প্রাসাদ, কোন দেশের ইতিহাসের অন্যতম বড় এক নিদর্শন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্বকাল থেকে এমনকি গণতন্ত্রের পরও প্রাসাদ ছিল বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চল পরিচালনার কেন্দ্র বিন্দু। কালের গর্ভে বিদায় নিয়েছেন বিখ্যাত সব প্রাসাদের বিখ্যাত সব অধিবাসীগণ। তবে কালের সাক্ষী এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে আজও অনেক প্রাসাদ মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে। সেই সব প্রাসাদের মধ্যে কিছু প্রাসাদ আজও মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে শুধুমাত্র তার সৌন্দর্যের কারণে। আজ বিশ্বের ১০ টি প্রাসাদ সম্পর্কে জানব যে প্রাসাদগুলো কে মনে করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর প্রাসাদ।
১০. পেনা জাতীয় প্রাসাদ,পর্তুগাল ( Pena National Palace,Portugal)
পেনা জাতীয় প্রাসাদ টি ইউরোপের সবচেয়ে পুরাতন দুর্গ। পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় ফার্দিনান্দ ১৮৪২ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বর্তমানে এই প্রাসাদ টি ১৭৫৫ সালে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে সন্ন্যাসীদের আশ্রয়স্থল বা মঠের ধ্বংসাবশেষের উপর নির্মাণ করা হয়। পর্তুগালের সিন্ট্রা শহরের সিন্ট্রা পাহাড়ের একদম উপরে অবস্থিত। আকাশ যদি মেঘমুক্ত থাকে তবে লিসবন সহ আশেপাশের শহর থেকেও এটি দেখা যায়। রোমান স্থাপত্যশৈলী অনুসরণ করে তৈরি নিরুপম এই প্রাসাদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৮৫৪ সালে। বর্তমানে পর্তুগালের সবচেয়ে বড় পর্যটন স্থান এই পেনা জাতীয় প্রাসাদ।
৯. মহীসূর প্রাসাদ,ভারত (Myshore Palace,India)
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু থেকে ১৩৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহীসূর বা মাইশোর শহর অবস্থিত। মহীসূর কে ভারতের প্রাসাদের শহর বলা হয়। এখানে মোট ৭ টি ঐতিহাসিক প্রাসাদ রয়েছে যার মধ্যে মহীসূর প্রাসাদ সবচেয়ে বিখ্যাত। এই প্রাসাদের অপর নাম হচ্ছে আম্বাভিলাস প্রাসাদ। মহীসূরের পুরাতন প্রাসাদ বা কাঠের প্রাসাদ টি দাসারা উৎসবের সময় আগুন লেগে পুড়ে গেলে এটি কে নতুন প্রাসাদ হিসেবে মর্যাদা দের মহীসূরের রাজা কৃষ্ণরঞ্জন এই প্রাসাদ টি তৈরির আদেশ দেন। ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যশৈলীর এই প্রাসাদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৮৭ সালে এবং শেষ হয় ১৯১২ সালে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর -অক্টোবর মাসের দিকে এখানে যখন দাসারা উৎসব হয় তখন এই প্রাসাদে ১০,০০০ বাতি লাগানো হয়, যার ফলে প্রাসাদ টি দেখতে অসাধারণ হয়ে উঠে। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন।
৮.শনবার্ন প্রাসাদ,ভিয়েনা (Schonbrunn Palace,Vienna)
শনবার্ন শব্দের অর্থ সুন্দর বসন্ত। শনবার্ন প্রাসাদটি অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা তে অবস্থিত। এটি ১৪৪১ রুম শনবার্ন নামেও পরিচিত। এই প্রাসাদ টি সম্রাট প্রথম লিওপোল্ডের অনুরোধে ১৬৯৬ সাল থেকে ১৭১২ সালের মধ্যে তৈরি করা হয়। শনবার্ন প্রাসাদ কে পরবর্তীতে গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদে পরিবর্তন করা হয়। এই প্যালেস এর পার্ক টি শুধুমাত্র পর্যটকেরা নন এমনকি হলিউড পরিচালকদের কাছে তাদের সিনেমার অন্যতম পছন্দের এক স্থান। এই প্রাসাদে অনেক গুলো হলিউড মুভি ও টিভি সিরিজের শুটিং এখানে হয়েছে। এর মধ্যে জেমস বন্ড সিরিজের “দ্যা লিভিং ডে -নাইটস ” অন্যতম। প্রতিবছর এখানে ৩০ লক্ষের মত পর্যটক ভিড় করেন।
