জোগো বানিতোর দেশ খ্যাত, ব্রাজিল যুগে যুগে বহু তারকা ফুটবলারের জন্ম দিয়েছে। যাদের পায়ের যাদুতে মুগ্ধ হয়ে থাকত বিশ্বের ফুটবল সমর্থকেরা। কিন্তু এদের মধ্যে এক জনের বাঁকা পায়ের জাদু পুরো বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল। জন্ম নিয়েছিল অস্বাভাবিক পা নিয়ে, একটি পা অপর পা থেকে প্রায় ছয় ইঞ্চি ছোট ছিল। কিন্তু কোন বাধাই তাকে ফুটবল জাদুকর হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। পুরো নাম ম্যানুয়েল ফ্রান্সিসকো দস্ সান্তোস। তবে ডাকনাম গ্যারিঞ্চা নামেই পুরো পৃথিবীতে সমাদৃত। যার অর্থ- “ছোট পাখি”। তার ছোট খাট আকৃতির জন্যই এই নামে ডাকা হত।
গ্যারিঞ্চার জন্ম ১৯৩৩ সালে, ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোর হত দরিদ্র পরিবারে। তার পূর্ব পুরুষ ক্রীতদাস ছিল বলে জানা যায়। খোঁড়া পায়ের কারণে বাল্য বন্ধুদের পরিহাসের পাত্র ছিল গ্যারিঞ্চা। কেউ হয়ত কল্পনা করে নি বাঁকা পায়ের ছেলেটি একদিন তাদের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক হবে। সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে রচনা করেছিলেন ফুটবল ইতিহাসের অনন্য রূপ কথার গল্প।
বস্তির অলিতে গলিতে বল নিয়ে দৌড়াতো গ্যারিঞ্চা। ফুটবল খেলা ছিল তার কাছে নেশার মত। পরিবারের দুরবস্থা দূর করার জন্য ছোট বেলায় যোগ দেয় কারখানার কাজে। ছোট্ট গ্যারিঞ্চার জন্য কারখানার কাজ ছিল অত্যন্ত দুঃসাধ্য। তবে গ্যারিঞ্চাকে কাজ করতে হত না! কারণ সে ছিল কারখানা ফুটবল টিমের সদস্য। গোল দেওয়াই তার একমাত্র কাজ ছিল। সারাদিন খেলাধুলা করে, ঘুমানোই ছিল তার কাজ। গোল করার কারণে কারখানার সবাই গ্যারিঞ্চাকে কাজের ক্ষেত্রে ছাড় প্রদান করত। ভাল খেলার কারনে উপহার জুটে যায় গ্যারিঞ্চার ভাগ্যে। কারখানা মালিকের একটি ফুটবল ক্লাব ছিল। ক্লাবটির বেশ সুনাম ছিল চারদিকে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল তার চুক্তি পত্রের বিষয়টি। খেলার বিনিময়ে সে পেত “খাদ্য ও মদ”। তা নিয়েই খুশি ছিল গ্যারিঞ্চা। কথায় আছে, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত কখনো দাবিয়ে রাখা যায় না, গ্যারিঞ্চা ছিল তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
ভাগ্য দেবী আবার নজর দিলেন, গ্যারিঞ্চার দিকে। ১৯৫২ সালে তৎকালীন ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব বোতাফোগোর এক খেলোয়াড় আসে গ্যারিঞ্চার ক্লাবের খেলা দেখতে।
খেলা দেখতে এসে তিনি দেখলেন, বাঁকা পায়ের এক খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সাথে রীতিমত ছেলে খেলা করছে। তার পায়ের বল মানে অসাধারণ ড্রিবলিং আর নান্দনিক কসরত। বোতাফোগোর খেলোয়াড়টি মুগ্ধ হয়ে যায় গ্যারিঞ্চার ফুটবলীয় নান্দনিকতায়। খেলা শেষে তিনি দেখা করলেন গ্যারিঞ্চার সাথে। তাকে প্রস্তাব দিলেন বেতাফোগোতে খেলার জন্য। কিন্তু গ্যারিঞ্চা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। গ্যারিঞ্চা মনে করত তার পক্ষে ভালো কোন ক্লাবে খেলা সম্ভব নয়। পিছে না লোকের হাসির পাত্রে পরিনত হতে হয়। কিন্তু খেলোয়াড়টি ছিল নাছোড় বান্দা, সে বিভিন্ন ভাবে গ্যারিঞ্চাকে রাজি করাল।
১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যারিঞ্চা গেলেন বোতাফোগোর ট্রেনিং ক্যাম্পে। পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেই মিলবে খেলার সার্টিফিকেট। তার পরীক্ষা নেয় ব্রাজিলে তৎকালীন ডিফেন্ডার নিল্টন সান্তোস। গ্যারিঞ্চা তাকে বোকা বানিয়ে পরপর তিনবার বল কাটিয়ে নিয়ে গেল। নিল্টন মুগ্ধ হয়ে গেলেন, ক্লাব প্রেসিডেন্টকে বললেন তাকে সাইন করিয়ে নিতে। শুরু হল নতুন ইতিহাসের রচনা। ততদিনে অবশ্য গ্যারিঞ্চা বিয়ে সাদি শেষ করে ফেলেছিলেন!
