প্রতিবন্ধকতা বা ব্যর্থতা সত্ত্বেও যিনি নিজের অভিষ্ট লক্ষ্যে দৃঢ়ভাবে লেগে থেকে পৃথিবীর উন্নয়নে বা প্রযুক্তির পরিবর্তন নিয়ে নিরলস পরিশ্রম করেছেন , তিনি আর কেউ নন। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ও সফলতার জীবন্ত কিংবদন্তি বিল গেটস ৷
কম্পিউটার স্টার্ট করার সময় ‘উইন্ডোজ’ নামের একটি অতি পরিচিত লোগো আমাদের সামনে ভেসে ওঠে । কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগ এর কাছেই এটি অতি পরিচিত। এই লোগো সম্বলিত প্রোগ্রামটিই কম্পিউটারকে চালনা করে থাকে। মূলত এটি হলো কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম। বিশ্বখ্যাত এই প্রোগ্রামটির সৃষ্টিকর্তা হলেন বিল গেটস। তবে তিনি কিন্তু একা এটি তৈরি করেননি। চলুন জেনে নেই অধ্যবসায় এবং তপস্যার মাধ্যমে কিভাবে তিনি সাফল্যকে নিজের জীবনের সাথে আবদ্ধ করে নিলেন।
জন্ম
১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের সিয়াটল এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন বিল। পিতা উইলিয়াম হেনরি। পেশায় নামকরা উকিল। পিতার নাম অনুসারে বিল এর নাম রাখা হয় উইলিয়াম হেনরী গেটস। মা মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটস। তিনি চাকরি করতেন ‘United Way’ নামের একটি কোম্পানির ‘First Interstate BancSystem’ এর ‘Board of director’ হিসেবে। বিল এর নানা জেমস উইলার্ড ম্যাক্সওয়েল তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বোঝাই যাচ্ছে বিল ছোটবেলা থেকেই ধনী পরিবারে বড় হয়েছে। বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে বিল হলেন একমাত্র ছেলে। অনেকেই হয়তো জানেন না বিলের একটি ছোটনাম নাম আছে। পরিবারের সবাই তাকে ‘ট্রে’ বলে ডাকতো। তার বড় বোনের নাম ক্রিস্টিয়েন এবং ছোট বোনের নাম লিব্বি । ছোটবেলা থেকেই বিল এর মায়ের ইচ্ছা ছিল বাবার মত ছেলেও বড় হয়ে উকিল হবে, নাম কামাবে কিন্তু তা পূরণ হলোনা। কেননা ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার চাপে অল্পতেই বিরক্ত হয়ে পড়তেন তিনি, তাই মনের বিরুদ্ধে কোনোকিছুই করত না বিল। সেভেন্থ গ্রেডে থাকার সময় তাকে পাবলিক স্কুল থেকে এনে সিয়াটলের বিখ্যাত প্রাইভেট স্কুল ‘লেকসাইড স্কুল‘ এ ভর্তি করানো হয় যা বিলের জীবনের এক অন্যতম অধ্যায়। কে জানতো এই ছেলেটিই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির একজন।
কৈশোর ও স্কুল জীবন
লেকসাইড স্কুল
লেকসাইড স্কুলে অভিভাবকদের ‘মাদার্স ক্লাব’ নামক একটি সংস্থা এর পক্ষ থেকে প্রতি বছর স্কুলের পেছনে ব্যয় করার জন্য টাকা তোলা হতো । যখন বিল স্কুলে অষ্টম গ্রেডে উন্নীত হন তখন মাদার্স ক্লাব থেকে একটি অসাধারণ উদ্যোগ নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় মাদার্স ক্লাবের অর্থ দিয়ে স্কুলে একটি কম্পিউটার ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। যেখানে Teletype Model 33 কম্পিউটার কেনার সিধান্ত নেয়া হয়। প্রায় তিন হাজার ডলার খরচ করে গঠিত হয় কম্পিউটার ক্লাব, যা সেকালে বেশ বড় ব্যাপার ছিল।
