বিশ্বকাপের চোকার্স সাউথ আফ্রিকাঃ এ চোকিং যেন রূপকথার অঘটনকেও হার মানায়! (প্রথম পর্ব)
সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। এই দলের নাম শুনলেই আমাদের ভিতর আসে এ বি ডি ভিলিয়ার্সের ৩৬০ ডিগ্রি শট, ডেভিড মিলারের কিলার মিলার হয়ে যাওয়া, হাশিম আমলার প্রতিপক্ষের জন্য নীরব ঘাতক হয়ে উঠা কিংবা বোলিংয়ে ইমরান তাহিরের জাদুকরী স্পিন কিংবা ডেল স্টেইনের বোলিং তোপে স্ট্যাম্প ভেঙে যাওয়া। যে দল সবসময় প্রতিপক্ষ দলগুলোকে কাঁদায় আর শাসন করে বেড়ায়, সেই দল কিভাবে বিশ্বকাপ কিংবা বড় আসরগুলোতে নিজেই শাসিত হয়ে যায় তা যেন কারোর বোধগম্য নয়। ক্রিকেট বিশ্বে তাই সাউথ আফ্রিকার পরিচয় “চোকার্স” হিসেবে। স্বয়ং অধিনায়ক এ বি ডি ভিলিয়ার্সও যেন জানেন না কোন অদৃশ্য শক্তির জন্য ক্রিকেটের বড় আসরগুলোতে সাউথ আফ্রিকা সবাইকে হতাশ করে! চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকার এমন কিছু হাতাশাজনক পারফরম্যান্স যার কারণে ক্রিকেট বিশ্বে তাদের পরিচিতি হয়েছে “চোকার্স” হিসেবে।
ইতিহাসঃ
সাউথ আফ্রিকায় ক্রিকেটের প্রচলন হয় ব্রিটিশদের হাত ধরেই। ১৮৮৮-৮৯ সালে বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে পোর্ট এলিজাবেথে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামে সাউথ আফ্রিকা। অবশ্য সরকারের বর্ণবাদ পলিশির জন্য সাউথ আফ্রিকাকে আইসিসি নিষিদ্ধ করে ১৯৭০ সালে। ঐ সময় তাদের শুধু অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের সাদা চামড়ার খেলোয়াড়দের বিপক্ষে খেলার অনুমতি প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরে সাউথ আফ্রিকা। সাউথ আফ্রিকা তাদের ইতিহাসে প্রথম ওয়ানডে খেলে ১০ নভেম্বর ১৯৯১ সালে কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে।
১৯৯২ বিশ্বকাপঃ
১৯৯২ বিশ্বকাপেই প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে সাউথ আফ্রিকা। সে সাউথ আফ্রিকা দলে ছিল কেপলার ওয়েলস, অ্যালান ডোনাল্ডের মত তারকা খেলোয়াড়ে পূর্ণ। ঐ সময় এখনকার মত বৃষ্টি আইনে ডিএলএস পদ্ধতি ছিল না। ঐ বিশ্বকাপেই প্রথম বৃষ্টি আইনে পরে ব্যাট করা দলের টার্গেট মোস্ট প্রডাক্টিভ ওভারস (এমপিও) পদ্ধতিতে নির্ধারিত হয় আগের এভারেজ রান রেট (এ আর আর) পদ্ধতির পরিবর্তে। এমপিও পদ্ধতিতে পরে ব্যাট করা দলের টার্গেট নির্ধারিত হত যত ওভার খেলা হবে তা প্রতিপক্ষ দলের ঐ সংখ্যক সেরা ওভারের রানের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হত। সেবার ৯ দলের বিশ্বকাপে রাউন্ড রবিন পর্বে সাউথ আফ্রিকা যেমন অস্ট্রেলিয়াকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল তেমনি ঐ সময়ের তুলনামূলক দুর্বল দল শ্রীলংকার বিপক্ষে হেরেছিল। রাউন্ড রবিন লীগে ৮ ম্যাচে ৫ জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকে সেমিফাইনালে উঠে সাউথ আফ্রিকা। কিন্তু সেমিফাইনালে ঐ এমপিয়ার পদ্ধতির কারাল থাবার জন্যই সাউথ আফ্রিকাকে বিদায় নিতে হয়। ইংল্যান্ডের দেওয়া ৪৫ ওভারে ২৫৩ রানের টার্গেটে সাউথ আফ্রিকার রান ছিল ৪২.৫ ওভারে ২৩১/৬। যখন ১৩ বলে ২২ রান দরকার তখনি নামল বৃষ্টি। এরপর বৃষ্টি শেষ হলে এমপিও পদ্ধতিতে হাস্যকরভাবে সাউথ আফ্রিকার টার্গেট দাঁড়ায় ১ বলে ২২। তাই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিদায় নিতে হয় প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করতে আসা সাউথ আফ্রিকাকে।
১৯৯৬ বিশ্বকাপ:
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকা দল ছিল রেকর্ড করা গ্যারি কারস্টেন-হাডসনে পরিপূর্ণ। সেই দলে ছিল হ্যানসি ক্রুনিয়ে-ডোনাল্ডের মত তারকা খেলোয়াড় আর জন্টি রোডসের মত বিধ্বংসী ফিল্ডার। ১২ দলের অংশগ্রহণে সেই বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকা ছিল বি গ্রুপে। গ্রুপ পর্বে হ্যানসি ক্রুনিয়ে আর কারস্টেনদের কল্যাণে ৫ ম্যাচের ৫ টিতেই জয়লাভ করে গ্রুপ পর্বে প্রথন হয়ে যেন টুর্নামেন্ট জেতার আগাম বার্তা দিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল সাউথ আফ্রিকা। সেবার সাউথ আফ্রিকার আধিপত্য তাদের গ্রুপ পর্বের পয়েন্ট টেবিল দেখলেই বুঝা যায়।
কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের খেলা পড়ল ধুকতে ধুকতে কোয়ার্টার ফাইনালে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে। কিন্তু কে জানত সেই ধুকতে ধুকতে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেই কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বসবে দাপুটের সাথে কোয়ার্টার ফাইনালে আসা সাউথ আফ্রিকা। করাচিতে সেদিন ব্রায়ান লারার ৯৪ বলে ১১১ রানের ইনিংসের জন্যই ১৯ রানে হেরে যায় সাউথ আফ্রিকা। আবার যেন ভেঙে গেল সম্ভাবনাময় সাউথ আফ্রিকার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন!
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ:
ক্রিকেট বিশ্বে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের মত দুর্ভাগা সাউথ আফ্রিকাকে আর কখনো কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না। সেবার ইংল্যান্ড আর ওয়েলসে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ১২ টি দল অংশ নেয় এবং সাউথ আফ্রিকা গ্রুপ এ তে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে বসে। তবুও ৫ ম্যাচে ৪ জয় নিয়ে গ্রুপ পর্বে প্রথম হয়েই সুপার সিক্সে উঠে সাউথ আফ্রিকা।কিন্তু সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচ থেকেই যেন লাগল বিপত্তি। সাউথ আফ্রিকা আগেই সেমিতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার সাথে অস্ট্রেলিয়ার জয় অবশ্যম্ভাবী ছিল। ২৭২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে স্টিভ ওয়াহ ভালোই পথ দেখাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াকে। ব্যক্তিগত ৫৬ রানে স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ ফেলে দেন হার্শেল গিবস। পরবর্তীতে সেই স্টিভ ওয়াহর ১১০ বলে ১২০ রানের উপর ভর করে ৫ উইকেটের জয় নিয়ে সুপার সিক্সের পয়েন্ট টেবিলে সাউথ আফ্রিকার উপরে থেকে সেমিতে উঠে অস্ট্রেলিয়া। তাই হয়ত বলা হয়, “ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস।” আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, সুপার সিক্সের ঐ জয়টাই মূলত ফাইনালে নিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়াকে।
সেবার সেমিফাইনালে আবার মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া আর সাউথ আফ্রিকা। শন পোলকের বোলিংয়ে মাত্র ২১৩ রানের গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে শেন ওয়ার্নের স্পিন ঘূর্ণিতে ধুকতে থাকা সাউথ আফ্রিকাকে পথ দেখান ল্যান্স ক্লুজনার। শেষ ওভারে সাউথ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ৯ রান আর হাতে ছিল ১ উইকেট। ল্যান্স ক্লুজনার প্রথম ২ বলেই ২ টা চার মেরে দলকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন। তৃতীয় বলে ভাগ্যের জন্য রান আউট থেকে বেঁচে যান অপর প্রান্তে থাকা ডোনাল্ড। চতুর্থ বলে বলটা সামনের দিকে ঠেলে দিয়েই রানের জন্য দৌড় দেন ব্যাটিংয়ে থাকা ক্লুজনার। কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা ডোনাল্ড দাঁড়িয়েই থাকলেন। পরে দৌড় দিলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ম্যাচ টাই হওয়ায় সুপার সিক্সের পয়েন্ট টেবিলে সাউথ আফ্রিকার উপরে থাকায় ফাইনালে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট বিশ্ব ঐ বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকার দুর্ভাগ্যকে কখনোই ভুলবে না।
শেষ পর্ব
brand semaglutide – rybelsus 14mg canada where can i buy desmopressin