টি – টুয়েন্টি নামক একটা হতাশার ক্রিকেট খেলি আমরা প্রায়ই।হতাশাটা এইরকম যে আমরা শুরুতে ভাল করব, পরে আমরাই টানা আউট হয়ে যাব। সবাই আশায় বসে থাকব যে আজকে বাংলাদেশ জিতবে, কিন্তু সে একই চিরচেনা ছবি শেষে। ছোটখাট হার।
গতকালের সাউথ আফ্রিকা বনাম বাংলাদেশ ম্যাচটিও একটি হতাশার প্রতিচ্ছবি। যেখানে বোলাররা ১৯৬ রানের টার্গেট বাধিয়ে আসে। এখানে বোলারদের দোষ দিব না। কারণ এই পিচে আমরাও ভালই ব্যাটিং করেছি। শুধু কিছু ভুল ছিল, নাহলে আমাদের ফেভারেও ম্যাচটা ছিল কিছুসময়ের জন্য।
বোলিং নিয়ে যদি কিছু বলতে হয় তাহলে বলব তাসকিনের ওভারের শুরুটা প্রতিনিয়ত বাজে বল দিয়ে শুরু করা। যেখানে সে নিজেই পরবর্তী ৫ টি বল নিয়ে প্রেশারে থাকে। আর রানের ব্যাবধান বাড়িয়ে দেয় প্রচুর।
সাইফুদ্দিন -ওয়াও ক্রিকেটার। আমি বলব এতদিনে আমরা একটা ভাল পেসার অলরাউন্ডার পেলাম। আগেও একজন পেয়েছিলাম,জিয়াওর রহমান। কিন্তু ইঞ্জুরি আর আমাদের তথাকথিত বোর্ড রিলেশন ব্যাপারটির কারনে একজন ভাল ক্রিকেটার হারাই।
সাইফুদ্দিন এর ইয়র্কার গুলোও চোখে পরার মত ছিল। অনেক পরিশ্রমী একজন ক্রিকেটার।
সাকিবকে বাহবা দিতেই হবে। নাহলে রানটা গতকাল ২৩০/২৪০ এ ঠেকতে পারত। তা হল অফস্পিনার কাজে লাগানো। এই জায়গাটাই সাকিবের ক্যাপ্টেন্সীর একটি উল্লেখযোগ্য দিক আমরা দেখব। তা হচ্ছে ফিল্ড আর পিচ এনালাইসিস সাকিবের খুবই ভাল। অফস্পিনার রা রানের চাকা স্থির করে দিয়েছে মাঝে মাঝেই। মাহমুদুল্লাহ, মিরাজ খুব ভাল বোলিং করেছে। মিরাজ, জায়ান্টকিলার। আগেও দেখেছি আমরা।
সবমিলিয়ে ১৯৫ রান এই পিচের জন্য খুব বেশিও লাগে নি আমার কাছে । কারণ বোলিং ভোগান্তিতে সাউথ আফ্রিকার পিচে সবাইকেই পরতে হয় ।আর আমরা টেস্ট থেকেই এই ভোগান্তিতে আছি।
এইবার ব্যাটিং নিয়ে আসা যাক।
আমাদের টি -টুয়েন্টি ব্যাটিং কখনোই হয় না। মাঝে মাঝে হলেও, তখনো জিততে পারি না। গতকাল যে খারাপ ব্যাটিং করেছি এটা বলব না।
ব্যাটিং ভালই করেছি। কিন্তু জিতার জন্যে তো বেস্ট ব্যাটিং টা করতে হয়।
টি -টুয়েন্টি তে আপনি সেট হওয়ার জন্যে ৩/৪ বলের বেশি নিতে পারবেন না।
আর যখন আপনার সামনে এত বড় টার্গেট তখন তো এই ৩/৪ বলও পাবেন না সেট হতে। তবে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সেট হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বল রেখে গিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। ইমরুল কায়েস এত আগে আউট না হলে সৌম্য আরো হাত খুলে খেলতে পারত।কিন্তু সে সেটা পারে নি। সৌম্যর ফর্ম খুব বাজে যাচ্ছে, অনেকদিন ধরেই। কিন্তু টি টুয়েন্টিতে না। বলতেই পারেন একটাও তো ফিফটি নেই!!!
হয়তো নেই। তবে সৌম্য যে কয়টি ম্যাচে ৩০/৪০ করে দিয়ে গিয়েছে, তা খুবই কম বল খেলে। এবং আমরা মোটামুটি একটা ডিফেন্ডেবল টার্গেট এ পৌছাতে পেরেছিলাম।
ইমরুল কায়েস!!!! টি টুয়েন্টি কেন খেলেন ওনাকে এই প্রশ্নটা করা খুব জরুরী। আসলে ওনাকেই বা দোষ কিভাবে দেই? ওনি তো নিজের ইচ্ছায় খেলেন না।
কিন্তু মিডল অর্ডার বরাবরেই মত কলাপ্স করেছে গতকাল।আমি টি-টুয়েন্টিতে একজন সিনিয়র ব্যাটসম্যান নিয়ে ২ টা কথা বলব। তিনি হচ্ছেন মুশফিকুর রহিম।আমার দেখা তার এতগুলো ম্যাচে কখনোই তাকে ভাল ইনিংস খেলতে দেখি নি। একটা ফিফটি আছে। এভারেজ খুব কম। তাই মুশফিককে নিয়ে কোন চিন্তাই ছিল না। টোটাল কনসানট্রেশন ছিল সাব্বির রহমান এর প্রতি। জানি খুব ভাল ইনিংস আসার সম্ভাবনা রয়েছে।কিন্তু ব্যাটিং অর্ডার এ এ কেমন পরিবর্তন??
