অতিবৃষ্টি অরণ্য বলতে পৃথিবীর সেই সমস্ত বনাঞ্চলকে বুঝায় যেখানে সারা বছর প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমপক্ষে ১৭৫০ মিলিমিটার থেকে ২০০০ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণে এই ধরনের বনাঞ্চলের গাছের পাতা সবসময় সবুজ থাকে। সকল প্রজাতির প্রায় ৪০% থেকে ৭৫% জীবের সন্ধান মেলে এই রেইনফরেস্টগুলোতে। তবে রেইনফরেস্ট কিন্তু মোটেও হেলাফেলার কোন বিষয় নয়। যদিও পৃথিবীর সেই অংশ থেকে বেশিরভাগ ভেষজ লতাপাতা আসে এবং অনেকেই রেইনফরেস্টগুলোতে অভিযান চালিয়ে এসেছে, তারপরও রেইনফরেস্ট ভ্রমণের জন্য বেশ বিপজ্জনক এক স্থান। আজকের আয়োজন পৃথিবীর বৃহত্তম ১০টি রেইনফরেস্ট নিয়ে।
১০. প্যাসিফিক টেম্পারেট রেইনফরেস্ট

Source: ThingLink
রেইনফরেস্ট বলতেই মনে আসে ভারি বৃষ্টি আর নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। বৃষ্টিপাতের কারণে রেইনফরেস্টের আবহাওয়া কিছুটা ঠাণ্ডাই হয়ে থাকে। একই সাথে সমুদ্র এবং বনাঞ্চল হওয়ার কারণে প্রাণীকুলের বিভিন্ন প্রজাতির দেখা মেলে প্যাসিফিক টেম্পারেট রেইনফরেস্ট এ। দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফাণ্ড এর বিবৃতি অনুযায়ী, প্যাসিফিক টেম্পারেট রেইনফরেস্ট প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল ঘেঁষে অবস্থিত, যার পাশে অবস্থিত উত্তর আমেরিকায় প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম উপকূল যা আলাস্কার প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ড থেকে শুরু করে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ব্রিটিশ কলোম্বিয়া উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং নেয়ারক্টিক ইকোজোন এর অংশ। এই রেইনফরেস্টে প্রতি বছর ৩০০ সে.মি. এর বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে এবং শীত-গ্রীষ্ম উভয় ঋতুতেই তাপমাত্রা ১০-২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়ে থাকে।
৯. সিনহারাজা ফরেস্ট রিসার্ভ

Source: ComplexMania
শ্রীলংকার জাতীয় উদ্যান এবং জীব বৈচিত্র্যের হটস্পট হিসেবে পরিচিত সিনহারাজা ফরেস্ট রিসার্ভ। আন্তর্জাতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এই রেইনফরেস্ট ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে মনোনীত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে এই অঞ্চল প্রাণীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত হয়। সিনহারাজা রিসার্ভের মোট বিস্তৃতি পূর্ব-পশ্চিমে মাত্র ২১ কি.মি. এবং উত্তর-দক্ষিণে মাত্র ৭ কি.মি.। এই বনাঞ্চলে ৩ টি হাতি, ১৫ টি চিতাবাঘ, শ্রীলংকার নিজস্ব ২৬ জাতের পাখি, শুধু রেইনফরেস্টে পাওয়া যায় এমন ২০ প্রজাতির প্রাণীসহ আরও দেখা মেলে রেড-ফেইসড মালহোকা, গ্রিন-বিল্ড কুকাল এবং শ্রীলংকার নীল ম্যাগপাই এর।
৮. সান্টা এলেনা ক্লাউড ফরেস্ট রিসার্ভ