প্রোগ্রামিং এর প্রেমে
ছোট বিলের মাথায় প্রায়ই প্রশ্ন আসতো কিভাবে কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলো কাজ করে ? এই কৌতূহল ও আগ্রহ থেকেই এক সময় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর প্রেমে পড়ে যান। তার এই প্রোগ্রামিং এর প্রতি আগ্রহ দেখে স্কুল তাকে তার গণিত ক্লাস থেকে অব্যাহতি দেয় এবং প্রোগ্রামিং অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দেয়। কম্পিউটার সেকশনে বসেই গেটস তার প্রথম প্রোগ্রাম তৈরী করেন যার নাম রাখেন “Tic-Tac-Toe”। যে প্রোগ্রামটি মূলত কম্পিউটারের সাথে গেম খেলার জন্য ব্যবহার করে বিল সবাইকে চমকে দেন। এই প্রসঙ্গে বিলের একটা মজার কাহিনী বলি, কিশোর বিল গেটস কিন্তু একেবারেই শান্তশিষ্ট ছিলেন না। স্কুলে পড়ার সময় তাঁর পছন্দের সব মেয়েকে এক ক্লাসে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। কিশোর বিল গেটসকে স্কুল কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার ব্যবহার করে একটি ক্লাস শিডিউল তৈরি করে দিতে বলেছিল। এই সুযোগ কাজে লাগান তিনি। তাঁর পছন্দের সব মেয়েকে দিয়ে নিজের ক্লাস ভরান।

তখন ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের কিছু প্রোগ্রামার মিলে কম্পিউটার সেন্টার কর্পোরেশন (সি কিউব) নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করে। তারা একটি প্রকল্প হাতে নেন। সেটা কিছু সফটওয়্যার পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিনিময়ে তারা ফ্রীতে ‘কম্পিউটার টাইম’ দেবে। অনেকেই হয়তো ভাবছেন কম্পিউটার চালাতে দিবে এটা আবার এমনকি তবে সে সময় কম্পিউটার কেবল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তাই কম্পিউটার টাইম বেশ বড় ব্যাপার ছিল। ভাগ্যক্রমে সি কিউবের এক কর্মকর্তার ছেলে তখন লেকসাইড স্কুলে পড়ত । তার ফলে লেকসাইড কম্পিউটার ক্লাব ফ্রীতে কম্পিউটার টাইম পেয়ে যায়। স্কুল শেষে বিল চলে যেতেন ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনে, সি-কিউবের অফিসে। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো প্রোগ্রামিং। মাইক্রোসফটের আরেকজন প্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেনও সেই লেকসাইড স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন। সি- কিউব চলাকালীন সময় বিল এবং পল এর সম্পর্ক আরো গভীর হয়। তারা দুজনেই ছিল প্রোগ্রামিং প্রেমী। কিন্তু এক সময় সি-কিউব ভেঙে যায়। তবে তাতেও প্রোগ্রামিং থেমে যায়নি।
আইএসআই (ইনফরমেশন সায়েন্সেস ইনকর্পোরেটেড) নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের ফ্রীতে কম্পিউটার টাইম দেয়। বিনিময়ে তারা তাদের একটি সফটওয়্যারের ওপর কাজ করতে সম্মত হন।
ডেমো অপারেটিং সিস্টেম