গ্যারিঞ্চার অভিষেকটা ছিল স্বপ্নের মতই। ক্লাবের হয়ে প্রথম ম্যাচে যখন কোচ তাকে মাঠে নামালেন তখন তার দল পিছিয়ে ২-১ গোলে। মাঠে নামার পর দর্শকরা খোঁড়া!খোঁড়া! বলে চিৎকার করতে থাকল। মাঠে নেমেই শুরু করলেন ড্রিবলিং, বল নিয়ে ডুকে পড়লেন ডি বক্সে। ফাউল করল প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়। পেনাল্টি পেলেন গ্যারিঞ্চা,গোল করে সমতায় ফিরালেন দলকে। বাকী সময় ও নান্দনিক ছন্দে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করলেন। ফলাফল অভিষেক ম্যাচেই হ্যাট্রিক পেলেন গ্যারিঞ্চা। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখল বাঁকা পায়ের এক খেলোয়াড়ের ফুটবল জাদু।
ব্রাজিলের ফুটবল তখন ছন্দ ছাড়িয়ে, গতিশীল খেলার দিকে মনোযোগ দিল। কিন্তু গ্যারিঞ্চা ছিল জাগো বানিতোর চিত্রকর। তার কাছে ফুটবল ছিল ছন্দের মত। তার মতে গোল করাই ফুটবলের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়! মারকানার ট্র্যাজেডির পরই পুরো পাল্টে যায় ব্রাজিল ফুটবলের খেলার ধরণ।
বেতাফোগোকে রানার আপ করলেন একাই। পুরো মৌসুম জুড়ে করলেন ২৬ গোল। পরের মৌসুমেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বেতাফোগোকে নিয়ে
গেলেন ফাইনালে। ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল ফ্লুমিনেন্স। ফ্লুমিনেন্সও গ্যারিঞ্চাকে তাদের দলে ভেড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু বাঁকা পায়ের কথা শুনে তারা ফুটবল জাদুকরকে অবহেলা করে। ফাইনাল ম্যাচেও যথারীতি গ্যারিঞ্চা ম্যাজিক। চ্যাম্পিয়ন হল বেতাফোগো, সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হল গ্যারিঞ্চা। ১৯৫৪ সালের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে তাকে সবাই প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু কোচ তাকে দলে নিলেন না। তার পজিশনে দলে স্থান পায় আরেক তারকা খেলোয়াড় জুলিনহো। এই ঘটনায় চরমভাবে মনঃক্ষুণ্ণ হয় গ্যারিঞ্চা। ক্লাব ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়ে ব্রাজিলের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন। ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেলেও না বলে দেয় গ্যারিঞ্চা। কারণ, তার অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন আর ব্রাজিলের প্রতি ভালোবাসা।
পরের বিশ্বকাপ ১৯৫৮, ব্রাজিল ফুটবলের গৌরবময় ইতিহাস রচনার বিশ্বকাপ। এবার দলে জায়গা পেলেন গ্যারিঞ্চা। দলে ছিল আরেক বিস্ময় বালক পেলে। বিশ্বকাপ শুরু হল, প্রথম দুই ম্যাচে উপেক্ষিত গ্যারিঞ্চা। পরের ম্যাচে নামলেন একদম শুরু থেকেই, প্রতিপক্ষ শক্তিশালী সোভিয়েত ইউনিয়ন। প্রথম মিনিটেই ড্রিবলিং করে শট নিলেন কিন্তু বল বারে লেগে ফিরে আসে। পরের মিনিটে বল পাস দিলেন পেলেকে,আবারও শট ফিরে আসে। এভাবে প্রতিপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে গ্যারিঞ্চা-পেলে যুগল। গ্যারিঞ্চার অভিষেকের শুরুর তিন মিনিটকে বলা হয় “দি গ্রেটেস্ট থ্রি মিনিটস ইন ফুটবল হিস্ট্রি”। গ্যারিঞ্চা আর পেলে যে ম্যাচ গুলোতে একসাথে খেলেছে, সে ম্যাচগুলো কখনো হারে নি ব্রাজিল। ফলশ্রুতিতে, অসাধারণ জয় পায় ব্রাজিল।