Source: On My Way
সান্টা এলেনা ক্লাউড ফরেস্ট রিসার্ভকে বলা হয়ে থাকে মেঘের বনভূমি এবং বনাঞ্চল প্রেমীদের কাছে যেন এক স্বর্গরাজ্য। কোস্টারিকার সান্টা এলেনা শহর থেকে মাত্র ৪ মাইল দূরে এই বনাঞ্চল গাছপালা এবং পশুপাখির কোলাহলে পরিপূর্ণ এক শান্তির জায়গা। ৭৬৫ একর জায়গা নিয়ে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংরক্ষিত বনভূমিকে ভ্রমন পিয়াসীদের নিসর্গ বললে খুব একটা ভুল হবেনা। তবে হাঁটার সময় পোকামাকড়ের ঢিবি বা ছোট ছোট স্তন্যপায়ীদের দেখে পা ফেলতে ভুল হয় না যেন!
৭. কিনাবালু ন্যাশনাল পার্ক

Source: WallpaperWeb.Org
তামা কিনাবালু নামে পরিচিত সংরক্ষিত এই বনাঞ্চল এবং মালয়েশিয়ার প্রথম জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৪ সালে মালয়ে। ২০০০ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিত এই বনাঞ্চলে আছে ৪৫০০ এরও বেশি প্রজাতির গাছ এবং প্রাণী যার মধ্যে আছে ৩২৬ জাতের পাখি, ১০০ জাতের স্তন্যপায়ী ও শামুকের প্রায় ১১০ টি প্রজাতি। সাবাহ, মালয়েশিয়ান বোর্নিও এর পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত মাউন্ট কিনাবালুকে ( ৪,০৯৫.২ মিটার) ঘিরে ৭৫৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত কিনাবালু ন্যাশনাল পার্ক। সাবাহ, মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট এই পার্কটি। ১৯৬৭ সালে ৯৮৭,৬৫৩ জন মানুষ এবং ৪৩,৪৩০ জন ক্লাইম্বার এই পার্কটি পরিদর্শন করেছে।
৬. টঙ্গাস ন্যাশনাল ফরেস্ট

Source: WallDevil
আলাস্কার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত টঙ্গাস ন্যাশনাল ফরেস্ট আমেরিকার সবথেকে বড় ন্যাশনাল ফরেস্ট যা মোট ১৭ মিলিয়ন একর ( ৬৯,০০০ বর্গকিলোমিটার) জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। বনভূমির বেশিরভাগ অংশ টেম্পারেট রেইনফরেস্ট এর অন্তর্ভুক্ত এবং দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রজাতির বিপন্নপ্রায় বৃক্ষ ও প্রাণীদের অভয়ারণ্য। এই এলাকার সাথে আরও সংযুক্ত আছে আলেকজান্ডার দ্বীপপুঞ্জ এবং কোস্ট পর্বতমালার হিমবাহ ও শিখর। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে আরও ৩৮১ একর জায়গা যুক্ত করার প্রস্তাবনা অনুমোদিত হয়েছে।
৫. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান রেইনফরেস্ট

দুর্ভাগ্যবশত এই বনাঞ্চলগুলো অতীতে যে রকম ঘন ছিল, বর্তমানে সেই রূপ আর নেই। অরণ্য বিনাশের কবলে পরে এই বনভূমি হারিয়েছে তার অতীত ঐশ্বর্য যা সংরক্ষণ বিভাগের জন্য অবশ্যই চিন্তার বিষয়। বিভিন্ন প্রজাতির পক্ষীকুল, স্তন্যপায়ী প্রাণী, অ্যামফিবিয়ান এবং সরীসৃপদের বাসস্থান এই বনভূমি। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ইকো-সিস্টেমের অংশ হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই বনভূমি। এই রেইনফরেস্ট এর জলবায়ু মোটামুটি স্থির থাকে এবং সারাবছরের গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৮০ ডিগ্রী ফারেনহাইট। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপগুলোর পূর্ব উপকূলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তবে এই অঞ্চলগুলোতে শীতকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, অর্থাৎ সারাবছর তাপমাত্রার খুব একটা তারতম্য হয়না।
৪. ডেইন্ট্রি রেইনফরেস্ট

