গ্রীক মিথলজি (অন্য মিথলজিতেও আছে) নিয়ে যদি কেউ একটু ঘাটা ঘাটি করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে মিথলজিক্যাল হিরো বলতে যা বোঝায় তাঁদের বেশিরভাগই পুরোপুরি দেবতা নন, আবার পুরোপুরি মরণশীল মানুষও নন, এরা আসলে দেবতাদের মানব সন্তান। অর্থাৎ কিনা দেব এবং মানবের মিলনের ফল এঁরা। এঁদেরকে ডেমি গড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এঁদের কেউ কেউ এতই বিখ্যাত যে, শুধু নাম উচ্চারণের সাথে সাথেই আপনারাও চিনে ফেলতে পারবেন, যেমন, হেরাক্লিস (যাকে হারকিউলিস নামে চিনি আমরা), একিলিস, হেলেন অফ ট্রয় এইরকম আরো অনেক নাম এসে যাবে বলতে গেলে। এঁদের সবাইকে নিয়ে যদি একদিনে বলতে শুরু করি তাহলে সারা রাত চলে যাবে কিন্তু কথা শেষ হবে না। তো আমি একটু একটু করে নিয়মিত বিরতিতে আমি এঁদের উপকথাগুলো জানানোর চেষ্টা করে যাব।
আজকে আমরা যে ডেমি গডের গল্প আপনাদের শোনাব তাঁর নাম পারসিয়াস। তিনি ছিলেন দেবরাজ জিউস এবং আর্গস এর রাজা এক্রিসিয়াস এর কন্যা ডানার ছেলে। এক্রিসিয়াসের কোন পুত্র ছিলনা তাই তিনি খুব করে চাইতেন যেন তার কন্যার পুত্র সন্তান হোক। কিন্তু তখনই ভবিষ্যৎবাণী করল ওরাকল গন যে, ” ডানার পুত্রই এক্রিসিয়াসের মৃত্যুর কারন হবে।” মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল এক্রিয়াসের। তিনি তখন তার মেয়ে ডানাকে কারাগারে বন্দী করে রাখলেন। কিন্তু নিয়তি পিছু ছাড়েনি তার। ডানার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে জিউস স্বর্ণঝর্ণার ছদ্মবেশে গর্ভবতী করলেন ডানাকে। ডানার এই সন্তানই পারসিয়াস।
নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন এক্রিসিয়াস, কিন্তু জিউসের সন্তানকে মেরে ফেলার সাহসও তার ছিলনা। তখন তিনি ডানা এবং পারসিয়াসকে একটা কাঠের বাক্সের ভিতরে রেখে সেই বাক্সটি সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলেন। ভাসতে ভাসতে সেই বাক্সটি গিয়ে ভিরল সেরিফোসের সমুদ্র উপকূলে। সেখানে ডিকটাস নামে এক জেলে এই বাক্সটি পান এবং পারসিয়াস আর ডানার ভরণপোষণের ভার নেন।
পারসিয়াস বড় হওয়ার পর খেয়াল করেন যে, ডিকটাসের ভাই পলিডিকটাস ( তিনি ছিলেন ঐ এলাকার প্রধান) তাঁর মা ডানার সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তাকে কামনা করে। পারসিয়াস খুব সতর্কতার সাথে তাঁর মা ডানার রক্ষণাবেক্ষণ করতে লাগলেন। ডানার কাছে যাবার কোন সুযোগই না পেয়ে পলিডিকটাস একটা পরিকল্পনা করলেন। তিনি এক ভোজের আয়োজন করলেন যেখানে সকল অতিথিরাই একটা করে উপহার নিয়ে আসবেন। কিন্তু পারসিয়াসের দেওয়ার মত কিছুই ছিলনা। আত্মসম্মান বাঁচানোর জন্য পারসিয়াস পলিডিকটাসকে বললেন যে, তিনি যা চান বলতে পারেন, যেখান থেকেই হোক সেটা তিনি এনে দিবেন।” এই সুযোগটাই তো খুঁজছিলেন পলিডিকটাস। একমাত্র মরণশীল গর্গন মেডুসার মাথা চেয়ে বসলেন তিনি। গর্গনরা তিন জন, এদের মধ্যে একমাত্র মরণশীল হচ্ছে মেডুসা। এদের মাথায় চুলের বদলে আছে সাপ। সরাসরি এদের চোখের দিকে তাকালে পাথর হয়ে যাবে যে কেউ। দেবী এথেনার শাপে এদের এই অবস্থা। এদেরকে নিয়ে আর একদিন বিস্তারিত বলব, আজ ফিরে যাই যেখানে ছিলাম। দেবী এথেনার কাছ থেকে পারসিয়াস জানতে পারলেন যে, একমাত্র তিন ডাইনী যারা একটা মাত্র চোখ দিয়ে তিনজনই দেখে তাদের কাছেই একমাত্র হেস্পেরিডেস (হেরার বাগান, যেখান অপ্সরীরা থাকে, যাদের কাছে থেকে পারসিয়াসের সাহায্য পাবার সম্ভবনা আছে) এর ঠিকানা আছে। পারসিয়াস তাদের কাছে গেলেন এবং অপেক্ষায় রইলেন, যখন তারা সেই একটিমাত্র চোখ নিজেদের মধ্যে বদল করছিল তখন পারসিয়াস সেটি নিয়ে নেন এবং এটার ফিরিয়ে দেবার শর্তে তাদের কাছ থেকে হেস্পেরিডাস এর ঠিকানা জেনে নেন।
![মেডুসা](https://itibritto.com/wp-content/uploads/2017/11/medusa12.jpg)
