নেলসন মেন্ডেলার জীবনের বিস্ময়কর কিছু তথ্য

1

নেলসন মেন্ডেলা সম্পর্কে কমবেশি অনেক কিছুই জানি আমরা। কিন্তু মেন্ডেলার জীবনের বিস্ময়কর কিছু তথ্য যা আপনার কাছে এতদিন পৌঁছায়নি, আর তা জানতে চাইলে, এই লেখাটি আপনার জন্য।

১. মেন্ডেলা ২৭ বছর জেলে কাটালেও তিনি ছিলেন একজন ওস্তাদ রকমের ছদ্মবেশী। জীবনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছদ্মবেশে তার জীবন কাটাতে হয়েছিল। ১৯৬২ সালে তাকে যখন বন্দী করা হয় তখন তিনি একজন শোফার বা ড্রাইভারের ছদ্মবেশে ছিলেন।

২. পরিহাসের বিষয় বা ভাগ্যের বিষয় হল, মেন্ডেলার ট্রায়ালের দিন আদালতে তিনি যেই কৌশলী বক্তব্য প্রদান করেন এর কারণেই তার যা সাজা হবার কথা ছিল তার চেয়ে কম সাজা পেয়ে তিনি “যাবজ্জীবন কারাদন্ড” গ্রহণ করেন। “আমি প্রস্তুত আছি মৃত্যুর জন্য” এই শিরোনামে তার বক্তব্যটি পৃথিবীজুড়ে সারা ফেলে দেয়।

৩. জেলে থাকা অবস্থায় মেন্ডেলা অন্যান্য বন্দীদের সচেতন করতেন একজন বন্দীর অধিকার সম্পর্কে। খালি ম্যাচবক্সের গায়ে, টয়লেট পেপারে লিখে লিখে তিনি কৌশলে বন্দীদের কাছে পৌছে দিতেন বিভিন্ন বার্তা। এই উপায়ে একটি বড় মাপের সফল অনশন আন্দোলনও সংগঠিত করেন মেন্ডেলা জেলের ভেতরে।

৪. ১৯৯২ সালে স্পাইক লি’র সিনেমা ম্যালকম এক্স-এ (Malcolm X) মেন্ডেলা একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি একজন শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেন যিনি বক্তব্য প্রদান করছিলেন নাগরিক অধিকার নিয়ে। সিনেমার এই অংশে একটি সংলাপে তাকে বলতে হয়, “যেকোনো উপায়েই হোক” বা “by any means necessary”, যেই সংলাপ তিনি একেবারেই উচ্চারণ করতে চান নি।

৫. নেলসন মেন্ডেলার অফিসিয়াল জীবনী লেখক এন্থনি সেম্পসন বলেন, মেন্ডেলার শাসনকালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ৩০ লক্ষ ঘরে টেলিফোন ও বিশুদ্ধ পানির সংযোগ, ১৫ লক্ষ শিশুর শিক্ষা, ২০ লক্ষ ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ ঘর নির্মিত হয়েছিল যা প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষকে আশ্রয় প্রদান করে।

নেলসন মেন্ডেলা
Source: Paul Mashauri

৬. নেলসন মেন্ডেলার একটা অনুতাপও ছিল এই :  তিনি রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন এইডস ইস্যু নিয়ে কোনো কাজ করে যেতে পারেন নি। পরবর্তীতে তিনি “46664” নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন এইডস বিষয়ে মানুষকে সচেতন ও এইডস প্রতিরোধ  করতে।

৭. তার ছেলে ম্যাকগাথো মেন্ডেলা মারা যান এইডস-এ। এ মৃত্যুর পর নেলসন মেন্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের এইডস নিয়ে যত কুসংস্কার যেমন: এটা ঈশ্বরের অভিশাপ/এইডস রোগীদের স্থান নরকে- এসব ধারণা প্রতিহত করতে সচেষ্ট হোন।

৮. নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হওয়া ছাড়াও তিনি ২৫০ টি পুরস্কার, ৫০ এর অধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ডিগ্রী গ্রহণ করেন।

তিনি ছিলেন একজন বিদেশী হিসেবে কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া প্রথম ব্যক্তি এবং রাশিয়ার (সোভিয়েত ইউনিয়ন) নাগরিকত্ব পাওয়া শেষ ব্যক্তি।

৯. বহু সড়ক, রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে নেলসন মেন্ডেলার নামে।

এমনকি জীববিজ্ঞানীরা একটি প্রাগৈতিহাসিক কাঠঠোকড়ার নাম দিয়েছে Australopicus NelsonmandelaI.

