এটি চট্টগ্রাম বিভাগের একটি ছোট পর্যটন জেলা শহর। কক্সবাজার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। আমরা সবাই জানি যে কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত। প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার,অর্থাৎ ৯৬ মাইল পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য। কক্সবাজার নামটি এসেছে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসারের নাম থেকে। কক্সবাজারের আগের নাম ছিল পালংকি।
চট্টগ্রাম শহর থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫২ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে দূরত্ব ৪১৪ কিলোমিটার। রাজধানী ঢাকা থেকে বাসে করে কক্সবাজার যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে চিটাগাং পর্যন্ত ট্রেনে করেও যাওয়া যায়, তারপর সেখান থেকে বাসে কক্সবাজার। তবে চিটাগাং থেকে কক্সবাজার রেলপথ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে এখানে স্থাপন করা হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। স্থাপিত হয়েছে পর্যটন মোটেল, বিলাস বহুল ফাইভ স্টার হোটেল, সাধারণ হোটেল, গেস্ট হাউজ, রিসোর্ট ইত্যাদি।
কিভাবে যাবেন:
রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের বাস আছে মোটামুটি সব গুলো বাস কোম্পানিরই। শ্যামলী, হানিফ,এনা,স্টার লাইন, সোহাগ,সেন্ট মার্টিন, গ্রীণলাইন পরিবহন সহ আরো বেশ কিছু অপারেটর। নন এসির ভাড়া ঢাকা টু কক্সবাজার ৮০০টাকা। এসি বাসের ভাড়া ইকোনমি ১৫০০/- বিজনেস ক্লাস ২০০০/-। ঢাকা থেকে মেইন বাস পয়েন্ট গুলো হচ্ছে আরামবাগ,মতিঝিল,রাজারবাগ,ফকিরাপুল,সায়েদাবাদ,পান্থপথ, কলাবাগান। এছাড়া যেতে পারেন প্রথমে চট্টগ্রামে বাস বা ট্রেনে। তারপর সেখান থেকে বাসে কক্সবাজার। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের বাস ভাড়া ২৫০/- (নন এসি)। যারা এয়ারে যেতে চান সেই ব্যবস্থাও আছে। ঢাকা টু কক্সবাজার এয়ার ফেয়ার পরবে বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে ৫৫০০ থেকে ৮০০০/-, এয়ারলাইন্সগুলো হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার, রিজেন্ট এয়ারলাইন্স। সময় লাগবে ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টা মাত্র।
এবার চলুন জেনে নেই কি কি দেখবেন কক্সবাজার গিয়ে:
লাবণী বীচ, সুগন্ধা বীচ,ইনানি বীচ, হিমছড়ি,বৌদ্ধ মন্দির, বার্মিজ মার্কেট এগুলোই কক্সবাজার শহরের মূল আকর্ষণ। দেশের যে প্রান্ত থেকে আসুন না কেন বাস থামবে কলাতলি ও সুগন্ধা পয়েন্টে। প্রতিটি বীচের পয়েন্টেই পাবেন থাকার হোটেল, খাবার রেস্টুরেন্ট। কক্সবাজারে বর্তমান আবাসান ব্যবস্থা আছে প্রায় দেড় লাখ মানুষের। সুতরাং বুকিং না দিয়ে গেলেও তেমন সমস্যা নেই, কোনো না কোনো হোটেলে রুম পাওয়াই যায়। তবে ফ্যামিলি নিয়ে গেলে কোনোরকম ঝামেলায় না গিয়ে বুকিং দিয়ে যাওয়াই ভাল। বিভিন্ন রেঞ্জের হোটেল পাবেন মানভেদে। অফ সিজনে হোটেল গুলো ৩০ থেকে ৬০% পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকে। কক্সবাজারের অন সিজন হচ্ছে বছরের অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। রুম ভাড়া অফ সিজনে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যেও পাওয়া যায়। যদি আপনার বাজেট সীমিত হয় তবে দরকষাকষি করে নেবেন।
ফাইভ স্টার থেকে শুরু করে মধ্যম সারির প্রতিটা হোটেলেই নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। আপনি চাইলে সেগুলোতে খেতে পারেন অথবা চাইলে বাইরে। কোনো কোনো হোটেলে ব্রেকফাস্ট ফ্রি দিয়ে থাকে। শহরের রেস্তরাঁ গুলোর খাবারের মান এভারেজ। দাম স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি। তবে যারা বাজেট ট্রাভেল করেন তারা চাইলেই খাবারের খরচ,থাকার খরচ মানিয়ে নিতে পারেন কৌশলে।
