বিশাল একটি সাগরের বুক ছিঁড়ে সমুদ্র বিলাস করাটা অনেকেরই স্বপ্নের মতো একটি ভ্রমণ হতে পারে। চারিদিকে উষ্ণ বাতাস, নীল আর নোনা জলের উত্তাল বা শান্ত ঢেউ ভেঙ্গে সামনের গন্তব্যে এগিয়ে চলার জন্য কিছু মুহূর্তই যথেষ্ট।
পর্যটকদের এই সেবাটি নিরাপত্তার সহিত প্রদান করার জন্য নিয়োজিত থাকে প্রমোদ তরী বা ক্রুজ শিপ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ। ঋতুকালীন বন্ধে যখন পর্যটকেরা বেরিয়ে পড়তে উদ্যত সমুদ্র বিলাসে তখন বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তাঁদের সেবা নিয়ে থাকে প্রস্তুত।
১৯৭৫ সালে গঠিত Cruise Lines International Association (CLIA) মূলত বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রমোদ তরী শিল্প প্রতিষ্ঠান যারা স্বাভাবিক, নিরাপদ, সুস্থ এবং যুতসই সমুদ্র বিলাসের সুযোগ প্রদানকারী সংস্থা সমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে যাতে পর্যটকেরা সর্বোচ্চ সুফল লাভ করতে পারে। তাদের মতে বর্তমানে প্রমোদ তরীর ব্যবস্থায় ভাটা পড়ার বদলে প্রতিনিয়ত এর চাহিদা হচ্ছে আরো উঠতির দিকে। তাঁরা আশা করছে চলতি বছর আরো ২৬ টি নতুন প্রমোদ তরী সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে এবং সব মিলিয়ে প্রায় ২৫.৩ মিলিয়ন পর্যটককে সেবা প্রদান করতে তাঁরা সক্ষম। এই সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমুহের বাজারে বিনিয়োগও প্রায় ৫৩ বিলিয়ন ডলার যা মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়।
সব কার্যক্রমের ভিত্তিতে পৃথিবীতে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান থাকে যারা নিজেদের কর্মদক্ষতার দরুন অর্জন করে নেয় শীর্ষস্থান। বেশ সাজসজ্জায় সাজিয়ে রাখে নিজেদের প্রমোদ তরী আর বিত্তবানেরা নিজেদের চাহিদানুযায়ী লুফে নেন তাদের সেবা। প্রতিনিয়ত পর্যটকদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নিত্যনতুন সুযোগ, উন্নত প্রযুক্তি, বিলাসবহুল এবং আয়তনের দিক দিয়ে পর্যাপ্ত পর্যটক ধারণক্ষমতা বাড়াচ্ছে আর তাঁরই ভিত্তি ধরে ২০১৭ সালে তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের সেরা দশটি প্রমোদ তরী সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকা।
১. হারমোনি অফ দ্য সিজ (Harmony of the Seas)

Source: Aha
STX France SA নামক জাহাজ প্রস্তুত কারী প্রতিষ্ঠান ২০১২ সালে তাদের সেইন্ট-নাজায়ের শিপইয়ার্ডে রয়েল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কোম্পানির জন্য নির্মাণ করে “হারমোনি অফ দ্য সিজ ” নামক প্রমোদ তরীটি যার ধারণক্ষমতা প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার জিটি (Gross Tonnage). এটিই বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন প্রমোদ তরী যা তারই একই কোম্পানির অধীনস্থ “সিম্ফনি অফ দ্যা সি’স” (২ লাখ ২৮ হাজার জিটি) এর পরেই অবস্থান করছে। নুন্যতম প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৬ হাজার সাতশো যাত্রী ধারণক্ষমতা রয়েছে এটির।

Source: Cestovanie – SME
রয়েল ক্যারিবিয়ান কোম্পানির প্রথম দুইটি প্রমোদ তরীর সফলতার পর তৃতীয় হিসেবে আনা হয় হারমোনি অফ দ্য সিজকে যা সাগরে ভাসানো হয় ১০ শে মার্চ, ২০১৬ সালে এবং কোম্পানির কাছে এসে পৌঁছায় ১২ মে, ২০১৬ সালে। ৩৬২ মিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রমোদ তরীটি প্রথম যাত্রা শুরু হয় সাউথাম্পটন, ইংল্যান্ড এবং তার ঘরোয়া বন্দর বার্সেলোনা জুড়ে যখন সে ২৩শে অক্টোবর ২০১৬ তে আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে।
২. এলিউর অফ দ্য সিজ (Allure of the Seas)

