হারানো শহর আজটালান: অ্যাজটেক সংস্কৃতির জন্মস্থান

1

প্রাচীন আমেরিকার অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল মেক্সিকোর অ্যাজটেক জনগোষ্ঠী। বর্তমান মেক্সিকোতে গড়ে ওঠা প্রাচীন অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের ব্যাপারে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকলেও অ্যাজটেক সংস্কৃতির উৎপত্তি সম্পর্কে খুব কম তথ্যই খুঁজে পাওয়া যায়। অনেকের মতে হারিয়ে যাওয়া দ্বীপ আজটালানই অ্যাজটেক সংস্কৃতির জন্মস্থান। কিন্তু কোথায় এই আজটালান? আসলেও কি আজটালান ছিল? নাকি আজটালান কেবলই এক লোকগাথা যার অস্তিত্ব শুধু পুরাণেই সীমাবদ্ধ?

আজটালান: হারিয়ে যাওয়া এক শহর

লোককাহিনী বলে, প্রাচীন অ্যাজটেকদের আগমন ঘটেছে হারিয়ে যাওয়া এক নিসর্গ থেকে- উত্তরের অজানা এক দ্বীপ যার নাম আজটালান। অ্যাজটেক সভ্যতা, যার আরেক পরিচয় প্রাচীন মেসো-আমেরিকান সভ্যতা- এর পৌরাণিক বাসভূমি এই আজটালান।  Aztlan বা আজটালান শব্দের উৎপত্তি নাহুয়াত্ল ভাষার দুটি শব্দ থেকে: আজটাটল (Aztatl) এবং টলান (Tlan), যার অর্থ “সারস পাখির স্থান”। সারস পাখির আধিক্য থাকার কারণে আজটালানকে “শুভ্রতার স্থান”ও বলা হয়ে থাকে। অ্যাজটেক পুরাণ মতে, ভূগর্ভ থেকে তাদের উত্থান ঘটেছে চিকোমজ্টক ( সাতটি গুহা) দিয়ে আর পরবর্তীতে আজটালান দ্বীপ হয়ে ওঠে তাদের আবাস স্থলে। পৌরাণিক এই কাহিনীর সাথে অ্যাজটেক যাযাবরদের বর্তমান মেক্সিকোর উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অভিপ্রয়াণের ইতিহাসকে (১ম শতকে) আংশিকভাবে এক করা যায়।

চিকোমজ্টক ( সাতটি গুহা) অ্যাজটেক
চিকোমজ্টক ( সাতটি গুহা)
Source: Ancient Origins

কেমন ছিল আজটালান?

পৌরাণিক কাহিনীর বর্ণনা অনুযায়ী আজটালান ছিল প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ এক স্থান, যা অবস্থিত ছিল বিশাল এক জলাশয়ের ধারে। আজটালান এ বসবাসকারী সবাই ছিল মৃত্যুঞ্জয় এবং অফুরন্ত প্রাচুর্য ভাণ্ডারের ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে দিনযাপন করত। জলাশয়ের মাঝখানে অবস্থিত ছিল কোলহুয়াকান নামের খাড়া পর্বত যেখানে ছোট-বড় অনেক গুলো গুহা ছিল যাদেরকে একসাথে চিকোমোজ্টক বলা হত। এই গুহাতেই অ্যাজটেক পূর্বপুরুষেরা বাস করত। দ্বীপটি ছিল অসংখ্য সারস পাখি, হাঁস আর অন্যান্য পাখ-পাখালিতে পরিপূর্ণ; দৃষ্টিনন্দন পাখিদের কোলাহলে ভরে থাকতো আজটালান, সাথে জলাশয়ের পানিতে খেলা করত রঙ্গিন মাছ। আর জলাশয়ের ধার ঘেঁষে ছিল অনেক অনেক গাছ। আজটালান এর বাসিন্দারা কেন্যুতে চরে মাছ ধরত আর ভাসমান বাগানে ভুট্টা, গোলমরিচ, মটর, টমেটো এবং পারিজাতের চাষ করত। কিন্তু যখন তারা নিজ বাসভূমি ছেড়ে চলে যায়, তখন সব কিছু তাদের বিপরীতে চলে যায়। আগাছা আর জঞ্জাল ভরা পাথুরে জমির কারণে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। বিষাক্ত সরীসৃপ আর হিংস্র পশুতে পরিপূর্ণ এলাকা পার করে তারপরই আজটালান এর জনগণ বসতি গড়ার উদ্দেশ্যে তাদের ভাগ্য নির্ধারিত স্থান টেনোচ্টিটলান (Tenochtitlan)-এ এসে পৌছায়।

কোথায় ছিল আজটালান?

