বিয়ার গ্রিলস: একজন দুঃসাহসিক অভিযাত্রী

এডওয়ার্ড মাইকেল বিয়ার গ্রিলস। চিনেনা বা নাম শোনেনি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। দুঃসাহসী ও দুর্ধর্ষ অভিযাত্রী বলতে যার নাম সবার প্রথমে আসে তিনি ডিসকভারি চ্যানেলের ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ অনুষ্ঠানের বিয়ার গ্রিলস।

পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক, দুর্গম জায়গায় কিভাবে টিকে থাকতে হয় বিয়ার গ্রিলস তা দেখিয়ে আসছেন নিজের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে। কখনো পাহাড়, কখনো সমুদ্র, কখনো মহাসাগরের কোন এক অচেনা দ্বীপে, অথবা কখনো কোন বরফাচ্ছন্ন এলাকায় ভয়ংকর পশু থেকে, অথবা বিপদ সংকুল আমাজনের মত জঙ্গল থেকে, খাদ্যাভাবে পড়ে থাকা কোন নির্জন যায়গা থেকে লড়াই করে কি করে লোকালয়ে ফিরে আসতে হয় এসব দুঃসাহসিক অভিযান গুলো দেখান নিজের জীবন বিপন্ন করে। তার এ দুঃসাহসিক অভিযানগুলো তাকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার এক অন্য মাত্রায়।

বিয়ার গ্রিলস
Source: www.beargrylls.com

জন্ম ও পরিচয়:

ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির রাজনীতিবিদ স্যার মাইকেল গ্রিলস ও লেডি গ্রিলস এর ঘরে ১৯৭৪ সালের ৭ জুন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে জন্ম গ্রহণ করেন বিয়ার গ্রিলস। তার পূর্ণ নাম এডওয়ার্ড মাইকেল বিয়ার গ্রিলস। বিয়ার নামটি রাখেন তার বড় বোন লারা ফাউসেট। লারা ফাউসেট পেশায় একজন টেনিস কর্মকর্তা। চার বছর বয়স পর্যন্ত বিয়ার উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডোনাঘাডি অঞ্চলে অবস্থান করেন। এরপর পরিবারের সাথে কেমব্রিজ অঞ্চলে পাড়ি জমান।

কিশোর বিয়ার গ্রিলসঃ

খুব অল্প বয়সেই বিয়ার তার বাবার কাছ থেকে নৌকা চালানো ও পর্বত আরোহণ শিখেন। বিয়ার গ্রিলসের বাবা মাইকেল গ্রিলস ছিলেন একজন দক্ষ নৌচালক। বিয়ার লুডগ্রুভ স্কুল, ইটন কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে শিক্ষা লাভ করেন। ইটন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজে প্রথম পর্বতারোহণ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন বিয়ার। মাত্র ৮ বছর বয়সে বিয়ার স্কাউটে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি স্কাউটের বিশাল এক বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। ইংরেজি, স্প্যানিশ ও ফারসি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। ধর্মের প্রতি বিয়ার অসীম অনুরাগী ছিলেন। ধর্ম বিশ্বাস জীবনের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করেন। বিয়ার গ্রিলস খৃষ্ট ধর্ম বিশ্বাসী।

সামরিক বাহিনীতে বিয়ার
সামরিক বাহিনীতে বিয়ার
Source: Insurance for Car

সামরিক বাহিনীতে বিয়ার:

সিকিম অঞ্চলে হিমালয়ে হাইকিং করার সময় বিয়ার ভারতীয় সেনাবাহিনী তে যোগদান করার উৎসাহ প্রকাশ করেন। তখন তিনি মাত্র স্কুল জীবন শেষ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তে যোগদান করেন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে সফলতার সাথে কাজ করার পর তিনি সেনাবাহিনী থেকে ইউনাইটেড কিংডম স্পেশাল ফোর্স রিজার্ভে কাজ করেন।