এই গেল থাকা আর খাওয়া, এবার চলুন ঘুরতে বের হওয়া যাক। আপনার বাস যদি সুগন্ধা পয়েন্ট থামে বা আপনার হোটেল যদি সুগন্ধা পয়েন্টে হয় তাহলে প্রথমেই চলে যান সুগন্ধা বীচে। পয়েন্ট থেকে সোজা রাস্তা ধরে একদম বীচে। কিছুটা এগুলেই ঢেউয়ের গর্জন শুনতে পাবেন। সেখানে যতক্ষণ মন চায় থাকুন। পাশেই বার্মিজ মার্কেট। এখানে রয়েছে মায়ানমার, থাইল্যান্ড, চীনের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সমূহ। হরেক রকম আচার, উপজাতি পোশাক, সামুদ্রিক ঝিনুক, শামুক, পাথরের জিনিস।
কক্সবাজার শহরের মধ্যে যে বীচ গুলো সেগুলো আগে দেখা শেষ করুন, এগুলো মোটামুটি কাছাকাছিই, যেমন- সুগন্ধা, লাবণী, কলাতলি। কক্সবাজার শহর থেকে নৈকট্যের কারণে লাবণী পয়েন্ট কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত বলে বিবেচনা করা হয়। এগুলো শেষ হলে চলে যান শহর থেকে একটু দূরে বিখ্যাত ইনানী বীচে। অটো বা সিএঞ্জি রিজার্ভ করে যেতে পারেন। আপডাউন আসা যাওয়া + পথে হিমছড়ি দেখা সব মিলিয়ে ভাড়া পরবে ৭০০ থেকে ১০০০/-। কক্সবাজার থেকে ইনানী বিচের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে কক্সবাজার থেকে ইনানী যেতে হয়। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ একশো বিশ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইনানী সৈকত। অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার থেকে রাস্তায় মাত্র আধঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। বাকি বীচগুলো থেকে ইনানীর পানি অনেক স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। এখানে গোসল করে আরাম পাবেন। শহর থেকে দূরে হওয়ায় ইনানী একটু নীরব পরিবেশের। এসব নানান কারণে ইনানী তাই পর্যটকদের সেরা আকর্ষণ।
হিমছড়ি:
হিমছড়ি কক্সবাজারের ১৮ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। ভঙ্গুর পাহাড় আর ঝর্ণা এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যাওয়ার পথে বামদিকে সবুজঘেরা পাহাড় আর ডানদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করে। কলাতলি বীচ থেকে মাত্র ১৫ মিনিট লাগবে যেতে। যারা ট্র্যাকিং পছন্দ করেন না তারা হিমছড়ি যাওয়া বাদ দিতে পারেন। কারণ অনেক উঁচুতে উঠতে হয়, অনেক সিঁড়ি পেরোতে হয়, প্রায় ২৫০টির মতন। হিমছড়িতে দেখতে পাবেন অসম্ভব সুন্দরী ঝর্ণা। বর্ষাকালে এই ঝর্ণা তার সৌন্দর্যের মহিমায় যেন জীবন্ত হয়ে উঠে। পাহাড়ের উঁচুতে উঠলে বঙ্গোপসাগরের গর্জন শোনা যাবে।
হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান:
১৯৮০ সালে পার্কটি স্থাপিত হয়। এটি বাংলাদেশ সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে রয়েছে নানান প্রজাতির গাছ, পশু। পাখিদের আবাসস্থলের জন্যও এই পার্ক পরিচিত। শীতের সময় অতিথি পাখিদের ও দেখা মেলে।
পার্কের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫টাকা।
বলে রাখা ভাল হিমছড়িতে ক্রিসমাস ট্রি টুরিস্টের অন্যতম আকর্ষণ।
রামু বৌদ্ধ মন্দির:
প্রাচীন বৌদ্ধ নিদর্শন সমৃদ্ধ কক্সবাজার জেলার সুপরিচিত উপজেলা রামু অনেক বিখ্যাত। রামুতে প্রায় ৩৫ টির মতন বৌদ্ধ মন্দির ও জাদি আছে। রামুতে গেলে দেখতে পাবেন গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। এছাড়া পাবেন লালচিং ও সাদা চিং সহ অসংখ্য বৌদ্ধ বিহার।
দরিয়া নগর:
সমুদ্র আর পাহাড় সাথে সূর্যের মিলনস্থান হলো এই পর্যটন কেন্দ্র। এর অবস্থান কলাতলী বীচ থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে। এখানের একটি পাহাড়ের নিচ দিয়ে একটা সুড়ঙ্গ আছে যেটির নাম শাহেনশাহ গুহা। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন গুহার ভেতর। দরিয়া নগরের সেরা আকর্ষণ হচ্ছে প্যারাসেইলিং করা যায় এখানে। প্যারাসেইলিং করার ভিন্ন রকম প্যাকেজ আছে দামের। ১৫০০, ২০০০, ২৫০০ টাকায় রয়েছে তিনটি প্যাকেজ। ১৫০০ টাকার প্যাকেজে শুধু আকাশে উড়তে পারবেন। ২০০০টাকার প্যাকেজে পাচ্ছেন আকাশে উড়ানোর পর নিচে নামিয়ে সমুদ্রের পানি ছোঁয়াবে, তারপর আবার উড়াবে আকাশে। সময় নেয় ৫ থেকে ১৫ মিনিট। উচ্চতা সর্বোচ্চ ৫০০ ফুট পর্যন্ত।
রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড:
