বিশ্বকাপ ফুটবল- ১৯৮৬: ম্যারাডোনায় ভর করে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়

6

আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা গোল কোন খেলোয়াড়ের? যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে সবচেয়ে বিতর্কিত গোল কোন খেলোয়াড়ের? প্রশ্নটা দুটি একটু সহজ করে জিজ্ঞেস করা যাক। কোন একজন খেলোয়াড়কে কি একই সাথে সবচেয়ে সেরা এবং সবচেয়ে বিতর্কিত গোলের মালিক বলা যায়? দুটির মালিক হিসেবে একজনারই নাম ভেসে ওঠার কথা!!! ’৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপ এক নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ঘিরেই আবর্তিত হবে সবসময়। মেক্সিকো বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ এলেই প্রতিটি মানুষের মনেই ভেসে ওঠে উঠবে সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির ছবি। ’৮৬-তে প্রায় এককভাবে সাধারণ মানের আর্জেন্টাইন দলকে তিনি এনে দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব। মানুষটির নাম ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। প্রতিটি ম্যাচেই তিনি প্রমাণ রাখেন নিজের অনন্য প্রতিভার। একক নৈপুণ্যের সংজ্ঞাই তিনি নতুন করে লিখেছিলেন সেবার।

মেক্সিকো বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, ১৯৮৬
মেক্সিকো বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, ১৯৮৬

স্বাগতিকঃ

৮৬ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার কথা ছিল কলম্বিয়ার। যদিও বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের জন্য যে পরিমাণ অর্থনৈতিক অবস্থা থাকা দরকার তার স্পষ্টতই অভাব ছিল কলম্বিয়ার। কলম্বিয়ান কর্তৃপক্ষ ১৯৮২ সালে জানায় যে অর্থনৈতিক কারণে ফিফার শর্তাবলীর অধীনে তারা বিশ্বকাপ আয়োজনে অপারগ। তাই ১৯৮৩ সালের ২০ মে,  নতুন আয়োজক হিসেবে মেক্সিকোকে নির্বাচিত করে ফিফা। দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায় মেক্সিকো। বিশ্বের সাথে পরিচয় হয় “মেক্সিকান ওয়েভের”।

বিখ্যাত এই মেক্সিকান ওয়েভের জন্ম কিন্ত মেক্সিকো বিশ্বকাপেই
বিখ্যাত এই মেক্সিকান ওয়েভের জন্ম কিন্ত মেক্সিকো বিশ্বকাপেই

অনেক দেশ অবশ্য আশায় ছিল একটি উন্মুক্ত বিডিংয়ের মাধ্যমে ’৮৬-এর আয়োজক হওয়ার। তবে সবাইকে হতাশ করে, বেশ কিছুটা বিতর্ক ছড়িয়ে তৎকালীন ফিফা সভাপতি জোয়াও হ্যাভালাঞ্জ নিজের একক ক্ষমতায় কলম্বিয়ার বদলি হিসেবে মেক্সিকোকে বেছে নেন। ১৯৮৫ সালে বিশ্বকাপ শুরুর আট মাস আগে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটে যায় মেক্সিকোতে। যদিও স্টেডিয়ামগুলো কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন না হওয়ার বিশ্বকাপ সময়মত, সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়।

বিশ্বকাপ এর অফিশিয়াল মাসকট, লোগো
বিশ্বকাপ এর অফিশিয়াল মাসকট, লোগো

ভেন্যুঃ

১৯৮৫ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দেশের একটি অংশকে। স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও  পুনর্গঠনের প্রবল চাপ ছিলই। এর পরেও মেক্সিকো শেষ পর্যন্ত বেশ সফলভাবেই আয়োজন করে বিশ্বকাপ। ১১টি শহরের ১২টি স্টেডিয়ামে সবগুলো ম্যাচের জন্য নির্ধারণ করা হয়। তন্মধ্যে ইস্তাদিও অ্যাজটেকার ধারণক্ষমতা ছিল সর্বাধিক(১১৪,৬০০)।

