‘অস্ত্রশিক্ষা তো তোমার সমাপ্ত হল, বাছা। এবার যে গুরুদক্ষিণা দেবার পালা’, দ্রোণ বললেন একলব্যকে। আনন্দে অভিভূত একলব্য বলে উঠলেন, ‘অবশ্যই গুরুদেব, আপনি চাইলে প্রাণ পর্যন্ত দিতে রাজি আছি’ । ‘প্রাণ দিতে হবে না, তুমি বরং তোমার ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা কেটে দাও’, নির্মমভাবে বলে বসলেন দ্রোণাচার্য ।
ভাবুন তো একবার, আপনার একহাতের বুড়ো আঙ্গুল যদি না থাকে তবে কি সমস্যা হতে পারে? একটা মাত্র আঙ্গুল না থাকলেই আপনার প্রতিদিনকার জীবন অনেক কঠিন হয়ে যাবে। বিশ্বাস না হলে বুড়ো আঙ্গুল ছাড়া এক গ্লাস পানি হাতে নেবার চেষ্টা করে দেখুন। সেখানে যদি বলা হয় অস্ত্রচালনার মত কোন কাজ করতে! আর একলব্য সেখানে হয়ে উঠেছিলেন অসাধারণ তীরন্দাজ। যারা মহাভারত সম্পর্কে অল্পবিস্তর হলেও পড়াশোনা করেছেন, তারা নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন একলব্যকে, সেই জ্ঞানপিপাসু তরুণ যিনি নিজের অস্ত্র বিদ্যাকে পরিপূর্ণ করার বাসনা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত অস্ত্র-বিশারদ দ্রোণাচার্যের কাছে। আচার্য দ্রোণ তাকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেননি, কেননা একলব্য ছিলেন অনার্য।
আজ আমরা মহাভারতের এই চরিত্রকে নিয়ে জানব, যিনি লড়াই করে গেছেন শুধুমাত্র জাতিবিদ্বেষের বেড়াজাল ভেঙে নিজের যোগ্যতার যথার্থ সম্মান পেতে।

source: www.rajsattaexpress.com
একলব্য ছিলেন নিষাদরাজ হিরণ্য-ধনু আর রাণী বিশাখার সন্তান। একলব্যকে আবার হিরণ্য-ধনুর পালক সন্তান হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে। নিষাদ ছিল এই ভারতীয় উপমহাদেশের আদিবাসীদের জোট। তারা ছিল প্রকৃতির সন্তান। শিকার করা, বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো এগুলো ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। আর্যরা যখন এ অঞ্চলে এলো, তারা স্থানীয়দের দমিয়ে রাখার জন্য যে প্রচেষ্টাগুলো করে তার মধ্যে ছিল বর্ণ প্রথার প্রচলন। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য আর শূদ্র এই প্রধান চার শ্রেণীর মধ্যে নিষাদরা ছিল সবচেয়ে নিচের শূদ্র বর্ণভুক্ত। উপরের সম্প্রদায়ের লোকজন নিচের সম্প্রদায়ের লোকদের এড়িয়ে চলত। সমাজের উচু জাতের মানুষ ছিল ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয়রা, যারা ছিল আর্য বংশোদ্ভূত। আর্যরা স্থানীয় নিষাদদের বর্বর, অশিক্ষিত বলে প্রচার করে। রামায়ণে বাল্মীকি নিষাদদের অভিশপ্ত করেন এই বলে যে তারা কোনদিন সামাজিক স্বীকৃতি পাবে না, কেননা জনৈক নিষাদ এক বক শিকার করায় তার সঙ্গী কষ্ট পেয়েছিল। তো, একলব্য ছিলেন এমনি একজন নিষাদ। তরুণ বয়সে তিনি স্থির করেন তিনি অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষার আরও গভীরে যেতে চান, আর এজন্য তার গুরু দ্রোণের কাছে দীক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। দ্রোণ ছিলেন আচার্য ভরদ্বাজের সন্তান, যিনি বাবার কাছে শাস্ত্র শিক্ষা সমাপ্ত করার পর অগ্নিবেশ্যের কাছে যান যুদ্ধবিদ্যা শিখতে। এরপর তিনি পরশুরামের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। তার ব্রাহ্মণ হয়েও যুদ্ধ-বিদ্যার্জন সমাজে তার জন্য কিছু সমস্যা তৈরি করে। কেননা যুদ্ধ ক্ষত্রিয়দের কাজ। কে সমাজে কোন দায়িত্ব পালন করবে তা তার সম্প্রদায় দিয়ে নির্ধারিত ছিল।