সেসময় মাদার্স ক্লাব তাদের ডোনেশন বাড়িয়ে আরো কিছু কম্পিউটার কিনে ফেলেন। বিল তখন কম্পিউটার সেকশনের অন্য ছাত্রদের নিয়ে Computer Center Corporation (CCC) এর নীতিবিরুদ্ধ PDP-10 নামে একটি ডেমো অপারেটিং সিস্টেম আবিষ্কার করে বসেন। নীতিবিরুদ্ধ এই ডেমো অপারেটিং সিস্টেম কাউকে না জানিয়ে এটিকে কম্পিউটারে ব্যবহার করায় গেটস ও তার তিন বন্ধু পল অ্যালেন, রিক ওয়েইল্যান্ড এবং কেন্ট ইভানস কে স্কুল থেকে সাময়ীক বহিষ্কার করা হয়। তবে আবিষ্কার এর নেশা তাদের পিছু ছাড়েনি। বহিষ্কার জারি থাকাকালীন সময়ে তারা এক ধরনের প্রোগ্রাম আবিষ্কার করেন যা তাদের তৈরী অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের সুরক্ষা করতে সক্ষম এবং কোন সফটওয়্যার এ ট্রোজান (এক ধরনের ম্যালওয়ার) থাকলে সেটাও নস্ট করতে সক্ষম। ট্রোজান থেকে কম্পিউটার সুরক্ষিত রাখার এই পদ্ধতি আবিষ্কারের পর বিল তার গবেষণার ফলাফল স্কুলে দেখান। এরপর তার এই রিপোর্ট Computer Center Corporation (CCC) এ পাঠানো হলে তারা সন্তুষ্ট হয়। অপরদিকে, স্কুল থেকে তাদের বহিষ্কার তুলে নেয়া হয় এবং স্কুলে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিলদের কাজে কম্পিউটার সেন্টার কর্পোরেশন বেশ সন্তুষ্ট হন। এর সুবাদে তাদের কম্পিউটার সেকশনের কম্পিউটারগুলোতে ইন্সটল করা সফটওয়্যার এ ট্রোজান আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখার জন্য বিলদের প্রস্তাব দেয়া হয়। এর মাধ্যমে বিল কম্পিউটার সেন্টার কর্পোরেশন এর সাথে বেশ খাতির জমিয়ে ফেলে এবং তাদের উন্নত কম্পিউটার গুলোতে সোর্স কোড এর বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিয়ে পড়াশুনা করতে থাকেন। এক বিজ্ঞান ভিত্তিক সেমিনারে কম্পিউটার সেন্টার কর্পোরেশন বিল ও তার চার বন্ধুকে তাদের আবিষ্কার পেশ করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
ট্রাফ-ও-ডাটা
১৯৭০ সালে বিলের বয়স যখন মাত্র ১৫। সে এবং পল মিলে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করে। প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ট্রাফ-ও-ডাটা। যেটা ট্রাফিক কাউন্টার এবং ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারদের রিপোর্ট তৈরি করতো। এভাবে এই প্রতিষ্ঠান ট্রাফিককে হেল্প করতো। মূলত ট্রাফ-ও-ডাটা ৮০০৮ নামে এই অ্যাপ যা ট্রাফিক টেপ পড়তে পারতো এবং সেই ডাটা প্রসেস করতো। তারা এই পণ্য বিক্রি করতে শুরু করলো দেশের ভেতর কিন্তু তারা ব্যর্থ হন, কারণ যন্ত্রটি সঠিক ভাবে সবসময় কাজ করতে পারতো না। তবে এটা থেকে কিন্তু তারা তাদের প্রচেষ্টার জন্য ২০,০০০ ডলার অর্জন করেছিল । এর মাধ্যমে বিলের পরিচিতি দিন দিন বাড়তে থাকে। ১৯৭৩ সালে মার্কিন রিপ্রেজেন্টিটিভ হাউজে একজন কংগ্রেস ম্যান তাদের সম্মানজনক পদ দেয়া হয়।
SAT পরীক্ষা
১৯৭৩ সালে বিল লেকসাইড স্কুল থেকে তার গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। মজার ব্যাপার হলো, সেইবার তিনি SAT পরীক্ষায় ১৬০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১৫৯০ পেয়েছিলেন!
