চেনা পৃথিবীর অচেনা অনিন্দ্য সুন্দর কয়েকটি স্থান

2

বিশাল এই পৃথিবীর আনাচে -কানাচে কত যে সুন্দর সব জায়গা রয়েছে সেগুলো হয়ত অজানা থেকে যেত যদি আমরা প্রযুক্তির এই যুগে বসবাস না করতাম। পৃথিবীর এমন কিছু স্থান রয়েছে যা দেখে মনে হবে এ যেন শুধুই কোন শিল্পীর কাল্পনিক এক রঙ-তুলির আচর। তবে পৃথিবীতে বাস্তবিক ভাবে এমন কিছু স্থান রয়েছে যার সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে না শুধু আপনার চক্ষুকেও অবিশ্বাসী হতে বাধ্য করতে চাইবে। আজ এমন কিছু অবিশ্বাস্য স্থানের সাথে পরিচিত হবো।

কিউকেনফ, নেদারল্যান্ড (Keokenhof,Netherlands)

কিউকেনফ, নেদারল্যান্ড
কিউকেনফ, নেদারল্যান্ড
Source: keokenhof.nl

কিউকেনফ কে বলা হয় “গার্ডেন অব ইউরোপ”। নেদারল্যান্ডে অবস্থিত কিউকেনফ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ফুলের বাগান।কিউকিনফ পার্কের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় প্রতি বছর এই বাগানের ৩২ হেক্টর জায়গা জুড়ে প্রায় ৭ মিলিয়ন বা ৭০ লক্ষ ফুলের চারা লাগানো হয় যার মধ্যে অধিকাংশ ই টিউলিপ। ১৯৪৯ সালে নেদারল্যান্ডের লিস শহরের মেয়র বাগান টি তৈরি করেন। এই বাগান টি খুব ই অল্প সময়ের জন্য বছরে একবার মার্চের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ট্যুরিস্টদের জন্য খোলা হয়। ২০১৭ সালে এই অল্প সময়ের মধ্যে এই বাগানের সৌন্দর্য দেখার জন্য ১৪ লাখ ট্যুরিস্টের সমাগম হয়েছিল।

ল্যাভেন্ডার ফিল্ডস,ফ্রান্স (Lanvander Fields, France)

ল্যাভেন্ডার ফিল্ডস,ফ্রান্স
ল্যাভেন্ডার ফিল্ডস,ফ্রান্স
Source: youtube.com

অপরূপ সৌন্দর্যের ল্যাভেন্ডার ফুলের একাধিক মাঠ রয়েছে ফ্রান্সের প্রোভঁস এ। ল্যাভেন্ডার কে বলা হয় প্রোভঁস এর আত্মা। পৃথিবীর সব থেকে বেশী ল্যাভেন্ডার চাষ করা হয় এখানে যা থেকে সুগন্ধি,প্রসাধনী,শরবত ও ঔষধ তৈরি তে ব্যবহৃত হয়। ল্যাভেন্ডার ফুলের মধুও পাওয়া যায়। নেপোলিয়নের প্রিয় এই ফুল ফোটে জুন মাস থেকে। জুন থেকে আগস্ট মাস গুলো আপনি এই প্রোভঁস এর ল্যাভেন্ডার ফিল্ডস গুলো তে বাইক,কার কিংবা পায়ে হেটে এই ফুলের সুভাস ও সৌন্দর্য আহরণ করতে পারবেন।

উইস্টেরিয়া ফ্লাওয়ার টানেল,জাপান ( Wisteria Flower Tunnel,Japan)`

উইস্টেরিয়া ফ্লাওয়ার টানেল,জাপান
উইস্টেরিয়া ফ্লাওয়ার টানেল,জাপান
Source: housebeautiful.com

উইস্টেরিয়া ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যময় এই স্থান টি জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ৬ ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত কিতাকিওশু শহরে কাওয়াচি ফুজি গার্ডেনে অবস্থিত। এই বাগান টি তে ২০ টি প্রজাতির মোট ১৫০ টি উইস্টেরিয়া ফুলের চাষ হয়। তবে এই বাগানের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে উইস্টেরিয়া ফ্লাওয়ার টানেল। টানেল চারপাশে  হরেক রকম রঙের উইস্টেরিয়া ফুল ঝুলে আছে, মাঝখান দিয়ে রাস্তা। এই টানেল মধ্যে হাঁটার সময় মনে হয় যেন উইস্টেরিয়া ফুলের চাদর মুড়ি দিয়ে হাঁটছি। এই অপূর্ব সুন্দর স্থান টি দেখতে হলে হলে আপনাকে এপ্রিলের শেষের দিক হতে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে যেতে হবে।

