কমরেড ইন আমেরিকা- এক কমরেডের অসমাপ্ত প্রেমকথা

0

সিনেমায় প্রেম কাহিনী মানে-ই তো কিছু গতানুগতিক চিত্র, কিছু প্রচলিত একশন আর সিনেমার শেষে মিলন। এই ধারার বাইরের কোন প্রেম কাহিনী যে আলাদাভাবে আকর্ষণ করবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। মালায়ালাম ভাষার ভারতীয় সিনেমা কমরেড ইন আমেরিকা (২০১৭) ঠিক এ কারনেই একটু ভিন্ন। প্রেম কাহিনীর সাথে রাজনীতির সংমিশ্রণ এবং তা থেকে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ সিনেমাটিতে কিছুটা ভিন্নতা এনে দিয়েছে।

কমরেড ইন আমেরিকা সিনেমার পোস্টার
কমরেড ইন আমেরিকা সিনেমার পোস্টার
Source: Movie Time Rating

কমরেড ইন আমেরিকা মূলত একজন কমরেডের গল্প যেখানে একজন কমরেড তার প্রেমের সন্ধানে আমেরিকা যায়। এই কমরেড হচ্ছে আজিপান। সে কেড়ালা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। অন্যদিকে তার বাবা ম্যাথিউ কংগ্রেস নেতা। সিনেমার শুরুতে দেখা যায় অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে কমিউনিস্টদের বিক্ষোভ, পুলিশের হামলা এবং আজিপানের নায়কোচিত ভঙ্গিতে আবির্ভাব। কংগ্রেসের কয়েকজনের কথোপকথন থেকে জানা যায় যে আজিপান তার এই কমিউনিজমের দীক্ষা পেয়েছিলো তার মামার কাছ থেকে। আর জানা যায় যে সে বাহিরে কোথাও যাবার পরিকল্পনা করছে।

রাতে মদ খেয়ে আজিপান পার্টি অফিসে ঢোকার মুখে সিঁড়িতে দেখলো জোসেফ স্ট্যালিন সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে চরম বিরক্ত হয়ে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আজিপান দেখতে পায় কার্ল মার্ক্স, লেনিন এবং চে গুয়েভারা বসে মিটিং করছে। আজিপান তাদের পাসপোর্ট দেখায় এবং জানায় যে সে আমেরিকা যাবে, তাই তার পার্টি থেকে ছুটি দিতে হবে। যাওয়ার কারন হিসেবে সে বলে সারাহ-র কথা, আজিপানের ভালবাসা।

কমরেড ইন আমেরিকা
কমরেড ইন আমেরিকা
Source: filmibeat.com

রাজনীতির জন্য ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানোর সময় আজিপানের সাথে পরিচয় হয় সারাহ-র সাথে। সারাহ আমেরিকান নাগরিক, পড়াশুনার জন্য সে ভারত এসেছে তার কাকা-র বাসায়। আজিপান সারাহ-র প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু একদিন হুট করে সারাহ আমেরিকা চলে যায়। আজিপানকে ফোন করে জানায় যে তার বাবা আমেরিকাতেই তার বিয়ে ঠিক করেছে। আজিপান আমেরিকা যাবার পরিকল্পনা করে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে সে জানতে পারে যে স্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সে আমেরিকা পৌছাতে পারবে না। সে সেরিল নামে আমেরিকা প্রবাসী তার এক ভাইকে ফোন করে। সেরিল তাকে জানায় হন্ডুরাস হয়ে মেক্সিকো পাড় হয়ে অবৈধভাবে আমেরিকা যাওয়া সম্ভব। কিন্তু এ পথ বিপদজনক, এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও রয়েছে। কিন্তু আজিপান বদ্ধপরিকর।

সে তার বাবাকে সব খুলে বলে। তার বাবা মা-কে জানাতে নিষেধ করে। এরপরে আজিপান বের হয় আমেরিকার উদ্দেশ্যে। যাবার আগে সে পার্টি থেকে একটা চিঠি নিয়ে নেয় যে তাকে যেনো অন্যদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সহায়তা করে। একজন প্রাক্তন কমিউনিস্ট তাকে মেক্সিকো যেতে সহায়তা করে। মেক্সিকোতে সে একজন গাইডের গ্রুপে যোগ দেয়। সেখানে তার পরিচয় হয় পল্লবীর সাথে যে তার মৃত বাবার সন্ধানে আমেরিকা যাবে। তার সাথে ঐ গ্রুপের অন্যান্য যাত্রীদেরও পরিচয় হয়। তারা রওনা দেয়।