নাহুয়াট্ল রূপকথা অনুযায়ী, চিকোমজ্টক বা “সাত গুহার স্থান”-এ সাতটি জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। একেকটি নাহুয়া গোষ্ঠী একেকটি গুহার প্রতিনিধিত্ব করত- জোচিমিল্কা (Xochimilka), টলাহুইকা (Tlahuica), আকলহুয়া (Acolhua), টলাক্সকাল্টেকা (Tlaxcalteca), তেপানেকা (Tepaneca), কাল্কা (Chalca) এবং মেক্সিকা (Mexica)। এই সাত জনগোষ্ঠীর ভাষাগত উৎপত্তি এক হওয়ার ফলে তাদেরকে একত্রে “নাহুয়াতলাকা” (Nahuatlaca) নাহুয়া জনগোষ্ঠী বলা হয়। এই “নাহুয়াতলাকা” তাদের পুরাতন আবাসস্থল চিকোমজ্টক ত্যাগ করে আজটালান এর কাছে এসে নতুন বসতি স্থাপন করে। পুরাণ মতে, মেক্সিকা জনগোষ্ঠী তাদের দেবতা হুইটযিলোপোচটিল (Huitzilopchtli)-র আস্থায় আজটালান ত্যাগ করে নতুন আবাসের খোঁজে মেক্সিকো উপত্যকায় গমন করে।

আজটালান হচ্ছে অ্যাজটেকদের সেই প্রাচীন আবাস, মেক্সিকোতে বসবাসের পূর্বে যেখানে প্রাচীন অ্যাজটেক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। ধারনা করা হয়, মেক্সিকোর পশ্চিমাঞ্চল থেকে শুরু করে ইউটাহ্ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল আজটালান। অনেক পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, প্রাচীন আজটালান অবস্থিত ছিল নায়ারিতের বর্তমান শহর সান ফেলিপ আজটালান; যদিও আজটালানের সঠিক দিশা আজ পর্যন্ত অজানা।

আজটালান ত্যাগ করে নতুন আবাসের খোঁজে মেক্সিকো উপত্যকায় গমন
আজটালান ত্যাগ করে নতুন আবাসের খোঁজে মেক্সিকো উপত্যকায় গমন
Source: Ancient Origins

চিকানো লোককাহিনী অনুযায়ী, আজটালান হিসেবে মেক্সিকোর সেই অঞ্চলকে ধরা হয় যে অংশ ১৮৪৬ সালের মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র দখল করে নেয়। বিশ্বাস করা হয় যে, বিশাল এই এলাকা অ্যাজটেকদের অভিপ্রয়াণের ঘটনার প্রতিনিধিত্ব করে।

আজটালান কতদূর অব্দি বিস্তৃত ছিল তা কারো জানা নেই। তবে এর বিস্তার ইউটাহ্ পর্যন্ত হয়ে থাকলে ধরে নিতে হবে যে অ্যাজটেকদের উদ্ভব মেক্সিকোতে হয়নি, বরং বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে তাদের আদি আবাসন।  

কারা ছিল চিচিমেকা?

কথিত এবং লিখিত তথ্য মতে, মেক্সিকা এবং অন্যান্য নাহুয়াট্ল দলগুলোর আগেই আরেকটি দল জায়গা বদল করে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চল থেকে কেন্দ্রে চলে আসে, যারা পরিচিত ছিল চিচিমেকা হিসেবে। নাহুয়াদের কাছে চিচিমেকারা তুলনামূলক কম সভ্য হিসেবে গণ্য ছিল। চিচিমেকাদের নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী হিসেবে কোন পরিচয় ছিলনা। তারা মূলত পরিচিত ছিল শিকারি অথবা উত্তরের কৃষক হিসেবে, কৃষিকাজ নির্ভর টোলটেকা জনগোষ্ঠীর একদম বিপরীত একটি দল; যারা আগেই মেক্সিকো অববাহিকায় অবস্থান করছিল।

অভিপ্রয়াণ(The Migration)