Source: Wallpaper Abyss – Alpha Coders
হারমোনি অফ দ্য সিজ এর পরের স্থানেই রয়েছে এলিউর অফ দ্যা সীজ যার নির্মাতাও সেই STX France SA. এটির ধারণক্ষম প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার জিটি এবং দৈর্ঘ্যও একই ৩৬২ মিটার যার মধ্যে প্রায় ৫৪০০ প্যাসেঞ্জার ধারণ করা সম্ভব। এই প্রমোদ তরীটিও ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের অধীনস্থ।
যেহেতু আগের শীপ, ওয়াসিস অফ দ্যা সী’জ ভালোই চলছিলো তাই কোম্পানি চেয়েছিলো এলিউর অফ দ্য সিজ তার আগেরটার কাছাকাছি সাইজের হবে তবে দুর্ঘটনাবশত ৫০ মি.মি বড় হয়ে যায়। কারণ হিসেবে প্রস্তুতকারী কোম্পনী জানায় লোহার তাপমাত্রার দরুন দুর্ঘটনাবশত এই ঘটনাটি ঘটে।
৩. ওয়েসিস অফ দ্য সিজ (Oasis of the Seas)

Source: SUWalls
নির্মাতা কোম্পানি STX France SA এর অনবদ্য আরেক সৃষ্টি ওয়েসিস অফ দ্য সিজ প্রমোদ তরীটি যা ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের ব্যানারে নির্মাণ করা হয়েছিলো। ২০০৯ সালে যখন এটি প্রবেশ করেছিলো তৎকালীন সর্ববৃহৎ প্রমোদ তরী ছিলো। ২ লক্ষ ২৫ হাজার জিটি সম্পন্ন এই জাহাজটি ধারণ করতে পারতো প্রায় ৫৪০০ জন যাত্রী।

১১৮৭ ফিট লম্বা এই জাহাজটির ভেতরে রয়েছে ২৪ টি রেস্টুরেন্ট এবং ৩৭ টি বার। তাছাড়া গ্লাস ফিটেড সোলারিয়াম পোল, কাল্পনিক সার্ফ সিম্যুলেটর, জিপলাইন, রক-ক্লাইম্বিং ওয়াল, সুইমিং পুল, ভলিবল, বাস্কেটবল কোর্ট সহ অনেক বিনোদনের সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন ওয়েসিস অফ দ্য সিজ জায়গা করে নিয়েছে তৃতীয় স্থানে।
৪. কোয়ান্টাম অফ দ্য সিজ (Quantum of the Seas)

Source: Covington Travel
২০১৩ সালে Meyer Werft কোম্পানি দ্বারা নির্মিত ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের অধীনস্থ ৩৪৭ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জাহাজটি ১ লক্ষ ৬৮ হাজার জিটি সম্পন্ন যার যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালে নিউ জার্সি দিয়ে। পরে জাহাজটি চায়নাতে শিফট হয় এবং সাংহাই টি জাপান এবং কোরিয়া চলাচল শুরু করে। প্রায় ৮১৮০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই জাহাজটিতে আছে ১৮ টি ডেক, ১৬ টি যাত্রী পরিবাহক লিফট।

Source: CruiseMapper
৫. এন্থেম অফ দ্য সিজ (Anthem of the Seas)

Source: bostonherald.com

Source: ABC News
৩৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যের এন্থেম অফ দ্যা সী জাহাজটি ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের অধীনস্থ এবং নির্মিত হয় ২০১৩ সালে Meyer Werft কোম্পানি দ্বারা। ১ লাখ ৬৮ হাজার জিটি সম্পন্ন এই জাহাজটি যাত্রা শুরু করে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সালে। প্রায় ৪৯০০ যাত্রীর জন্য এই জাহাজটিতে রয়েছে ২০ টি ডেক, ১৫৭০ টি কেবিন, ১৪৭ টি সমুদ্র দর্শন উপযোগী কেবিন এবং ৩৭৩ টি অভ্যন্তরীণ কেবিন। সুযোগসুবিধা হিসেবে এর অভ্যন্তরে রয়েছে সুনিব্যস্ত সুইমিং পুল, উন্মুক্ত সুইমিং পুল, কাল্পনিক সামুদ্রিক দৃশ্যায়ন, H20 জোন এবং সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক হিসেবে রয়েছে জুয়েল গালফস শেইপের ক্যাপসুল যা ১৪ জন যাত্রিকে নিয়ে ৩০০ ফিট উঁচুতে অবস্থান করে সমুদ্রের ৩৬০ ডিগ্রী দৃশ্য দেখাতে সক্ষম।
৬. ওভেশন অফ দ্য সিজ (Ovation of the Seas)