অংশগ্রহণকারী দলঃ

তিনটি দেশ প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে: কানাডা, ডেনমার্ক এবং ইরাকইরান–ইরাক যুদ্ধের কারণে ইরাক তাদের প্রত্যেকটি হোম ম্যাচ নিরপেক্ষ মাঠে খেলে। ১৯৫৪ সালের পর প্রথমবারের মত এবার অংশগ্রহন করে দক্ষিণ কোরিয়া, প্যারাগুয়ে ১৯৫৮ সালের পর এবং পর্তুগাল ১৯৬৬ সালের পর প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করে। ওশেনিয়া থেকে সেবার কোন দেশ অংশগ্রহণ করেনি, আফ্রিকা, কনক্যাকাফ এবং এশিয়ার প্রত্যেকটি থেকে দুটি করে মোট ৬টি দেশ, কনমেবল অঞ্চল থেকে ৪টি এবং ইউরোপ থেকে ১৪টি করে মোট ২৪টি দেশ অংশগ্রহণ করে।

অঞ্চলভিত্তিক অংশগ্রহণকারী দল
অঞ্চলভিত্তিক অংশগ্রহণকারী দল

ফরম্যাটঃ 

আগের বিশ্বকাপ এর মত ২৪টি দলকে নিয়েই বিশ্বকাপের নকশা করা হয়েছিল। তবে ‘৮২ বিশ্বকাপের সাথে পার্থক্য ছিল যথেষ্ট। বিশ্বকাপের লড়াই আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, আকর্ষণীয়, রোমাঞ্চকর করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়। ২৪টি দলকে সেবারও ছয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল প্রথম পর্বে, তবে দ্বিতীয় পর্ব গ্রুপ লড়াইয়ের বদলে চালু করা হয় প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল যা একটি নক আউট রাউন্ড এর মতই। প্রথম পর্বের ছয় গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ ছাড়াও নক আউট পর্বে সেবার সুযোগ পায় আরও চারটি ‘সেরা তৃতীয়’ দল। মোট ১৬টি দলের দ্বিতীয় পর্ব থেকে আটটি বাদ পড়ার পর বাকি আটটিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় কোয়ার্টার ফাইনাল। কোয়ার্টার ফাইনালের চার বিজয়ী খেলে সেমিতে।

 গ্রুপ রাউন্ড বা গ্রুপ রাউন্ডঃ

গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন, রানার-আপ এবং শীর্ষ চার তৃতীয় স্থানের দল যারা রাউন্ড অফ ১৬-তে পৌঁছেছে।

‘৫৪সালের পর বিশ্বকাপ খেলতে এসেই ১ম ম্যাচেই গোল করে বসে দক্ষিণ কোরিয়া তাও সেটি ছিল সেবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। ড্র থেকে ঐ এক পয়েন্টই ছিল কোরিয়ানদের সাকুল্যে পাওয়া একমাত্র পয়েন্ট। উরুগুয়ে আর বুলগেরিয়া গ্রুপ পর্বের কোন ম্যাচ না জিতেই জায়গা করে নেয় পরের রাউন্ড এ। ব্রাজিল এবং ডেনমার্ক ছাড়া আর কেউই ৩ ম্যাচের তিনটিতেই জয় পায়নি।

তৃতীয় স্থানে থাকা দলগুলোকেও আলাদা করা হয় গ্রুপ পয়েন্টের ভিত্তিতেই। সমান পয়েন্ট হলে গোল ব্যবধান পর্যন্ত দেখেই সমাধান হয়ে যায় সেবার।

৩য় স্থান অর্জনকারী ৬টি দল। ১২টি দলের পর এখান থেকেই বেছে নেয়া হয় সেরা ৪টি দলকে
৩য় স্থান অর্জনকারী ৬টি দল। ১২টি দলের পর এখান থেকেই বেছে নেয়া হয় সেরা ৪টি দলকে

১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকে, বিজয়ী দলগুলোকে দুই পয়েন্টের পরিবর্তে তিন পয়েন্ট করে দেওয়া শুরু হয়। ‘৮৬-তেই এই নিয়ম হলে হাঙ্গেরি বুলগেরিয়ার উপরে অবস্থান করত এবং উরুগুয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে যেত। 

 নকআউট রাউন্ডঃ

কোয়ার্টার ফাইনাল এর আগেই চালু করা হয় আরেকটি নক আউট রাউন্ড যা বর্তমানে দ্বিতীয় রাউন্ড নামে পরিচিত। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে ফেভারিটদের তালিকায় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সবাইকে এক প্রকার অবাক করে দিয়েই তারা অতিরিক্ত সময়ের খেলায় ৪-৩ গোলে হেরে যায় তারা। বিফলে যায় বেলানভের হ্যাট্রিক।