স্থান বদলের যাত্রায় দেবতাদের মধ্যকার যুদ্ধের অনেক কাহিনী জড়িয়ে আছে। অন্য সকল পৌরাণিক কাহিনীর মত এই যাত্রার মাঝেও আছে প্রাকৃতিক এবং অতি প্রাকৃতিক ঘটনার সমন্বয়। তবে মেক্সিকো অববাহিকায় যাত্রীদের আগমন তুলনামূলকভাবে কম রহস্যময়। আজটালান থেকে মেক্সিকোতে অভিপ্রয়াণ কাহিনীর সাথে যুক্ত আছে চাঁদের দেবী কোয়োলসাওহকি (Coyolxauqui) এবং তার ৪০০ জন নক্ষত্র ভাইদের কাহিনী, যারা সূর্য দেবতা হুইটযিলোপোচটিল-কে পবিত্র কোটেপেক (Coatapec) পর্বতে খুন করার চেষ্টা চালিয়েছিল।

ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্ববিদ এবং পুরাতত্ত্ববিদদের মতানুযায়ী, মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যবর্তী অঞ্চলে অনেকগুলো দলের অভিপ্রয়াণ ঘটনা ঘটে ১১০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। এই ঘটনার প্রমাণ স্বরূপ রয়েছে নতুন ধরনের সিরামিকের সন্ধান এবং নাহুয়াটল ভাষা যা মেক্সিকোর নির্দিষ্ট কোন আদিবাসী গোষ্ঠীর ভাষা নয়।

মোক্টেজুমার সন্ধান (Moctezuma’s search)

অ্যাজটেকদের কাছেও আজটালান ছিল আকর্ষণের বিষয়বস্তু। স্প্যানিশ লোককাহিনী এবং হস্তলিখিত পুঁথি থেকে জানা যায় যে, মেক্সিকা রাজা মোক্টেজুমা ইলহুইকামিনা (Moktezuma Ilhuicamina, 1440-1469) আজটালান এর খোঁজে সন্ধানকারী দল পাঠিয়েছিলেন। এই দলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ষাট জন বয়স্ক গুণিন এবং যাদুকর যাদের মোক্টেজুমা নিজে নির্বাচন করেছিলেন। সন্ধানকারী এই দলকে রাজ ভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছিল স্বর্ণ, মূল্যবান রত্ন, আংরাখা, পাখির পালক, কোকো, ভ্যানিলা এবং তুলা। সন্ধানকারী এই দল টেনোচ্টিটলান ত্যাগ করার দশদিনের মাথায় কোটেপেক এ পৌছায় যেখানে তারা নিজেদের পাখিতে রূপান্তরিত করে আজটালান এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং পরবর্তীতে আজটালানে পৌঁছানোর পর পুনরায় মানুষের রূপ ধারণ করে।

মোক্টেজুমা ইলহুইকামিনা অ্যাজটেক
মোক্টেজুমা ইলহুইকামিনা
Source: Howling Pixel

আজটালানে যাদুকরেরা জলাশয়ের মাঝখানে একটি পর্বতের সন্ধান পায়, যে পর্বতের বাসিন্দারা নাহুয়াট্ল ভাষায় কথা বলতো। এই দল পরবর্তীতে এক বৃদ্ধ লোকের সাক্ষাত লাভ করে যিনি দেবী কোটলিকু এর পুরোহিত এবং রক্ষক ছিলেন। সেই বৃদ্ধ পুরোহিত তাদেরকে নিয়ে গেল কোটলিকু এর মন্দিরে যেখানে তাদের দেখা হয় প্রাচীন এক মহিলার সাথে, যে নিজেকে দেবতা হুইটযিলপোচট্লি এর মা হিসেবে পরিচয় দেন এবং দেবতা চলে যাবার পর তিনি অনেক কষ্ট ভোগ করেছিলেন। সেই মহিলা যাদুকরদের এই তথ্যও দেন যে, দেবতা ফেরার কথা দিয়েও আজটালান এ আর ফেরত আসেনি। তিনি আরও বলেন যে, আজটালানের মানুষেরা নিজেদের বয়স নিজেরা নির্বাচন করতে পারে: তারা ছিল অমর।

টেনোচ্টিটলান এর বাসিন্দাদের অমর না হবার কারণ ছিল কোকো এবং অন্যান্য বিলাসী দ্রব্যাদির ব্যবহার। বৃদ্ধ পুরোহিত সন্ধানকারী দলের আনিত স্বর্ণ এবং মূল্যবান জিনিস নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বলে যে, এই জিনিসগুলোই তাদের ধ্বংসের কারণ। পুরোহিত পরে যাদুকরদের জন্য আজটালান এ পাওয়া যায় এমন গাছের চারা, জলাশয়ের পাখি, ম্যাগুয়ে আঁশের তৈরি আলখাল্লা এবং পোশাক উপঢৌকন হিসেবে প্রদান করে। যাদুকরেরা তারপর পাখির বেশ ধারণ করে পুনরায় টেনোচ্টিটলান এ ফিরে যায়।

আজটালান এবং এর জনগণের অভিপ্রয়ানের সত্যতার কোন প্রমাণ আছে কি?

