আজ হোক বা কাল, প্রতিটা মানুষকেই একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। মৃত্যুর পর একজন মানুষ স্মরনীয় হয়ে থাকে তার জীবদ্দশায় সাধিত কর্মের দ্বারা। যদিও কিছু মানুষ ব্যতিক্রম, যারা কর্মের জন্য নয় বরং তাদের মৃত্যুর কারনের জন্য স্মরনীয় হয়ে থাকবেন। ইতিহাসের এমনই ১০ টি বিচিত্র মৃত্যুর বর্ণনা তুলে ধরছিঃ
১. অ্যাসকাইলাস – প্রাচীন গ্রীসের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিদের একজন। তাকে সবচেয়ে বেশি স্মরন করা হয় তার লেখা ট্রাজেডিগুলোর জন্য। অথচ তার মৃত্যুকে বিয়োগাত্মক নয়, বরং হাস্যরসাত্মকভাবে লোকমুখে শোনা যায়। অ্যাসকাইলাসের পর খুব অল্প সময় বেঁচে থাকা এক রোমান লেখকের ভাষ্যমতে, গ্রীসের এই ট্রাজেডিয়ানের মৃত্যু হয়েছিল আকাশ থেকে পতিত হওয়া এক কচ্ছপের দ্বারা !
আপনি হয়ত ভাবছেন যে এটা কিভাবে সম্ভব! ঠিক আছে, গল্পটা শেষ হওয়া পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করুন। আসলে অ্যাসকাইলাইসের মাথাকে পাথর মনে করে এক ঈগল ভুল করে উপর থেকে এক কচ্ছপ ছুঁড়ে ফেলেছিল। ভেবেছিল শক্ত পাথরের আঘাতে তার শিকারের খোলসটা ভেংগে যাবে। কিন্তু হায়, ওটা পাথর নয় বরং অ্যাসকাইলাসের শক্ত মাথা ছিল! সাধারনত ঈগল পাখীরা তাদের শিকার করা কচ্ছপদেরকে পাথরের উপরই নিক্ষেপ করে থাকে। আর অ্যাসকাইলাসের মৃত্যুর এ গল্পটা প্রকৃতপক্ষে কোন মিথ্যা গল্প নয়।
২. কীন্ শী হোয়াং – তিনি এমন একজন ব্যক্তি যার নাম চাইনিজরা সবসময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকে। কারন তিনি ছিলেন চীনের প্রথম রাজা এবং ঐ সময়ের সবচেয়ে সফল শাসক। কে ক্ষমতাধর হতে না চায়? কীন্ শী হোয়াংও চিরস্থায়ীভাবে চীনের ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। দুর্ভাগা শী হোয়াংকে কেউ একজন বলেছিল, যদি সে প্রানঘাতী পারদের বিষ পান করে তবে অমরত্ব লাভ করতে স্বক্ষম হবে! কিন্তু আফসোস! পৃথিবীতে চীরস্থায়ী হওয়ার ইচ্ছে তার পূরন হয়নি বরং চাইনিজদের জীবন থেকে চিরদিনের জন্য তিনি বিদায় নিয়েছিলেন !
৩. হাঙ্গেরীর রাজা ১ম বেলা – হাঙ্গেরীর রাজা প্রথম বেলা, হাঙ্গেরী থেকে পৌত্তলিকতার উচ্ছেদ ঘটিয়েছিলেন। আর এ কারনে তিনি এখনো হাঙ্গেরীতে সুপরিচিত। যাহোক, শুধু যুদ্ধবাজ পৌত্তলিকদের উচ্ছেদ ঘটনাই তার প্রতি আগ্রহের একমাত্র কারন নয়। রাজা বেলার মৃত্যুর কারনটা এমনই অদ্ভুত ছিল যে হাঙ্গেরীয়ানদের কাছে এটা দৈবাত ঘটনার মত, এমনকি অবিশ্বাস্য বললেও কম হয়ে যাবে। কারন বিলাসবহুল কোন সিংহাসন হঠাৎ ভেংগে কোন রাজার মৃত্যু ঘটনা অবিশ্বাস্যই বটে! রাজা বেলা ভাঙ্গা সিংহাসন সমেত পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে এই বিলাসবহুল সিংহাসনের হঠাৎ ভাঙ্গনই তা্র মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায়!
৪. জর্জ প্লেন্টাগেনেট – এবার একটু ভিন্ন ঘটনা। অন্যান্য মৃত্যগুলোকে দূর্ঘটনা বলা যেতে পারে, কিন্তু জর্জ প্লানটাগেনেট নিজেই নিজের জন্য এক বিচিত্র মৃত্যুভাগ্য নির্ধারন করেছিলেন। “War of the roses” এ পরাজয়ের পর তার ভাই চতুর্থ এডওয়ার্ড এর আদেশে তাকে বন্দী করা হয়, হত্যা করা হবে তাকে। কিন্তু ভ্রাতৃপ্রেম বলে একটা কথা আছে। এডওয়ার্ড তার ভাইকে নিজের মৃত্যুর প্রক্রিয়া নিজেকেই বাছাই করতে বললেন। এরপর জর্জ এমন এক সৃজনশীলতার পরিচয় দিলেন যার কারনে মানুষ তাকে যুগ যুগ ধরে স্মরন করে আসছে। শিরশ্ছেদনের কথা না বলে জর্জ প্লান্টাগেনেট ইচ্ছে প্রকাশ করলেন তাকে যেন মদভর্তি পিপেতে ডুবিয়ে মারা হয় ! তার প্রিয় মদ, মালভাসিয়াতে ডুবিয়ে !