প্যারাসুট দুর্ঘটনায় বিয়ার গ্রিলসঃ

স্পেশাল ফোর্সে থাকাকালীন ১৯৯৬ সালে বিয়ার জাম্বিয়ায় প্যারাসুট ট্রেনিং করাচ্ছিলেন। হঠাৎ বিয়ার নিজেই ভয়াবহ প্যারাসুট দুর্ঘটনায় পতিত হন। দুর্ঘটনা এতই ভয়াবহ ছিল যে, ডাক্তার বলেছে, মেরুদণ্ডের তিনটি হাড় পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে এবং তার পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ফলে বিয়ার কে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনী ফোর্স থেকে অবসর নিতে হয়। বারো মাস বিয়ার সব কিছু থেকে দূরে থাকলেও হাল ছেড়ে দেন নি। পরিশ্রম করে গেছেন। লড়াই করে গেছেন তার ভাঙ্গা মেরুদণ্ডের বিরুদ্ধে। অবশেষে সবাইকে অবাক করে দিয়ে দেড় বছর পর সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন বিয়ার গ্রিলস। মানব সেবায় অবদান রাখার জন্যে ২০০৪ সালে বিয়ার গ্রিলসকে সম্মানসূচক ল্যাফটেনেন্ট কমান্ডারের পদবী দেয়া হয়।

সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে বিয়ার গ্রিলস এর মাউন্ট এভারেস্ট জয়
সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে বিয়ার গ্রিলস এর মাউন্ট এভারেস্ট জয়
Source: Daily Mail

সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে বিয়ার গ্রিলস এর মাউন্ট এভারেস্ট জয়:

খুব ছোট বেলায় বাবার কাছে পর্বতারোহণ শিখেন বিয়ার গ্রিলস। আট বছর বয়সে সিকিমে থাকাকালীন একবার তার বাবা তাকে মাউন্ট এভারেস্টের একটা ছবি উপহার দেন। তখন থেকে বিয়ার বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখেন। প্যারাসুট দুর্ঘটনায় আহত থাকা অবস্থায় বিয়ার মনস্থির করেন এভারেস্ট জয়ের। সুস্থ হয়েই ছুটে যান এভারেস্টের দিকে। ১৯৯৮ সালের ১৬ মে মাত্র ৩ মাস সময় নিয়ে বিয়ার মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন।

তৎকালীন ব্রিটিশ থেকে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়েন বিয়ার গ্রিলস। যদিও তার রেকর্ড পরবর্তীতে ভেঙ্গে যায়। বিয়ার গ্রিলসের অদম্য ইচ্ছাই তাকে প্যারাসুট দুর্ঘটনার ১৮ মাস পরেই এভারেস্টের উঁচুতে নিয়ে যায়।

ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড:

এভারেস্ট নিয়ে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ডিওডোরান্ট একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করেন। ওই বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের মাধ্যমে বিয়ার গ্রিলস টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করেন। এরপর আরও কিছু বিজ্ঞাপন ও ডকুমেন্টারিতে কাজ করেন বিয়ার গ্রিলস। একজন দক্ষ সামরিক অফিসার ও এভারেস্ট জয়ী হিসেবে বিয়ার গ্রিলস কে যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর অ্যাডভেঞ্চার শো তৈরির আহ্বান জানান। বর্তমান বিয়ার গ্রিলস এর উত্থান, পরিচয়, জনপ্রিয়তা সব কিছুই তার অ্যাডভেঞ্চার শো এর জন্যে।

বর্তমান বিশ্বে দুঃসাহসী অভিযাত্রীর কথা বলতে গেলে বিয়ার গ্রিলস এর নাম সবার প্রথমে আসে। কখনো সুউচ্চ পাহাড়ে অথবা গভীর অরণ্যে অথবা তুষারাবৃত কোন পাহাড়ে, আবার কখনো মহাসাগরের অচেনা কোন দ্বীপে কিভাবে টিকে থাকতে হয়, উদ্ধার পেতে হয় বিয়ার গ্রিলস দেখান ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডে।

