানুষের কাছে অন্ধকার ছিলো অজানা এক আতঙ্ক! অন্ধকারের ভয়ে সূর্যোদয়ের পরে তারা খাবারের সন্ধানে বের হতো আর সূর্যাস্তের আগেই গুহায় ফিরে পাথর দিয়ে গুহামুখ বন্ধ করে দিতো। আগুন আবিষ্কারের আগে মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিলো দিনের আলো, যার উৎস সূর্য। দিনের বেলা খাবারের সন্ধানে বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সেই মানুষগুলো যখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতো- হঠাৎ করে একফালি আঁধার এসে সূর্যকে গ্রাস করে নিচ্ছে, তখন অশুভ আতঙ্কে তাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতো। কারণ সুদূর আকাশে কি হচ্ছে, সে সম্পর্কে আদিম মানুষের কোনো ধারণাই ছিলো না।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে ধীরে ধীরে মানুষের চিন্তাচেতনারও বিকাশ ঘটলো। মানুষ ভাবতে শিখলো, প্রশ্ন করতে শিখলো। কিন্তু প্রস্তর ও ধাতুকেন্দ্রিক সভ্যতার সাথে পাল্লা দিয়ে বিজ্ঞানের বিকাশ তখনো ততোটা ঘটে নি। তাই বলে মানুষের জিজ্ঞাসা তো থেমে থাকার নয়! ফলে মানুষ তার পর্যবেক্ষণের সাথে চিরাচরিত বিশ্বাস ও ভয়ের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সকল লৌকিক ঘটনার অলৌকিক ব্যাখ্যা তৈরি করতে শুরু করলো। যেমনঃ ভারতীয় পুরাণে গ্রহণকে বলা হয় রাহুগ্রাস। সমুদ্রমন্থনের সময় অসুর রাহু অমৃত চুরি করে গলধঃকরণ করেছিলো। সূর্য ও চন্দ্র নামের দুই দেবতা সেটা দেখে ফেলে। অমৃত পান করে রাহুর মতো ভয়ঙ্কর অসুর অমর হয়ে যাবে, এই আশঙ্কায় গলা দিয়ে অমৃত নামার আগেই এক কোপে রাহুর মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। দেহের মৃত্যু ঘটলেও অমৃতের প্রভাবে রাহুর মাথাটি অমর হয়ে যায়। সেই থেকে প্রতিশোধের নেশায় রাহুর ধড়শুন্য মাথাটি সূর্য ও চন্দ্রকে আকাশে তাড়া করে বেড়ায়। কখনো কখনো ধরে গিলেও ফেলে, কিন্তু কাটা গলার ফুটো দিয়ে কিছুক্ষণ পরেই ওরা বের হয়ে যায়। ভারতীয় পুরাণে এভাবেই রাহুগ্রাস দিয়ে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উপমহাদেশের বহু মানুষ এখনো এই ধারণায় বিশ্বাসী।
এই উপমহাদেশেই শুধু নয়, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই গ্রহণ সম্পর্কে প্রাচীন অনেক বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এই যেমন প্রাচীন চাইনিজদের ধারণা, মাঝেমধ্যে মহাকাশ থেকে একটি ড্রাগন এসে সূর্যকে দিয়ে লাঞ্চ সারে। এর ফলে সূর্যগ্রহণ হয়।
নর্স পুরাণ অনুসারে, ক্ষুধার্ত একটি নেকড়ে এসে সূর্যকে খেয়ে ফেলে। প্রাচীন ভিয়েতনামীদের বিশ্বাস, দৈত্যাকার একটি ব্যাঙ সূর্যকে খেয়ে ফেলে। প্রাচীন কোরিয়ানদের মতে, দুষ্ট একটি কুকুর এসে আকাশ থেকে সূর্যটাকে চুরি করে নিয়ে যায়। কিছু নেটিভ আমেরিকানদের ধারণা, প্রকান্ড এক ভাল্লুক এসে সূর্যের গায়ে কামড় বসানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সূর্য তার ক্ষুধা মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় কিছুদিন পরে রাতের বেলা চুপিচুপি এসে চাঁদটাকেও খেয়ে যায়। এজন্যই আকাশে গ্রহণ লাগলে প্রাচীন চাইনিজ, নর্ডিক, ভিয়েতনামিজ, কোরিয়ান এবং নেটিভ আমেরিকানরা আকাশের দিকে তুমুল শব্দে ঘটিবাটি নেড়ে কল্পিত প্রাণীদের গ্রাস থেকে সূর্য ও চন্দ্র বেচারাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতো, কিংবা এখনো করে।