আর্জেন্টিনা, স্পেন, বেলজিয়াম ছাড়াও দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মেক্সিকো ও পশ্চিম জার্মানি। ব্রাজিল ৪গোলে পোল্যান্ডকে, ইংল্যান্ড ৩-২গোলে প্যারাগুয়েকে, এবং ফ্রান্স ইতালিকে হারিয়ে উৎরে যায়। লোসার ম্যাথিউসের শেষ মুহূর্তের গোলে একমাত্র গোলে মরক্কোকে হারিয়ে কোনমতে পার পায় পশ্চিম জার্মানি। স্পেনের বুত্রেগুয়েনো চার গোল করেন ডেনমার্ক এর বিপক্ষে।

কোয়ার্টার ফাইনালঃ

ফিফার ইতিহাসের সবচেয়ে জমজমাট কোয়ার্টার ফাইনাল রাউন্ড এর একটি হয়ে থাকবে এই বিশ্বকাপেরগুলো। চারটি ম্যাচের মাঝে তিনটিরই নিষ্পত্তি হয় টাইব্রেকারে। যার মাঝে ব্রাজিল-ফ্রান্সের সর্বকালের অন্যতম সেরা সেই ম্যাচটি। আছে ম্যারাডোনা বনাম ইংল্যান্ড!!! এর ম্যাচটিও।

ব্রাজিল বনাম ফ্রান্সের খেলায় নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়েও ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকে সেই ম্যাচ। টাইব্রেকারে গড়ায় খেলা। জিকো-সক্রেটিসের  ব্রাজিলকে ধরা হচ্ছিল সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন। ৮২এর আক্ষেপ হয়ত সেবার ঘুচিয়ে ফেলতেও চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু  টাইব্রেকার-মিসের বলি হয় ব্রাজিল। ম্যাচের ১৭ মিনিটেই ফ্রান্সের গোলকিপার জোয়েল বাটের করা ফাউলে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল, পরে প্রায়শ্চিত্ত করেন পেনাল্টি ঠেকিয়ে।

টাই ব্রেকারে শুট নেয়ার আগে বলে চুমু খাচ্ছেন ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি, যদিও মিস করেন তিনি কিন্ত ফ্রান্সের জয় মিস হয়নি সেদিন।
টাই ব্রেকারে শুট নেয়ার আগে বলে চুমু খাচ্ছেন ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি, যদিও মিস করেন তিনি কিন্ত ফ্রান্সের জয় মিস হয়নি সেদিন।

সক্রেটিস, সিজার দুইজন মিস করেন ব্রাজিলের পক্ষে, বিপরীতে প্লাতিনি ম্যাচে গোল করলেও টাই ব্রেকারে মিস করেন।

টাই-ব্রেকার জয়ের উল্লাস ফ্রান্সের
টাই-ব্রেকার জয়ের উল্লাস ফ্রান্সের

‘৮২বিশ্বকাপের ব্রাজিল, ‘৭৪ এর ডাচ, ‘৫৪এর হাঙ্গেরির মতই শক্তিশালী দল ছিল ব্রাজিল ফ্রান্স দুটোই। নিজেদের সোনালি প্রজন্মের প্রতি বিচার করতে পারেনি তারা। বিশ্বকাপ অধরাই থেকে গেছে দল দুটির। অথচ সেবার এই দুটি দলকেই বলা হচ্ছিল সম্ভাব্য বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন।

স্বাগতিক মেক্সিকোও কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকার দুর্ভাগ্যের শিকার হয়। পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে সেই ম্যাচটি নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ছিল গোলশূন্য। টাইব্রেকারে স্বাগতিকেরা হেরে যায় ৪-১ গোলে। অপর কোয়ার্টারে বেলজিয়ামের কাছে হেরে যায় স্পেন। সেই ম্যাচটির ফলও নির্ধারিত হয় টাইব্রেকারে।

