“অমুকের একটা বিশ্বকাপ পাওয়া প্রাপ্য” কথাটি হয়ত অনেক খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রেই হয়ত শুনেছেন। কিন্তু দলের ক্ষেত্রে? নেদারল্যান্ড হয়ত বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেই গুটিকয়েক দলের একটি। ক্রুইফের হাত ধরে জন্ম নেয় ফুটবল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় যেটিকে আমরা “টোটাল ফুটবল” হিসেবে জানি। ১৯৭০ এর বিশ্বকাপ এ ব্রাজিলকে জুলেরিমে ট্রফিটি দিয়ে দেয়ার পর নতুন একটি ট্রফির দরকার হয় ফিফার। বর্তমানে আমরা যেটিকে ফিফা ট্রফি হিসেবে দেখি সেটি ১৯৭৪ বিশ্বকাপে প্রথম আসে। সাতটি দেশ থেকে ৫৩ জন ভাস্করের ডিজাইন থেকে ইতালিয়ান শিল্পী Silvio Gazzaniga ডিজাইনটি চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করা হয়। কার হাতে প্রথম উঠেছিল সেই ট্রফি??? আফসোসটা হয়তো থেকেই গিয়েছে ডাচদের।
স্বাগতিকঃ
১৯৬৬ সালে লন্ডনে ‘৭৪, ‘৭৮, ‘৮২ বিশ্বকাপের আগাম স্বাগতিকদের নাম ঘোষণা করা হয়। পশ্চিম জার্মানি ৭৪ এর বিশ্বকাপ এর জন্য স্পেনের সমর্থন নেয় এবং স্পেন-পশ্চিম জার্মানি নিজেদের মাঝে আপস করে নেয় তারা একে অন্যকে স্বাগতিক হওয়ার জন্য ভোটদান করবে।

ভেন্যুঃ
৯টি শহরকে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নির্বাচন করা হয়। মিউনিখ, পশ্চিম বার্লিন, স্টুটগার্ট, গেলসেনকিরচেন, ডুসেলডর্ফ, ফ্রাঙ্কফুর্ট, হ্যামবুর্গ, হ্যানোভার, ডর্টমুন্ড।
অংশগ্রহণকারী দলঃ
৯৮টি দেশ বাছাইপর্বের জন্য অংশগ্রহণ করে। ইউরোপ থেকে ৯টি(স্বাগতিকসহ), কনমেবল অঞ্চল থেকে ৪টি, আফ্রিকা থেকে ১টি, ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে ১টি আর বাকি স্লটটি কনক্যাকাফ এর। ১৬টি দেশ নিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপ।
ফরম্যাটঃ
১৬টি দল যোগ্যতা অর্জন করে মূলপর্বের জন্য এবং চারটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে প্রতিটি জয়ের জন্য দুই পয়েন্ট এবং ড্র এর জন্য এক পয়েন্ট দেয়া হয়। পয়েন্ট সমান হলে গোল ব্যবধান আলাদা করতে ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুটি দল পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত হয়। পূর্ববর্তী পাঁচটি প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত বিন্যাস থেকে সেবারের ওয়ার্ল্ড কাপ ভিন্ন ছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডটি আরেকটি গ্রুপ পর্যায়ভুক্ত ছিল। চার গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ দল নিয়ে আটটি দলকে পুনরায় দুটি গ্রুপের মাঝে ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতিটি গ্রুপের বিজয়ীরা চূড়ান্তভাবে একে অপরের মুখোমুখি হয় এবং প্রতিটি গ্রুপের দ্বিতীয় অর্জনকারী স্থান দলগুলি তৃতীয়/চতুর্থ নির্ধারণী ম্যাচ খেলার জন্য মনোনীত হয়।

গ্রুপ পর্বঃ
পূর্ব-পশ্চিম দুই জার্মানি এক গ্রুপে পড়লেও উৎরে যায় দুটি দলই। পূর্ব জার্মানি গ্রুপের ১নং হয়ে শেষ করে, পশ্চিম জার্মানিকেও হারায় যেখানে শেষতক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পশ্চিম জার্মানিই!!!
ব্রাজিল এবং স্কটল্যান্ড এর পয়েন্ট সমান হলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় যুগোস্লোভাকিয়ার সাথে ব্রাজিল পরের রাউন্ড এ উত্তীর্ণ হয়। হল্যান্ড, সুইডেন, পোল্যান্ড, আর্জেন্টিনা পরবর্তী রাউন্ড এ উঠে যায়।

দ্বিতীয় রাউন্ডঃ
হল্যান্ড, পশ্চিম জার্মানি নিজ নিজ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফাইনাল এ পৌঁছে যায় এবং ব্রাজিল-পোল্যান্ড গ্রুপে ২য় হওয়ার দরুন ৩য় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলে। পোল্যান্ড ১-০ গোলে ম্যাচ জিতে ৩য় হয় যা এখন পর্যন্ত তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা সাফল্য।

ফাইনালঃ
৭জুলাই ৭৫,২০০ জন দর্শকের সমাগম হয় ফাইনাল দেখতে। ম্যাচের ২য় মিনিটেই নেস্কেন্স এর গোলে এগিয়ে যায় ডাচরা। হয়তবা ডাচ রূপকথার শুরুটা দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। কিন্তু জার্মানদের সামনে সেদিন আর পারেনি ডাচরা। প্রথমার্ধ শেষ করে তারা ২-১ গোলে। ১ম হাফ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে আগের বিশ্বকাপ এর সর্বাধিক গোল করা গার্ড মুলারের করা গোলটিই জয়সূচক গোল হয়ে থাকে।

সর্বোচ্চ গোলদাতাঃ
পুরো টুর্নামেন্ট এ ৫৩ জন প্লেয়ার গোল করেন (মোট ৯৭টি গোল)। ৭টি গোল দিয়ে পোল্যান্ডের ল্যাতো সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
এক নজরে ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৭৪
সময়কালঃ ১৩ই জুন থেকে ৭ জুলাই
ব্যবহৃত বলঃ
সর্বোচ্চ গোলদাতা/গোল্ডেন বুটঃ ল্যাতো ৭টি(পোল্যান্ড)
চ্যাম্পিয়নঃ পশ্চিম জার্মানি
রানার্সআপঃ হল্যান্ড
তৃতীয়স্থানঃ পোল্যান্ড
চতুর্থঃ ব্রাজিল
মোট ভেন্যুঃ ৯টি
মোট ম্যাচঃ ৩৮টি
মোট গোল সংখ্যাঃ ৯৭
উপস্থিতিঃ ১৮,৬৫,৭৬২
উদীয়মান তরুন খেলোয়াড়ঃ ভ্লাডিস্ল মুদা