“বিভিন্ন দিক থেকে কলেজের সেই দিনগুলো আমার কাছে খুব প্রিয় ছিল। কলেজ ছেড়ে আসায় আমি অনুতপ্ত। শুধু একটা চিন্তা মাথায় রেখে কলেজ ছেড়েছিলাম। স্বপ্ন ছিল, প্রথম মাইক্রো কম্পিউটার সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করব।”
বিল গেটস এর জীবনে তার স্কুল এর ভূমিকা বলতে গিয়ে একথা বলেন। তিনি স্কুলকে তার জীবনের টারর্নিং পয়েন্ট হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন।

হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭৩ সালেই তিনি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বাবা মা অনেক ইচ্ছা ছেলে বড় হয়ে উকিল হবে, কিন্তু গেটস এর এই ব্যাপারে কোনো মাথাব্যাথা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পরেও কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল না যে তিনি কিভাবে নিজের ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি অনেক চিন্তা ভাবনা করে হাভার্ড এর সবচেয়ে জটিল গণিত কোর্স বেছে নিলেন। সেখানেও বিলের ফলাফল ছিল অবিস্মরণীয়। মজার ব্যাপার হলো হার্ভার্ডে পড়ার সময় যেসব কোর্সের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, তার একটিতেও হাজিরা দেননি। এর পরিবর্তে তাঁর ভালো লাগত যেসব ক্লাস, সেখানে বসে যেতেন। তবে তাঁর মুখস্থবিদ্যা ছিল দুর্দান্ত। ফলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় তাঁকে আটকায় কে? ফলে ক্লাস না করেও সব সময় এ গ্রেড পাওয়া ছাত্র ছিলেন বিল। তবে মন ছিল না এগুলোর মধ্যে। স্কুল জীবনে যেমন রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটেছিল কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে, আর এখন যেন বিল নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। শেষে একদিন গেটস তার বন্ধু পল অ্যালেন এর সাথে যোগাযোগ করেন এবং বন্ধুর আমন্ত্রণেই সাড়া দিয়ে অ্যালেন ১৯৭৪ সালের গ্রীষ্ম কালে এসে ভর্তি হলেন হাভার্ডে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তার সাথে পরিচয় হয় বর্তমান মাইক্রোসফট এর সহকারী পরিচালক স্টিভ বালমার এর সাথে। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালের দ্বিতীয় বছরে বিল কিছু অসংজ্ঞায়িত প্রোগ্রামিং সমস্যা “Pancake sorting” নামে একটি সিরিজ সমাধান তৈরী করেন, যেটি উপস্থাপন করেন তার প্রফেসর হ্যারি লুয়িস। বিগত ৩০ বছরের মধ্যে বিল এর সমাধানটিকেই সবচাইতে দ্রুততম সিরিজ সমাধান বলে অ্যাখ্যায়িত করা হয়। পরবর্তীতে তার এই সমাধান নিয়েই হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ক্রিস্টোস পাপাদিমিত্রিও তার গবেষণা চালান এবং তা পেপারব্যাক হিসেবে প্রকাশ করেন।
মাইক্রোসফট এর সূচনা
হাভার্ডে থাকা অবস্থাতেই বিল অ্যালেন কে সাথে নিয়ে তার পূর্বের প্রোটোটাইপ এর ভিত্তিতে প্রকাশিত Intel 8080 CPU এর আরেকটি এডিশন Altair 8800 বের করেন। এর মাধ্যমই তাদের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন এক ধাপ এগিয়ে যায় । Altair 8800 এর প্রকাশনার পর বিল এই এডিশনটিতে নতুন কিছু প্রোগ্রাম যুক্ত করার জন্য যোগাযোগ করেন মাইক্রো কম্পিউটার প্রস্তুতকারী MITS এর সাথে। কোম্পানির প্রেসিডেন্ট এড রবার্টস এতে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বিলকে একটি ডেমো তৈরী করে দেখাতে বলেন। বিল ‘বেসিক’ নামে একটি ডেমো তৈরী করে দেয়ার পর MITS এটিকে Altair 8800 এ ব্যবহার করে অবিস্মরণীয় ফলাফল পায়। এই সাফল্যের ফলে পল MITS কাজ করার সুযোগ পায়। আর পলকে সাহায্য করার জন্য হাভার্ড থেকে ছুটি নেন গেটস। এর পরই শুরু হয় তাদের স্বপ্ন পূরণের ইতিহাস।
বিল ও পল তাদের সফটওয়্যার কোম্পানির স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে একত্রে নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্ক এলাকায় ১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বরে সে দেশর বানিজ্য সচিবের অনুমতিক্রমে MITS এর আওতায় একটি প্রতিষ্ঠান খুলেন। যার নাম ছিল মাইক্রোসফট।

মুক্ত কোম্পানি রুপে মাইক্রোসফট!
