বিশ্ব ইতিহাস ঘেঁটে আপনি যদি খলনায়কদেরকে চিন্হিত করতে চান তবে সর্বাগ্রে যে নামটি আসবে তা হল – অ্যাডলফ হিটলার । সাম্রাজ্যবাদ নীতিতে বিশ্বাসী ২য় বিশ্বযুদ্ধের এই নায়ক হত্যা করেছিলেন ৬০ লক্ষ ইহুদীকে। বিশ্বের ইতিহাসে “হলোকস্ট” নামে পরিচিত সুপরিকল্পনামাফিক এত বিশাল হত্যাকান্ড অ্যাডলফ হিটলারের পুনর্জন্ম না হলে হয়তো আর ঘটার সম্ভাবনা নেই! যাহোক, সীমাবদ্ধ চেতনার অধিকারী এই ব্যক্তিটির হাত ধরেই সূত্রপাত হয়েছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধের । অজস্র মানুষের মৃত্যুর বিনিময়ে আমৃত্যু জার্মান জনগনের উষ্ণ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা লাভ করতে চেয়েছিলেন তিনি,আর এখানেই করেছিলেন ভুল। বিশ্বপ্রেমশূন্য এই সম্প্রসারনবাদ আকাঙ্খা পূরন হয়নি হিটলারের, বরং তাকে বরণ করে নিতে হয়েছিল দুঃসহ পরাজয়ের গ্লানি,বেছে নিতে হয়েছিল আত্মহত্যার পথ।
১ম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মান ভূখন্ডটি সঙ্কুচিত হয়ে যায়,বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপুরণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে জার্মানিকে কোনঠাসা করে ফেলা হয়, যা জার্মানরা কখনো মেনে নিতে পারেনি। মূলত জার্মানি তার সম্পদ, সম্মান এবং ক্ষমতার প্রায় সবটুকুই হারিয়ে ফেলেছিল। ১ম বিশ্বযুদ্ধের এই ফলাফলের প্রতিশোধ স্পৃহাই জন্ম দেয় ২য় বিশ্বযুদ্ধের। হিটলার তখন জার্মানির চ্যান্সেলর। ভাইমার প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি পল ভন হিন্ডেনবার্গ ১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারি হিটলারকে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। চ্যান্সেলর হওয়ার পর থেকেই তার আদেশে নাৎসি পার্টি সকল বিরোধীপক্ষকে একে একে নির্মূল করতে শুরু করে এবং তিনি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ পান। ১৯৩৪ সালের ২ আগস্ট হিন্ডেনবার্গের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের ক্ষমতা একত্রিত করায় জার্মানিতে হিটলারের একচ্ছত্র অধিপত্য আরো জোরালো হয়। তিনি ভার্সাই চুক্তি ভেঙে অভ্যন্তরীনভাবে সামরিক শক্তিকে সুসজ্জিত করে তোলেন। অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে পুনরায় একটি বিশ্বশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সম্প্রসারনবাদ নীতিকে সফল করার দূরদর্শি পরিকল্পনা করতে চেয়েছিলেন তিনি। ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল নিজের দখলে আনতে সমর্থ হলেও শেষ পর্যন্ত ভাগ্য তাকে সহায়তা করেনি,সফলতার শিখর ছুৃঁতে পারেননি হিটলার। এর নপথ্যে ছিল অনেক কারন। তাহলে জেনে নেয়া যাক একজন হিটলারের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন আর কিছু স্ট্রেটেজিক ভুলের মাশুল।
হিটলার শাসিত নাৎসী জার্মানি পররাষ্ট্র নীতিতে সকল “লেবেনস্রাউম” (Lebensraum-বসবাসযোগ্য অঞ্চল) দখল করে নেয়ার নকশা তৈরি করে। বিশেষ করে জার্মানীর পূর্বাঞ্চলগুলো-যেদিকে ছিল তার দুর্নিবার আকর্ষন। ১৯৩৮ ও ১৯৩৯ সালে দেশটি অস্ট্রিয়া ও চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে। যুদ্ধ শুরুর এক সপ্তাহ আগে জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এক চুক্তি অনুযায়ী দখলিকৃত পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। এরপর ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে । ইতালি ও অন্যান্য সহযোগী শক্তির সহায়তায় ১৯৪০ সালের মধ্যে নাৎসী জার্মানি ইউরোপের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে ফেলে। এদিকে পোল্যান্ড আক্রমন করায় ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, সূচনা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ফ্রান্সও পরাজয় স্বীকার করে নাৎসী জার্মানির কাছে।
