সভ্যতার বিকাশের জন্য মানব জাতি কি করেনি!! কখনো কখনো সভ্যতার বিকাশে প্রকৃতির সাথে জুড়ে দিয়েছে কৃত্তিমতাকে। যে কারনে প্রকৃতির শেই অভাবনীয় স্থানটি হয়ে উঠেছে আরও বেশি প্রানময়, বিশ্ব অর্থনীতিকে করেছে আরও সমৃদ্ধ এবং সৃষ্টি হয়েছে মানব সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন। ঠিক তেমনি একটি নিদর্শনের নাম হল সুয়েজ খাল ।
ছোটবেলায় অনেকেই হয়ত সুয়েজ খাল সম্পর্কে পড়েছি, কিন্তু কতটুকুই বা জানি মানুষের তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি সম্পর্কে ? চলুন এই খাল সম্পর্কে জেনে নেই কিছু তথ্য ,নিজের জানার ভাণ্ডার কে করি আরও সমৃদ্ধ।
সুয়েজ খাল নির্মাণ এর ইতিহাস
সুয়েজ খালের প্রকৃত নাম ‘হে সুয়েজ ক্যানেল’। আরবী নামে একে ডাকা হয়- ‘কা’নাত আল-সুয়াইস’ এই নামে। এটি মিশরের সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত একটি কৃত্তিম সামুদ্রিক খাল যেটি ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সাথে যুক্ত করেছে।
৪,০০০ বছর পূর্বের ইতিহাস বহন করছে এই খালটি। আরও অজানা বিষয় হল এ সুয়েজ খাল দিয়ে ভেসে এসেছিল মিশরের উপর অমানবিক দুর্দশা। মিশরকে প্রায় আড়াই হাজার বছর এই শেকল বয়ে বেড়াতে হয়েছিল। ঐতিহাসিকরা এ সুয়েজ খালকে মিশরের কন্টকহার বলে দাবি করেছিলেন। এটি খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৯৭-১৮৩৯ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ের কথা। এছাড়াও দার্শনিক এরিস্টটলের লিখিত বক্তব্যে এই খাল খননের কথা উল্লেখ আছে। ঐতিহাসিকদের মতে মিশরের অধিপতি ফারাও নেকো একদিন স্বপ্নে নীল নদ থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত দীর্ঘ্য একটি খাল খনন করার দৈববাণী পান। লক্ষাধিক দাস নিয়ে তিনি শুরু করেন খাল কাটা। নেকো সমগ্র বিশ্বকে জানাতে চাইলেন যে মিশরীয়রা শুধু যুদ্ধবাজ হয় না, বাণিজ্য ও সম্প্রীতির পথেও তারা হাঁটতে পারে।
কিন্তু হঠাৎ কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায় এই খাল খনন কর্মসূচি । ঐতিহাসিকদের মতে আরও একটি দৈববাণী এসেছিল তার কাছে ।যাতে লিখা ছিল এ খাল মিশরের জন্য কাল বয়ে আনবে। তাই মিশরকে রক্ষা করতে এ খনন বন্ধ করে দিতে বাদ্ধ হন তিনি। তাই ফারাওদের আমলে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগর এর মিল আর হয়নি। সময় পেরোনোর সাথে সাথে প্রজারাও মনে করতেন দেবতার নিষেধেই বন্ধ হয়েছে এই খাল খনন।
এরপর ‘নেপোলিয়ন বনাপার্ট’ মিশর অভিযান এ আশার পর ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সাথে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। কিন্তু ভূমধ্যসাগর থেকে লোহিত সাগরের উচ্চতা ১০ মিটার বেশি থাকায় অনেক খরচ হবে বিধায় খাল খননের চিন্তা বাদ দেয়া হয়।