MITS এর আওতায় মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠার পর বিল ও পল চিন্তা করলো তারা তাদের কোম্পানি নিজেরদের মতো রিসার্চ করবে। সেই লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে MITS থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট এর উপর কাজ শুরু করে। এইবার গেটস ভাবেন তার নিজ দেশে কোম্পানিকে নিয়ে যাওয়া উচিত। ব্যস! তাই করলেন! মাইক্রোসফটকে নিউ মেক্সিকো থেকে স্থানান্তর করে নিয়ে আসা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের বেলভিউ নামক স্থানে। তিনি তার কোম্পানির জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে লোন চেয়েছিলেন, কিন্তু নতুন বলে কেউ লোন দিতে রাজি হয়নি। কিন্তু বিল হাল ছাড়ার পাত্র নয়। এক সময় তিনি লোন পেয়ে যান কাছের একটি ব্যাংক থেকে। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
কোম্পানির শুরুতে বিলের একটাই স্বপ্ন ছিল “ প্রত্যক ঘরের টেবিলে একটি করে কম্পিউটার, প্রত্যেক কম্পিউটারে মাইক্রোসফট এর সফটওয়্যার। ”
নতুন কোম্পানির প্রথম অপারেটিং সিস্টেম
সফটওয়ার ডেভেলপমেন্টে মাইক্রোসফট এর উন্নতি দেখে ১৯৮০ সালে আইবিএম তাদের নতুন কম্পিউটার ‘আইবিএম পিসি’ এর প্রোগ্রামিং কাজের দায়িত্ব মাইক্রোসফট কে দেয়। এছাড়াও কোম্পানি বিলের এর কাছে তার তৈরিকৃত বেসিক সিস্টেমটি তাদের নতুন কম্পিউটারে ব্যবহারের অনুমতি চায় এবং এর পাশাপাশি আইবিএম জানায় যে তারা একটি নতুন ধরণের অপারেটিং সিস্টেম চায়, যা তারা তাদের কম্পিউটারে ইন্সটল করবে। সেক্ষেত্রে বিল তাদেরকে তৎকালীন বিখ্যাত অপারেটিং সিস্টেম নির্মাতা কোম্পানি ডিজিটাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট (DRI) এর সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তবে আইবিএম এর সাথে ডিজিটাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট (DRI) এর আলোচনা বেশিদূর যায়নি। কারণ ডিজিটাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট (DRI) সফটওয়্যার এর লাইসেন্স সম্পর্কিত যে শর্তাবলি দিয়েছিল তা আইবিএম এর পছন্দ হয় নি। অবশেষে আইবিএম রিপ্রেজেন্টেটিভ জেক স্যামস বিলকে অনুরোধ করেন মাইক্রোসফট থেকে একটি নতুন অপারেটিং সিস্টেম তৈরী করার জন্য। প্রস্তাবটি বিলের বেশ পছন্দ হলেও তিনি বুঝতে পারছিলেন না কিভাবে শুরু করা যায়। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ পর Digital Research (DRI) তৈরী করা “86-DOS (QDOS)” নামে একটি ডেমো বিলকে দেখানো হয়। সে সময় টিম পিটারসন , যিনি ছিলেন Seattle Computer Products (SCP) এর CEO। তিনি মাইক্রোসফটের সাথে যৌথভাবে কাজটি করার প্রস্তাব দেন । এর ফলে বিল ভরসা পেলেন। তিনি SCP এর সাথে চুক্তি করেন। এর কিছুদিন পরই মাইক্রোসফট এককালীন ৫০,০০০ ডলারের বিনিময়ে ‘PC-DOS’ নামের একটি অপারেটিং সিস্টেম আইবিএম এর কাছে হস্তান্তর করে। তবে বিল অপারেটিং সিস্টেম আইবিএম এর কাছে হস্তান্তর করলেও এটির স্বত্ব নিজের কাছেই রাখেন। কেননা যদি মাইক্রোসফট স্বত্ব না হয় তবে আইবিএম চাইলেই এটি