জাফলং ট্যুরঃ আদ্যোপান্ত

পাহাড়ের ওপর কুয়াশার মত মেঘ। প্রথম দেখায় ঠাওর করতে কষ্ট হবে। নীল আকাশের মাঝে মেঘে ঢাকা পাহাড় দেখে অন্তত কয়েকমিনিট চোখ ফেরাতে পারবেন না। নীল আকাশ, পাহাড়  আর মেঘ। অজান্তেই বলে ফেলবেন কী সুন্দর!

সিলেটের জাফলং এই তিনে মিলে একাকার। বাংলাদেশে ঘুরবার জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা সিলেট। অন্তত বাংলাদেশের ভূ স্বর্গ বললে কম হবেনা।

জাফলং আর সিলেট সম্পর্কিত কিছু ধারণা পাবেন এই লেখায়

যাবেন কীভাবেঃ বাস অথবা ট্রেন। আর একটু আলিসান ভাবে যেতে চাইলে বিমানে। তবে বিমানে যেতে বাড়ন করব। যাত্রা পথের অনেক সৌন্দর্য দেখতে পারবেন না। বাসে গেলে সায়েদাবাদ বা মুগদা থেকে উঠে পড়ুন ঢাকা সিলেট এর বাসে। ঢাকা থেকে সিলেট এর বাস ভাড়া ৪৭০ টাকা যেকোন বাসে। বাংলাদেশের অন্য যে কোন জায়গা থেকে সিলেট আসা যায়। সেক্ষেত্রে দূরত্ব ভেদে বাস ভাড়া এববগ জার্নির সময় পার্থক্য করে। ঢাকা থেকে সিলেট যেতে ৫/৬ ঘণ্টার মত সময় লাগে।  ভৈরবে হোটেল উজান ভাটি বা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাত্রা বিরতি পাবেন। এর পর হবিগঞ্জ হয়ে সোজা সিলেট কদমতলী বাস স্ট্যান্ড।

যদি ট্রেনে যাইঃ আরও ইন্টারেস্টিং এবং আনন্দময়। লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে যখন ট্রেন যাবে অপরূপ ভিউ পাবেন। আর যদি বৃষ্টি পেয়ে যান তাহলে সোনায় সোহাগা। ভেজা পাহাড়, চা বাগান, ভেজা মাটির গন্ধ। কিছুটা হলেও যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি দেবে আপনাকে। ঢাকা থেকে সিলেট এর আপ ট্রেন সকালে, দুপুরে এবং রাতে। আর ফেরার পথে দুপুর এবং রাতে। শোভন শ্রেনির ভাড়া ২৯৫ আর শোভন চেয়ার ৩২০ টাকা।

থাকব কোথায়ঃ আপনি দীর্ঘ সাত ঘণ্টা পথ পেরনোর পর সিলেট। কদমতলী বাস স্ট্যান্ড বা , স্টেশন থেকে রিকশা বা সি এন জি নিন। সোজা আম্বরখান চলে যান। সাধারণত যাকে দরগার গেইট বলি। অনেক ভালো মানের হোটেল আছে। মোটামুটি দিন প্রতি ভাড়া ১২০০-১৫০০ পর্যন্ত। আর একটু কম টাকায় হলে চলে যান বন্দর বাজার। সেখানে কম দামে কিছু হোটেল আছে।

খাওয়া দাওয়াঃ ঘুরতে এসেছেন এতদূর জার্নি করে। তাই আপাতত খাবার। আশে পাশে অনেক হোটেল আছে। মোটামুটি এক জন ১২০-১৫০ টাকায় ভালোভাবে দুপুর এবং রাতে খেতে পারবেন। একটা সময় ছিল যখন আতপ চাউলের ভাত দেওয়া হতো হোটেল এ। বর্তমানে আর হয়না। এই টেস্ট টা মিস করবেন।

বেড়িয়ে পড়ুনঃ যদি সকালে বের হন পৌঁছে যাবেন দুপুরে আর রাতে গেলে পরদিন সকালে। আশ পাশ টা ঘুরুন। সিলেটে এর শাহাজালাল রহঃ মাজার ঘুরুন। জালালি কবুতর দেখতে পাবেন অনেক। আর পুকুরের বিলুপ্তপ্রায় গজার মাছ। চা বাগান দেখতে চাইলে কাছেই মালনিছড়া টি এস্টেট। চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন সিলেট ক্যাডেট কলেজ, সিলেট বিমানবন্দর আর শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। অন্তত যেদিন যাবেন সেদিনটা মার যাবেনা। ঘুরতে পারবেন কিছুটা হলেও।

বেড়িয়ে পড়ুন জাফলং এর জন্যঃ দরগা গেইট বা অন্য যেকোন জায়গা থেকে সিএনজি রিজার্ভ করুন। সিলেট শহর টু জাফলং। দূরত্ব আনুমানিক যাওয়া আসায় ১২০ কিমি। সিএনজি ভাড়া নিবে ১২০০-১৫০০ টাকা। যত কমাবেন আপনারই লাভ। যেতে মোটামুটি ২ ঘণ্টার মত লাগবে। যাত্রা পথে চোখে পড়বে সিলেট গ্যাসফিল্ড,হরিপুর ফিল্ড, টিলাগরের সিলেট এমসি কলেজ আর জালালাবাদ সেনানিবাস। চাইলে নেমে দেখতে পারেন এসব জায়গা। পথে শাহপরান রহঃ এর মাজার শরীফ ও পড়বে। ঘুরে আসুন।