Source: iCruise.com

Source: CruiseMapper
৩৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জাহাজটি ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের অধীনস্থ এবং Meyer Werft কোম্পানি দ্বারা নির্মাণ কাজ শুরু হয় ৫ মার্চ, ২০১৫ সালে এবং যাত্রা শুরু করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে সাউথাম্পটনের উদ্দেশ্যে।
প্রায় ১৬৭৮০০ জিটি সম্পন্ন এই জাহাজটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ৪২৮৬ জন। এর মধ্যে আছে ১৬ টি ডেক, ২০৯০ টি কেবিন, একটা বিশ্রামাগার রয়েছে যার মধ্যে আছে একটি বার এবং নৃত্যশালা, সীপ্লেক্স মাল্টি ফাংশনাল ভেন্যু, H20 জোন, ক্যাসিনো এবং ২২০ ফিট পুল সাইড মুভি স্ক্রিন।
৭. নরওয়েজিয়ান জয় (Norwegian Joy)

Source: BeautifulLife.info

Source: CruiseMapper
নরওয়েজিয়ান জয় জাহাজটি নির্মাণ করে Meyer Werft কোম্পানি যা Norwegian Cruise Line এর অধীনস্থ। প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার খরচে নির্মিত এই জাহাজটি ৩৩৩ মিটার দৈর্ঘ্য এবং জিটি প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার। ২০১৭ সালের এপ্রিলে এটি যাত্রা শুরু করে। প্রায় ৩৮৫০ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই জাহাজে রয়েছে ১৯২৫ টি কেবিন যার মধ্যে ৭৫% কেবিনেরই বেলকনি রয়েছে। সাথে রয়েছে উপরের ডেকে ওপেন-এয়ার সেরেনিটি পার্ক, মাল্টি স্টোরেজ ওয়াটার স্লাইড, আপস্কেল শপিং ভেন্যু, ২৯ টি রেস্টুরেন্ট। প্রায় ১ লক্ষ ২ হাজার হর্সপাওয়ার সমৃদ্ধ এই জাহাজটির সর্বোচ্চ গতি ২২.৫ নটস।
৮. নরওয়েজিয়ান এস্কেপ (Norwegian Escape)

Source: Jeedbuddy

Source: Travelista73
Norwegian Cruise Line এর অধীনস্থ এই জাহাজটি ৩২৫ মিটার দৈর্ঘ্যে যার নির্মাতা Meyer Werft. যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৪২৬৬ জন যাদের জন্য রয়েছে সুবিশাল কেবিন, মিনি কেবিন। সাথে আছে ওয়াটার ফ্রন্ট, ৬৭৮ টি ওশান প্লেস, রেস্টুরেন্ট, বার, গেমিং জোন।
৯. লিবার্টি অফ দ্য সিজ (Liberty of the Seas)

Source: shipwallpaper.blogspot.com

Source: CruiseFellows.com
ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের ফ্রিডম ক্লাস ক্রুজ শিপ এটা যা ৩৩৮ মিটার দৈর্ঘ্য। এর অভ্যন্তরে রয়েছে ১৮১৭ টি কেবিন, ১৮ টি ডেক যা অনায়াসে ৪৯০০ যাত্রী ধারণ করতে সক্ষম। Meyer Turku ছিলো এই জাহাজটির নির্মাতা এবং ২০০৭ সালে এর যাত্রা শুরু করে।
১০. নরওয়েজিয়ান এপিক (Norwegian Epic)

Source: Pinterest

Source: Fitness Cruises
এই জাহাজটি Norwegian Cruise Line এর অধীনস্থ একটি সেরা উদ্ভাবন ছিলো যার নির্মাতা ছিলো STX France SA কোম্পানি। ৩২৯ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জাহাজটির যাত্রী ধারণক্ষমতা প্রায় ৪১০০ জন যার নির্মাণ কাজ শেষে কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয় জুনের ২০১০ সালে। এই জাহাজের যাত্রীদের জন্য রয়েছে কোর্ট-ইয়ার্ড ভিলা কমপ্লেক্স যার মধ্যে রয়েছে নিজস্ব সুইমিং পুল, শরীর চর্চার কক্ষ সহ অত্যাধুনিক সব আয়োজনের।
সমুদ্র যাত্রায় সেরা দশটি জাহাজ একজন পর্যটককে দিতে পারে সম্পূর্ণ তৃপ্তি। টিকেটের মূল্য জাহাজের বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণ সেবা এবং সজ্জনের ভিত্তিতে কমবেশি হতে পারে। তবে যারা ভ্রমণপিপাসু তাঁরা কখনোও অর্থমূল্যকে ভ্রমণ চাহিদার উপরে স্থান দিবে বলে মনে করা অবাঞ্ছনীয়।
buy dutasteride generic oral avodart ondansetron 4mg over the counter
order levaquin pills levofloxacin 500mg cheap