মিশর রহস্য – শেষ পর্ব

0

প্রথম পর্বের পর

মিশরের ইতিহাস হচ্ছে অনেকটা পেঁয়াজের মতো ৷ ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে রহস্য আর উৎকন্ঠা ৷ যতই রহস্যন্মোচন করা হয় ততই আরো নতুন রহস্য দানা বাঁধে ৷ হয়তো কোন একসময় এর অবসান ঘটবে ৷

প্রাচীন মিশর সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা আছে অনেকেরই, এতোদিন হয়তো আপনিও সেগুলো বিশ্বাস করে এসেছেন ৷ মিশরীয় ইতিহাসের পরিব্যপ্তি আর নানা জনের নানা মতবাদের জন্যই ভুল ধারণার  সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে ৷  তারই কিছু নমুনা এবারের পর্বে তুলে ধরা হলো :-

মমিফিকেশন শুধু ফারাওদের জন্যই

এতদিন ধারণা ছিল মমিফিকেশন বা মমিকরণ কেবল বিশেষ ব্যক্তি বা ফারাওদেরই প্রাপ্য ছিল ৷ বাস্তবে উচ্চ বংশীয় ছাড়াও যাদের আর্থিক সামর্থ্য ছিল তারাও এই মমিফিকেশন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেত ৷

Source: Shutterstock

এমনকি নিম্নবিত্ত রাও চেষ্টা করতো মমিফাইড হতে ৷

উল্লেখ্য- মমিফিকেশন সাধারণ মমি বানানোর প্রক্রিয়ার চেয়ে ব্যতিক্রম ৷

কিং তুত তাঁর ক্ষমতালোভী অধীনস্হের হাতে মৃত্যু বরণ করেন

কিং তুতের মাথার পিছনের অংশে বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন থাকায় অনেকে মনে করে তাঁকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে ৷ তুতের উপদেষ্টা Aye কে সন্দেহভাজন মনে করা হতো ৷

বিখ্যাত তুতেনখামেন ( Tutankhamun)
Source: The Field Museum

তুত মারা যাওয়ার পর সে ক্ষমতা দাবি করে এবং তুতের বিধবা স্ত্রী কে বিয়ে করলে সেই সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়৷  সৌভাগ্যক্রমে কিং তুতের মৃত্যুর আরো অনেক সম্ভাবনার (১ম পর্বে উল্লেখিত) কথা বিবেচনা করে এটাকে আর আমলে নেয়া হয়নি ৷

ফারাওদের সাথে ব্যক্তিগত ভৃত্যদেরও সমাধিস্থ করা হতো

ফারাওরা ভৃত্য সমেত সমাধি লাভ করবে এটাই পপ কালচার (পপুলার কালচার) এর অংশ হিসেবে ধরা হয় ৷
বাস্তবে এই ধারণার কোন ভিত্তি নেই ৷ মূলত গুটিকয়েক প্রাচীন মিশরীয় ফারাও এই ট্র্যাডিশনটা শুরু করেছিলেন তবে সেটা একদম প্রথম রাজবংশের পর বিলুপ্ত হয়ে যায় ৷

ফারাওদের সাথে ব্যক্তিগত ভৃত্যদেরও সমাধিস্হ করা হতো
Source: Shutterstock

তারমানে এই না যে ফারাওরা চাকর-বাকর ছাড়াই স্বর্গে অবস্থান করবে, নিজের কাজ নিজে করবে! তাঁদের সাথে চাকরদের কাঠের প্রতিকৃতি বানিয়ে সমাধিস্থ করা হতো যাতে তাঁরা পরকালেও নির্বিঘ্নে দিনানিপাত করতে পারে ৷

ফারাওদের অভিশাপ

কিং তুতের মমি আবিষ্কারের পর ফারাওদের অভিশাপের কথা ছড়িয়ে পড়ে ৷ অনেকেই বিশ্বাস করতো ফারাওদের অভিশাপ সত্যিই রয়েছে ৷ আবিষ্কারের দিনই খননকার্যের প্রধান হাওয়ার্ড কার্টারের ক্যানারি পাখিটিকে সাপ খেয়ে ফেললে অভিশাপের অস্তিত্বের বিশ্বাস আরো প্রবল হয়ে পড়ে ৷