জাফলং যাবার পথে চোখে পড়বে পাহাড়। পাহাড়ই আপনাকে গন্তব্যে নিয়ে যাবে। মেঘালয়ের পাহাড়ের ওপর ভাসমান মেঘ। আপনি প্রকৃতিপ্রেমী না হলেও এসব দৃশ্য দাগ কাটবে আপনার মনে। আর প্রকৃতি ভালবাসলে আপনি পেয়ে গেছেন মনের মত জায়গা। জাফলং এর রাস্তায় অনেক জায়গায় আপনি অনেকটা শিলং এর ফিল পাবেন। আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগুতে থাকবেন জাফলং। জাফলং পৌঁছে যাবার পর হেঁটে নিচে নামতে হয়। খুব সতর্কতার সাথে নামবেন। রাস্তা পাথরে পূর্ণ এবং উঁচুনিচু। চোখের সামনে দেখবেন পিয়াইন নদী। পিয়াইন একটি পাহাড়ি নদী। খুব খরস্রোতা এবং সবসময়ই পানি খুব ঠাণ্ডা। শীতকালে পানি কম থাকে। পানি এতটাই পরিষ্কার যে আপনি পায়ের নিচের পাথর দেখতে পারবেন। মূলত এ নদী দিয়ে অনেক পাথর আসে। পাথর শ্রমিকদের দেখবেন পাথর তুলছে। চাইলে আপনিও কিছু ছোট পাথর পকেটে নিতে পারেন। সুন্দর সুন্দর রঙের ছোট পাথর আছে। চাইলে নেমে পানিতে দাপাদাপি করতে পারেন। আর বর্ষায় খুব একটা সাঁতারু না হলে দোয়া করে পানিতে যাবেন না। ঘাট থেকেই নৌকা নিয়ে চলে যান জাফলং জিরো পয়েন্ট এ ।

জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে তোলা
জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে তোলা

শুন্যে যখনঃ অদ্ভুত একটা ব্যপার না। একই নদীর পানি, একই আকাশ কিন্তু আপনি বাংলাদেশের। কিন্তু হাত বাড়ালেই অন্যদেশ। জাফলং জিরো পয়েন্ট এ এমনটাই মনে হবে আপনার। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে ঝুলন্ত বেইলি ব্রিজ দেখতে পারবেন। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে অসাধারন একটা ভিউ। কয়েকটা ক্যামেরার সাটার পড়তেই পারে।  এখানে দেখবেন ইন্ডিয়ার মানুষ ও এসেছে। খাসিয়াদের দেখতে পাবেন। আর একটা কথা কোন ভাবেই সীমান্তের ওপার যাবেন না। সব সময় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আছে। নৌকা করে ঘুরুন। পড়ন্ত বিকেলে অন্যরকম একটা অনুভূতি যা লিখে বোঝানো সম্ভব নাহ।

খাব কীঃ জাফলং ঘুরতে গেলে খাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়বেন। কিছু খাবার দোকান আছে কিন্তু মানসম্মত না। চিপস বা পানি সাথে নিয়ে নিন।

ঝর্নায় গোসলঃ প্রচণ্ড বেগে পরিষ্কার পানি পড়ছে পাহাড় থেকে। এ দৃশ্যও আপনি পাবেন জাফলং এ। জাফলং থেকে কিছুটা হেঁটে গেলে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্না। পাহাড়ের পাথর বেয়ে কিছুটা উপরে উঠতে পারবেন। পরিষ্কার পানিতে গোসল সেরে নিতে পারেন।

কেনাকাটাঃ কিছু ছোট দোকান আছে। ইন্ডিয়ান কিছু আইটেম পাওয়া যায় যেমন- সাবান, চকোলেট , অলংকার এসব। খুব দামাদামি করে কিনবেন। না হয় ঠকতে পারেন।

বাড়ি ফিরবঃ বিকালের দিকে ঘুরে রওনা দিন সিলেট শহর এর উদ্দেশ্যে। অনেকটা পথ যেতে হবে এবং অচেনা জায়গা। সুতরাং রাত না করাটাই ভালো।

খরচঃ মোটামুটি দুইদিন সিলেট থেকে জাফলং যেতে আপনার খরচ হবে ৩,০০০ টাকা ( ৪ জনের গ্রুপ) । আর লোক বাড়লে খরচ কমে এটা তো জানাই। আর পারিবারিক ভাবে রিলাক্স ট্রিপ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাজেট আপনার উপর।

ভ্রমনে চারপাশ নষ্ট হয় বা অন্যের বিড়ম্বনা হয় এমন কিছু না করাই উচিত। আর নিজের সতর্কতা নিয়ে নিরাপদে ভ্রমন করুন।

হ্যাপি ট্রাভেলিং।

Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More