১৯৪৮ সালে বৃটিশ শাষণ থেকে মুক্তি পাওয়া দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম খনিজ সমৃদ্ধ দেশ মায়ানমার। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের প্রায় ২৪৩ কিলোমিটার নিয়ে রয়েছে অভিন্ন সীমান্ত। ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশের কণ্টকাকীর্ণময় পাহাড়ি অঞ্চল ঘেষে এ সীমান্তের অবস্থান হলেও আন্তর্জাতিক ভূ রাজনীতিতে দেশটির সাথে বিশাল স্বার্থ জড়িত থাকায় একে অপরের সম্পর্কের গতিবিধি কি হওয়া উচিৎ, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সবসময়ই কৌশলগত স্টান্ড নেয়ার চেষ্টা করে। কারণ মায়ানমার রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের চাইতে আয়তনে চারগুন বড় হলেও জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের চাইতে এক তৃতীয়াংশ কম। মায়ানমারের জনসংখ্যা যেখানে ৬ কোটি আমাদের সেখানে ১৬ কোটি। আয়তন যেখানে ৬ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের অধিক, সেখানে বাংলাদশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের তুলনায় অল্প জনসংখ্যার দেশ হওয়ায় প্রচুর জমি মায়ানমারে এখনো অনাবাদী রয়ে গেছে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে সেনা শাষণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে মায়ানমার কিছুটা ” একলা চলো” নীতি গ্রহণ করায় বাইরের দেশগুলোও মায়ানমারের অভ্যন্তরে তেমন বিনিয়োগ বা তার বিপুল খনিজ সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহারে উন্নত প্রযুক্তির অনুগমন ঘটাতে পারে নি। কিন্তু ১৯৯০ সালে সামরিক সরকার মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থীদের উপরে ব্যপক ধরপাকড় ও জেলজুলুম সহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করার পরে আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে পড়ে। যার ফলে সামরিক সরকার সীমিত পরিমানে বিদেশী বিনিয়োগের অনুমতি দেয়। চীন তখনই এর সুফল দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় ভোগ করার সুযোগ লুফে নেয়।
চীনের এখানে রয়েছে বিরাট স্বার্থ।কারণ চীন দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা বা অধিকার দাবীর প্রেক্ষিতে পার্শবর্তী ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ইত্যাদি রাষ্ট্রের সাথে ইদানীং তার মোটেও ভাল সম্পর্ক যাচ্ছে না। যার কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই সমুদ্রপথের বিকল্প নিশ্চিত ঘাটি গড়ার লক্ষ্যে সে বিকল্প রাস্তা খুজছে। ঠিক সেই স্থানে দাঁড়িয়ে চীন মায়ানমারের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে শক্তিশালী সামুদ্রিক বন্দর স্থাপনের সুদূর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও করতেছে বহু আগ থেকে। এই ভূ রাজনীতির কারণেই রোহিঙ্গা ইস্যুর মত এমন মানবতা বিবর্জিত কাজেও মায়ানমারকে চীন নৈতিক সমর্থন দিয়েছে। রাশিয়ারও মায়ামমারের পাশে দাড়ানোও একধরণের সমস্বার্থের সমীকরণেই।

এখন বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের বর্তমান যে সমস্যাটি বেশ প্রকট আকার ধারণ করেছে, সেটির ব্যাপারে সবাই আমরা কম বেশী জানি। সেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেকেই বলছে, কেন বাংলাদেশ আরো আগ্রাসী হচ্ছে না মায়ানমারের প্রতি? বস্তুত মায়ানমারের সাথে জড়িত আছে বাংলাদশের জাতীয় উন্নয়নকে তরান্বিত করার সুদূরপ্রসারী সুযোগ ও সমীকরণ। কারণ মায়ানমারের সাথে বৈরীতার অর্থ বাংলাদেশকে অনেক কিছু বিসর্জন দেয়া। একটু উদাহরণ দিয়ে দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বর্তমানে সবচেয়ে উদীয়মান আঞ্চলিক সংগঠন হল আশিয়ান। যার অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র তার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সামরিক ব্যয় ৫০ ভাগ থেকে ৬০ ভাগে নিয়ে এসেছে। এর দ্বারা সহজেই বুঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব কত বেশী। এখন এসকল রাষ্ট্রের বিশাল বাজার ধরতে বাংলাদশের জন্য স্থলপথে যোগাযোগের একমাত্র মিডিয়াম হল মায়ানমারের। সেই মায়ানমারের সাথে যদি বাংলাদেশের সম্পর্ক এই রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিগড়ে যায়, এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের পক্ষে কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ মায়ানমারের সাথে বৈরীতার অর্থ হল তার দেশের স্থলপথ ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া।

