মানবজাতির মঙ্গলের স্বার্থে যারা অসামান্য আবদান রেখে যাচ্ছেন তাঁদের সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে অ্যালফ্রেড নোবেল একটি উইল করে যান। তাঁর এই উইল অনুসারে ১৯০১ সাল থেকে প্রতি বছর পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং শান্তিতে সারা বিশ্বের যে কোন প্রান্তের কৃত্তিমান নারী এবং পুরুষদের পুরস্কৃত করা হয়। অ্যালফ্রেড নোবেলের নামানুসারে এই পুরুস্কারটিকে “নোবেল প্রাইজ” (Nobel Prize) বলা হয়। ১৯৬৮ সালে সুইডিশ সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক সভেরিগেস রিক্সব্যাঙ্ক অ্যালফ্রেড নোবেলের স্মরণে অর্থনীতিতে একটি পুরস্কার চালু করে। ১৯৬৯ সালে এই পুরস্কারটিও নোবেল প্রাইজের সাথে যুক্ত করা হয়।
এ বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে যাদেরকে অসাধারণ কৃতির জন্য নোবেল প্রাইজে পুরস্কৃত করা হয়েছে তাঁদের নিয়ে এই আয়োজন ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ
২ অক্টোবর, ২০১৭ দেহতত্ব বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য গঠিত নোবেল কমিটির সেক্রেটারি থমাস পার্লম্যান চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদান রাখার জন্য তিন জনের নাম ঘোষণা করেন। তাঁরা হলেন – জেফারি সি হ্যাল, মাইকেল রসবাশ এবং মাইকেল ও ইয়উং। মলেক্যুলার মেক্যানিজম আবিস্কারের জন্য এ পুরস্কার দেয়া হয়।
পদার্থ বিজ্ঞানঃ
মহাকর্ষ তরঙ্গ আবিস্কারের জন্য পদার্থ বিজ্ঞানে রেইনার ওয়েইজ, ব্যারি সি ব্যারিস এবং কিপ এস থ্রোন কে যৌথভাবে পুরস্কৃত করা হয়। এটি ঘোষণা করা হয় ৩ অক্টোবর, ২০১৭। নোবেল কমিটি সদস্য প্রফেসর ওলগা বত্নার বলেন, “আমরা আশা করছি মহাকাশ তরঙ্গ মহাজাগতিক অন্ধকার সম্পর্কে আমাদের কিছু শিখাবে”।
রসায়নঃ
ক্রায়ো-ইলেক্ট্রন মাইক্রস্কপির উন্নয়নের জন্য এবছর ৪ অক্টোবর রসায়নে যৌথভাবে জাক্যুএস ডুবচেট, জুয়াসিম ফ্রাঙ্ক, রিচার্ড হেন্ডারসন কে নোবেল প্রাইজ প্রদান করা হয়। ক্রায়ো-ইলেক্ট্রনের মাধ্যমে বায়োমলেক্যুলের গঠনকে সহজে সরলীকরন করে একে আরও উন্নত করা যায়। নোবেল কমিটির মতে, এই পদ্ধতি বায়োকেমিস্ট্রিকে একটা নতুন যুগে নিয়ে যাবে।
সাহিত্যঃ
এবছর ব্রিটিশ লেখক কাজুও ইশিগুরো সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। ‘দ্য রিমেন্স আব দ্য ডে’ উপন্যাসটি লিখে তিনি বিশ্ব নন্দিত হন। তাঁর এই উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৯৩ সালে জেমস আইভরি “দ্য রিমেন্স আব দ্য ডে” নামে চলচিত্র নির্মাণ করেন ।
শান্তিঃ
৬ অক্টোবর,২০১৭ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ট্যু এবলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স (ICAN) কে এই পুরস্কার দেয়া হয়। ICAN ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবর্নে প্রতিষ্ঠিত হয়। মানজাতির উপর নিউক্লিয়ার অস্ত্রের সর্বনাশা প্রভাব সম্পর্কে মনযোগ সৃষ্টি এবং এই ধরনের অস্ত্র নিষিদ্ধকরণে যুগান্তকারী প্রচেষ্টার জন্য মূলত এই পুরস্কার দেয়া হয় ।
অর্থনীতিঃ
অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য ৯ অক্টোবর, ২০১৭ রিচার্ড এইচ থেলারকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়। রিচার্ড তাঁর গবেষণার মাধ্যমে দেখান সীমিত বিচারবুদ্ধি, সামাজিক পক্ষপাত এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার অভাব – এই তিনটি মানবীয় বৈশিষ্ট্য কিভাবে ক্রমে ক্রমে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে সেই সাথে অর্থনীতিকেও।
সোর্সঃ www.nobelprize.org