অল্প সময়ের ব্যবধানে এতগুলো অঞ্চল নিজের নিয়ন্ত্রনে আনতে পারায় তার আত্মবিশ্বাস আরো বহুগুনে বেড়ে যায়। এই অতি আত্মবিশ্বাসই ছিল দিনশেষে তার জয়ের প্রধান অন্তরায়। হিটলারের পরাজয়ের বীজ মূলত নিহিত ছিল তার রাশিয়া আক্রমনের পরিকল্পনার মধ্যেই। হিটলার ভেবেছিলেন রাশিয়া অধিকার করতে পারলে সমগ্র ইউরোপ চলে আসবে তার নিয়ন্ত্রনে। কিন্তু হঠাত করেই একক ভাবে বিশাল ভু-খণ্ডের রাশিয়া আক্রমণ করা ছিল হিটলারের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কারন বিশাল রাশিয়া আক্রমন করার মত যথেষ্ট একক শক্তিসম্পন্ন রাষ্ট্র তখনো হয়ে উঠেনি জার্মানি। ফ্রান্স জয়ের পর ১৯৪১ সালে পূর্বের সব চুক্তি ভঙ্গ করে দিয়ে হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করে। রাশিয়া আক্রমনের উদ্দেশ্যেই তিনি ১৯৩৯ সালে তৈরি করেছিলেন তার “নেকড়ে বাঘের আস্তানা”, পরবর্তিতে যেখানে একজন পরাজিত হিসেবে আত্মহত্যা করেছিলেন হিটলার । অপেক্ষা করছিলেন শুধু নিজেকে ভালো করে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। বন্ধুত্বের নামে চুক্তি করেছিলেন স্বার্থ উদ্ধারে। স্ট্যালিনের মত ঝানু রাজনীতিবিদকেও বোকা বানাতে চেয়েছিলেন এভাবে। যাহোক, রাশিয়া এই হঠাত আক্রমনের জন্য প্রস্তুত ছিলনা। এদিকে হিটলার প্রথম দিনেই নিয়োগ করেন পঞ্চাশ ডিভিশন সৈন্য এবং দু হাজার সাতশো বিমান। ফলে পিছু হঁটা ছাড়া উপায় ছিলনা রুশ বাহিনীর।দ্রুত পশ্চাদপসরণ করে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করার পরিকল্পনা করে তারা। প্রাথমিক বিজয়ে সেনাপতিরা আনন্দচিত্তে খবর পাঠাতে থাকেন হিটলারের কাছে, রুশ বাহিনীর সাথে মোকাবেলা করার জন্য জার্মান যুবকদের না পাঠালেও চলতো। আমাদের বয়স্ক সৈনিকরাই হটিয়ে দিচ্ছে রাশিয়ানদের। তাড়া খাওয়া খরগোশের মত ওরা পালাচ্ছে সেক্টরের পর সেক্টর ছেড়ে।
হিটলার এতে প্রচন্ড উৎসাহ বোধ করেন, প্রচন্ড শক্তিশালী বাহিনী মনে করতে থাকেন নিজেদের। কারন তিনি নিজে এ যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন।অন্যান্য দেশে অভিযান চালানোর আগে হিটলার আক্রমনের পরিকল্পনা নিয়ে সেনাপতিদের সাথে গোপনে আলোচনা করতেন, প্রয়োজনে পূর্ন পরিকল্পিত নকশা আংশিক পরিবর্তন করতেন। কিন্তু রাশিয়া আক্রমনের সময় বিভিন্ন সেক্টর পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানের দায়িত্ব তিনি নিজেই গ্রহন করেন। জেনারেলদেরকে সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন, এমনকি তাদের কোন উপদেশও গ্রহন করেননি। আর এটিই ছিল তার পরাজয়ের প্রথম ধাপ।
কিছুদিনের মধ্যেই রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জার্মানদের দখলে চলে আসে, হিটলার মস্কোর দিকে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন তার বাহিনীকে। তিনি তাঁর জেনারেলদের বলেন, “আমাদের শুধু রাশিয়ার দরজায় লাথি মারা বাকি, তা হলেই রাশিয়া পচা কাঠের মতো ভেঙে পড়বে।”
