ব্রিজ নিয়ে আমাদের সবার মধ্যেই কম বেশি উত্তেজনা কাজ করে। কিছুদিন পর হয়ত আমাদের পদ্মা সেতু নিয়েও আমরা অনেক গর্ব করতে পারবো। ভাবতেই অবাক লাগে ৬.১৫ কিলোমিটার একটা ব্রিজ! কিভাবে কি? হ্যাঁ,বিশ্বের বুকে এমন আরও ব্রিজ রয়েছে। যাহোক আমরা এই আর্টিকেলটিতে বিশ্বের নামি-দামি ও বিখ্যাত ১০টি ব্রিজ সম্বন্ধে জানবো।
১. গোল্ডেন গেইট ব্রিজ, সানফ্রানসিসকোঃ

source: wallpapersite.com
১৯৩০ এর দশকে আমেরিকান গ্রেট ডিপ্রেশন এর যুগে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত হয় ব্রিজ। ১২৮০ মিটার লম্বা এই ব্রিজটি। যদিও দৈর্ঘ্যের বিচারে এটি ছোট কিন্তু ইতিহাসের দিক দিয়ে সমৃদ্ধ চার বছরের চ্যালেঞ্জিং কাজের পর ১৯৩৭ সালে প্রথমবারের মতো ব্রিজটি উন্মুক্ত করা হয়। নিঃসন্দেহে এই ব্রিজটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্রিজের একটি। এটির ৭৫ বছরপূর্তী উদযাপিত হয় বিশেষ আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
২. সিডনি হার্বার ব্রিজ,অস্ট্রেলিয়াঃ

বিশ্বের অন্যতম আরেকটি পুরাতন ব্রিজ হল এটি। ১৯৩২ সালে এটি উন্মুক্ত করা হয়। ব্রিজটি তোরণ ধাঁচের করার জন্য এটিকে স্থানীয়রা “দ্যা কোর্ট হেঙ্গার” নামে পরিচিত। নববর্ষে এখান থেকেই অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত আতশবাজি ফুটানো হয়।
৩. টাওয়ার ব্রিজ, লন্ডন, যুক্তরাজ্যঃ

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল টেমস নদীর তীরে অবস্থিত এই ব্রিজটি ইতিহাসের অন্যতম একটি স্থাপনা। লন্ডন টাওয়ারের অদূরেই এই ব্রিজের অবস্থান যা থেকে এই ব্রিজের নাম দেয়া। ১৮৮৬ সালে এই ব্রিজের কাজ শুরু হয়ে ১৮৯৪ সালে শেষ হয়। প্রিন্স অব ওয়েলস এই ব্রিজ উদ্বোধন করেন। শার্লক হোমসের অনেক কাহিনীও এই বিখ্যাত ব্রিজটির সাথে সংযুক্ত।
৪. ব্রোকলাইন ব্রিজ, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্রঃ

এটি ইতিহাসের অন্যতম পুরাতন একটি ব্রিজ। ১৮৮৩ সালে এটির কাজ শেষ হয়। এটি ম্যানহাটন ও ব্রোকলাইনকে ইস্ট নদীর মাধ্যমে সংযুক্ত করে। ১৫৯৫ ফুট দৈর্ঘ্যের নদীটি একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্রিজ ছিল। যাহোক ঐতিহাসিকভাবে ব্রিজটি বেশ সমৃদ্ধ ও যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. পোন্তে ভেকিও,ইতালিঃ

ইতালির প্রাচীন কালের প্রতিষ্ঠিত ছোট একটি ব্রিজ হল পোন্তে ভেকিও। এটি ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে অবস্থিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্লোরেন্সের এটিই একমাত্র যেটি টিকে ছিল। ব্রিজটির দুই ধারে অগণিত দোকান আছে। যেখানে বিভিন্ন জুয়েলারি, আর্টস এবং ঐতিহাসিক বিভিন্ন কাগজে লেখা নিদর্শন পাওয়া যায়।
৬. গেটশেড মিলেনিয়াম ব্রিজ, ইংল্যান্ডঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে বাঁকানো ব্রিজ হিসেবে এটি বেশি পরিচিত। ২০০২ সালে এটি ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ উদ্বোধন করেন। ব্রিজটি আঁকাবাঁকা রুপই দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
৭. তিঝিংমা ব্রিজ,চীনঃ

হংকং এ অবস্থিত এই ব্রিজটি একটি বিখ্যাত ও কঠিন স্থাপনার মধ্যে একটি। প্রায় দুই দশক কাজের পর এটির সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। গাড়িত পাশাপাশি ট্রেন চলাচলেরও ব্যবস্থা আছে। টাইফুন সহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছিল এটির সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীদের। প্রায় ৭.২ বিলিয়ন অর্থব্যয়ে ব্রিজটি ১৯৯৭ সালে সম্পন্ন হয়।
৮. পার্ল ব্রিজ,টোকিও,জাপানঃ

বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতুর তকমাটা পার্ল ব্রিজের দখলেই আছে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার এ সেতুটি ১৯৯৮ সালে খুলে দেয় হয়। এটি ভূমিকম্প সহনীয় করে বানানো হয়।
৯. হাংঝু বে ব্রিজ,চায়নাঃ

ঝিংজিয়াং ও নিম্বোকে একত্রিতকারী এই ব্রিজটি প্রায় প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। সাগরের উপরে এটাই সর্বোচ্চ ব্রিজ হিসবে খ্যাত। প্রায় ৬০০ শত বিজ্ঞানীর নয় বছরের প্রচেষ্টায় ব্রিজটি ডিজাইন সম্পন্ন হয়।২০০৭ সালে এটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
১০. ভস্কো দা গামা ব্রিজ,লিসবন,পর্তুগালঃ

এই ব্রিজটি হয়ত অন্যান্য ব্রিজগুলোর মত অত ঐতিহাসিক নয় কিংবা দৈর্ঘের বিচারেও লম্বা নয় কিন্তু তাগুজ নদীর তীরে অবস্থিত এই ব্রিজটি সৌন্দর্যের দিক থেকে অনেক এগিয়ে। ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘ এই ব্রিজটি প্রায় ১২ কিলোমিটার লম্বা। ১৯৯৫ সালে কাজ শুরু হয়ে ১৯৯৮ সালে এটি সম্পন্ন হয়।
তথ্যসূত্রঃ
১. https://edition.cnn.com/travel/article/most-amazing-bridges/index.html
২. https://10mosttoday.com/10-most-famous-bridges-in-the-world/
৩. http://www.touropia.com/most-famous-bridges-in-the-world/
৪. http://www.travelchannel.com/interests/road-trips/articles/worlds-top-10-bridges
৫. http://www.telegraph.co.uk/travel/lists/the-worlds-best-bridges/