একটি পাখি ছুটে যাচ্ছে অমরত্বের দিকে, ডানা ঝাপটাই, নিয়মের শৃঙ্খলে বাধা শরীর, ডানা মেলা হয়না যেমন টা চাই। উড়তে চাই আকাশে, উঠতে চাই ঐ পাহাড় চূড়ায় কিন্তু সময় কোথায়? ক্ষন জন্মের এ পৃথিবীতে আমাদের নিজেদের দেয়ার মত সময় খুব ই কম,নিজেই নিজেকে দেই না সময়। নিজেকে সময়টুকু দেয়া যে জরুরী ছিল তা হয়ত অনেকেই বুঝি,সময় হয়ে উঠেনা, অনেকে হয়ত বুঝিইনা। মন মানসিকতা ভাল, রাখতে চাঙ্গা রাখতে কিংবা কর্মক্ষম শরীরের অবসাদ ভাঙতে ঘুরাঘুরির বিকল্প নেই। অনেকে হয়ত বুঝে পাড়ি জমান বিদেশে, কিন্তু ঘর থেকে এক পা ফেলে নিজের ঘরের সৌন্দর্য আমাদের দেখি কজনা যে আমাদের দেশেই এমন অনেক দর্শনীয় জায়গা আছে যা কাশ্মীর কিংবা পাতায়ার চেয়ে কোন অংশেই কম না। বলছি টাঙ্গুয়ার হাওর এর কথা। এক বিশাল পাহাড়, পাহাড়ের নিচে অথই জল, উপরে অবারিত আকাশ।

একটা লাল টকটকে সূর্য ঢলে পড়ছে পাহাড়ে। আকাশ ছেয়ে গেছে লালিমায়। টুপ করে সন্ধ্যা নামল।সূর্য টা হারিয়ে গেল ঐ বিশাল পাহাড়ের আড়ালে। এক দুটা পাখি ছুটে যাচ্ছে দিগন্তের দিকে। ‘’মাঝি বাইয়া যাও রে,অকুল দরিয়ার মাঝে আমার ভাঙ্গা নাও রে মাঝি বাইয়া যাও রে”- এমন একটা গান আপনার কানে বাজতেছে সাথে ছলাৎ ছলাৎ ঢেঊ বাড়ি খাচ্ছে আপনার ডিঙি নৌকায়। মন ভাল করার জন্য এর চেয়ে ভাল কিছু কি হতে পারে? এমন একটা সন্ধ্যাই পেয়েছিলাম আমি,জীবনের সেরা মুহূর্ত গুলোর একটি। পেতে চান এমন সন্ধ্যা? পেতে চাইলে চলে যেতে হবে টাঙ্গুয়ার হাওর এ যা সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর ও টাঙ্গুয়ার হাওর। এখানকার পরিবেশ একেকসময় একেক রকম।বর্ষায় একরকম সৌন্দর্য পাবেন আবার শীত আরেক রকম। বর্ষায় থাকে পানিতে টই টুম্বুর যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি আর শীত এ পানি থাকে কম, যেদিকে তাকাবেন শুধু লাল সাদা শাপলার মেলা। তবে এর আসল সৌন্দর্য দেখতে হলে আসতে হবে বর্ষায়। দূরের পাহাড়গুলো ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়।আর ওপাশেই আছে চেরাপুঞ্জি, সবচেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত হয় যেখানে। এখানটাতেও তাই বেশির ভাগ সময়ে বৃষ্টি হয়। হাওরের জমা কালো মেঘ পাহাড় চুড়ায় বাড়ি খেয়ে নামে বৃষ্টি।
ভাগ্য ভাল থাকলে এই দৃশ্য ও দেখতে পারেন। সন্ধ্যার এমন সৌন্দর্য অবশ্য দেখতে পাওয়া একটু দুস্কর তবে ভাগ্য ভাল থাকলে পেয়েও যেতে পারেন, এজন্য আকাশ পরিস্কার থাকা একটা দিনে ঘুরতে যাওয়া ভাল। একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে। টাওয়ার এর উপর থেকে পুরো টাঙ্গুয়ার হাওর টাই দেখা যায়। টাওয়ার ঘিরেই আছে জলার বন চাইলে এর ভেতরেও ঘুরে দেখতে পারেন। গরমে আরাম পেতে হাওরের পানিতে একটু গা ভিজিয়ে নিতে পারেন। তবে হ্যা সাতার জানা চাই অথবা লাইফ জ্যাকেট সাথে নিবেন। চাইলে হাওরের জেলেদের কাছ থেকে টাটকা মাছ কিনে দ্বীপের মতন যে বাড়ি গুলো পাশের জেলে পল্লী, রান্না করে দিতে বললে উনারা রেধে দিবেন, খানাপিনাও হয়ে গেল তবে। আর যদি রাতে থাকতে চান ট্রলার ভাড়া করে তবে রান্না মাঝি ই করবে সাথে পূর্ণিমা থাকলে তো কথাই নেই। বাড়তি পাওনা মাঝির গলা ছেড়ে ভাওয়াইয়া গান তো আছেই………
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে বাসে সুনামগঞ্জ ভাড়া পড়বে সাড়ে ৫০০ টাকার মত, সেখান থেকে সিএনজি তে তাহিরপুর ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। তাহিরপুর ট্রলার ঘাট থেকে ভাড়ায় নৌকা সকাল থেকে সন্ধার জন্য রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ১২০০ টাকার মত আর যদি রাতে থাকতে চান ভাড়া পড়বে ২০০০ টাকার মত।
থাকবেন কোথায়ঃ
সুনামগঞ্জ শহরে ভাল মানের কিছু হোটেল রয়েছে।এছাড়া তাহিরপুর বাজারে নতুন পাঁচতলা হোটেল হয়েছে সেখানেও থাকতে পারেন। সিঙ্গেল রুম প্রতি ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকার মত,ডাবল ৬০০। খাওয়া দাওয়ার সুব্যাবস্থা ও রয়েছে। এছাড়া উপজেলা ডাক বাংলোতেও থাকতে পারবেন। রুম প্রতি ভাড়া পড়বে ২০০ টাকার মত। তবে আগে থেকে জেলা প্রশাসনের অনুমুতি নিতে হবে সেক্ষেত্রে। খাওয়া দাওয়া সেক্ষেত্রে বাইরে করতে হবে।