ট্রেন ভ্রমণ কার না ভালো লাগে! ট্রেনের নাম শুনেনি দুনিয়াতে হয়তো এমন মানুষ পাওয়াই যাবে না। ভ্রমণকারীরা যানবাহন হিসেবে পছন্দের তালিকাতে প্রথমেই ট্রেনের নাম রাখেন। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই সড়কপথ, জলপথ, আকাশপথের পাশাপাশি রয়েছে রেলপথ। রেলপথের ধরন, চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। ইতিবৃত্তের পাঠকদের জন্য আজকের আয়োজনে রয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এবং বিস্ময়কর রেলপথের বর্ণনা।
মেকলং রেলওয়ে মার্কেটের উপর দিয়ে চলা রেলপথ
থাইল্যান্ড এর মেকলং রেলওয়ে মার্কেটের উপর দিয়ে চলা রেলপথ, থাইল্যান্ড এর শীর্ষ রেলওয়ে ট্র্যাক বা রেলপথ। এমনকি এই রেলপথ সারাবিশ্বের বিস্ময়কর রেলওয়ে ট্র্যাকের মধ্যে অন্যতম। বিশেষ একটি কারণে এই রেলপথ জনপ্রিয়। মেকলং এর এই রেলপথের উপর প্রতিদিন বিশাল বড় বাজার বসে।
দৈনিক এই রেলপথ দিয়ে বেশ কয়েকবার ট্রেন চলাচল করে। যখন ট্রেন আসে, সমস্ত দোকানিরা তাদের স্টলগুলি গুঁটিয়ে নেয়, এবং ট্রেন চলে যাওয়ার পর আবার তারা তাদের স্টলগুলি সাজিয়ে নেয়। আঞ্চলিক ভাষায় এই বাজারটিকে সিয়াং থাই মার্কেট(জীবন ঝুঁকির বাজার) বলা হয়ে থাকে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই বাজার বসে থাকে। মেকলং এর রেলওয়ে মার্কেট, বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মার্কেটগুলির মধ্যে অন্যতম। মেকলং এর এই রেলপথ দেখার জন্য প্রতিদিন অনেক পর্যটক এই স্থানে ভিড় জমায়।
ভালোবাসার সুড়ঙ্গ (রেলপথ)
Tunnel of Love বা ভালোবাসার সুড়ঙ্গ রেলপথটি ইউক্রেনের ক্লেভান শহরের নিকট অবস্থিত। এই রেলপথটি ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা সুড়ঙ্গের ন্যায়। এর ভেতরটা দেখলে মনে হবে, যেন সবুজ স্বপ্ন বা স্বপ্নে দেখা কোন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ভালোবাসার সবুজ সুড়ঙ্গ। তাইতো ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথকে বলা হয়ে থাকে, Tunnel of Love বা ভালোবাসার সুড়ঙ্গ। রেলপথটি বেসরকারি একটি কাঠ কারখানার কাঠ সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রেললাইনের দুইপাশে থাকা সবুজ গাছগুলি সবুজ গম্বুজের ন্যায় তৈরি করে, যা কিনা অনেক দম্পতির পাশাপাশি ফটোগ্রাফারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সুইজারল্যান্ডের ল্যান্ডওয়াসার রেলপথ (রেলসেতু)
Switzerland’s Landwasser Viaduct বা সুইজারল্যান্ডের ল্যান্ডওয়াসার রেলসেতু, সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত রেলপথ। এই রেলপথটি মূলত এই সেতু, সেতুর উচ্চতা এবং এর চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বিখ্যাত। এই সেতুর স্তম্ভগুলোর উচ্চতা ৬৫ মিটার এবং সেতুটি ৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। আল্পস পর্বতের উপর দিয়ে চলা এই রেলপথটি সুইজারল্যান্ড এবং ইতালিকে সংযুক্ত করেছে এবং এই রেলপথটি ইউরোপের সর্বোচ্চ রেলপথ। ল্যান্ডওয়াসার রেলসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯০১ সালের মার্চ মাসে, এবং এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯০২ সালে। শীতকালে ল্যান্ডওয়াসার রেলসেতুর চারপাশে যখন তুষারপাত হয়, এর অপরূপ সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের নজর কেড়ে নেয়। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো তাদের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় এই রেলপথের নাম অন্তর্ভুক্ত করে।