ততদিনে সত্যিকার অর্থেই রুশ বাহিনী বিপুল পরিমানে অস্ত্রশস্ত্র খুইয়েছে। জার্মানদের হাতে বন্দী হয়েছে ৬০ লাখের মত রাশিয়ান। হিটলার প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবতে শুরু করলেন। তিনি ভাবলেন, যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে, রাশিয়ানদের পক্ষে আর যুদ্ধ করা সম্ভবনা। রুশ সরকার যদি সন্ধির প্রস্তাব না দেয় তবে জনগন বিদ্রোহ করবে। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী হিটলারের এটা ছিল ভুল ধারনা। জনগন তো বিদ্রোহ করেইনি বরং ৬ ডিসেম্বর দেশপ্রেমের উজ্জ্বল প্রমান দিল,সবাইকে অবাক করে দিয়ে শতাধিক ডিভিশন সৈন্য নিয়ে রুশ বাহিনী ঝাপিয়ে পড়ল জার্মান বাহিনীর উপর। যা ছিল অভাবিত, অনভিপ্রেত। চরমভাবে পর্যুদস্ত হল নাৎসী জার্মান। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত অবস্থা হল হিটলারের। পরাজয়ের সূচনা বিন্দুর আভাস দেখা দিতে লাগল।
এবার তিনি আবারো করলেন ভুল, জেনারেলদের নিষেধ অমান্য করে তিনি তার বাহিনীকে পিছু হটতে নিষেধ করেন। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন। বাধ্য হয়ে রুখে দাঁড়াল জার্মান বাহিনী। পাল্টা অভিযানের প্রস্তুতি শেষ হতে না হতেই শুরু হল প্রকৃতির অভিশাপ, আরম্ভ হল কনকনে শীত। হিটলার ভেবেছিলেন শীতের মৌসুম আসার আগেই মস্কো ও লেনিনগ্রাড এসে যাবে জার্মান সৈনিকদের দখলে,তাই তিনি গরম পোশাকের ব্যবস্থা করেননি। প্রচন্ড শীতে মারা গেলো অনেক সৈন্য। কিছুদিনের মধ্যে দেশবাসীর কাছ থেকে শীতবস্ত্র নিয়ে আসা হলে বেঁচে থাকা সৈন্যরা প্রস্তুতি শুরু করল। কিন্তু বিধিবাম, শীতের কারনে ততদিনে তেল ও পেট্রোল,যুদ্ধাস্ত্র জমাট বেধে বরফ হয়ে গেছে।কয়লার অভাবে ট্রেন অচল হয়ে গেলো, যানবাহন চলাচল বন্ধ হল। আর এই সুযোগ গ্রহন করল রুশ বাহিনী। প্রচন্ড আক্রমনে ধরাশায়ী করল জার্মানদেরকে। রুশ বাহিনীর মরণপণ সংগ্রামের মুখে শেষ পর্যন্ত জার্মান মস্কো দখলে ব্যর্থ হল। প্রকৃতির এমন বিরুপ ভাব ছিল তার পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারন।
কয়লার খনির প্রয়োজনীয়তা বোধে রোস্টভ আক্রমন করার জন্য হিটলার সৈন্যদেরকে আদেশ করেন, অথচ শীতের তীব্রতা তখনো কমেনি। জেনারেলগন হিটলারকে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে বলে,কিন্তু এবারো তিনি তাদের নিষেধ অমান্য করেন। কোন লাভ হলোনা, শীতের প্রকোপে অনভিজ্ঞ জার্মান সৈন্যরা পশ্চাদপসরণ করল। হাজার হাজার সৈন্যের মৃত্যু হল, লক্ষ লক্ষ সৈন্য বন্দী হল। এরকম পরপর ভুলের কারনে এত এত সৈন্য হারিয়ে হিটলারের পরাজয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় । উল্যেখ্য, রাশিয়া আক্রমণের আগে জার্মানরা গ্রিস আক্রমণ করেছিল। এর ফলে পরিকল্পনা অনুযায়ী রাশিয়া আক্রমণে ছয় সপ্তাহ দেরি হয়ে যায়। যার ফলে শরৎকাল শেষ হয়ে রাশিয়ায় শুরু হয়ে যায় শীত। এবার আসলে হিটলার ওই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত যুদ্ধ শুরু করে এক ভুল শোধরাতে যেয়ে আরেক ভুলের সূত্রপাত ঘটান।