ধারাবাহিকতা বজায় রেখে পরের ম্যাচ গুলিতেও অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে থাকে ব্রাজিল। আর প্রতিপক্ষের ঘুম হারাম করতে থাকেন গ্যারিঞ্চা। অবশেষে আসল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ফাইনালে পৌঁছাল ব্রাজিল, প্রতিপক্ষ শক্তিশালী সুইডেন। ম্যাচ শুরু হবার প্রথমার্ধেই ১-০ তে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। কিন্তু হাল ছাড়ে নি গ্যারিঞ্চা বাহিনী। একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত রাখে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স। তারই ফল স্বরূপ সমতায় ফিরে ব্রাজিল। অবশেষে ভাভার
করা গোলেই জয় নিশ্চিত হয় ব্রাজিলের। পেছনের নেপথ্যের কারিগর গ্যারিঞ্চা। তার দেওয়া পাসেই দুটি গোল আসে। আনন্দে ফেটে পড়ে পুরো ব্রাজিল বাসী। প্রথম বিশ্বকাপেই বাজি মাত করে গ্যারিঞ্চা। ব্রাজিলও পেয়ে যায় তাদের অধরা রত্ন বিশ্বকাপ ট্রফি।
রূপকথার এখানেই শেষ নয়, গ্যারিঞ্চা তার সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন পরের বিশ্বকাপের জন্য। ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচের পরই আহত হয়ে যায় পেলে। শঙ্কায় পড়ে যায়, ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। গ্যারিঞ্চার কাঁধের চাপ বেড়ে যায়। গোল করালেই চলবে না,করতে হবে গোল ও। সেই দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারু ভাবে সম্পন্ন করে গ্যারিঞ্চা। ভাভা আর আমালিরদোদের দিয়ে করান একের পর এক গোল। ফাইনালে জ্বর নিয়ে খেলেও খেলতে নামেন গ্যারিঞ্চা।পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না, তারই প্রমাণ গ্যারিঞ্চা। তার একক নৈপুণ্যেই টানা বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল। গ্যারিঞ্চা পায় সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল ও সেরা গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট।বীর বেশে
দেশে ফিরেন গ্যারিঞ্চা।জাতীয় হিরোর তকমা পায় গ্যারিঞ্চা।
শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরে ড্রেসিং রুমেও ছিল গ্যারিঞ্চার সরব উপস্থিতি। ড্রেসিং রুমেও তিনি সহ যোদ্ধাদের হাসি খুশি উপহার দিতেন। বিখ্যাত উরুগুইয়ান লেখক গ্যালিয়ানোর বই “Football in the sun and shadow” তে গ্রেট গ্যারিঞ্চা সম্পর্কে লিখেন, ড্রেসিং রুমে তার মতো হাঁসি খুশি আর কেউ ছিলেন না । তিনি যেন ড্রেসিং রুমের একজন জোঁকার , সবাইকে হাসানোই ছিলো তার কাজ ।
পরের বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।কিন্তু চক্রান্ত করে ব্রাজিলকে হারিয়ে দেওয়া হয় তৃতীয় ম্যাচেই। ব্রাজিলের হয়ে মোট ৫০ টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করে গ্যারিঞ্চা। মাতো একটি ম্যাচেই পরাজিত হয়। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে হাঙ্গেরির সাথে হারার পরে গ্যারিঞ্চা বলেন; “ আজ ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ঈশ্বর নিজেই ফুটবল খেলেছেন, নইলে ব্রাজিল হারতে পারে না। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তো আর খেলা যায় না”। তিনি খেলা ছেড়ে দেন ।
একজন অস্বাভাবিক শারীরিক আকৃতি নিয়েও জয় করেছেন কোটি ভক্তের প্রাণ। দেশের হয়ে জিতেছেন সর্বোচ্চ সম্মান, বিশ্বকাপ।হয়েছেন, সেরা খেলোয়াড় ও গোল দাতা। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় কেমন খেলোয়াড় ছিলেন গ্যারিঞ্চা?