সাব্বির এত পরে??মুশফিকের আগে আপনি সাব্বিরকে রাখবেন, মুশফিকের আগে আপনি মাহমুদুল্লাহ কেও রাখবেন। কয়দিন পরে আপনি সাইফুদ্দিনকেও হয়ত রাখতে বলতে পারেন। ব্যাটিং অর্ডার এর পরিবর্তন খুব বাজে একটা জিনিস। প্লেয়ারদের মানসিকতার অনেকটাই পরিবর্তন ঘটে এই কারনে।
সাব্বির শুরুটা ভাল করলেও হতাশ করল কতখন পরেই। খুব বাজে একটা শট খেলে। যেটার কোন প্রয়োজনই ছিল না। অপ্রয়োজনীয় শট আমাদের হতাশার আরেকটি মূল কারণ। সাকিবের ক্ষেত্রেই যেটি ঘটেছে। টানা বাউন্ডারির পরেও লফটেড শট খেলা। ফলাফল ক্যাচ আউট। আমাদের সবাই টি-টুয়েন্টিতে ক্যাচ আউটই হয়। শুধু টি-টুয়েন্টিতে না। সব ফরম্যাটেই ক্যাচ আউট হই।
এরপর মাহমুদুল্লাহর আবার হতাশ করা শট। আমাদের ব্যাটিং চলে গেল লোয়ার অর্ডারে। যেখান থেকে ২০/৩০ রান আসার চেয়ে বেশি কিছু সম্ভব নয়। সাইফুদ্দিন -ওয়াও, আমি আবারো বলছি। ছেলেটাতে ট্যালেন্ট আমাদের অধিকাংশ প্লেয়ার থেকে কম। তাহলে আছেটা কি??
আছে ক্রিকেটীয় সেন্স, আছে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। কোন বল খেলতে হবে আর কোনটা খেলতে হবে না সেটা বোঝার ক্ষমতা। আর রানের গতি বাড়ানো। সে অনেক বল ব্লক করেছে। কিন্তু রান দেখেন, স্ট্রাইকরেট দেখেন। অনেক ভাল কভার দিয়েছে। আর চমৎকার খেলেছে। বলতেই পারেন প্রেশার ছিল না। আপনি খেলাটা ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝতে পারবেন যে
সে কতটা চেষ্টা করেছে।
সাইফুদ্দিনকে আমি অনেক এগিয়ে রাখব টি টুয়েন্টি তে। একটি জিনিস ছাড়া। তার ডট বল দেওয়ার প্রবনতা কমাতে হবে। এমনিতেই কমবে,আশা করি। ওর ক্যারিয়ার মাত্র শুরু। তার কল্যাণেই আবার লজ্জাজনক হার থেকে ফিরে আসলাম।
নাহলে তো মাঝে মনে হচ্ছিল ১৫০ এই হয়ত গুটিয়ে যাব।
শেষমেষ ১৭৫ রান খুবই খারাপ বলা চলে। শেষ ১১ ওভারে ৮৩ রান টি-টুয়েন্টির তুলনায় খুব খারাপ।
আমাদের রানের ব্যাবধানের জন্য আরেকটি মূল কারণ আছে। তা হচ্ছে ডট বল। ৪৫ টি ডট বল দিয়ে টি-টুয়েন্টি খেলা হয় না। যেখানে সাউথ আফ্রিকার ডট বল ছিল ২২ টি মাত্র।আমরা সিংগেল,ডাবল এ এখনো অনেক কাচা। এত এত বছর পরেও।
আরো কিছু কথা না বললেই নয়।
সাকিব নিজ পছন্দমত দল পায়নি বলে একটি কথা শোনা যাচ্ছে। ক্যাপ্টেন নিজ পছন্দমত বোলার /ব্যাটসম্যান নিতে না পারলে টিম কখনোই ভাল করবে না।
আর সাকিব!!!! ও তো গ্রেট তার ক্রিকেটীয় সেন্স এর জন্য। তার কথার ভেল্যু যে কারো চাইতে বেশি।
ব্যাটসম্যানদের কিছু ভুল আমাদের বহু ম্যাচ খুইয়েছে। সাকিবই হয়ত আমাদের টি-টুয়েন্টিতে নতুন মাইলফলক দেখাবে। কে জানে!!!!