দক্ষিন কোরিয়ার চেরি ফুলের গাইংহওয়া রেলপথ
দক্ষিণ কোরিয়ার গাইংহওয়ার রেলওয়ে স্টেশনের রেলপথটি মূলত চেরি ফুলের জন্য বিখ্যাত। এই স্টেশনের উত্তরে সিওংজুসা স্টেশন এবং দক্ষিণে জিনহে স্টেশন অবস্থিত। এই রেলপথের দুপাশে সারি সারি চেরি ফুলের গাছ। এই রেলপথ ধরে যখন কেউ হাঁটবে, মনে হবে যেন চেরি ফুলের সুড়ঙ্গ দিয়ে হাঁটছে। ২০০৬ সাল থেকে গাইংহওয়া স্টেশনের ভেতর এবং বাহিরের রেল পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছিলো। কিন্তু এই স্থানের সুদৃশ্য চেরি ফুলের জন্য জনপ্রিয় পর্যটক আকর্ষণ হিসেবে স্টেশনটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
এই স্থানে প্রায়ই কোরিয়ান চলচ্চিত্রের দৃশ্যধারণ হয়ে থাকে। কোরিয়ান জনপ্রিয় অনেক চলচ্চিত্রের দৃশ্যধারণ এই স্থানে হয়েছে, যেমন “বয়েজ গস টু হেভেন” (২০০৫) এবং নাটক “স্প্রিং ওয়াল্টজ (২০০৬)”। দক্ষিণ কোরিয়াতে প্রতিবছর “জিনহাই গুনহাং” নামক উৎসবের সময়, গাইংহওয়া রেলস্টেশন থেকে “চেরি ফুলের উৎসব (cherry blossom festival shuttle train)” নামক একটি শাটল ট্রেন যাত্রা শুরু করে, পর্যটকদের চেরি ফুলের দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। বর্তমানে এই শাটল ট্রেনে উন্নতমানের কামরা এবং বাথরুম সংযোজন করা হয়েছে, যেন ট্রেনের যাত্রীরা আরামপ্রদভাবে চেরি ফুলের দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। শীতকালে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। চেরি ফুলের পাশাপাশি, চারদিকের তুষারপাত এক মনোরম দৃশ্য তৈরি, যা পর্যটকদের মন ও প্রাণ জুড়িয়ে দেয়।
ন্যাপিয়ার-গিসবোর্ন রেলওয়ে
নিউজিল্যান্ড এর গিসবোর্নে অবস্থিত বিমানবন্দরটি একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরের প্রধান রানওয়ের উপর দিয়ে ক্রস করা রেলপথটিই ন্যাপিয়ার-গিসবোর্ন রেলওয়ে। এই রেলপথটির প্রধান বৈশিষ্ট্য, রেলপথটি বিমানবন্দরের প্রধান রানওয়ের উপর দিয়ে ক্রস করেছে। ট্রেনগুলি এয়ার ট্র্যাফিক কনট্রোল টাওয়ার থেকে সিগন্যাল পেলেই কেবল রানওয়ে ক্রস করে থাকে। অনেক সময় ট্রেন রানওয়ে ক্রস করা অবস্থাতেই বিমানগুলি বিমানবন্দর ত্যাগ করে। সারাবিশ্বে এই ধরনের বিস্ময়কর রেলপথ মাত্র কয়েকটি রয়েছে, এর মধ্যে ন্যাপিয়ার-গিসবোর্ন রেলওয়ে অন্যতম। সকাল ৬:৩০ মিনিট থেকে রাত ৮:৩০ মিনিট পর্যন্ত এই রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল করে থাকে, এবং বাকি সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
মেঘের রেল বা Train to the Clouds