যাত্রার প্রথমদিনে গাইড তাদের রেখে পালিয়ে যায়। এক চাইনিজের সহায়তায় তারা পথ চলতে শুরু করে। পথে তাদের একটা সশস্ত্র গ্যাং আটকানোর চেষ্টা করলে তারা সেটা প্রতিহত করে। এরপরে পথ চলতে গিয়ে তারা আমেরিকান সীমান্ত রক্ষীর মুখোমুখি হয়। পল্লবী আর দুজন পালাতে সক্ষম হয়। আজিপান আর লাদেন (সহযাত্রী) বর্ডার পাড় হবার সময় আটক হয়। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাবার সময় তাদের গাড়িটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় এবং দুজনেই পালিয়ে যায়।

কমরেড ইন আমেরিকা
কমরেড ইন আমেরিকা
Source: FilmiHood

আজিপান এক ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভারের সহায়তায় সেরিলকে খুঁজে পায়। কিন্তু সেরিল জানায় যে সারাহ আজিপানের জন্য অপেক্ষা করছে না, বরং সে তার বাবার পছন্দের ছেলেকে-ই বিয়ে করবে।

আজিপান কষ্ট পেয়ে তার বাবাকে ফোন দিয়ে জানায় যে সে পরের ফ্লাইতে ফিরে আসবে। তার বাবা তাকে উৎসাহ দেয় এবং বলে যে যদি আজিপান সত্যি কমিউনিস্ট হয়ে থাকে, তাহলে সে যেনো সারাহ-র বিয়ে খেয়ে আসে। আজিপান মনের জোর ফিরে পায়। সে বিয়ের দিন সারাহ-কে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসে। ফেরার সময় প্লেনে আজিপানের দেখা হয় পল্লবীর সাথে। পল্লবীকে পুলিশ গ্রেফতার করে ভারতে ফেরত পাঠায়।

সিনেমার শেষে দেখা যায় যে আজিপানের প্রেমের স্বপ্নের মতো রাজনৈতিক স্বপ্নও বাস্তবায়ন হয়নি। কেড়ালার অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও সে আবার নির্বাচিত হয়, একই ভাবে আমেরিকায় ট্রাম্প।

কমরেড ইন আমেরিকা সিনেমাটি মুলত প্রেমের কাহিনি। সেই সাথে কিছুটা ব্যাঙ্গতা, নাটকীয়তা আর ঘটনাপ্রবাহ সিনেমাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে সারাহ-র চরিত্রটি আরও স্পষ্ট করে তুললে সিনেমাটি বেশি ভাল লাগতো। আজিপান চরিত্রটির উপর জোর দিতে গিয়ে পরিচালক অন্যান্য চরিত্রগুলোকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হালকা করে ফেলেছেন। এছাড়া সিনেমা-র বাদবাকি সবই চিত্তাকর্ষক ছিলো। অভিনেতাদের অভিনয়ও ছিলো যথার্থ এবং সুন্দর।

সিনেমাটিতে আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসনের বিষয়টাকে দেখানো হয়েছে যথাসম্ভব স্পষ্টভাবে। ট্রাম্প সরকারের আমেরিকায় “বাড়তি বোঝা” হিসেবে প্রবেশ করা এসব অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোরতা এবং তাদের অনুপ্রবেশ রোধের প্রচেষ্টাকেও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। একই সাথে একই পরিবারের দুই ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণকারীর বন্ধুত্বপূর্ণ স্বাভাবিক সহাবস্থান দর্শকের মন কেড়ে নেয়।

কমরেড ইন আমেরিকা সিনেমাটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন অমল নিরাদ, চিত্রনাট্যকার শিবিন ফ্রান্সিস। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন দুলকার সালমান (আজিপান), কার্তিকা মুরালিধরন (সারাহ), চান্দীনী শ্রীধরন (পল্লবী), সিদ্দিক (ম্যাথিউ) এবং জিনু জোসেফ (সেরিল)।

 

তথ্যসূত্রঃ

১. https://www.deccanchronicle.com/entertainment/movie-reviews/070517/movie-review-comrade-in-america-comrade-in-love.html

২. The Indian Express (May 6, 2017)

৩. Times Of India (May 5, 2017)

Leave A Reply

Your email address will not be published.

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More