তাছাড়া মায়ানমার সহ আশিয়ানের দেশগুলিতে প্রচুর পরিমান অনাবাদী জমি রয়েছে, যা তাদের স্বল্প সংখ্যক জনসংখ্যা দ্বারা পরিপূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। এদিক দিয়ে বাংলাদেশের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে যে, আমরা আমাদের অদক্ষ শ্রমিকদের সে দেশে পাঠিয়ে সরকারী ও বেসরকারী উভয়ভাবে কৃষি জমি আবাদের জন্য চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারব। এটা বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্যও বটে, কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যার যেই ক্রমবর্ধমান হার, তাতে নিকট ভবিষ্যতে অবশ্যই বাইরের দেশে বাংলাদেশকে জমি খুজতে হবে। এমনকি আফ্রিকাতে বাংলাদেশ জমি খুজছেও। এসকল সমীকরণে বাংলাদেশের মায়ানমারের প্রতি প্রকাশ্যে বিরোধিতা বা তার সাথে যুদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই।
তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে এভাবে যে, মায়ানমার আমাদের উপর ১০ লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের চাপিয়ে দিয়েছে, তার কি সমাধান হবে? সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছে রয়েছে বহুপাক্ষিক কৌশলগত স্বার্থ সংরক্ষনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করার সুযোগ। কারণ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূ রাজনৈতিক অবস্থান সকল দেশের কাছেই সমীহ করে চলার মত। এখন দরকার হবে সেই শক্তিশালী স্থানকে শক্তিশালী কূটনীতির মাধ্যমে অধিকতর স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে নিজের পক্ষে নিয়ে আসা। তখন মায়ানমার অঘোষিতভাবে আন্তর্জাতিক নিরব চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশ কেন ভূ রাজনৈতিক সমীকরণে এগিয়ে আছে,তার একটু বিশ্লেষণে যাব। ভারতের সেভেন সিস্টার্সের রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা কিন্তু বাংলাদেশের নিরাপত্তার সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।কারণ বাংলাদেশে বসেই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত হতে দেখা গেছে।তাই ভারত কোনভাবেই চাইবে না, বাংলাদেশের সাথে খারাপ সম্পর্ক সুযোগ নিয়ে তার পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ওই রাজ্যগুলোকে অস্থিতিশীল করে তোলে। তাছাড়াও পাকিস্থানের বিরোধিতায় শক্তিশালী ভারত গড়া সহ সমধারার বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় চার মূলনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতকে বাংলাদেশ ব্যতীত চিন্তা করার সুযোগ খুবই কম। কিন্তু বাংলাদেশের এসকল সমীকরণ স্বপক্ষে আনার জন্য রয়েছে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক তৎপরতার। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু যেমন ইন্দিরা গান্ধির উপস্থিত সাক্ষাতে বলে ফেলেছিলেন, ” আমার দেশ থেকে ভারতীয় সামরিক বাহিনী এখনই প্রত্যাহার করে নিতে হবে “। ঠিক কয়েকদিনের মাঝেই সেটা সম্ভবও হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এসকল শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতামূলক পলিসি আমাদের পথচলায় দিকনির্দেশনাও বটে।
এভাবে বাংলাদেশের সাথে প্রত্যেকটি উদীয়মান ও উন্নত দেশের রয়েছে বহুমুখী স্বার্থ। তাছাড়া আমাদের ক্রমবর্ধমান জিডিপি বহির্বিশ্বে ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে বাংলাদেশকে। চীন যেমনিভাবে মায়ানমারের উপকূলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক ঘাটি গড়তে চাচ্ছে, ঠিক বাংলাদেশের চট্যগ্রামও তার কাছে সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর নিকট ভবিষ্যতে আমেরিকাকে ঠেকাতে চীন ও রাশিয়ার দ্বন্দ্বের পারদমিটার কমবে বৈ বাড়ার সুযোগ খুবই কম। সেদিক দিয়ে রাশিয়ার চাইবে বাংলাদেশনীতিতে নমনীয় হতে। আর যুক্তরাষ্ট্রের চীনকে মোকাবেলায় মায়ানমার ও বাংলাদেশে রয়েছে বহুমুখী স্বার্থ।
এত বিশ্লেষনে যাওয়ার কারণ হল বাংলাদেশ তার ভূ রাজনৈতিক অবস্থান ও তার অর্থনৈতিক শক্তিশালী অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মাঠে সে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দরকার রয়েছে এর যথাযোগ্য ব্যবহারের। তাহলেই কেবল মায়ানমার নীতিতে বহুমুখী স্বার্থ রক্ষার উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক শক্তির মিলবন্ধনে রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হবে। আর মায়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যদি বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হয়ে আগ্রাসী আচরণে যেতে হয়, তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী অগ্রগতিতে কোন ক্রমেই ইতিবাচক হবে না।
avodart 0.5mg usa order dutasteride sale ondansetron pill
order levofloxacin 250mg cost levofloxacin 500mg