মিথলজিতে খুব একটা গুরুত্ববহন না করলেও কেন জানি এই দ্বিতীয় অভিযানটি বেশ জনপ্রিয় কাহিনীপ্রিয় মানুষদের কাছে। এই কাহিনী শুনে নি এমন বাচ্চাও খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। তারপরও আমি বলব, কেননা গল্প সবসময়ই মজার হয়, তা সেটা জানাই হোক, আর অজানাই হোক। গল্প শুনতে কার না ভাল লাগে। আর একটা কথা, এই মিথলজির গল্প গুলোর অনেক ভার্সন থাকে, আমি এর মাঝে অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় ভার্সনগুলোই বলার চেষ্টা করে থাকি।
নেমিয়ান সিংহকে মেরে দু’দন্ড বসার আগেই রাজা ইউরেন্থিয়াস হারকিউলিসকে নতুন ফরমাস দিয়ে বসলেন। তাও আবার যে সে ফরমাস না। লার্না অঞ্চলের জলাভূমিতে এক ন’মুখো দানবীয় সাপকে যার আবার নাম হল হাইড্রা, সেই ভয়ঙ্কর সাপকে মারার কাজ ধরিয়ে দিল ( এই খানে হাইড্রার মাথা নিয়ে অনেক কথা আছে, বিভিন্ন জায়গায় মাথার সংখ্যাটি বিভিন্ন, পাঁচ থেকে শুরু করে একশ পর্যন্ত বলা আছে বিভিন্ন জায়গায়। তবে নয় সংখ্যাটিই বেশি জনপ্রিয়)। এই নয়টি মাথার মাঝে আবার আটটি মারা যায়, কিন্তু মাঝখানের মাথাখানি অমর। এই খানেই সমস্যার শেষ না, যে কোন মাথা কাটলেই সেই জায়গায় দুইখানা করে মাথা বের হয়। তার উপর হাইড্রার রক্ত, নিঃশ্বাস দুটোই বিষাক্ত। অর্থাৎ মোটের উপর বলা যায়, কাজটা মোটামুটি ভাবে অসম্ভব, প্রাণ বাঁচিয়ে ফেরাটাই অনেক কিছু।

কিন্তু ঐ বেটা হারকিউলিস লোকটাও খুব একটা সুবিধার ছিল না। বেটা ছিল যেমন গোঁয়ার, তেমন সাহসী। সে তার ভাতিজা লোলাউসকে সঙ্গে নিয়ে গদা আর তরোয়াল ঘুরাতে ঘুরাতে ঘোড়ার গাড়ি হাঁকিয়ে দিল। লার্না অঞ্চলে হাইড্রা বেশ কুখ্যাত দানব ছিল, প্রায়ই সমতলে এসে আজ গরুটা, কাল ছাগলটা খেয়ে যেত। আঁটকানোর সামর্থ ছিল না কারোরই, তার উপর হাইড্রা ছিল দেবী হেরার বেশ পছন্দের প্রাণী।
যাই হোক হারকিউলিস আর লোলাউস পৌঁছল লার্নাতে। লোলাউসকে গাড়িতেই বসিয়ে রেখে তীর ধনুক, তরোয়াল আর গদা নিয়ে বেশ উৎসাহের সাথেই গেল সেই জলাভূমিতে, কদিন আগেই নেমিয়ার সিংহকে মেরে আত্মবিশ্বাস তখন তুঙ্গে। বিষাক্ত বাতাস থেকে বাঁচার জন্য নাকে মুখে কাপড় পেঁচিয়ে যে গর্তের ভেতরে হাইড্রা মহাশয় লুকিয়ে আছে সেদিক পানে তীর ছুঁড়তে লাগলেন। বেশ বিরক্ত হয়েই হাইড্রা বের হয়ে এল গর্ত থেকে। তর্কে তর্কেতর্কে ছিলেন হারকিউলিস। লাফ দিয়ে পেছন থেকে হাইড্রার গলা জাপটে ধরলেন তিনি, ভাবখানা এমন যে এক চাপে সিংহ মেরে ফেলেছেন এ সাপ তো নস্যি। কিন্তু পড়লেন এক বিশাল ফাঁপড়ে, হাইড্রা তার লেজ দিয়ে পেঁচিয়ে ধরল হারকিউলিসকে। হারকিউলিসের প্রাণ তো প্রায় যায় যায় অবস্থা। কোন মতে গদাপেটা করে সেই লেজের বাঁধন থেকে নিস্তার পেলেন হারকিউলিস। তখন আর অতিবাহাদূরীতে না গিয়ে তলোয়ার দিয়ে হাইড্রার