মাইক্রোসফটের পরিবর্তে নিজেদের প্রোডাক্ট বলে বাজারে ছাড়তে পারে। একটা বিষয় অনেকেই জানিনা যে ‘PC-DOS’ অপারেটিং সিস্টেমটি কিন্তু সম্পূর্ণভাবে মাইক্রোসফট দ্বারা তৈরি না। বিল গেইটস ওয়াশিংটন শহরের সিয়াটল শহরের ছোট্ট একটি হার্ডওয়ার দোকান থেকে QD-DOS (Quick and Dirty Dos) নামে একটি অপারেটিং সিস্টেম কিনে নেন। এটিকেই IBM এর মাইক্রোপ্রোসেসর অনুযায়ী পরিবর্তন করে ‘PC-DOC’ করা হয়। কিছুদিন পর তিনি এই অপারেটিং সিস্টেমটিকে নিজেদের পণ্য হিসেবে বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বাজারজাতকরণ
১৯৮৫ সালের ২০ নভেম্বর
বিলের স্বপ্ন পূরণের দিন। মাইক্রোসফট বাজারে ছাড়লো নিজেদের তৈরী অপারেটিং সিস্টেম Microsoft Windows (মাইক্রোসফট উইন্ডোজ)। এবারও আইবিএম এর অন্য একটি কম্পিউটারের জন্য এই অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপ করা হয়েছিল যার প্রাথমিক নাম ছিল OS 2 অর্থাৎ অপারেটিং সিস্টেম ২ । কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে OS 2 কে আইবিএম এর থেকে মুক্ত করে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ নামে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে বাজারজাত শুরু করে মাইক্রোসফট। এরপর থেকে ধীরে ধীরে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর আরো এডিশন বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন বিল । আস্তে আস্তে বাজারে আসলো ‘মাইক্রোসফট উইন্ডোজ’ অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন এডিশন। জনপ্রিয়তা পেতে লাগলো কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ভার্সন
সফলতা ধীরে ধীরে বিল চারপাশে ছড়িয়ে পরল। তিনি প্রতি বছর উইন্ডোজ এর ভার্সন বের করতে লাগলেন যা প্রতিনিয়তই আমাদের কম্পিউটারকে উন্নত করছে।
যেমন –
- Windows 3.0 (১৯৯০)
- Windows 95 (১৯৯৫)
- Windows 98 (১৯৯৮)
- Windows 2000 (২০০০)
- Office 2000 (২০০০)
- Windows ME (২০০০)
- Microsoft C# Language (২০০০)
- Microsft.net (২০০০)
- Windows Xp (২০০১)
- Windows Xp Media Centre 2005 (২০০৫)
- Xbox 360 (২০০৫)
- Windows Vista (২০০৭)
- Microsoft word 2007 (২০০৭)
- Microsoft Windows server 2008 (২০০৮)
- Windows 7 (২০০৯)
- Windows 8 (২০১২)
- Windows 8.1 (২০১৩)
- Windows 10 (২০১৪)
বিলিয়নিয়ার বিল গেটস
ইউভার্সিটিতে পড়ার সময় বিল গেটস তার ইউনিভার্সিটির এক টিচারকে তার নিজের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন তার যখন ৩০ বছর হবে তখন তিনি মিলিয়নার হবেন কিন্তু তিনি বিলিয়নার হন বয়স ৩১ হওয়ার আগেই। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর নানা ভার্সন বাজারে আসার পর বিল এর প্রচার প্রসারের পাশাপাশি অর্থ সম্পদ ও বেড়েছে অনেক দ্রুত । ১৯৮৭ সালে Forbes পত্রিকার তার ৩২ তম জন্মদিনের ঠিক আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০০ বিলিওনিয়ারের তালিকায় উঠে আসে বিল গেটসের নাম। তাকে স্বীকৃতি দেয়া হয় বিশ্বের সবচাইতে কমবয়সী আত্মপ্রচেষ্টায় হয়ে ওঠা বিলিওনিয়ার নামে। তখন তার সম্পদের পরিমান ছিল ১.