অবাক হচ্ছেন?

শুধু এই-ই না। লিডস ইউনিভার্সিটিরর পদার্থবিদরা একটা আণবিক কণার নাম দিয়েছে Mandela Particle বা মেন্ডেলা কণিকা।

১০. উইলিয়াম আর্নেস্ট হেনলি’র “Invictus” বা “অজেয়” কবিতাটির দ্বারা মেন্ডেলা প্রচণ্ড প্রভাবিত ছিলেন। জেলে থাকাকালীন অন্যান্য বন্দীদের তিনি এ কবিতা পড়ে শোনাতেন এবং প্রচন্ড উৎসাহিত করতেন জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে।

১১. আমেরিকার সিআইএ ১৯৬২ সালে নেলসন মেন্ডেলার অবস্থানের তথ্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারকে দেয়। এই তথ্যের ভিত্তিতে মেন্ডেলাকে বন্দী করা হয় এবং আদালতের রায়ে তার ২৭ বছরের কারাদণ্ড হয়।

১২. ১৯৮০ এর দশকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নেলসন মেন্ডেলাকে প্রচন্ড পরিমাণে অপছন্দ করত। পার্লামেন্টের সদস্যদের কেউ কেউ চাইতেন তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক, কেউ চাইতেন তাকে জনসম্মুখে গুলি করে মারা হোক। ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার মেন্ডেলাকে একজন সন্ত্রাসী ভাবতে পছন্দ করতেন।

নেলসন মেন্ডেলা
Source: NPR

১৩. গ্রাসা মেশেলই একমাত্র মহিলা যিনি দুটি দেশের ফার্স্টলেডি ছিলেন। তিনি মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট স্যামোরা মেশেলের স্ত্রী ছিলেন এবং পরবর্তীতেতে নেলসন মেন্ডেলাকে বিয়ে করে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ফার্স্টলেডি হোন।

১৪. মেন্ডেলার হাতের ছাপের সাথে আফ্রিকা মহাদেশের গঠনের মিল পাওয়া যায়। শুনতে হাস্যকর শোনালেও, অনেক ইতিহাসবিদেরা এই তথ্যকে খুবই অর্থবহ মনে করেন।

১৫. ২৭ বছর কারাদণ্ড থেকে মুক্তি পেয়ে মেন্ডেলার প্রথম প্রশ্নগুলির একটি ছিল, “ক্রিকেট তারকা ডোনাল্ড ব্র‍্যাডম্যান কি এখনো বেঁচে আছেন?”

প্রশ্নটি তিনি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান স্টেটসম্যান পত্রিকার এক সাংবাদিকককে।

১৬. ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নেলসন মেন্ডেলা একবার নাম ধরে ডেকেছিলেন এবং রাণীর ওজন ও পোষাকের ধরণ নিয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন।

১৭. নেলসন মেন্ডেলা জেল থেলে মুক্তি পেয়ে অনেক কাঁদতে চেয়েও তার চোখ দিয়ে কোনো অশ্রু ঝরে নি। কারণ, জেলখানায় জোর করে তাকে দিয়ে যেসব কাজ করানো হত এসব তার চোখের “টিয়ার গ্ল্যান্ড” কে স্থায়ীভাবে নষ্ট করে দেয়।

Leave A Reply
1 Comment
  1. Qwdxek says

    buy prandin 1mg pills – buy repaglinide without prescription empagliflozin 10mg us

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More