source: gnanaboomi.com
যদিও ব্রাহ্মণ হওয়ায় দ্রোণকে এত সমস্যা সামলাতে হয়নি। তিনি একসময় কুরু রাজ্যের রাজপুত্রদের শিক্ষক নিযুক্ত হন। একে তো দ্রোণ আর্য ব্রাহ্মণ, তার উপর তিনি রাজপরিবারের শিক্ষক। তিনি অনার্য একলব্যকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করবেন কিনা এই সন্দেহ থাকলেও একলব্য দ্রোণের শিষ্যত্ব লাভের আশায় কুরু রাজ্যের রাজধানী হস্তিনাপুরের দিকে রওনা দেন। রাজধানীতে পৌঁছানোর পর তিনি মানুষের দুর্ব্যবহারের শিকার হন। কিন্ত মনোবল না হারিয়ে তিনি দ্রোণের আশ্রম খুঁজে বের করেন। আশ্রমে পৌঁছে তিনি দেখেন দ্রোণ রাজা ধৃতরাষ্ট্রের একশ পুত্র আর পঞ্চপাণ্ডবদের সাথে কথা বলছেন। একলব্যের মনে তখন গুরু সামনে আসার আনন্দ, যেন তিনি তীর্থযাত্রা সম্পন্ন করলেন। গুরুকে বিরক্ত না করে একলব্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন। একসময় দ্রোণাচার্যের চোখ পড়ে একলব্যের উপর। তাকে কাছে ডাকেন দ্রোণ। তার আসার কারণ জানতে চান। যখন একলব্যের উদ্দেশ্যের কথা জানতে পারেন তখন দ্রোণ পরে যান মহা বিপদে। রাজপরিবারের শিক্ষকদের বহিরাগতদের শিষ্য হিসেবে নেয়া নিষেধ। এদিকে নিষাদরা ছিল রাজা জড়-সন্ধের মিত্রশক্তি, আর জড়সন্ধ কুরু রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রতিপক্ষের কাছে নিজের জ্ঞান প্রকাশ পাওয়া কখনোই কাম্য নয়। আর দ্রোণ যত বড় গুরুই হওন না কেন, বেড়ে উঠেছেন তো বিভেদ দেখেই, তো জাতিভেদের দেয়াল না ডিঙাতে পেরেই হোক আর রাজপরিবারের প্রথা ভাঙতে না চাওয়ার জন্যই হোক অথবা প্রতিপক্ষ শক্তির প্রতি রাজনৈতিক সতর্কতা অবলম্বনের খাতিরেই হোক, তিনি একলব্যকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন না। যে গুরুর শিষ্যত্ব লাভের আশায় একলব্য এতদিন স্বপ্ন দেখেছেন, তার এহেন আচরণে তিনি মর্মাহত হন। এ কোন দ্রোণাচার্য? যাকে তিনি মনে এতদিন তার শিক্ষকের সম্মান দিয়েছেন এ তো সেই আচার্য দ্রোণ নন! তবে কি শুধুমাত্র শূদ্র বলে তিনি যুদ্ধবিদ্যার সর্বোচ্চ জ্ঞানার্জনের অধিকার রাখেন না? কিন্ত শিক্ষকের কাছে তো জাত কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়, তার কাছে যে কোন বিদ্যার্থীই আমন্ত্রিত। এইসব ভাবতে ভারাক্রান্ত মনে একলব্য বের হয়ে আসেন। তিনি হস্তিনাপুরের কাছেই এক বনে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি তার সাধনা শুরু করেন। দ্রোণকেই তিনি তার গুরু হিসেবে মনে ঠাঁই দিয়ে রেখেছেন। তিনি দ্রোণের একটা মূর্তি তৈরি করেন। রক্তমাংসের দ্রোণ তাকে গ্রহণ করেননি তো কি হয়েছে, তার অস্ত্র-প্রশিক্ষণ তো আর থেমে থাকতে পারে না! মানুষ দ্রোণ হয়তবা তার পার্থিব কোণ সীমাবদ্ধতার কারণে তাকে ছাত্র হিসেবে মেনে নেননি, কিন্তু তার মনে আচার্য দ্রোণই এখনও তার শিক্ষক, যে দ্রোণ মানব সমাজের বিধিনিষেধের ঊর্ধ্বে, যিনি একজন আদর্শ শিক্ষক, যার কাছে জাতপাতের কোন ভেদাভেদ নেই।

