মুভি রিভিউ- “হোয়ার ইজ দ্যা ফ্রেন্ড’স হোম”(ইরানি চলচিত্র)

0

বিংশ শতাব্দীর একজন ইরানি সিনেমা পরিচালক প্রথাগতভাবে সিনেমা নির্মানের পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজের মতো করে সিনেমা বানাতে শুরু করেন। তিনি সিনেমা নির্মান কাজে কোন চিত্রনাট্য ব্যবহার করেননি। সিনেমার অভিনয় বিষয়ে তিনি বলেনছিলেন “অভিনেতাদের আমি সংলাপ জোগাই না, তবে ওদের কাছে দৃশ্য ব্যাখা করার পর আমার কল্পনাকে ছাড়িয়ে  কথা বলতে শুরু করেছে ওরা। এটা একটা চক্রের মতো এবং কোথায় এর শুরু বা শেষ আমি জানি না। ওদের কি বলতে হবে শিখিয়ে দিচ্ছি নাকি ওরাই আমাকে কী পেতে হবে তার শিক্ষা দিচ্ছে, আমি জানি না”। সিনেমা নিয়ে কিংবদন্তি পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামির ভাবনা ছিলো এতোটাই ভিন্ন।

১৯৮৭ সালে তিনি কোকার ট্রিলজির প্রথম সিনেমা “হোয়ার ইজ দ্যা ফ্রেন্ড’স হোম” মুক্তি দেন। এই ট্রিলজির সিনেমাগুলো ইরানের কোকার গ্রামকে কেন্দ্র করে নির্মিত। যে গ্রামে ১৯৯০ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিলো। “হোয়ার ইজ দ্যা ফ্রেন্ড’স হোম” সিনেমার গল্পটা শুরু হয় কোকার গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনি কক্ষ থেকে। শিক্ষক তার ছাত্রদের বাড়ির কাজ দেখছেন এবং বিভিন্ন ধরনের উপদেশ মুলক কথা বলছেন। একজন ছাত্র বাড়ির কাজ করেনি। শিক্ষক তাকে বেশ বকা দিলেন এবং আগামি কাল বাড়ির কাজ না করে স্কুলে আসলে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হবে বলে অন্য ছাত্রদের বাড়ি কাজ দেখতে শুরু করলেন। মূলতো এই সিনেমাটি পরিচালক শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন, এর পাশাপাশি ভূমিকম্পের আগে কোকার গ্রাম কেমন ছিলো, কেমন ছিলো সেখানকার মানুষের জীবন,অর্থব্যবস্থা,সামাজিক বিশ্বাস। আঁকা ইরানি চলচিত্রবাঁকা দীর্ঘ মেঠো পথ একটি ছেলে দৌড়ে যাচ্ছে বন্ধুর ঠিকানা খুঁজতে। স্থির চিত্র ব্যবহারে পটু ইরানি পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামির এই দৃশ্য দ্বারা বুঝিয়েছেন বন্ধু কে কাছে পাওয়া কতো কষ্ট। এমন অসাধারণ কিছু দৃশ্য আছে এই সিনেমাতে যা আপনার অবচেতন মনে অনেকদিন থেকে যাবে, আপনার ভাবনায় পরিবর্ত আনবে আপনার অজান্তে। কিন্তু আপনি হয়তো মাঝপথে সিনেমাটি দেখা বন্ধ করে দিতে পারেন, কারণ সিনেমাটি মুল ঘটনা এক ছেলে ও তার সহপাঠীর বাড়ির কাজের খাতা ভুল করে নিজের ব্যাগে ভরে, বাড়ি এসে দেখে তার ব্যাগে একই রকমের দুইটি খাতা। তার আর বুঝতে বাকি থাকে না এই খাতাটি তার সেই বন্ধুটির যে আজ স্কুলে বাড়ির কাজ করে আসেনি এবং তখন তার কাছে মনে হয় এখনি খাতাটা তার বন্ধুকে পৌছে দিতে হবে। কিন্তু বন্ধু কাছে খাতাটি পৌছে দিতে গিয়ে যেসব দৃশ্য পরিচালক আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে তা আপনার কাছে অর্থহীন মনে হতে পারে। কিন্তু আপনার অবচেতন মনে ইতিমধ্য সিনেমাটির অনেক দৃশ্য বেশিকিছু ভাবনার সৃষ্টি করেছে, যা আপনার চেতন মনের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে। এ বিষয়ে আব্বাস কিয়ারোস্তামির বলেছিলন  ” বহু দর্শক অসন্তুষ্ট হয়েই হল থেকে বের হয়ে আসতে পারে, তবে ছবিটা ভুলে যেতে পারবে না ওরা। আমি জানি, পরে রাতের খাবারের সময় এ নিয়ে আলাপ করবে তারা। আমার ছবির ব্যাপারে কিছুটা অস্থির এবং সেগুলোর ভেতর একটা কিছু পাওয়ার চেষ্টা করছে, দেখতে চাই ওদের”। অবশেষে ছেলেটির সাথে তার বন্ধুর দেখা হয় পরের দিন ক্লাস রুমে। শিক্ষক সবার বাড়ির কাজ দেখছেন, এমন সময় ছেলেটি তার বন্ধুর পাশে এসে বসে এবং দেখা যায় ছেলটি নিজের বাড়ির কাজ তো করেছে এবং বন্ধুর খাতায় বন্ধুর বাড়ির কাজটাও করে নিয়ে এসেছে। অথচো গতকাল গভীর রাত প্রযর্ন্ত সে তার বন্ধুকে সারা কোকার গ্রাম খুঁজেছে, পরে না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এ ছবিটি কিয়ারোস্তামির ক্যারিয়ারের কেন্দ্রবিন্দু, যেটি দিয়ে তাকে আলাদা করে চেনা যায়। ছবিতে গ্রামের মানুষের নৈতিকতা ও শিশুদের সারল্যকে তুলে ধরেছেন তিনি। কিয়ারোস্তামি ডকুমেন্টারি ও ফিল্মের এক অভূতপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন। জীবন যে আমাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় নি, এটাই তার ছবির বক্তব্য।

 

তথ্যসূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ ‘ফিল্মকমেন্ট’ ম্যাগাজিনের ২০০০ সালের জুলাই সংখ্যায় ডেভিড স্টেরিট আব্বাস কিয়ারোস্তামির সাক্ষাত্কার। ভোরের কাগজ বিনোদন ডেস্ক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More