২৫ বিলিওন মার্কিন ডলার। তার এই স্বীকৃতির কয়েকদিন পূর্বেই তার ধন সম্পদের তালিকায় যোগ হয়েছিল আরো ৯০০ মিলিওন মার্কিন ডলার এবং তা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। ১৯৯৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত তিনি ছিলেন Fobers পত্রিকা জরীপে বিশ্বের ১ নাম্বার ধনী ব্যাক্তি । ছিলেন টানা ১৬ বছর ।
Times ম্যাগাজিন তাকে “One of the 100 people who most influenced the 20th century” এর তালিকায় ১ম স্থানে থাকেন। ১ম স্থান ধরে রাখেন ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সালেও।

বিলের জীবনের কিছু মজার ঘটনা
১.১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিল গেটস কোম্পানির সব লোক নিয়ে উড়োজাহাজের ইকোনমি ক্লাসে উঠেছেন। কোম্পানির রীতি ছিল সব কর্মীকে ইকোনমি ক্লাসে যেতে হবে। বিল গেটসও তা মেনে চলতেন। গেটসের এক সহকর্মী লিখেছেন, ১৯৯০ সালে মাইক্রোসফটে যোগ দেওয়ার পর এক ব্যবসায়িক ভ্রমণে বিল গেটসের সঙ্গে তিনি ইকোনমি ক্লাসে গিয়েছিলেন। ওই সময় মাইক্রোসফট বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও কর্মীকে নিয়ে ইকোনমি ক্লাসে যেতে গেটসের মধ্যে কোনো অস্বস্তি দেখেননি তিনি। তিনি মাঝখানের সিটে বসেছিলেন। সারা পথ বই পড়তে পড়তে গিয়েছিলেন গেটস। পরে অবশ্য বিল গেটস নিজস্ব জেট বিমান কিনেছেন।
২. একবার এক সাক্ষাৎকারের সময় হুলুস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে বসেন বিল গেটস। সাংবাদিককে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন তিনি। ওই সময় বাথরুমের গিয়ে নিজেকে আটকে রাখেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সাংবাদিক ক্ষমা না চান, ততক্ষণ বাথরুমে বসে থাকার হুমকি দেন। তাতে কাজ হয়। মাইক্রোসফটের প্রতিবেদক ম্যারি জো ফলি এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান। ফলি বলেন, মজার একটি ঘটনা এটি। কমডেক্স নামের এক সম্মেলনের সময় কয়েকজন সাংবাদিক মিলে গেটসের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। ওই সময়কার বিখ্যাত সাংবাদিক জন ডজ খেপিয়ে দেন বিল গেটসকে। অবশ্য তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার ধরন ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা। তিনি বিল গেটসকে ‘বাজারের সংজ্ঞা কী’ জাতীয় প্রশ্ন করেন। এতে বিল খেপে যান এবং উঠে গিয়ে বাথরুমে যান এবং নিজেকে আটকে রাখেন। বলেন, জন ক্ষমা না চাইলে আর বেরোবেন না। জন তখন বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে বলেন, ‘আই অ্যাম সরি।’
৩. কম্পিউটারে গেম খেলা বিল গেটসের পছন্দ। কিন্তু তা একসময় নেশা হয়ে গিয়েছিল। মাইনসুইপার নামের গেমটির এতই ভক্ত ছিলেন যে তাঁর মনোযোগ ঠিক রাখতে গেমটি আনইনস্টল করতে হয়েছিল। একবার যখন এক কর্মী কম্পিউটার স্ক্রিপ্ট লিখে বিল গেটসের গেমের স্কোরকে হারিয়ে দেন, তখন গেটস বলেন, যন্ত্র যদি মানুষের চেয়ে দ্রুতগতিতে কাজ করে, আমরা কীভাবে মর্যাদা রাখব?