এরপর ১৮৫৪ সালে বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলীরা মিলে সুয়েজ খাল এর নকশা তৈরি করেন।সেই সময় মিশরের ক্ষমতায় ছিলেন ‘সায়িদ পাশা’ । সুয়েজ খাল খননের মুল উদ্যোগতা ছিলেন ফরাসি প্রকৌশলী ‘ফারদিনান্দ দি লেসেন্স’। এরপর ১৮৫৯ এর এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয় এর খনন কাজ ।দশ বছর ধরে খননের পর খালটি ১৮৬৯ এর নভেম্বর মাস এ সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় । খননের সময় ১০ বছরে প্রাণ হারায় প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার শ্রমিক।
শুরুতে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৬৪ কিলোমিটার এবং গভীরতা ছিল ৮ মিটার। বেশ কিছু সংস্কার ও সম্প্রসারণের পর ২০১০ সালের হিসাব মতে এর দৈর্ঘ্য ১৯০.৩ কিলোমিটার, গভীরতা ২৪ মিটার এবং সর্বনিম্ন সরু স্থানে এর প্রস্থ ২০৫ মিটার ।খালটি মিশরের সুয়েজ ক্যানেল অথোরিটির মালিকানাধীন। ১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ শিল্পপতি ‘রথচাইল্ড’ এই খালের কিছু শেয়ার কিনে নেন , এর পর থেকে ব্রিটিশ রা এই খালের উপর তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে।
এরপর মিশরের প্রেসিডেন্ট ‘জামাল আব্দেল নাসের’ ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করেন,এর ফলেই তৈরি হয় সুয়েজ শঙ্কট। এই সুয়েজ শঙ্কটের কারনে ১৯৫৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সুয়েজ খাল বন্ধ রাখা হয়। এছারাও আরব ও ইসরায়েল যুদ্ধের পর ১৯৬৭-১৯৭৫ পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ বছর বন্ধ ছিল এই সুয়েজ খাল।এ সময় ইচ্ছাকৃতভাবে ৪০ টি জাহাজ ডুবিয়ে সুয়েজ খালে নৌ-যান চলাচল বন্ধ করে দেয় মিশর।
বিশ্বজুড়ে সুয়েজ খালের অর্থনৈতিক প্রভাব
এই খাল তৈরির আগে কোনো জাহাজকে ইউরোপ থেকে দক্ষিণ এশিয়া আসতে হলে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে হতো । যার ফলে পৃথিবীর বড় বড় জাহাজ কোম্পানিগুলোকে জ্বালানি তেল বাবদ গুনতে হতো মোটা অঙ্কের টাকা।তাছারাও নৌপথে পণ্য বহনকারী জাহাজ গুলও ভারত মহাদেশ থেকে ইউরোপে যেতে সময় নিত প্রায় ৪০-৫০ দিন ।এ খালের কারণে ইউরোপ ও ভারতের মাঝে সমুদ্রপথের দূরত্ব প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার কমে গেছে। আগে যেখানে লাগত ৪০-৫০ দিন এখন সেখানে মাত্র ২০ দিনেই জাহাজ পৌঁছে যেতে পারে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে। বর্তমান বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্যের ৫ ভাগ আসে এই সুয়েজ খাল থেকে। ইজিপ্ট সুয়েজ খাল অথরিটির ২০০৩ এর রিপোর্ট অনুযায়ী সে বছর ১৭ হাজার ২২৪টি জাহাজ সুয়েজ খাল দিয়ে পার হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর শিপিং ট্রাফিকের শতকরা ৮ ভাগই হয়েছে খালটি দিয়ে।
অন্য এক জরিপে দেখা গেছে ২০১২ সালে সুয়েজ খাল দিয়ে ১৭,২২৫টি জাহাজ যাতায়াত করেছে অর্থাৎ দিনে গড়ে ৪৭টি।বর্তমানে এ খালের সাথে আরও প্রায় ৩৫ কিলোমিটার বাইপাস খনন করা হয়েছে যার ফলে সুয়েজ খালে প্রবেশের সময় জাহাজগুলোর অপেক্ষার সময় ১৮ ঘণ্টা থেকে ১১ ঘণ্টায় নেমে এসেছে। ধারনা করা হচ্ছে ২০২৩ সালের মধ্যে দৈনিক ৯৭টি জাহাজ যেতে পারবে এই খাল দিয়ে ।যার ফলে মিশরের অর্থনীতে যোগ হবে ১৩২০ কোটি ডলার।
জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে সুয়েজ খালের নিয়মনীতি
সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ চলাচলের জন্য বরাদ্ধ আছে কিছু নিয়ম নিতি, যা আমাদের অনেকের অজানা । নিচে সুয়েজ খাল অথরিটির বরাদ্ধ কিছু নিয়ম তুলে ধরা হল যা জাহাজ কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই পুরন করতে হবে –
১। ২০ মিটার পর্যন্ত ড্রাফ্ট বা ২৪০০০০ ডেড ওয়েট টনস এবং ৬৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু(কিছু শর্তে ৭৭.৫ মিটার)। এর থেকে অধিক পণ্য বহনকারী কোন জাহাজ সুয়েজ খাল দিয়ে চলাচল করতে পারবেনা।
২। সুয়েজ অথরিটিকে আগমনের নোটিশ পাঠাতে হবে।
৩। জাহাজে পাইলট(জাহাজকে বন্দরে শুরক্ষিত ভাবে পৌঁছানর জন্য একজন নেভিগেশানাল বিশেষজ্ঞ)
উপস্থিত থাকতে হবে।
৪। জাহাজের সব প্রয়োজনীয় শনদপত্র সাথে থাকতে হবে।
৫। জাহাজের আকার অথরিটিকে জানাতে হবে।
৬। অনুশন্ধান আলো বা সার্চ লাইট থাকতে হবে।
৭। উপযুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৮। জাহাজ আগমনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অবশ্যই জাহাজে রাখতে হবে।
৯।জাহাজ কি ধরনের পণ্য বহন করছে তা অবশ্যই অথরিটিকে জানাতে হবে।
উপরোক্ত নিয়মগুলি পুরন করা ছাড়া কোন জাহাজ সুয়েজ খাল অতিক্রম করতে পারবেনা।
সুয়েজ খাল একটি এক লেন বিশিষ্ট খাল যাতে দুটি বাই-পাসের স্থান আছে, এগুলো হল বাল্লাহ বাইপাস এবং গ্রেট বিটার লেক। সুয়েজ খালের চারপাশের সৌন্দর্যও দেখার মত। লক্ষ লক্ষ মানুষের নিপুন হাতের ছোঁয়া যেন লেগে আছে এই খালের দুই পাশে যা না দেখলে বিশ্বাস করার মত না।এই ঐতিহাসিক খাল দিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য একবার আমার হয়েছে। নিজের মুঠো ফোনের ক্যামেরায় তোলা কিছু ছবি ও ভিডিও তাই পাঠকদের সাথে শেয়ার করছি।
সুয়েজ খালে পানামা খালের মত কোন লক বা ভিন্ন উচ্চতার নৌপথে জলযান নেবার জন্য ব্যবহৃত বিশেষ গেট নেই। তাই সমুদ্রের পানি অবাধে এই খালের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সাধারণত, বিটার লেকের উত্তরদিকের খালে শীত কালে উত্তরমুখী স্রোত প্রবাহিত হয় এবং গ্রীষ্মে দক্ষিণমুখী স্রোত প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে লেকের দক্ষিণ দিকের খালে স্রোত সুয়েজের জোয়ার-ভাটার সাথে পরিবর্তিত হয়। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, সুয়েজ খাল শান্তিকালীন সময় অথবা যুদ্ধকালীন সময় – সব সময়েই যে কোন দেশের পতাকাবাহী বাণিজ্যিক বা যুদ্ধ জাহাজের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
( বিভিন্ন সাক্ষাৎকার, উইকিপিডিয়া, ব্লগ হতে বিভিন্ন ধরণের সুত্র সংগ্রহিত)
rybelsus brand – order DDAVP generic where to buy desmopressin without a prescription
order lamisil sale – buy griseofulvin 250 mg sale griseofulvin order