হিটলার প্রতিবারই তাঁর সেনাবাহিনীকে দুটি ফ্রন্টে ভাগ করতেন। একদিকে যখন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চলছে, তখন অন্য দিকে বিশ্বজয়ের স্বপ্নে হিটলার আফ্রিকায় আরেকটি ফ্রন্ট খোলেন। এতে করে সামরিক শক্তি দুটো দিকে ভাগ হয়ে যায়। আর যেহেতু তিনি নিজে যুদ্ধ পরিচালনা করছিলেন তাই সবদিক একসাথে নিয়ন্ত্রন করাটাও ছিল চ্যালেঞ্জিং ব্যপার। জাপান জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর তারা ৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে আমেরিকার পার্ল হারবার বন্দরের ওপর বোমা বর্ষণ করে বন্দরটি বিধ্বস্ত করে ফেলে। ফলে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রও। এর আগ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা নিরপেক্ষ ছিল। এরপর ১৯৪১ সালের ১১ ডিসেম্বর হিটলার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করেন । এটি ছিল হিটলারের একটি মারাত্মক ভুল। একইসাথে এতগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো ছিল দুরুহ কাজ। প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসকে দমন করতে পারেননি বলেই হয়তো তাঁকে শেষে হার স্বীকার করে নিতে হয়েছিল।
ককেশাসের যুদ্ধেও সফল হয়নি জার্মান। প্রচন্ড প্রতিশোধ স্পৃহায় রাশিয়া বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিযুক্ত করল সেখানে। তাদের আক্রমনে বিপর্যয় নেমে এলো জার্মান সেক্টরে,টিকতে পারলোনা নাৎসী বাহিনী। ককেশাসের তেল ক্ষেত্রের জন্য জার্মানদের সিক্সথ আর্মি পুরো শহর ঘিরে না ফেলে হিটলারের আদেশে শহরের প্রতি গলি, ঘর এবং আনাচে কানাচে যুদ্ধ চালায় । এটা ছিল স্ট্র্যাটেজিক ভুল, সিক্সথ আর্মি শহরের ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সোভিয়েত বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। এ যাত্রায় হিটলার তার বাহিনীকে পিছু হটতে নিষেধ করেন, ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে । পরাজয় আর পরাজয়- ক্রোধে ফেটে পড়লেন হিটলার, সিদ্ধান্ত নিতে আবারো করলেন মস্ত ভুল । রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিলে যা হয় আর কি। ১৯৪২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্টালিনগ্রাদের যুদ্ধচলাকালীন তিনি নতুন জেনারেল নিযুক্ত করলেন। কিন্তু ঘনঘন সেনাপতি বদল করলে লাভের চেয়ে লোকসান হয় বেশি। অথচ এটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্ববহ যুদ্ধ, স্ট্যালিনগ্রাডের পরাজয় মানে জার্মানদের মহাবিজয়। মরণপন যুদ্ধ চলছে স্ট্যালিনগ্রাডে, এক ইঞ্চি মাটি ছাড়তেও নারাজ রুশ বাহিনী। রাশিয়ানরা করছিল আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ,ফলে তাদের দুর্ভেদ্য বেরিয়ার অতিক্রম করে অচেনা দেশে এগিয়ে যাওয়া মোটেই সহজসাধ্য ছিলনা, নতুন জেনারেলের পক্ষে তা আরো কঠিন হল। অধিকার করা সম্ভব হল না স্ট্যালিনগ্রাদ। ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে জার্মানীকে ধরাশায়ী করে ফেলে তারা। ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল লড়াই ছিল এটি। দীর্ঘ ছয় মাস যুদ্ধের পর রাশিয়ান লাল ফৌজ স্বদেশভূমি থেকে জার্মান বাহিনীকে সম্পূর্ণ উৎখাত করতে স্বক্ষম হয় ।এদিকে ১৯৪৪ সালে বুলগের যুদ্ধে তাঁর আদেশ মোতাবেক কাজ করতে গিয়ে জার্মানরা সেখানেও হেরে বসে। আসলে প্রথম দিকে নিজের তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু জয়ের ফলে হিটলার নিজেকে মিলিটারি জিনিয়াস ভাবতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে হারার কারণ হিসেবে জেনারেলরা তার আদেশ মোতাবেক কেন কাজ করলেন না, এ নিয়ে দোষারোপ করতেন তিনি।