source: bp.blogpost.com
নিয়মিত একলব্য দ্রোণের মূর্তির কাছে সম্মান প্রদর্শন করে তার চর্চা চালিয়ে যান। একসময় তিনি কল্পনার অতীত দক্ষতা অর্জন করেন। কিন্ত এই দক্ষতাই তার জন্য যেন কাল হয়ে দাঁড়ায়।
একদিন একলব্য গভীর সাধনায় নিমগ্ন ছিলেন। এই সময় একটি কুকুর প্রচণ্ড শোরগোল করে তাকে বিরক্ত করে। কোনভাবেই কুকুরটিকে তাড়াতে না পেরে একলব্য কুকুরটির মুখে সাতটি তীর এমন দক্ষতার সাথে বিদ্ধ করেন যে, কুকুরটি বেচে থাকে কিন্ত তার আওয়াজ করার জন্য মুখ নাড়ানোর অবস্থা থাকে না। এটি ছিল রাজবংশের পোষা কুকুর। রাজপুত্ররা যখন কুকুরটি পায়, তারা বুঝতে পারে কাছেই কোথাও অসাধারণ একজন অস্ত্র-বিশারদ আছে। তারা খুঁজতে খুঁজতে একলব্যকে পেয়ে যায়। তারা একলব্যের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে দ্রোণের শিষ্য বলে দাবী করেন। একে কুরুবংশের কেউ তো নয়ই, বরং সামান্য একজন শূদ্রের এত দক্ষতা দেখে অর্জুন, দ্রোণের সেরা ছাত্র, ঈর্ষা বোধ করেন। তিনি দ্রোণের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন যে দ্রোণাচার্য অর্জুনকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর হিসেবে গড়ে তুলতে তো পারেন নিই, উলটো তার সেরা ছাত্র হচ্ছে সামান্য এক নিষাদ, এক শূদ্র, একলব্য। অথচ দ্রোণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তাকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে গড়ে তুলবেন। দ্রোণ তো কেবল আকাশ থেকেই পড়লেন না, তার মাথায় একই সাথে যেন আকাশও ভেঙে পড়ল। কোথাকার কোন একলব্য নাকি তার শিষ্য, যাকে তিনি তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, আর তিনিই নাকি তাকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন যা নাকি অর্জুনেরও নাগালের বাইরে! পড়িমরি করে ছুটলেন দ্রোণ অর্জুনকে নিয়ে একলব্যের খোঁজে। একলব্য তার ঘরের বাইরে গুরুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। আগের বার গুরু তার আগ্রহে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিয়েছিলেন। এইবারও একলব্যের গুরু দর্শনের আনন্দ শেষ হবে আরেকটি বিষাদের গল্পের মধ্য দিয়ে। দ্রোণ যখন একলব্যের কৌশলের কিছু নমুনা দেখলেন, তার তো চক্ষু চড়কগাছ! এই ছেলে এইসব কোথায় শিখল? এ তো অর্জুনকে কি, দ্রোণকেই ছাড়িয়ে যাবার আভাস দেখাচ্ছে! আবার বলে কিনা তারই শিষ্য! আগাগোড়া কিছু বুঝতে না পেরে তিনি একলব্যের কাছে জানতে চান যে কখন তিনি এসব একলব্যকে শেখলেন। একলব্য দ্রোণের মূর্তিটি দেখিয়ে বলেন, ‘আমি সবসময় মনে করি আপনি আমাকে পথ দেখাচ্ছেন, আর এই ভেবেই চর্চা করি। আপনি আমাকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেননি, কিন্ত আমার চোখে আপনিই আমার একমাত্র গুরু।’ দ্রোণ যেন পড়েছেন ইঁদুরের ফাঁদে। একজন মানুষ একাগ্র সাধনা করে শুধুমাত্র নিজে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছে নিজের যোগ্যতাকে, তা দেখে মুগ্ধ হওয়ার কথা হলেও, দ্রোণ যেন এবারও নিজের মনের সংকীর্ণতা থেকে বের হতে পারেন না । তিনি নিজের মনের ফাঁদ থেকে বের হবার জন্য এক কটুচাল চালেন। তিনি একলব্যের কাছে গুরুদক্ষিণা চেয়ে বসেন। গুরুদক্ষিণা চাইবার একটাই মানে, তিনি একলব্যকে শিষ্য হিসেবে শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি দিচ্ছেন। গুরুদক্ষিণা চাওয়ার প্রথা সাধারণত শিক্ষা সমাপ্ত হলে দেখা যেত। এতদিন যে শিক্ষককে প্রায় দেবতুল্য সম্মান দিয়েছেন, আজ তার শিষ্যত্ব পাবেন ভেবে একলব্য সরলমনে দ্রোণের যে কোন চাওয়া পূরণের প্রতিজ্ঞা করেন। দ্রোণ এইটাই আশা করছিলেন। তিনি একলব্যের ডান হাতের বুড়ো আঙুল চেয়ে বসেন। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছাত্র শিক্ষকের ধূর্তামি শেষ মুহূর্তে বুঝতে পারলেও নিজের কথা রাখেন। আর দ্রোণ অর্জুনের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে দমিয়ে দিতে পেরেছেন ভেবে ফিরে যান। কিন্ত তিনি ভাবেননি অর্জুনের আরেকজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছে-কর্ণ। কিন্ত সে আরেক-গল্প, অন্য সময় বলা যাবে।
এতকিছুর পরও একলব্য থেমে যান না। বারবার বাধা পাওয়ায় একলব্যের যেন জেদ চেপে বসে, যেভাবেই হোক তীর চালনায় নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার। তিনি চার আঙুল দিয়েই আবার কঠোর সাধনা শুরু করেন। দিনের পর দিন কঠিন চর্চা করে তিনি যে আবারও নিজেকে ছাড়িয়ে যান। নিজের সাধনা পরিপূর্ণ হলে রাজ্যে ফিরে আসেন।
একলব্য সমাজের সেই মানুষগুলোর প্রতিনিধি যারা শুধুমাত্র সমাজের বিধিনিষেধের জন্য দমে থাকার মানুষ নন। যত বাধাই আসুক তা যেন তাদের লক্ষ্য অর্জনের স্পৃহা আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্ত এই একাগ্র সাধকের পরিণতি মহাভারতের অন্য অনেক চরিত্রের মতই করুণ। তিনি এক পর্যায় কৃষ্ণের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। রাজা কৃষ্ণ তাকে পাথরাঘাতে হত্যা করেন। এক ধারণা অনুযায়ী, রাজা জড়-সন্ধের মিত্র, শিশুপল, চেদি রাজ্যের রাজপুত্র, তার হবু পত্নী কৃষ্ণের সাথে পালিয়ে গেলে একলব্য, জড়সন্ধ আর শিশুপল তাদের তাড়া করেন। ক্রোধান্বিত কৃষ্ণ পাথর দিয়ে আঘাত করে একলব্যের খুলি গুঁড়ো করে ফেলেন। আরেক মত অনুযায়ী, যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে রাজা জড়সন্ধ খুন হন, যেখানে কৃষ্ণের হাত ছিল। এতে ক্রোধান্বিত একলব্য কৃষ্ণ আর দ্বারকার সব যাদবকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিতে প্রতিজ্ঞা করেন। এই আক্রমণের সময়ই তিনি নিহত হন। আরেক মত অনুযায়ী, কুরুরাজ্যের রাজপুত্র দুর্যোধন একলব্যকে হস্তিনাপুরের সমস্ত বনের রাজা ঘোষণা করেন। পরে একসময় দুর্যোধনের কথায় কৃষ্ণের ছেলে সাম্বাকে হত্যা করতে গেলে একলব্য কৃষ্ণ-যাদবের হাতে খুন হন। আর এভাবেই শেষ হয় মহাভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক তীরন্দাজের জীবন ।
তথ্যসূত্রঃ
১. www.mythgyaan.com
২. The story of Eklavya and Dronacharya by Venketesh Pillai
৩. একলব্য (উপন্যাস)- হরিশংকর জলদাস
dutasteride ca purchase tamsulosin online cheap order zofran online
buy generic levaquin 250mg order levaquin 500mg online cheap
spindy imitrex 100 mg tablet