Source: SnapsBox
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড এর উত্তর পূর্ব উপকূলে, মসম্যান এবং কেয়ার্ন্স এর উত্তরে অবস্থিত ডেইন্ট্রি রেইনফরেস্ট। ১২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই বিশাল এলাকা অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় নিরবচ্ছিন্ন ট্রপিকাল রেইনফরেস্ট। এই এলাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে ডেইন্ট্রি ন্যাশনাল পার্ক এবং কিছু মালিকানাধীন জায়গা। পৃথিবীতে যতগুলো প্রাচীন বৃক্ষের অস্তিত্ব আছে তাদের মধ্যে কিছু বৃক্ষের সন্ধান মিলে এখানে। Psilotopsida এবং Lycopsida এর মত প্রাচীন বৃক্ষের সন্ধান পাওয়ার কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল হিসেবে ডেইন্ট্রি রেইনফরেস্ট সুপরিচিত।
৩. ভালদিভিয়ান টেম্পারেট রেইনফরেস্ট

Source: Wikimedia Commons
ভালদিভিয়ান টেম্পারেট রেইনফরেস্ট প্রায় ২৪৮,১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং চিলি ও আর্জেন্টিনায় এই ধরনের বনাঞ্চল খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যাঞ্জিওস্পার্ম গাছ, বাঁশ গাছ, বরফের পাত, হিমবাহ এবং কেন্দ্রীয় একটি উপত্যকা এই রেইনফরেস্ট এর পরিচয় বহন করে। ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে তাপমাত্রা কিছুটা মৃদু পর্যায়ের। সাধারণত এই বনাঞ্চল কুয়াশাবৃত থাকে বেশিরভাগ সময়ে। পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম হরিণ (Southern Pudu) এবং ক্ষুদ্রতম বিড়ালের(Kodkod) দেখা মেলে এখানে। এছাড়াও বিপন্নপ্রায় অনেক প্রাণী এবং বন্য শুকরের বাস এই বনভূমিতে। ভালদিভিয়ান বনাঞ্চলে নিয়মিত হামিংবার্ডের দেখা মেলে মাকি (Maqui) এবং কোপিহু (Copihue) গাছের উপস্থিতির কারণে।
২. কঙ্গো রেইনফরেস্ট

Source: Emaze
আফ্রিকা মহাদেশের কেন্দ্রে অবস্থিত কঙ্গো রেইনফরেস্ট পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রেইনফরেস্ট । এই বনভূমির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ নদী। কঙ্গোর উত্তরাংশের বেশিরভাগ অংশ দখল করে আছে এই বনাঞ্চল। শিকারিদলের কারণে বেশ কিছু প্রজাতির প্রাণী আজ বিপন্নপ্রায়। পিগমি শিম্পাঞ্জি সারা পৃথিবীতে কেবল এখানেই দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া আরও অনেক প্রজাতির জীবজন্তুর দেখা মেলে কঙ্গো রেইনফরেস্ট এ।
১. আমাজন

Source: Wallpaper Studio 10
আমাজনিয়া বা আমাজন জঙ্গল হিসেবে পরিচিত আমাজন পৃথিবীর বৃহত্তম বনভূমি এবং দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ জলাভূমি এই বনের দখলে। ১.৭ বিলিয়ন একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত আমাজন জঙ্গল ব্রাজিল, পেরু,কলোম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডোর, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফ্রেঞ্চ গায়ানা এর মধ্য দিয়ে বিস্তার লাভ করেছে। আমাজনের ৬০% অবস্থিত ব্রাজিলে। প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আমাজনে প্রথম বসবাসকারী জনপদের অস্তিত্ব ছিল ১১,২০০ বছর আগে। আমাজনে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির পোকামাকড়, ১০,০০০ প্রজাতির গাছ এবং ২০০০ প্রজাতির প্রাণী এবং পাখি বাস করে। সবমিলিয়ে আমাজন যেন সবুজ রঙ্গে মোড়ান এক অনিন্দ্য সুন্দর ক্যানভাস।
তথ্যসুত্রঃ
১. https://www.smashinglists.com/biggest-rainforests,
২. https://www.anywhere.com/costa-rica/attractions/santa-elena-reserve,
dutasteride oral buy flomax online cheap ondansetron drug
levaquin price levaquin 250mg without prescription
levitra soft 20mg levitra soft 20mg