৭. গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ,চীন (Summer Palace,China)
সামার প্যালেস বা গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ হৃদ,বাগান ও প্যালেসের সমন্বয়ে এক বিশাল স্থাপত্য সমাহার। সামার প্যালেস চীনের রাজধানী বেইজিং এর কেন্দ্র থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে হাইদিয়ান নামক স্থানে অবস্থিত। সামার প্যালেস যে পাহাড়ের উপর অবস্থিত সেই লনজেভিটি বা দীর্ঘায়ু পাহাড় টি ৬০ মিটার উঁচু এবং পাহাড়ের মাঝখান মাঝখানে অনেকগুলো বিল্ডিং রয়েছে। পাহাড়ের সামনে রয়েছে বড় দরবার হল ও প্যাভিলিয়ন এবং এর বিপরীত দিকে পাহাড়ের পেছনের অংশে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান।
প্রাসাদের চারদিকের কুনমিং হৃদ পুরোটা মানুষের তৈরি এবং খননকৃত মাটি ফেলে দীর্ঘায়ু পাহাড় তৈরি করা হয়েছে। নাম থেকে ই বোঝা যায় এই প্যালেস টি চীনের রাজারা গ্রীষ্মকালে ব্যবহার করত এই প্রাসাদ কে।
৬. তোপকাপি প্যালেস,তুরস্ক (Topkapi Palace, Turkey)
তুরস্কের অটোমান রাজবংশ ৮০০ বছরের শাসনকালের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে শাসনকার্যের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তোপকাপি প্রাসাদ। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত তোপকাপি প্রাসাদের অপর নাম সেরাগালিও প্রাসাদ। অটোমান সুলতান মেহমেদ কনস্টান্টিনোপল জয় করার পর ১৪৬৫ সালে এই প্রাসাদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৭ লক্ষ বর্গ মিটারের এই প্রাসাদে বসবাস করতেন অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতানেরা এবং এই প্রাসাদে সুলতান পত্নীদের জন্য হারেম ছিল যেখানে তাদের সেবায় অসংখ্য দাস-দাসী নিয়োজিত থাকত। অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনকার্যের সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হতো এই অপূর্ব সুন্দর প্রাসাদ থেকে। এই প্রাসাদে ১৪৭৮ সাল থেকে ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত অটোমান সুলতানগণ থাকতেন এবং এরপর নতুন আরেক টি প্রাসাদ তৈরি করার পর তোপকাপি প্রাসাদ তার গুরুত্ব হারায়। এরপর ১৮৫৩ সাল থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত সাম্রাজ্যের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকতেন এবং ১৯২৪ সালে অটোমান শাসনতন্ত্রের অবসান ঘটার পর থেকে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে এই প্রাসাদ টি তুরস্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটন কেন্দ্র।
৫. শ্যাতেউ দে চ্যামবোর্ড,ফ্রান্স ( Chateau De Chambord,France)
শ্যাতেউ দে চ্যামবোর্ড ফ্রান্সের একটি অপূর্ব সুন্দর একটি দুর্গ। পর্যটকের সংখ্যার দিক দিয়ে এই দুর্গ টি ফ্রান্সে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এই দুর্গ টি কে ফরাসি রেনেসাঁর একটি মাস্টারপিস হিসেবে ধরা হয়। এই দুর্গে মোট ৪৪০ টি কক্ষ,৩৬৫ টি ফায়ারপ্লেস এবং ৮৪ টি সিঁড়িঘর রয়েছে। এই দুর্গ টি ফরাসি সম্রাট প্রথম ফ্রাঁসোয়া ১৪১৯ সালে তৈরি করেন। সম্রাট ফ্রাঁসোয়া এই দুর্গটির নিকটবর্তী এক জঙ্গলে নিয়মিত শিকার করতে আসতেন, সে জন্য তিনি এই দুর্গ টি নির্মাণ করেন। কিন্তু প্রচণ্ড শীত এবং প্রচুর সংখ্যক রুমের জন্য সম্রাট ফ্রাঁসোয়ার এই প্রাসাদ টি ভালো লাগে নাই এবং তিনি এই প্রাসাদে সব মিলিয়ে ৪০ দিনের ও কম সময় থেকেছেন। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এই প্রাসাদ টি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান।