বিয়ার গ্রিলস
বিয়ার গ্রিলস
Source: Google News

সার্ভাইব করার জন্য বিয়ার কখনো পোকা মাকড় খাচ্ছেন, আবার কখনো মরুভূমির কড়া রোদ থেকে পরিত্রাণের জন্য নিজের প্রস্রাব মাথায় দিচ্ছেন, আবার প্রয়োজনে নিজের প্রস্রাবও খেয়ে নিচ্ছেন। কখনো ভয়ংকর জীব জন্তুর সাথে লড়াই করছেন টিকে থাকার জন্য, আবার কখনো করছেন রেটল স্নেকের মত ভয়াবহ সাপের সাথে টিকে থাকার যুদ্ধ, কখনো ভেলা বানিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন কুমীরে ভরপুর জলাশয় কিংবা নদী, কখনো সেই কুমীরের সাথেও লড়াই করতে হয়েছে তাকে, আবার কখনো নিঃস্ব হয়ে দ্বীপে খাবার খুঁজতে খুঁজতে উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করছেন। ভয়ংকর সাপ ধরেও খেতে হয়েছে তাকে। এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে কিভাবে জীবন বাঁচিয়ে ফিরে আসতে হয় লোকালয়ে, এমন হাজারো কৌশল দেখান বিয়ার গ্রিলস।

‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ প্রথমে যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর এ ‘বর্ন সার্ভাইবার’ নামে শুরু হয়। পরে এটি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ভারত সহ বিভিন্ন দেশ ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ নামে প্রচারিত হয়। এছাড়া ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ‘আল্টিমেট সার্ভাইবার’ নামেও প্রচারিত হয়। বিয়ার গ্রিলস এর অনুষ্ঠানগুলো সারা বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীতে ডিসকভারি চ্যানেল ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ এর স্বত্ব কিনে নিয়ে তাদের চ্যানেলে প্রচার করে। কিন্তু ২০১২ সালে ডিসকভারি চ্যানেলের সাথে মতের অমিল হওয়ায় ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ তৈরি বন্ধ করে দেন।

বিয়ার গ্রিলস
Source: livedoor Blog

বিয়ার গ্রিলস এর অভিযান:

পৃথিবীর দুর্গম সকল যায়গায় বিয়ার গ্রিলস অভিযান করেন। আমাজনের গভীর অরণ্য থেকে শুরু করে আফ্রিকার বালুকাময় নির্জন মরুভূমি, আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝের নির্জন কোন দ্বীপ, এমনকি তুষারাবৃত কোন পাহাড় কিংবা জঙ্গল কোন কিছুই বাদ রাখেননি বিয়ার গ্রিলস তার অভিযানে।

তার এসব দুর্গম অভিযান করতে গিয়ে তাকে অনেক সময় ভয়ংকর সব পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। সাপ, কুমির, ভাল্লুকের সাথে লড়াই ছাড়াও খাবার ও খাবার পানি ছাড়া টিকে থাকার লড়াই কখনো কখনো ভয়ংকর রূপ নিয়েছিলো। তুষারে ঢাকা পাহাড়ের মধ্যে তুষারের নিচে ঢাকা পড়ার ভয় ছিল, অথবা আমাজনের বিশাল অরণ্যে হারিয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। এমন সব ভয় কে জয় করে দুঃসাহসী সব অভিযান সফলভাবে করে এসেছেন বিয়ার গ্রিলস।

এভারেস্ট অভিযান:

বিয়ারকে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক সাক্ষাতকারে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সবচেয়ে ভয়ানক অভিযান কোনটি ছিল? বিয়ার নির্দিষ্ট করে না বললেও একটা অভিযানের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন, তার এভারেস্টে চূড়ায় আরোহণের ঘটনা। এভারেস্টে উঠতে গিয়ে একবার তিনি মরণ-ফাঁদে পড়েছিলেন। এভারেস্টের এক গর্তে পা ফসকে পড়ে গিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাসের সাথে মনোবল নিয়ে চেষ্টার ফলে তার জীবনের প্রথম এত বড় দুঃসাহসিক অভিযান জয় লাভ করে ফিরে এসেছেন।

