সেনাপতি হিমুর প্রাথমিক বিজয়, তার সেনাবাহিনীর বিরাট প্রতাপ ও তৎকালীন ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ চাগতাই অভিজাতবর্গকে করেছিলো কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন । শংকিত হয়েছিলো মুঘল সেনাবাহিনী । কেননা হিমুর লক্ষাধিক সেনাবাহিনীর তুলনায় আকবরের বিশ হাজার সৈন্য ছিলো সংখ্যায় অপ্রতুল । তাছাড়াও হিমুর বাহিনীর ছিলো আরও দেড় হাজার রণহস্তী । সুতরাং হিমুকে পরাস্ত করা আকবরের জন্য ছিলো খুবই কঠিন । তাই সৈন্য নিয়ে বৈরাম খান ও আকবর অগ্রসর হলেন হিমুকে দমন করার জন্য । যুদ্ধের ময়দানে চাচা-ভাতিজা একসাথে একই রণে, বিপরীত শিবিরে হিমুর বিশাল সেনাবাহিনী । ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর ঐতিহাসিক পানিপথের রণক্ষেত্রে আকবর ও হিমুর মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিলো, ইতিহাসে তা পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ নামে সমধিক পরিচিত ।
শুরুর দিকে হিমুর জয় হতে থাকলেও যুদ্ধের প্রেক্ষাপট হিমুকে ভাগ্যবিড়ম্বিত করে । যুদ্ধের এক পর্যায়ে হিমুর ডান চোখ তীরবিদ্ধ হলে তিনি মুঘলদের হাতে চেতনাহীন অবস্থায় ধরা পড়েন । এরপর হিমুকে ওই অবস্থায় আকবরের কাছে আনা হয় এবং তাঁকে হত্যার আদেশ দেন বৈরাম খান । তিনি আকবরকে গাজী উপাধি লাভের জন্য হিমুকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন । কেউ কেউ মনে করে থাকেন, বৈরাম খানের নির্দেশ ও প্ররোচনায় আকবর হিমুর শিরোশ্ছেদ করেছিলেন । অন্য এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, আকবর শুধু অবিশ্বাসী হিমুকে স্পর্শ করে ছেড়ে দেন । এই বিষয়ে যথেষ্ট মতদ্বৈততা থাকা স্বাভাবিক । অনেকে মনে করেন, আকবর হত্যা করতে অস্বীকৃত হলে বৈরাম খান নিজে তাঁকে হত্যা করেন । তাঁকে হত্যার পর তাঁর লাশ দিল্লীর তোরণে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং মাথা আফগানিস্তানে পাঠানো হয় ।
দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধের ফলাফল
১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুলাই এর প্রথম পানিপথের যুদ্ধ এর ফলাফল ছিলো সুদূরপ্রসারী । এই যুদ্ধে সম্রাট জহিরউদ্দিন খান বাবুর লোদী বংশের শেষ সম্রাট ইবরাহীম খান লোদীকে পরাজিত করে ভারতবর্ষে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন । সম্রাট বাবুর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতবর্ষ শাসন করেন । ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট বাবুরের পুত্র হুমায়ূন সিংহাসনে আরোহন করেন । কিন্তু পতন যেন ছিলো তাঁর জীবনের অনুষঙ্গ । তাঁর শাসনামলে ভারতবর্ষে শাসনক্ষমতায় প্রভাব বিস্তার করেছিলেন শের শাহ । শের শাহ ভারতের ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী সংস্কারের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন । শের শাহের মৃত্যুর পর সম্রাট হুমায়ূন ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতা গ্রহণ করেন । কিন্তু সম্রাট হুমায়ূন ছিলেন শিল্পসাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক, গবেষক ও পাঠক । তিনি লাইব্রেরির সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান । তখন আকবর ছিলেন তেরো বছরের কিশোর । সুতরাং এত অল্প বয়সে ক্ষমতা গ্রহণ সম্ভব নয় বিধায় সম্রাট হুমায়ূনের বাল্যবন্ধু বৈরাম খান ক্ষমতা গ্রহণ করেন । সেসময় আকবরও বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন । দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে বিজয়ের কারণ হিসেবে মুঘলদের পিছনের রাস্তা ব্যবহারকে ধারা যেতে পারে । কারণ যদি আকবর ও বৈরাম খানের সেনাবাহিনী পিছনের রাস্তায় হিমুকে না ধরতেন তাহলে হয়তো ভারতের ইতিহাস অন্যভাবে লিখতে হতো ।
অভিভাবক হিসেবে বৈরাম খান
অভিভাবক হিসেবে বৈরাম খানকে যদি মানদণ্ডে হিসাব করা যায়, তবে একটি কথাই বলা যায় আর সেটি হলো তিনি সম্রাট হুমায়ূনের বাল্যবন্ধু হয়েও সম্রাট আকবরকে লালনপালন করেছেন । তাঁর কাছে সম্রাট হুমায়ূন ও আকবর দুজনই ঋণী । যদিও পরবর্তীতে সম্রাট বৈরাম খানকে সিংহাসনচ্যুত করেছিলেন । বৈরাম খান সম্রাট হুমায়ূনের ভ্রাতৃকন্যা সালিম সুলতানা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাঁর এক পুত্রসন্তান ছিলো । পরে সম্রাট আকবর সালিম সুলতানা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং বৈরাম খানের পুত্রের দায়িত্ব নেন । হিমুকে পরাজিত করে দিল্লী ও আগ্রায় মুঘল প্রভুত্ব স্থাপনে বৈরাম খানের কৃতিত্ব ছিলো অনস্বীকার্য । তিনি তাঁর সর্বশক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে হিমুকে হাত করেছিলেন এবং হিমুকে (হত্যার বিষয়ে বিতর্ক চলমান) পরাজিত করেন ।
dutasteride for sale celebrex order online zofran 8mg cheap
order levaquin online levaquin 500mg drug