৪. ভার্সাই প্রাসাদ,ফ্রান্স ( Versailles Palance,France)
ভার্সাই প্রাসাদ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ৩০ বছর পূর্বে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভার্সাই প্রাসাদ ছিল একটি শিকার কুটির। ১৬২৪ এই শিকার কুটির নির্মাণ করেন ফরাসি রাজা ত্রয়োদশ লুই। তার উত্তরসূরি হিসেবে তার ছেলে চতুর্দশ লুই এটি কে প্রাসাদে পরিণত করেন। এই প্রাসাদ টি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রাসাদ। চতুর্দশ লুই ১৬৮২ সাল থেকে এই প্রাসাদ থেকে ফ্রান্স শাসন করতেন।১৭৮৯ সাল পর্যন্ত ভার্সাই প্রাসাদ ফরাসি রাজাদের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় রাজা চতুর্দশ লুই কে ভার্সাই প্রাসাদ থেকে প্যারিসে বিতাড়িত করা হয় এবং এরপর থেকে এই প্রাসাদ কখনও রাজাদের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয় নাই। ১৮৩৭ সাল থেকে এই প্রাসাদ টি মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৩. আলহাম্বরা প্রাসাদ,স্পেন (Alhambra Palace,Spain)
আলহাম্বরা প্রাসাদ টি স্পেনের দক্ষিণ অঞ্চলের রাজ্য গ্রানাডা তে অবস্থিত। স্পেনের মুসলিম শাসনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক নিদর্শন আলহাম্বরা প্রাসাদ। গ্রানাডার আল সাবিকা পাহাড়ের শিখরে অবস্থিত এই প্রাসাদ টি মূলত একটি দুর্গ। এই প্রাসাদ টি চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি তে নাসরিদ সুলতান মোহাম্মদ বিন আল হামার নির্মাণ করেন। এই প্রাসাদ টি তে মুসলিম কারুশিল্পীরা অপূর্ব কিছু সৃষ্টিকর্ম তৈরি করে গেছেন। বর্তমানে স্পেনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ আলহাম্বরা প্রাসাদ এবং অনেকে আছেন যারা গ্রানাডা তে আসেন একমাত্র এই প্রাসাদ টি দেখতে।
২. পোতালা প্রাসাদ, তিব্বত (Potala Palace,Tibet)
পোতালা প্যালেস নিষিদ্ধ দেশ হিসেবে পরিচিত তিব্বতে অবস্থিত। এই প্রাসাদ টি তিব্বতের রাজধানী লাসা উপত্যকার ১৩০ মিটারে উপরে অবস্থিত একটি অসাধারণ স্থাপনা। এই প্রাসাদ টি তৈরি করা হয় সপ্তম শতাব্দীতে এবং বর্তমানে যে প্রাসাদটি রয়েছে এটি ১৬৪৫ সালে পঞ্চম দালাই লামার সময়ে নির্মাণ শুরু হয়। মার্পো রি পাহাড়ে অবস্থিত পোতরাং কার্পো বা সাদা প্রাসাদ ১৬৪৮ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পোতালা প্রাসাদ টি ১৪ তম দালাই লামার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু চীনের নিষেধাজ্ঞার পর তিব্বতের দালাই লামা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এটি আর দালাই লামার বাসভবন হিসেবে ব্যবহার হয় না।
১. হারানো শহর, চীন ( Forbidden City,China)
হারানো শহর বা ফরবিডেন সিটি চীনের রাজধানী বেইজিং এর কেন্দ্রে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রাসাদ। প্রাসাদের মোট আয়তন ৭২ হেক্টরস। এই প্রাসাদ কমপ্লেক্স টি ১৪০৬ সাল থেকে ১৪২০ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়। এই প্রাসাদ কমপ্লেক্সে মোট ৯৮০ টি দালান রয়েছে এবং মোট কক্ষসংখ্যা ৮৭০৭ টি। প্রাসাদ টি ৬ মিটার গভীর পরিখা এবং ১০ মিটার উঁচু দেয়াল দ্বারা চারদিকে ঘেরা। এই প্রাসাদ থেকে মোট ২৪ জন রাজা প্রায় ৫০০ বছর যাবত চীন কে শাসন করেছে। এই প্রাসাদ কে ১৯৮৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো ঘোষণা করে এবং বর্তমানে এই প্রাসাদ টি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
order generic lamisil 250mg – how to get griseofulvin without a prescription order griseofulvin online