প্রাচীন গ্রিকদের ধারণা, যখন পৃথিবীর মানুষের অন্যায়-অবিচার সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন মানবজাতিকে পাপের শাস্তির কথা মনে করিয়ে দিতে কিছু সময়ের জন্য সুর্যদেব সমগ্র পৃথিবীকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে পাতালে চলে যান। এস্কিমো’রা বিশ্বাস করে, সূর্যদেবী মালিনা তার বোন চন্দ্রদেবী অ্যানিংগানের উপর রাগ করে প্রায়ই পালিয়ে যায়। মালিনাকে খুঁজে পাওয়ার পর অ্যানিংগান যখন তাকে জাপ্টে ধরে রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে, তখন সূর্যগ্রহণ হয়। আফ্রিকার টোগো ও বেনিনে বসবাসকারী কয়েকটি সম্প্রদায়ের মতে, সূর্য ও চন্দ্র যখন আকাশে একে অন্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখনই সূর্যগ্রহণ হয়। চন্দ্র-সূর্যের এই দ্বৈরথ থামানোর আশায় ওই সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেদের মধ্যকার সকল বিবাদ তখনকার মতো মিটিয়ে ফেলে।
সূর্যগ্রহণের মতো চন্দ্রগ্রহণ কেও বিশ্বের অনেক লোক অশুভ বলে মনে করে। অনেকের ধারণা, ব্লাড মুন বা রক্তিম চাঁদ অশুভ শক্তির প্রতীক। এসময় পৃথিবীতে অশুভ শক্তির দৌরাত্ম বেড়ে যায় বলেও অনেকে মনে করে। প্রাচীন ইনকা সভ্যতার অধিবাসীদের ধারণা ছিলো, একটি বিশাল জাগুয়ার (কালো রঙের বাঘ) চাঁদকে খেয়ে ফেলার কারণে চন্দ্রগ্রহণ হয়। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অনেকের কাছে ব্লাড মুন স্রষ্টার ক্রোধের প্রতীক। যীশুখ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করার পরে নাকি ব্লাড মুন উদিত হয়েছিলো। যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে মানুষ যে ঘোরতর পাপ করেছিলো, তা স্মরণ করয়ে দিতেই নাকি তারপর থেকে আকাশে প্রায়ই ব্লাড মুন-এর উদয় হয়।
এ তো গেলো পৌরাণিক ব্যাখ্যা। কিন্তু এর কোনোটা কি বিজ্ঞানসম্মত? এর উত্তর দেয়ার আগে আমাদেরকে জানতে হবে বিজ্ঞান কি! বিজ্ঞান শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “বিশেষভাবে লব্ধ জ্ঞান”। অর্থ্যাৎ কোনো ঘটনা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পর্যবেক্ষণ, পর্যাপ্ত পরীক্ষণ এবং গ্রহণযোগ্য যুক্তি বা ব্যাখ্যা- এই তিনের সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানকেই কেবল বিজ্ঞান বলা যাবে। এর কোনো একটি উপাদান অনুপস্থিত থাকলে কিংবা সামান্য ঘাটতি থাকলেও সেটা আর বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত হবে না। এবার খেয়াল করুন, উপরের প্রত্যেকটা কাহিনীতে পর্যবেক্ষণ (সূর্যগ্রহণ কিংবা চন্দ্রগ্রহণ) উপস্থিত, মুখরোচক ব্যাখ্যাও আছে, কিন্তু কোনো ব্যাখ্যাই পরীক্ষালব্ধ নয়, যুক্তিসঙ্গত তো নয়ই। সুতরাং বিজ্ঞানের মানদন্ডে উপরে বর্ণিত কোনো ব্যাখ্যাই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু তাই বলে মানুষের তৃষ্ণা তো থেমে থাকে না। তারই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বিজ্ঞানীরা সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পর্যবেক্ষণ করে, পর্যাপ্ত পরীক্ষণের মাধ্যমে, অত্যন্ত স্বাভাবিক এই ঘটনা দু’টির যুক্তিসঙ্গত এবং গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। আগামী পর্বে আমরা সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সেইসব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করবো। সে পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, কুসংস্কারমুক্ত থাকুন।
Reference:
1. Blood moon: lunar eclipse myths from around the world -by Daniel Brown (Lecturer in Astronomy, Nottingham Trent University)
2. Myths and Superstitions Around Solar Eclipses
3. Blood Moon superstitions and beliefs on lunar eclipse
4. Prisoners of the Sun -by Hergé
http://indiaph24.store/# Online medicine home delivery
indian pharmacy Cheapest online pharmacy indianpharmacy com
http://mexicoph24.life/# pharmacies in mexico that ship to usa
world pharmacy india buy medicines from India cheapest online pharmacy india