এটি আমাদের দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানের ফিস একুরিয়াম দেখার সুযোগ। বাংলাদেশে এটিই সর্ব প্রথম একুরিয়াম ব্যবস্থাপনা যা ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে । এর অবস্থান শহরের ঝাউতলায়, এতে রয়েছে ১০০ প্রজাতির মাছ সহ শাপলাপাতা, কাঁকড়া, বোল, কুঁচিয়া, কাছিম সহ নানান জলজ প্রাণী। একুরিয়ামের ভেতর ঢুকলে এক ধরণের রোমাঞ্চকর অনুভূত হবে, মনে হবে সাগরের ভেতর আছেন আপনি। রেডিয়েন্টে প্রবেশ মূল্য দেশী নাগরিকের জন্য ১০০০টাকা, এবং বিদেশীদের জন্য ২০০০টাকা। খোলা থাকে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। কলাতলী পয়েন্ট থেকে অটো নিয়ে বলবেন ঝাউতলা ফিস ওয়ার্ল্ড যাবেন। ভাড়া ৮০ থেকে ১০০টাকা নিবে।
আদিনাথ মন্দির:
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার গোরঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামের মৈনাক পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান আদিনাথ মন্দিরের। হিন্দু দেবতা মহাদেবের নাম অনুসারে মন্দিরটির নাম রাখা হয়েছিল আদিনাথ। মন্দিরটি সমুদ্র থেকে ৮৫ মিটার উঁচুতে নির্মিত। আদিনাথ যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কাস্তুরি ঘাট। কাস্তুরি ঘাট থেকে স্পিডবোডে করে মহেশখালী চলে যান। ভাড়া পার পারসন ৮০টাকা করে। সময় লাগবে ৩০ মিনিট। চাইলে ইঞ্জিন চালিত নৌকা রিজার্ভ করেও যেতে পারেন।
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক:
পার্কটি সদর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ বিভাগ এই পার্ক টি ১৯৯৯ সালে স্থাপন করেছিল হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে। পার্কের প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা।
বরইতলী মৎস্য খামার:
দারিদ্র বিমোচন, বেকার সমস্যা সমাধান ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম দাবিদার মৎস্য চাষ। শখের বশত মৎস্য চাষ সর্বপ্রথম বরইতলীতে ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা হতে ২৫০ বড় নাইলোটিকা মাছ এনে প্রাকৃতিক ভাবে জর্দাঘোনায় দুই একর জমিতে পোনা উৎপাদনের কাজ শুরু করেছিলেন তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য জনাব এ.এইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন এই অন্যরকম অভিজ্ঞতার একটি জায়গা থেকে।
বরইতলী ইউনিয়ন একতাবাজারের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। সিএনজি বা অটো রিজার্ভ করে যেতে হবে। ভাড়া কলাতলী পয়েন্ট থেকে ৩৫০/- প্রায়।
এবার কিছু টুকিটাকি ব্যাপার জানা যাক:
প্রতিটা বীচেই আপনি ফটোগ্রাফার আছে যারা ডিএসএলআর দিয়ে আপনার ছবি তুলে দিবেন। এরা টুরিস্ট পুলিশ দ্বারা নিয়োগকৃত। সফট কপি পার পিস ছবিতে নেবে ৫টাকা করে, আর যদি প্রিন্ট করান তাহলে পরবে ১০টাকা করে। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে তাদের পরনে পুলিশ কন্ট্রোল থেকে দেয়া লাল শার্ট পরনে আছে কিনা, এবং তাতে তাদের সিরিয়াল কোড নাম্বার দেয়া থাকে। যাতে করে এরা কোনোরকম অনিয়ম বা ঝামেলা করলে সনাক্ত করে পুলিশের সহায়তা নিতে পারেন।
কক্সবাজারে নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ঝুঁকি নাই। অসংখ্য টুরিস্ট পুলিশ আছে যেকোনো সাহায্যে। আপনি যেকোনো হোটেলে চেক ইন করার পর ই আপনার মোবাইলে তাদের সিস্টেমের মাধ্যমে ওয়েলকাম মেসেজ চলে আসবে, সেখানে তাদের নাম্বার থাকবে। সুবিধার্থে নাম্বারটি আপনার ডায়াল লিস্টে রাখতে পারেন। বিভিন্ন ঝামেলা এড়াতে সাথে রাখুন জাতীয় পরিচয় পত্র, ভার্সিটির আইডি কার্ড, বিবাহিত হলে ম্যারিজ সার্টিফিকেট। সর্বোপরি আপনার ভ্রমণ হোক আনন্দময়, ঘুরুন, আবিষ্কার করুন নিজেকে। আর হ্যাঁ অবশ্যই ভ্রমণকৃত স্থান নোংরা করবেন না। প্রয়োজনবোধে অন্যের ফেলিত প্যাকেট, বোতল কুড়িয়ে নির্ধারিত জায়গায় ফেলার অনুরোধ রইলো। দেশ আমার, দোষও আমার।
cheap terbinafine – lamisil 250mg without prescription griseofulvin online buy
buy generic repaglinide over the counter – empagliflozin price empagliflozin 25mg ca