হেস্পেরিডাস থেকে পারসিয়াস পেলেন একটি থলে যেখানে সে মেডুসার মাথা নিরাপদে রাখতে পারেন, জিউস তাঁকে দিলেন একটি একটি অক্ষয় এডমেন্টাইন সোর্ড ( মার্ভেল কমিক্স সম্ভবত এখান থেকেই এডমেন্টিয়াম ধাতুর ধারনা নিয়েছিল), হেডিস তাঁকে দিলেন একমুঠো অন্ধকার, আর হার্মিস তাঁকে দিলেন উড়ন্ত একপাটি জুতা, দেবী এথেনা তাঁকে দিলেন একটি চকচকে ঢাল।
গর্গনদের আবাসে গিয়ে সেই চকচকে ঢালে মেডুসার প্রতিবিম্ব দেখে নিমিষেই কেটে ফেললেন মেডুসার মাথা, সেই কাটা জায়গা থেকেই উৎপন্ন হল পেগাসাস, সেই উড়ন্ত ঘোড়া, যার নাম শুনেছেন অনেকবার। কিন্তু শুধু মেডুসাকে মারলেই তো হবে না, তার আরো দুই বোন আছে, এবং তারা অমর। তখন পারসিয়াস সেই হেডিসের কাছ থেকে পাওয়া এক মুঠো অন্ধকার চারদিকে ছড়িয়ে দিলেন। গর্গনদের আর দুই বোন দিশেহারা হয়ে গেল, সেই অবসরে সেখান থেকে পালিয়ে এলেন পারসিয়াস।
সেখান থেকে ফেরার পথে পারসিয়াস ইথিওপিয়া রাজ্যে কয়েকদিন বিশ্রাম নেয়ার জন্য অবস্থান করেন। সেখানকার রাজার নাম ছিল সেফিয়াস এবং রানির নাম ছিল ক্যাসিওপিয়া। তাদের এক অনিন্দ্য সুন্দরী কন্যা ছিল নাম এন্ড্রোমিডা। একদিন রানি ক্যাসিওপিয়া তার কন্যার রূপবর্ণনা করতে গিয়ে এন্ড্রোমিডাকে সমুদ্রের অপ্সরী নেরিডস এর সঙ্গে তুলনা করে ফেলেন। এতে সমুদ্রের দেবতা পোসাইডন ক্ষেপে যান, এবং সিটাস নামক এক দানবকে ছেড়ে দেন সমগ্র সৃষ্টি ধ্বংস করে ফেলার জন্য। শর্ত ছিল যে যদি এন্ড্রোমিডা কে সিটাসের সামনে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলেই একমাত্র সিটাস থামবে। পারসিয়াস মেডুসার কাটামাথা সিটাসের সামনে ধরে তাকে পাথর বানিয়ে ফেলে।
এই ঘটনার পর রাজা সেফিয়াস তার মেয়ে এন্ড্রোমিডার বিয়ে পারসিয়াসের সাথে দেয়ার মনস্থির করলেন। কিন্তু তাতে বাঁধ সাধলেন ফিনিয়াস নামে এক লোক, যার সাথে আগেই এন্ড্রোমিডার বিয়ের কথা ছিল। কিন্তু পারসিয়াস ফিনিয়াসকে খুব বেশি সময় ঝগড়া করার সময় দেন নি। মেডুসার মাথা দিয়ে খুব সহজেই তাকেও পাথর বানিয়ে দিলেন। তারপর বেশ নির্বিঘ্নের বিয়ে হয়ে গেল পারসিয়াস আর এন্ড্রোমিডার। এই এন্ড্রোমিডাকে নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে, সময় করে আর একদিন হবে সেই কথা গুলো।
তো পারসিয়াস ফিরে গিয়ে দেখেন যে তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর মা উদ্বাস্তুর মত দিন কাটাচ্ছেন। দেখে তো রাগে প্রায় ফেটে পড়েন পারসিয়াস। হাতে তো অস্ত্র ছিলই মেডুসার কাটামাথা। সেটা দিয়ে খুব সহজই পলিডিক্টাসকে পাথর করে ফেললেন তিনি। ভাই ডিক্টাসকে ঐ এলাকার প্রধান বানিয়ে দিলেন তিনি।
কিন্তু গল্পের প্রথমেই ছিল এক ভবিষ্যৎবাণী, যেখানে বলা ছিল যে পারসিয়াসের হাতেই মৃত্যু হবে এক্রিসিয়াসের। খুবই অদ্ভুত ভাবে এই ভবিষ্যৎবাণীটি ফলে গিয়েছিল। আর্গোস নগরে এক খেলাধুলোর উৎসব ঘোষনা করা হয়েছিল এক সময়। সেই উৎসবে বর্শা নিক্ষেপ খেলায় নাম লেখান পারসিয়াস। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, খেলাচ্ছলে নিক্ষিপ্ত পারসিয়াসের এই বর্শাতে বিদ্ধ হয়েই প্রাণ হারাতে হয়েছিল এক্রিসিয়াসকে।
কোন রোমাঞ্চকর উপন্যাস থেকে কম জমজমাট নয় এই আদ্যিকালের মিথলজিক্যাল উপাখ্যানগুলো। আর বিশেষ করে এই ডেমিগডদের কাহিনী বেশ চমকপ্রদ। সুপারহিরোদের মুভি দেখতে যেমন ভাললাগে, তেমনি এই মিথলজিক্যাল হিরো ডেমিগডদের উপাখ্যান কম আনন্দদায়ক নয়। পরের পর্বে আমি আবার নিয়ে আসার চেষ্টা করব আরও কিছু ডেমিগডদের উপাখ্যান। ততদিন ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরের পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন – হারকিউলিস
glucophage order online – buy precose pills buy precose 25mg online cheap