১৯৭৮ বিশ্বকাপের সময় ম্যারাডোনার বয়স ছিল ১৭। মেনোত্তির দলে সেবার জায়গা হয়নি ম্যারাডোনার। ‘৮২ বিশ্বকাপ খেললেও মোটেই সুখের অভিজ্ঞতা হয়নি তার। ‘৮৬ এর বিশ্বকাপকেই হয়ত নিজের জাত চেনানোর জন্য শেষ চেষ্টা হিসেবে বেছে নেন তিনি। ৫গোল ৫অ্যাসিস্ট হয়ত তার পক্ষেই রায় দেবে। ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে তার করা দুটি গোলই বিখ্যাত-কুখ্যাত। ৫১ মিনিটে ইংল্যান্ডের জালে হেড করে জালে বল জড়ান ম্যারাডোনা। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে ফাঁকি দিয়ে তার মাথার ওপর দিয়েই হেড করে বলটা জালে ফেলেন এই আর্জেন্টাইন। হ্যান্ডবলের দাবি তৎক্ষণাৎ ইংল্যান্ড এর খেলোয়াড়েরা করলেও রেফারি নাকচ করে দেন। প্রযুক্তির এতো ভালো ব্যাবহার না থাকায় ম্যাচ চলাকালীন সময়ে বোঝাও যায়নি আদতে তার হাতে লেগেছিল কিনা।

হ্যান্ড অফ গড মুহূর্ত, স্পষ্টতই হাত দিয়ে হেড করেন ম্যারাডোনা
হ্যান্ড অফ গড মুহূর্ত, স্পষ্টতই হাত দিয়ে হেড করেন ম্যারাডোনা

ম্যাচ শেষে ম্যারাডোনা স্বীকার করেন এবং তিনি নিজেই এটিকে “হ্যান্ড অফ গড” বলে আখ্যায়িত করেন। এই বিতর্কিত গোলের ঠিক ৪মিনিট করেই আবার অবিসংবাদিতভাবে বিশ্বকাপের সেরা একটি গোল করে বসেন।

গোল অফ দ্যা সেঞ্চুরি খ্যাতি পাওয়া গোলের আগ মুহূর্তের স্থিরছবি
গোল অফ দ্যা সেঞ্চুরি খ্যাতি পাওয়া গোলের আগ মুহূর্তের স্থিরছবি

একাই নাচিয়ে ছাড়েন পুরো ইংলিশ ডিফেন্ডারদের গোল থেকে প্রায় ৬২মিটার দূরে মাঝমাঠে বল পেয়ে পাঁচজন ইংলিশ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলটি করেন ম্যারাডোনা। মাঝমাঠের ডান প্রান্তে বল নিয়ে গোল মুখ বরাবর যেতে যেতে পরাস্ত করেন এক এক করে পাঁচজন ইংলিশ ডিফেন্ডারকে। পরবর্তীতে ২০০২ সালে সেটিকে ফিফা থেকে ‘দ্য গোল অব সেঞ্চুরি’ নামে রায় দেয়া হয়েছে।

অমরত্ব পাওয়া সেই গোল। ছয়জনকে কাটানো শেষ, ম্যারাডোনা জালে বল ঠেলে দিলেন।
অমরত্ব পাওয়া সেই গোল। ছয়জনকে কাটানো শেষ, ম্যারাডোনা জালে বল ঠেলে দিলেন।

সেমি-ফাইনালঃ

ম্যারাডোনা ম্যাজিক চলে সেমি-ফাইনালেও। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা র কাছে ২-০ গোলে হারে বেলজিয়াম। ম্যারাডোনার পা থেকেই আসে আর্জেন্টিনা র সেই দুই গোল। মিশেল প্লাতিনির ফ্রান্সও ২-০ গোলে হেরে যায় পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে। জার্মানির পক্ষে গোল করেন আন্দ্রেস ব্রেইমে ও রুডি ফোলার।

ম্যারাডোনার জাদুতে ভুপাতিত বেলজিয়ামও
ম্যারাডোনার জাদুতে ভুপাতিত বেলজিয়ামও

ফ্রান্স-বেলজিয়াম ৩য় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২গোলে থাকলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। গেনগিনি এবং আমোরস এর গোলে ৪-২ গোলে জিতে ৩য় হয় ফ্রান্স।

ফাইনালঃ

আর্জেন্টিনা বনাম পশ্চিম জার্মানির ফাইনাল ছিল দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ। ফাইনাল এর মত ফাইনাল হয়েছিল সেবার। মেক্সিকো সিটির অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে ২৩ মিনিটেই ব্রাউনের গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

লুইস ব্রাউনের হেডে করা গোলে ১-০ এর লিড আর্জেন্টিনার
লুইস ব্রাউনের হেডে করা গোলে ১-০ এর লিড আর্জেন্টিনার