১৯৪৪ সালে একের পর এক অধিকৃত পোল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া মুক্ত করতে থাকে এবং জার্মানির মূল ভূখণ্ডে এসে প্রবেশ করে। অন্যদিকে ইংরেজ আর মার্কিন সৈন্যরাও জার্মানির অভিমুখে এগিয়ে চলে। ১৯৪৫ সালের ২৯ এপ্রিল হিটলারের শেষ ভরসা তার স্টেইনের সৈন্যবাহিনী বিধ্বস্ত হয়ে যায়। চিরদিনের জন্য ধুলিস্যাৎ হয়ে যায় হিটলারের সব স্বপ্ন। সোভিয়েত বাহিনী জার্মানির পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমা মিত্রবাহিনী জার্মানির পশ্চিমাঞ্চল দখল করে। হিটলার তবু আত্মসমর্পণ করেননি,সৈন্যদেরকে পিছু হটতে নিষেধ করেন। ফলে দেশটির অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটে।
রাশিয়া আক্রমনের শুরুতে হিটলার ইংল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানালে ইংল্যান্ড কোন প্রকার সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। মুসোলিনী ও হিটলার একই মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল। তাই ইতালি সাহায্যে এগিয়ে এলেও তাদের যুদ্ধ সামগ্রী তেমন উন্নত ছিলনা। রুমানিয়া বা হাঙ্গেরী, কেউ হিটলারকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধসামগ্রী সরবরাহ করতে পারেনি। আর এমন খর্বশক্তি নিয়ে বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমন করলে পরাজয় তো আসবেই ! এদিকে আবার ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে জাপান অক্ষশক্তিতে যোগদান করলেও রাশিয়া আক্রমনের দুঃসময়ে হিটলার সাহায্য চাইলে এগিয়ে আসেনি জাপান। বরং ওই সময়ে পুরনো শত্রুতার কারনে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হেনে জার্মানীকে আরো বিপদে ফেলেছিল। ১৯৪২ সালের পরে হিটলার গ্রহন করেছিলেন পিছু না হটার নীতি। তাঁর এই নীতিই পরাজয় ডেকে এনেছিল জার্মানির দ্বারে। এই নীতির কারণেই তিনি স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে সফল হতে পারেননি। ইতিহাস বলে, ভুল থেকে ভুলের জন্ম হয়। স্ট্রেটেজিক ভুলের কারনে একের পর এক পরাজয়ের গ্লানি টানতে টানতে হিটলার উন্মত্ত হয়ে উঠেন, প্রচন্ড ক্রোধে নিতে থাকেন একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত। জেনারেলদের উপদেশ না শোনা, ঘনঘন তাদের পদত্যাগ করানো, বিরুপ প্রকৃতি তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া যত শক্তিশালী দেশই হোক না কেন, একসাথে অনেকগুলা যুদ্ধ পরিচালনা করা যেমন দুঃসাহসিক কাজ,তেমনি দুরুহও বটে। এরমধ্যে যদি আবার বহিরাগত শক্তি আর সাহায্যের পরিবর্তে প্রধান হাতিয়ার হয় শুধুমাত্র প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস তবেতো কথাই নেই! যুদ্ধ জয়ের আগ পর্যন্ত যেকোন প্রতিপক্ষই শক্তিশালী। যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবলে কখনো জয়ী হওয়া যায়না, কিন্তু হিটলার ভেবেছিলেন। আর তাই বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বিভোর হিটলার প্রথমদিকে একের পর এক জয় পেতে থাকলেও শেষেরদিকে পরাজয় বরন করে নিয়েছিলেন, বেছে নিয়েছিলেন আত্মহত্যার পথ ।
You made some decent factors there. I seemed on the web for the difficulty and located most people will associate with along with your website.
terbinafine drug – fluconazole 100mg pills buy griseofulvin paypal