গলা কাটার চেষ্টা করলেন। কিন্তু ঝামেলা তখন বাড়ল বৈ কমল না। একটা গলা কাটলেই আরো দুইটা মাথা বের হয় সেদিক দিয়ে। এইবার হারকিউলিস বুঝলেন যে, ঘটনা বেশ গোলমেলে। একা এই হাইড্রাকে তিনি কব্জা করতে পারবেন না। তিনি তখন লোলাউসকে সাহায্যের জন্য ডাকলেন। লোলাউস ডাকাবুকো বীর ছিলেন না, কিন্তু বেশ বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি হারকিউলিসকে বুদ্ধি দিলেন যে মাথা কাটার সাথে সাথেই আগুনদিয়ে কাটা জায়গাটা ভাল মতন পুড়িয়ে দিতে, যাতে করে আর মাথা গজাতে না পারে। ব্যাপারটা পছন্দ হল হারকিউলিসের। হারকিউলিস তখন মাথাগুলো কাটতে লাগলেন আর লোলাউস সেই জায়গা গুলো পুড়িয়ে দিতে লাগলেন। এইদিকে দেবী হেরা বুঝতে পারলেন যে, তাঁর প্রিয় প্রাণী হাইড্রার মৃত্যু আসন্ন, তখন তিনি হাইড্রাকে সাহায্য করার জন্য এক বিষাক্ত কাঁকড়া কে পাঠালেন। কাঁকড়া এসেই হুল ফুঁটিয়ে দিল হারকিউলিসের পায়ে। এর মাঝেই ত্যাক্ত বিরক্ত হারকিউলিস গদার বাড়িতে বেচারা কাঁকড়াকে একদম থেঁতলে দিলেন ( আর এক ভার্সনে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলার কথা বলা আছে)। তো যাই হোক লোলাউসের পদ্ধতি ব্যবহার করে আটটা মাথাকে বেশ সহজেই মেরে ফেললেন, যত গোল বাঁধল ঐ অমর মাথাটিকে নিয়ে। কেটে তো ঠিকই ফেলেছেন কিন্তু মরার কোন লক্ষণই নেই সে মাথার। দেহ মরে গেছে কিন্তু মাথাটি তো মরে না। হারকিউলিস তখন করলেন কি, বিশাল এক গর্ত করলেন। তারপর সেই গর্তের ভেতর মাথাটিকে ফেলে মাটিচাপা দিলেন, তাতেও ক্ষান্ত হলেন না। বিশাল এক পাথর এনে চাপা দিলেন এই মাটিকে। ফিরে আশার আগে একগুচ্ছ তীরের ফলা চুবিয়ে নিলেন হাইড্রার রক্তে, কেননা হাইড্রার রক্তে ডুবানো তীর হচ্ছে অমোঘ মৃত্যু বাণ। এই তীরগুলো পরবর্তী তে হারকিউলিসের বেশ কাজে লেগেছে, আবার এই তীরের জন্য তিনি তাঁর গুরু চীরনকেও হারিয়েছেন। যাই সে গল্প আর একদিন হবে।
তো হাইড্রা মারার প্রমাণ স্বরূপ কাটা মাথাগুলো নিয়ে রাজ দরবারে উপস্থিত হলেন। রাজা ছিল ভিতু, কিন্তু দুষ্ট বুদ্ধি কম ছিল না। বেশ রাগ করে তিনি একটা নতুন কাজ ধরিয়ে দিলেন। বেচারা হারকিউলেস, একদণ্ড যে বিশ্রাম নিবে সে সুযোগটাও পেল না।
বেশ মজাদার গল্পের এক বিশাল ভাণ্ডার গ্রীক মিথলজি। কত যে গল্প, কত যে ঘটনা তা বলে শেষ করা যাবে না। আজ সময়ের অভাবে একটা অভিযানই মাত্র দিলাম। সামনের পর্বে ন্যুনতম দুইটা করে অভিযান একসাথে করে লিখব।
প্রথম পর্বে পারসিয়াস এর কাহিনী পড়তে এখানে ক্লিক করুন – গ্রীক মিথলজি – দেবতাদের মানব সন্তানঃ প্রথম পর্ব (পারসিয়াস)
দ্বিতীয় পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন – গ্রীক মিথলজি – দেবতাদের মানব সন্তানঃ দ্বিতীয় পর্ব (হারকিউলিস)
buy levaquin generic buy generic levofloxacin 500mg