মেন্ডেনহল আইস কেভস,আলাস্কা (Mendenhall Ice Caves)

মেন্ডেনহল আইস কেভস,আলাস্কা
মেন্ডেনহল আইস কেভস,আলাস্কা
Source: alaskalife.com

পৃথিবীর অবিশ্বাস্য সুন্দর কিছু স্থান রয়েছে যেগুলো না দেখলে আপনি কোন দিন বিশ্বাস করতে পারবেন না। তেমন ই একটি স্থান হচ্ছে মেন্ডেনহল আইস কেভস। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ আলাস্কার জুনো শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে মেন্ডেনহল উপত্যকার মেন্ডেনহল হিমবাহে অবস্থিত। ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই হিমবাহে একটি আইস কেভস বা বরফের গুহা রয়েছে। উপত্যকার এক স্থানে দুই পাশের পাহাড়ের মাঝখানের গর্ত বরফে ভরে গেছে তার মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের উঁচু  থেকে গড়িয়ে আসা পানির কারণে বরফের মাঝখান দিয়ে গুহার তৈরি হয়েছে। বরফের মধ্যে দিয়ে রাস্তা উপরে বরফের নীলাভ আস্তরণ। এই সৌন্দর্য শুধু মাত্র বর্ণনা করে বোঝানো সম্ভব নয়।

সালার ডি ইয়ুনি,বলিভিয়া (Salar De Uyuni,Bolivia)

 সালার ডি ইয়ুনি,বলিভিয়া
সালার ডি ইয়ুনি,বলিভিয়া
Source: www.stuttgarter-zeitung.de

সালার ডি ইয়ুনি পৃথিবীর সবচেয়ে  বড় লবণাক্ত সমতল ভূমি। এটি কে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আয়না। লবণের এই মাঠের আয়তন ১০৫৮২ বর্গ কিলোমিটার। সমুদ্র থেকে এই স্থানের উচ্চতা ১১,৯৯৫ ফুট।বিশাল এই লবণের মাঠ টি বলিভিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এই স্থানের কিছু হৃদ পরিবর্তিত হয়ে এই স্থান টি গঠিত হয়। এখানে কয়েক মিটার লবণ পুরো হয়ে থাকে যার মধ্যে বেশীর ভাগ ক্রাস্ট লবণ। পৃথিবী ৫০-৭০% ভাগ লিথিয়াম সালার ডি ইয়ুনি তে রয়েছে। পরিষ্কার আকাশ,বিশাল শুভ্র এলাকা এবং প্রচুর ফ্ল্যামিঙ্গো পাখি এখানে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্রতি বছর এই স্থানে কয়েক লাখ পর্যটক ঘুরতে আসে।

সাগানো ব্যাম্বো ফরেস্ট,জাপান ( Sagano Bamboo Forest)

সাগানো ব্যাম্বো ফরেস্ট,জাপান
সাগানো ব্যাম্বো ফরেস্ট,জাপান
Source: rebanas.com

ব্যাম্বো ফরেস্ট বা বাঁশের বাগান টি জাপানের কিয়োটো অঞ্চলের অ্যারাশিয়ামা জেলায় অবস্থিত। সাগানো ব্যাম্বো ফরেস্ট জাপানের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক আকাঙ্ক্ষিত পর্যটন স্থান। এই বাঁশ বাগানে সবচেয়ে মজার জিনিস হচ্ছে যখন বাতাস বয়ে যায় তখন এক বাঁশের সাথে অন্য বাঁশের ধাক্কার লাগার ফলে সৃষ্ট অপূর্ব এক শব্দ। জাপানের নাগরিকেরা বাঁশ বাগানের এই অপূর্ব শব্দ টি ভোটের মাধ্যমে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাপান সরকার কে আহ্বান জানিয়েছে। পর্যটকদের জন্য ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে এই বাঁশ বাগান টি। বাঁশ বাগানের মাঝখান দিয়ে তৈরি শনের বেড়ার নিচে লাগানো হলুদ রঙের বাতি যখন রাতে জ্বলে উঠে তখন মনে হয় যে এটি শত মাইলের দীর্ঘ পথ হলে অনেক ভালো হতো।

রংধনু পাহার, চীন ( Rainbow Mountains,China)

রংধনু পাহার, চীন
রংধনু পাহার, চীন
Source: beautifulnow

এই পাহারটির প্রকৃত নাম হচ্ছে জাঙ্গয়ি ডানজিয়া জিওলজিক্যাল পার্ক (Zhangye Danzia Geological Park).