আধুনিক সময়ের পণ্ডিতদের মধ্যে অনেক তর্ক বিতর্ক রয়েছে আজটালান এর অস্তিত্ব নিয়ে। প্রাচীন অ্যাজটেকদের রেখে যাওয়া কিছু পুঁথি থেকে- বিশেষ ভাবে বোতুরিনি ও তিরা দে লা পেরেগ্রিনাসিওন (Boturini O Tira De La Peregrinacion) থেকে আজটালানবাসীদের অভিপ্রয়াণের কাহিনী জানা যায়। এই কাহিনী সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যায় Bernal Diaz del Castillo, Diego Duran এবং Bernardino de Sahagun –সহ বেশকিছু স্প্যানিশ লোককাহিনী থেকে যা উল্লেখিত আছে কথিত ইতিহাস হিসেবে।

স্প্যানিশদের কাছে মেক্সিকাদের ভাষ্যমতে, মেক্সিকাদের পূর্বপুরুষেরা টেনোচ্টিটলানের উত্তরে অবস্থিত তাদের আদিনিবাস ছেড়ে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে মেক্সিকো উপত্যকায় এসে বসতি স্থাপন করে। তাদের এই দাবির পক্ষে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক এবং পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো মেক্সিকাদের অভিপ্রয়াণের পৌরাণিক এই কাহিনীর সত্যতার প্রমাণ ধারণ করে।

আজটালানবাসীদের স্থানবদল সম্পর্কিত যে সকল ঐতিহাসিক ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে, সেই সকল তথ্য নিয়ে মাইকেল ই স্মিথ গবেষণা করে বের করেছেন যে, শুধু মেক্সিকা জনগোষ্ঠীই নয়, আরও কিছু ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠী একই সময়ে তাদের স্থান বদল করেছিল। স্মিথের ১৯৮৪ সালের গবেষণা মতে উত্তর থেকে মেক্সিকো অববাহিকায় মোট ৪টি ধাপে ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর আগমনের কথা জানা যায়। ১ম ধাপে আগমন ঘটে চিচিমেক জনগোষ্ঠীর (নাহুয়াট্ল অ-ভাষী) ১১৭৫ সালে টল্লান (Tollan) এর পতনের পর, ২য় ধাপে ১১৯৫ সালে আরও তিনটি নাহুয়াটল ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আগমন ঘটে মেক্সিকো অববাহিকায়, ৩য় ধাপে ১২২০ সালে আশেপাশের উঁচু এলাকায় দল সমূহের আবির্ভাব ঘটে এবং ৪র্থ ধাপে আগমন ঘটে মেক্সিকাদের ১২৪৮ সালে।

আধুনিক আজটালান

বর্তমান চিকানো সংস্কৃতিতে আত্মিক এবং জাতীয়তাবোধে একাত্মতার প্রতীক হিসেবে আজটালান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজটালান শব্দটিও ব্যবহৃত হয় মেক্সিকোর অধীনে থাকা সেই এলাকা সমূহকে বুঝাতে যা ১৮৪৮ সালে গুয়াদালুপে-হিদালগো (Guadalupe-Hidalgo) কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রে সমর্পণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের উইস্কন্সিনে যদিও আজটালান নামের একটি পুরাতাত্ত্বিক স্থান আছে, সেটি অ্যাজটেক জনগোষ্ঠীর সেই আদি নিবাস নয়। সত্যিকারের আজটালান এর খোঁজ হয়ত আজীবন রহস্যই থেকে যাবে।

তথ্যসূত্রঃ

১. http://www.thoughtco.com/aztlan-the-mythical-homeland-169913

২. http://aztecnatives.com/aztlan

৩. http://en.m.wikipedia.org/wiki/Aztlan

 

Leave A Reply
1 Comment
  1. Wgeyhg says

    lamisil order – cost lamisil how to get grifulvin v without a prescription

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More