পেলের মতে, “ গ্যারিঞ্চা তার পজিশনে, আমার দেখা সেরা খেলোয়াড়। সত্যিকার অর্থেই উইঙ্গার পজিশনকে নতুন ভাবে চিনিয়েছেন গ্যারিঞ্চা। তার পায়ের ড্রিবলিং সর্ব কালের সর্ব সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে। তার পায়ে বল মানেই সব খেলোয়াড়কে পরাস্ত করে গোল দেওয়া। তার ক্যারিয়ারের কাল হয়ে দাড়ায় তার অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন। মাত্র ৫০ বছর বয়সেই মদ্য পানের প্রভাবে লিভার রোগে তিনি পরলোক গমন করেন।
ড্রিবলিং যদি হয়ে থাকে ফুটবলের এক অনিন্দ্য সুন্দর আর্ট তাহলে গ্যারিঞ্চা হল তার পিকাসো। ক্ষুদ্র ক্যারিয়ারের সব কিছু অর্জন করেছেন। ব্রাজিলের মানুষ এখনো শোক করে বলে ইশ! সে যদি একটু নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করত! ভালবেসে মানুষ তাকে “people of joy” বলে ডাকত। মানুষের অফুরন্ত ভালবাসাই তার শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।
পরিশেষে বলতে হয়, ফুটবল পিকাসোকে নিয়ে আলোচনা খুব কমই হয়। তার জন্য দায়ী সময় আর গ্যারিঞ্চার অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন। তবে ফুটবল বোদ্ধাদের মনে চিরকাল বেঁচে থাকবেন জাদুকর গ্যারিঞ্চা। তার মৃত্যুর পর ব্রাজিল সরকার তার নামে একটি ষ্টেডিয়ামের নামকরণ করে।
গারিঞ্চার এপিটাফে খোঁদাই করা ছিলো একটি কথা;“ এখানে শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন সেই জন ,যিনি ছিলেন মানুষের আনন্দ, “JOY OF THE PEOPLE”- ম্যানে গ্যারিঞ্চা।বলা হয়ে থাকে “ব্রাজিলের মানুষ শ্রদ্ধা করে পেলেকে আর ভালবাসে গ্যারিঞ্চাকে। “ফুটবলের পিকাসো আজীবন বেঁচে থাকবে ফুটবল প্রেমিকদের মনে সেটাই সবার প্রত্যাশা।
তথ্যসুত্র:
৩. www.goal.com
https://indiaph24.store/# india online pharmacy
mexican online pharmacies prescription drugs mexico pharmacies prescription drugs mexico pharmacy
mexico pharmacies prescription drugs mexican pharmacy mexican pharmacy
https://mexicoph24.life/# mexican mail order pharmacies
mexican rx online: п»їbest mexican online pharmacies – medicine in mexico pharmacies
canada online pharmacy canadian pharmacies ordering drugs from canada
pharmacies in mexico that ship to usa mexican online pharmacies prescription drugs mexico drug stores pharmacies
http://canadaph24.pro/# legit canadian pharmacy online
canadian pharmacy uk delivery Large Selection of Medications from Canada canadian online drugstore
canada pharmacy 24h: Licensed Canadian Pharmacy – canadian drugstore online
mexican drugstore online mexican pharmacy medicine in mexico pharmacies
buying prescription drugs in mexico online buying from online mexican pharmacy mexican pharmaceuticals online
https://mexicoph24.life/# buying prescription drugs in mexico online
mexican online pharmacies prescription drugs Mexican Pharmacy Online best online pharmacies in mexico
reliable canadian pharmacy Certified Canadian Pharmacies canadian discount pharmacy
http://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies
Online medicine home delivery world pharmacy india india pharmacy
http://canadaph24.pro/# legit canadian pharmacy online
purple pharmacy mexico price list mexico pharmacy purple pharmacy mexico price list
buying prescription drugs in mexico Online Pharmacies in Mexico mexican pharmaceuticals online
https://mexicoph24.life/# mexican border pharmacies shipping to usa
mexico pharmacies prescription drugs cheapest mexico drugs mexican mail order pharmacies
medicine in mexico pharmacies cheapest mexico drugs mexican pharmacy
mexican pharmaceuticals online mexico pharmacies prescription drugs medicine in mexico pharmacies
https://canadaph24.pro/# canada drugs online
pharmacy website india Cheapest online pharmacy online shopping pharmacy india