৫. হান্স স্টেইনিনজার – স্টেইনিনজার ছিলেন একজন পৌরপ্রধান, মানে বর্তমান অস্ট্রিয়ার মেয়র। তিনি তার শহরে জনগনের জন্য কি পরিমান কাজ করেছিলেন তা সবাই ভুলে গিয়েছে, কিন্তু তিনি কিভাবে মৃত্যুবরন করেছিলেন তা আজো কেউ ভুলতে পারেনি। হোঁচট খেয়ে পড়ে যেয়ে হান্সের ঘাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল। আশ্চর্যজনক ব্যপার হল তিনি তার নিজের দাঁড়িতেই হোঁচট খেয়েছিলেন! আর প্রানঘাতী তার সে দাঁড়ি ছিল ৪.৫ ফুট বা ১.৪ মিটার লম্বা!
৬. Dancing Plague – আমরা বর্তমান সুশৃঙ্খল অস্ট্রিয়াকে দেখছি, কিন্তু যদি ষোড়শ শতকের প্রথম দিকে ফিরে তাকাই তবে এক অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি দেখতে পাবো। ১৫১৮ সালের নৃত্য মহামারী কি দুর্ভোগ ডেকে এনেছিল তা কেউ জানেনা। অথচ এর কবলে পরে ৪০০ এরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। অল্প সময়ের বিশ্রামে এরা পুরো মাসব্যাপী নাচত। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নাচ কারো জন্যই ভালো নয় এবং প্রায় ৩০ জনের মত লোকের ক্ষেত্রে এটা খুব বাজেভাবে পরিলক্ষিত হয়। যাদের কেউ মৃত্যুবরণ করেছিল স্ট্রোক করে, কেউ হার্ট এটাকে আবার কেউ অবসাদের কারনে!
৭. Clement Vallandigham – ক্লিমেন্ট হলেন উনিশ শতকের এমন একজন উকিল, কোন মামলা হাতে নেওয়ার পর যেকোন মূল্যে মক্কেলদেরকে নির্দোষ প্রমান করাই ছিল যার একমাত্র লক্ষ্য। দুর্ঘটনাক্রমে একবার তিনি তার সীমা অতিক্রম করে ফেললেন, যার মূল্য তাকে জীবন দিয়ে দিতে হয়েছিল। বন্দুক নিয়ে টানা হেঁচড়ার সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কিভাবে নিজেকেই মেরে ফেলেছিল তা বর্ননা করতে
গিয়ে উকিল সাহেব নিজেও একই কাজ করলেন! একেবারে একই রকম – তিনি নিজের মাথায় গুলি করলেন! কিন্তু অতি খারাপের মধ্যেও ভালো কিছু সম্ভাবনা থাকে! আদালত শেষপর্যন্ত তার মক্কেলকে নির্দোষ বলে মেনে নিল!
৮. দি গ্রেট মলাসেস ফ্লাড – ১৯১৯ সালে বোস্টনে চিটাগুড় দুর্ঘটনায় ২০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে হঠাত পিউরিটি ডিস্টিলিং কোম্পানির ঢালাই লোহার বিশাল ট্যাঙ্কের বিস্ফোরন ঘটে। সেইসাথে দোতলা সমান উঁচু প্রায় ৩৫ কি.মি./ঘন্টা বেগে উত্তপ্ত চিটাগুড়ের স্রোত ছড়িয়ে পড়ে শহরের প্রধান সড়ক আর তার আশেপাশের গলিগুলোতে। ফলশ্রুতিতে ইতিহাসের ট্রাজেডিতে পরিনত হল পথচারী আর ঘোড়াটানা ওয়াগনগুলো। চিটাগুড়ের এই স্রোত হত্যা করল ২১ জন জলজ্যান্ত মানুষকে আর আহত করল ১৫০ জনকে। এই ট্রাজেডি বিভিন্ন আঞ্চলিক লোককাহিনী, গান আর গল্পেও বর্ণিত আছে।
৯. রবার্ট উইলিয়ামস – এসেম্বলি লাইনের সাথে সর্বপ্রথম পরিচয় করিয়ে দেয় ফোর্ড মোটর কোম্পানি। এই কোম্পানিটি অটোমোবাইল উৎপাদনের অগ্রদূত হিসেবেও ইতিহাসে স্হান দখল করে নিয়েছিল। ফোর্ড এরপরের ইতিহাস গড়ে ১৯৭৯ সালে কোম্পানির এক কর্মচারীর মৃত্যুর মাধ্যমে! ইতিহাসের পাতায় ফোর্ডই প্রথম কোম্পানি যেখানে এক রোবটের দ্বারা কোন মানুষের হত্যাকান্ড ঘটেছিল! এক টন ওজনের একটি রোবটের বাহুর আঘাতে ১৯৭৯ সালে রবার্ট উইলিয়ামস নামের ওই কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেন।
১০. V. kamaraj – ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বলে, ভূপতিত উল্কা সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাওয়ার অনুপাত হল ১:১৬০০০০০। কামারাজ হলেন সেই হতভাগ্য একজন ব্যক্তি। ২০১৬ সালের ঘটনা, এই ইন্ডিয়ান বাস ড্রাইভারই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যার মৃত্যু হয়েছিল একটা উল্কাপিন্ডের আঘাতে। বাস চালানোর সময় হঠাত আকাশ থেকে একটা পাথর বাসের উপর তীব্র গতিতে ছিটকে পড়ে। প্রচন্ড আঘাতে মারা যান কামারাজ, আহত হন আরো তিন জন ব্যক্তি। অবশ্য এ ঘটনায় নিহত আরো অনেকে থাকলেও কামারাজের মৃত্যুটাই রেকর্ড করা হয়েছে।
buy semaglutide 14mg generic – semaglutide 14 mg generic purchase desmopressin spray