৫৫ মিনিটে ভালদানোর গোলে যখন মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনা র শিরোপা প্রায় নিশ্চিত ঠিক তখনই মাত্র ছয় মিনিটের ব্যবধানে (৭৪ ও ৮০ মিনিটে) কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে ও রুডি ফোলারের দুই গোলে দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে পশ্চিম জার্মানি।

আর্জেন্টিনার বুরুচাগার বিশ্বকাপজয়ী গোল
আর্জেন্টিনার বুরুচাগার বিশ্বকাপজয়ী গোল

তবে তা স্থায়ী হয় মোটে তিন মিনিট। ম্যাচের ৮৩ মিনিট এ বুরুচাগার গোলে বিশ্বকাপ জয় নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনা র।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ, কেন্দ্রে তো ম্যারাডোনারই থাকার কথা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ, কেন্দ্রে তো ম্যারাডোনারই থাকার কথা

সর্বোচ্চ গোলদাতাঃ

পুরো টুর্নামেন্ট এ ৮২ জন প্লেয়ার গোল করেন (মোট ১৩২টি গোল)। ৬টি গোল দিয়ে ইংল্যান্ড এর গ্যারি লিনেকার সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।

গোল্ডেন বুটজয়ী ইংল্যান্ড এর গ্যারি লিনেকার;
গোল্ডেন বুটজয়ী ইংল্যান্ড এর গ্যারি লিনেকার; Source: Four Four Two

সেরা খেলোয়াড়ঃ

কে হতে পারেন সেরা খেলোয়াড় সেটি নিয়ে কোন সন্দেহই ছিল না। ডিয়েগো ম্যারাডোনা ৫গোল নিজে করেন এবং সতীর্থদের দিয়ে আরও ৫টি গোল করান। সাদামাটা একটি দলকে একাই টেনে নিয়ে গিয়েছেন বলতে গেলে।

টুর্নামেন্ট এর সেরা খেলোয়াড় ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা, তার পেছনে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন বাংলাদেশ এর পতাকা
টুর্নামেন্ট এর সেরা খেলোয়াড় ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা, তার পেছনে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন বাংলাদেশ এর পতাকা

হ্যান্ড অফ গড বিতর্কঃ

আজও ইংল্যান্ড এর মানুষ ম্যারাডোনাকে ক্ষমা করেনি সেই বিতর্কিত গোলটির জন্য। এখনও সেই গোলটি নিয়ে লেখালেখি হয়। প্রযুক্তির ব্যবহার থাকলে সেবার কি হত সপ্রতি এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন “আমি হয়ত জেলে থাকতাম”!!! তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ইংলিশ মিডিয়াও।

ডেইলি মেইল এর খেলার পাতার রিপোর্ট
ডেইলি মেইল এর খেলার পাতার রিপোর্ট

এক নজরে ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৮৬

স্বাগতিকঃ মেক্সিকো

সময়কালঃ ৩১মে থেকে ২৯শে জুন

অংশগ্রহণকারী দলঃ ২৪টি

চ্যাম্পিয়নঃ আর্জেন্টিনা(২য় শিরোপা)

রানার্সআপঃ জার্মানি

তৃতীয়স্থানঃ ফ্রান্স

চতুর্থঃ বেলজিয়াম

ব্যবহৃত বল অ্যাজটেক
ব্যবহৃত বল অ্যাজটেক

গোল্ডেন বল/সেরা খেলোয়াড়ঃ ম্যারাডোনা(আর্জেন্টিনা)

গোল্ডেন বুটঃ গ্যারি লিনেকার(ইংল্যান্ড)

উদীয়মান তরুন খেলোয়াড়ঃ এঞ্জো সিফো(বেলজিয়াম)

ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ডঃ বেলজিয়াম

মোট ভেন্যুঃ ১২টি

মোট ম্যাচঃ ৫২টি

মোট গোল সংখ্যাঃ ১৩২

উপস্থিতিঃ ২৩,৯৪,০৩১

ফেয়ার প্লেঃ ব্রাজিল

ব্যবহৃত বলঃ Azteca, নির্মাণ করে অ্যাডিডাস। এটি সর্বপ্রথম সিনথেটিক বল ছিল

Source Featured Image
Leave A Reply
6 Comments
  1. Kvjcvp says

    buy generic terbinafine – fluconazole over the counter griseofulvin

  2. Klovcb says

    semaglutide 14mg ca – cheap desmopressin DDAVP cost

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More