আর্জেন্টিনার সালতা প্রদেশে অবস্থিত “Train to the Clouds বা মেঘের রেল” পৃথিবীর তিনটি সর্বোচ্চ রেলপথের মধ্যে অন্যতম। রেলপথটি সালতা শহর থেকে শুরু করে লা পোলভোরিল্লা বিয়াডাক্ট পর্যন্ত ২১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ, মাঝখানে ২০টি রেল স্টেশন রয়েছে। এটি এমন এক রেলপথ, যা কিনা মেঘের স্তরের ভেতর দিয়ে ছুটে চলেছে, এবং চারদিকের প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য উপভোগ করার মত।
পর্যটকগণ যেন এই প্রাকৃতিক দৃশ্য ভালোভাবে উপভোগ করতে পারে, এখানকার রেল চলাচল কর্তৃপক্ষ এজন্য প্রয়োজনীয় সবধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। পর্যটকরা সকালের দিকে ট্রেনে করে সালতা শহর ত্যাগ করে, ভ্যালেল ডি লারমা ও কুইব্রাডা ডেল তোরোকে অতিক্রম করে পুনোর অপরিমেয় অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হয়। রেলপথ দিয়ে চলা ট্রেনটি ২০৭ ফুট থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭৩৫ ফুট উচ্চতার রেলপথ দিয়ে অতিক্রম করে। মেঘের উপর দিয়ে চলা এই রেলপথে ভ্রমণের জন্য প্রতিদিন এখানে প্রচুর পর্যটক সমাগম ঘটে।
ফ্ল্যাম রেলওয়ে, নরওয়ে
ফ্ল্যাম রেলওয়ে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রেলপথগুলির মধ্যে অন্যতম এবং নরওয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানের মধ্যে একটি। এই রেলপথ দিয়ে ট্রেন খুবই অল্প সময়ের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮৬৭ মিটার পাহাড়ের উচ্চতায় নিয়ে যায়। ফ্ল্যাম রেলওয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম রেললাইনের মধ্যে একটি। ভ্রমণকারীদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে, চারদিকের পরিবেশ। এই রেলপথ দিয়ে ট্রেন ছুটে চলার সময় খাঁড়া পর্বতমালা, পাহাড়ি ঝর্ণা এবং ২০টি পাহাড়ি সুড়ঙ্গ অতিক্রম করে, প্রতিটি সুড়ঙ্গের আগে পরে পাহাড়ি বাঁক রয়েছে যা পর্যটকদের নজর কেঁড়ে নেয়। ফ্ল্যাম রেললাইনটি ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। ১৯৪১ সালে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়। তখনকার প্রকৌশলীদের কাছে এটি একটি আশ্চর্য ছিল।
গ্লাসিয়ার এক্সপ্রেস এর রেলপথ, সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের গ্লাসিয়ার এক্সপ্রেস এর রেলপথ সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রেলপথ, কারণ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। চারদিকের বরফের পাহাড় এবং দৃষ্টিনন্দন তুষারপাত পর্যটকদের নজর কেঁড়ে নেয়। সেন্ট মরিতৎস থেকে শুরু করে জেরমেট পর্যন্ত এই রেলপথটি ২৯১ টি ব্রিজ অতিক্রম করে ৯১ টি সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে যায়। এই রেলপথটি ২৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ। ১৯৩০ সালে এই রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে আকর্ষণীয় রেলপথের মধ্যে গ্লাসিয়ার এক্সপ্রেস এর রেলপথ অন্যতম। ইতিমধ্যে ইউনেস্কো তাদের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় এই রেলপথের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে।
where can i buy semaglutide – purchase desmopressin for sale desmopressin canada
terbinafine 250mg price – fulvicin 250 mg price how to get griseofulvin without a prescription