 ফারাওদের অভিশাপ
Source: Getty Images

কিন্তু অনেক গবেষনার পর বর্তমানে আর গুরুত্ব দেয়া হয় না ৷ সমাধি উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই তাঁদের জীবদ্দশায় বহাল তবিয়তেই ছিল ৷ কোন অপঘাতে মৃত্যু হয়নি তাদের ৷

ক্লিওপেট্রা ছিলেন আবেদনময়ী

সম্মোহনী রূপের অধিকারী ক্লিওপ্লেট্রা ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত নারী ৷ তবে ক্লিওপ্লেট্রাকে  অনেকেই পরমাসুন্দরী হিসেবে আখ্যায়িত করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না ৷ বরং মনে করা হয় ক্লিওপেট্রা তাঁর প্রখর বুদ্ধিমত্তার জন্যই কিংবদন্তী রাণী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন ৷

 ক্লিওপেট্রা ছিলেন আবেদনময়ী
Source: Getty Images

অনেকের মুখে এও শোনা যায় তাঁর চেহারায়  কিছুটা পুরুষালী ভাব ছিল ৷ দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁর কোন পোর্ট্রেট বা মূর্তি না থাকায় পুরোপুরি জানা যায় না ৷ কেবল তৎকালীন যুগের মুদ্রায় খোদিত আছে তাঁর ছবি ৷ এখানে অবশ্য তাঁর চেহারার জৌলস ফুটে উঠে নি ৷ তাঁর মমির সন্ধান পাওয়া গেলে হয়তো নিশ্চিত হওয়া যাবে ৷

সর্বজনীন ভাষা হায়ারোগ্লিফিক্স

রোসেটা স্টোন আবিষ্কারের পূর্বে তৎকালীন মিশরের হায়ারোগ্লিফিক্সের পাঠোদ্ধার প্রায় অসম্ভব ছিল ৷  হায়ারেগ্লিফিক্সে  মূলত ছবি খোদাই করে একে সব বুঝানো হতো ৷ তাই অনেকেরই সন্দেহ ছবি এঁকে এঁকে কি সবকিছু বুঝানো সম্ভব!

সর্বজনীন ভাষা হায়ারোগ্লিফিক্স

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে, হায়ারোগ্লিফিক্স থেকেই পরবর্তীতে হায়ারেটিক ও ডেমোটিক ভাষার প্রচলন শুরু হয় ৷ হায়ারোগ্লিফ সমাধিফলকে লিখার জন্য ও পুরোহিতরা সাধারনত ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করতেন ৷

পিরামিডের অবস্থান মরূভূমির মাঝখানে

পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তমাশ্চর্যের অন্যতম একটি মিশরের পিরামিড ৷ মিশরের পিরামিডের কথা শুনলেই দিব্য  চোখে আমরা দেখতে পাই মরুভূমির মাঝখানে স্বগর্ভে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিস্ময়, অর্ধমৃত উট, বালির ঝড়, তৃষ্ণার্ত পথিক ৷

গ্রেট পিরামিডের চেম্বারসংখ্যা
Source: Shutterstock

বাস্তবে পিরামিডের অবস্থান কায়রোর সীমান্তবর্তী এলাকায় ৷ একটি পিরামিড থেকে আরেকটির অবস্থান হাঁটা দূরত্বে ৷

ইহুদি ক্রীতদাসরা তৈরি করেছিল পিরামিড

হলিউড সিনেমায় সচরাচর এটাই দেখানো হয় যে ইহুদী ক্রীতদাসরা পিরামিড তৈরি করেছে ৷ অবশ্য এর নেপথ্য কারণ হিসেবে থাকতে পারে আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য নিশ্চয় কেউ কায়িক পরিশ্রম করে পিরামিড তৈরি করবে না ৷ অবশ্যই জোড় করেই করানো হয়েছিল ৷ প্রায় দশহাজার দক্ষ শ্রমিক মিলে পিরামিড তৈরিতে কাজ করেছিল ৷ দাসপ্রথা তো সেই সময় প্রচলিত ছিলই ৷ তবে ইহুদিদের কথাটা প্রতিষ্ঠিত করেন সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিম ৷ বেগিমের ধারণা অবশ্য একেবারে  উড়িয়ে দেয়া যায় না কারণ ইহুদীদের ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহার করা হতো ঐ সময় ৷

 

মিশরের ইতিহাস এতই সমৃদ্ধশালী যে এটা লিখলে কখনোই শেষ হবে না ৷ সুযোগ পেলে অন্য কোন পর্বে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ৷

 

Source: grunge.com, History.com

Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More