৪. জোরে গাড়ি চালানোর জন্য একবার নয়—তিনবার, তা-ও একই পুলিশের কাছে দুইবার জরিমানা দেওয়ার নজির আছে বিল গেটসের। পোরশে ৯১১ গাড়ি চালিয়ে আলবুকার্ক থেকে সিয়াটলে ফেরার সময় তাঁকে জরিমানা করা হয়। আলবুকার্ক মরুভূমিতে সাধারণত খুব জোরে গাড়ি চালাতেন গেটস। একবার এক বন্ধুর কাছ থেকে পোরশে ৯২৮ মডেলের সুপারকার ধার করে এত জোরে চালিয়েছিলেন যে তা ভেঙে যায়। এক বছর লেগেছিল তা মেরামত করতে।

কম্পিউটার নয়, বাস্তব জীবনসঙ্গী আগমন
বিল এর ব্যাক্তিগত জীবন অন্য চার পাচটা মানুষের মতোই। ১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারী স্ত্রী হিসেবে আগমন ঘটে ‘মেলিন্ডা’র।
মেলিন্ডা কিন্তু বিল এর মতোই দক্ষ ছিলেন। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে যারা হলেন মেয়ে জেনিফার ক্যাথেরিন ও ফোবি অ্যাডেলি এবং একমাত্র ছেলে ররি জন। তাই বলা যায় বাস্তব জীবনেও বিল ধনী ব্যাক্তি।
বিল গেটস এর বিশাল বাড়ি
উনার বাড়ির নাম ‘The Gates Home’। ৬৬০০০ বর্গফুটের এই বাড়িতে ৬০ ফুট গভীর সুইমিংপুল। সুইমিনপুলের সাথে ওয়াটার মিউজিক সিস্টেম। আরো আছে ২৫০০ ফুটের ব্যামাগার এবং ১০০০ ফুটের ডাইনিং স্পেস। বিশাল ব্যাপার!
লেখক বিল
বিল গেটস লিখতে বেশ ভালবাসেন। অনেক পত্রিকায় তিনি গবেষনামূলক লেখা লিখেছেন। ১৯৯৯ সালে মাইক্রোসফটের Nathan Myhrvold এবং সাংবাদিক Peter Rinearson এর সাথে যৌথভাবে লেখা বই The road ahead। ১৯৯৯ সালে প্রযুক্তিগত বই Business @ the speed of thought প্রকাশিত হয়। এছাড়া বিল গেটস কে নিয়ে অনেক ডকুমেন্টারি ফিল্ম হয়েছে যার মধ্যে ২০১০ সালে তৈরী Waiting for “Superman” এবং বিবিসি ডকুমেন্টারি সিরিজের The Virtual Revolution উল্লেখযোগ্য।
মাইক্রোসফট থেকে অবসর
২০০৮ সালে তিনি মাইক্রোসফট থেকে অবসর নেন। অবসর নেয়ার পর তিনি তাঁর দাতব্য সংস্থ্যাগুলোর প্রতি মনোযোগ দেন। দরিদ্র দেশ গুলোতে এবং নানা ধরনের মহামারীতে তিনি অর্থ প্রদান করতে থাকেন। প্রযুক্তি যেন সবখানে পৌছতে পারে সেজন্য বিল গেটস নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে গেটস তার সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি দান করে দেয়ার পরও ৫৭ বছর বয়সী বিল গেটসের বর্তমান সম্পদ ৭২.১ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। বিশ্বের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় দান করার ক্ষেত্রেও সকলের চেয়ে এগিয়ে বিল গেটস।
দ্য গার্ডিয়ান একটি জরীপে বলা হয়েছে যে, এ মুহূর্তে যদি বিল গেটস আর কিছুই না করেন, বসে বসে খান তবে তার অর্থভাণ্ডার ফুরাতে ২১৮ বছর লাগবে। তিনি যদি প্রতিদিন ১০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেন তবে তার সম্পদ শেষ হতে ২১৮ বছর লেগে যাবে। শুধু মুনাফা থেকেই বিল গেটস প্রতিদিন আয় করেন ১১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনেকের মনেই প্রশ্ন, এত সম্পদের উত্তরাধিকার কারা, এত সম্পদ কী করবেন বিল গেটস? তিনি তার বেশিরভাগ সম্পদই দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করেন।
জীবনে যে কাজই করি না কেন একদিনেই যে সাফল্য পাবো তা কিন্তু নয়। ব্যথর্তা আসতেই পারে তাই বলে হতাশ হলে চলবেনা, কাজ চালিয়ে যেতে হবে যতদিন না সফলতা আসবে। এরই এক জীবন্ত উদাহরণ হলো বিল গেটস এর জীবনকথা ।
তথ্যসূত্র : Business insider,
the famous people,
Wikipedia, outliers : the story of success (chapter 2 ; page 21-23), online dhaka,
the guardian, prothom alo,
google, youtube.