এই পাহার টি জিওলজিক্যালের এক বিষ্ময়। এই পাহারটি চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গনসু প্রদেশে ২০০ মাইল জুড়ে অবস্থিত। এই জিওলজিক্যাল পার্ক কে ২০০৯ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বর্তমানে এই পার্কে প্রচুর সংখ্যক দেশী এবং বিদেশী পর্যটক ভীড় করেন  অসম্ভব সুন্দর এই পাহার কে দেখার জন্য।

এই পাহাড়টি হিমালয় পর্বতমালারও আগে গঠিত হয়। ক্র্যাটাসিয়াস বেলেপাথর এবং পাললিক শিলা জমা হয়ে লোহা এবং ট্রেস মিনারেলের সাথে মিশে এই কালার ফুল পাহারটি গঠন করে। এই পাহারে জমা হওয়া আইরন বাতাস এবং পানিতে বিদ্যমান অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে আয়রন অক্সাইড গঠন করেছে যার ফলে আমরা এই পাহারে গাঢ় লাল রং দেখতে পাই যা অধিকাংশ স্থান জুড়ে রয়েছে।  এছাড়া এই পাহাড়ে আয়রন সালফাইডের উপস্থিতির কারনে ধাতব হলুদ রং দেখতে পাওয়া যায় এবং ক্লোরাইট বা আয়রন সিলিকেট থাকার কারনে সবুজ রং টি দেখতে পাওয়া। এভাবে বিভিন্ন ধাতব উপাদানের উপস্থিতির কারনে এই পাহার টি বিভিন্ন রঙের মিশেলে হয়ে উঠেছে এক বিশাল স্থায়ী রংধনু।

 ক্যানো ক্রিসট্যালেস, কলম্বিয়া(Cano Cristales,Colombia)

ক্যানো ক্রিসট্যালেস, কলম্বিয়া
ক্যানো ক্রিসট্যালেস, কলম্বিয়া
Source: vmireinteresnogo.com

কলম্বিয়ার এই বায়োলজিক্যাল বিষ্ময় কে বলা হয়, “পাঁচ রঙের নদী ” অথবা “তরল রংধনু”। এই নদীটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নদীও বলা হয়। এই নদীটি কলম্বিয়ার মেতা  প্রদেশের  সেরানিয়া ডি লা মাকারানা তে অবস্থিত। এই নদীটি বর্তমান পৃথিবীর এক বিষ্ময়। জুলাই থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে এই নদীর পানি ৫ রঙে রঞ্জিত হয়ে উঠে। এই পাঁচ টি রঙের মধ্যে রয়েছে হলুদ,সবুজ,কালো, নীল এবং লাল। ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি গুয়ায়বেরো নদীর একটি শাখা। সেরানিয়া ডি লা মাকারেনা বিশ্বের তিনটি বড় ইকো সিস্টেমের শেষ সীমান্তে অবস্থিত যার মধ্যে রয়েছে আমাজন,আন্দেস এবং পূর্ব লিয়ানস। এই তিনটি ইকোসিস্টেমে প্রচুর উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে। এই বিশাল উদ্ভিদ কুলের কারনেই এই নদীর পানি এ রকম হয়েছে বলে মনে করা হয়।

 

তথ্যসূত্র:

১. https://www.forbes.com/sites/trevornace/2016/03/02/rainbow-mountains-china-earths-paint-palette/amp/

২. https://adventuresoflilnicki.com/how-to-get-to-mendenhall-ice-caves/

৩. http://twistedsifter.com/2013/02/wisteria-flower-tunnel-kawachi-fuji-garden-kitakyushu-japan/amp/

৪. https://www.provenceguide.co.uk/explore/lavender-38-1.htmlhttps://keukenhof.nl/en/

Leave A Reply
2 Comments
  1. Ntzonh says

    order lamisil sale – lamisil online order buy griseofulvin sale

  2. Ypqhcm says

    buy glycomet generic – buy metformin sale pill precose 50mg

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More