বিয়ার গ্রিলস ও ওবামাঃ

বিয়ার গ্রিলস পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম যায়গা গুলোতে টিকে থাকার লড়াই দেখিয়ে জনপ্রিয়তার এত শীর্ষে উঠেন যে, একদিন স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার সাথে সার্ভাইব করতে আলাস্কার তুষারাবৃত অঞ্চলে একত্রিত হন। সেখানে বিয়ারের সাথে ওবামা পুরো একদিন অতিবাহিত করেন।

বিয়ার গ্রিলস ও ওবামা
বিয়ার গ্রিলস ও ওবামা
Source: intérieur de conception de maison

নিরাপত্তা বলয় থাকলেও তারা দূর থেকে নজর রাখছে প্রেসিডেন্টের উপর। প্রেসিডেন্ট বিয়ার গ্রিলস এর সাথে নির্বিঘ্নে হাঁটছেন, কথা বলছেন আলাস্কার এক নির্জন জায়গায়। বিয়ার থেকে জেনে নিচ্ছেন এমন নির্জন জায়গায় টিকে থাকার কৌশল।  বিয়ারের অভিজ্ঞতা, গল্প শুনতে শুনতে তারা আলাস্কার এক হিমবাহ অঞ্চলের পাদদেশে দিয়ে বসেন। সেখানে বিয়ার তার ব্যাগ থেকে একটা মৃত ভাল্লুক খাওয়া স্যামন মাছ বের করেন। ওবামা প্রথমে দেখে চমকে উঠেন। পরে বিয়ারের সাথেই ওই মাছ রান্না করে লাঞ্চ সেরে নেন প্রেসিডেন্ট। আগুন জ্বালানোর কৌশলও শিখে নেন বিয়ারের কাছ থেকে। হিমবাহের গলিত পানি ফুটিয়ে পান করেন দুজনে।

সেখান থেকে তারা হেটে যান এক পাহাড়ের উপরে। সেখানে প্রেসিডেন্টে ও বিয়ার গ্রিলস দুজনেই তাদের মোবাইলে সেলফি তোলেন। পারিবারিক বিষয় ছাড়াও বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে কথা বলেন দুজনে। ওবামা বৈশ্বিক উষ্ণতা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। বিয়ার গ্রিলস কে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানিয়ে ওবামা সেখানে অভিযান শেষ করেন।

The Kid Who Climbed Everest
বই The Kid Who Climbed Everest

লেখক বিয়ার গ্রিলসঃ

বিয়ার গ্রিলস তার এভারেস্ট অভিযান নিয়ে সর্বপ্রথম বই লিখেন ‘Facing Up’ নামে। তার প্রথম বই যুক্তরাষ্ট্রে ‘The Kid Who Climbed Everest’ নামে প্রকাশিত হয়। এভারেস্ট অভিযান নিয়ে তিনি আবার ‘Facing The Frozen Ocean’ নামে তার দ্বিতীয় বই প্রকাশ করেন। এরপর Born Survivor: Bear Grylls নামে আরেকটি বই প্রকাশ করেন। বিয়ার গ্রিলস সর্বমোট ১৪ টি বই প্রকাশ করেন। তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে ২০১২ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী মূলক বই Mud, Sweat and Tears: The Autobiography. এছাড়াও বিয়ার অভিযানের দিক নির্দেশনামূলক বই রচনা করেন।

বিয়ার গ্রিলস যেমন একজন দুঃসাহসিক অভিযাত্রী, তেমনি তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুঃসাহসের সাথে, মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেছেন। বিয়ার গ্রিলস একজন সফল মোটিভেশনাল বক্তাও। তার লেখা ও বক্তৃতায় তিনি বর্তমানে সমাজ সেবা মূলক কাজ করছেন।

Source Featured Image
Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More