http://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies
https://mexicoph24.life/# medication from mexico pharmacy
mexico pharmacy cheapest mexico drugs mexico pharmacies prescription drugs
https://mexicoph24.life/# medicine in mexico pharmacies
top 10 pharmacies in india: indian pharmacy fast delivery – reputable indian online pharmacy
canadapharmacyonline Licensed Canadian Pharmacy online canadian drugstore
http://canadaph24.pro/# canadian pharmacy king reviews
canadian discount pharmacy canadian pharmacy review canadian pharmacies that deliver to the us
https://mexicoph24.life/# reputable mexican pharmacies online
http://indiaph24.store/# Online medicine order
my canadian pharmacy rx Licensed Canadian Pharmacy canadapharmacyonline
https://mexicoph24.life/# best online pharmacies in mexico
indian pharmacies safe: indian pharmacy – india pharmacy mail order
medication from mexico pharmacy mexican pharmacy mexico pharmacies prescription drugs
http://indiaph24.store/# online shopping pharmacy india
where to buy semaglutide without a prescription – buy generic DDAVP over the counter purchase desmopressin without prescription
http://mexicoph24.life/# mexican mail order pharmacies
top 10 online pharmacy in india buy medicines from India mail order pharmacy india
buy semaglutide without prescription – oral glucovance DDAVP for sale online
https://mexicoph24.life/# pharmacies in mexico that ship to usa
online canadian pharmacy review Prescription Drugs from Canada canadian drugstore online
onlinepharmaciescanada com: best canadian pharmacy to buy from – online canadian pharmacy review
https://mexicoph24.life/# reputable mexican pharmacies online
http://indiaph24.store/# top 10 online pharmacy in india
top 10 pharmacies in india buy medicines from India п»їlegitimate online pharmacies india
mexico pharmacies prescription drugs reputable mexican pharmacies online п»їbest mexican online pharmacies
http://indiaph24.store/# cheapest online pharmacy india
mexico drug stores pharmacies: Mexican Pharmacy Online – reputable mexican pharmacies online
http://mexicoph24.life/# mexican rx online
canadian pharmacy sarasota canadian pharmacies canadian pharmacy ratings
http://indiaph24.store/# online pharmacy india
buy prescription drugs from india Generic Medicine India to USA buy prescription drugs from india
https://indiaph24.store/# buy prescription drugs from india
http://mexicoph24.life/# buying from online mexican pharmacy
http://indiaph24.store/# india pharmacy
canadian pharmacy 1 internet online drugstore Licensed Canadian Pharmacy canada drugs online review
https://canadaph24.pro/# online canadian pharmacy
indian pharmacy paypal Generic Medicine India to USA india pharmacy mail order
http://indiaph24.store/# top 10 online pharmacy in india
https://indiaph24.store/# indian pharmacy paypal
п»їlegitimate online pharmacies india Cheapest online pharmacy п»їlegitimate online pharmacies india
https://mexicoph24.life/# medication from mexico pharmacy
pharmacies in mexico that ship to usa best online pharmacies in mexico medicine in mexico pharmacies