প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে যে ভার্সাই চুক্তি সম্পাদিত হয়, সেখানেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ বপন করেছিলো তৎকালীন সময়ের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র ব্রিটেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র।
১ম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম প্যারিস শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ফ্রান্সের অদূরবর্তী ভার্সাই নগরে এ চুক্তি সম্পাদিত হয়। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে ভার্সাই চুক্তি সম্পাদিত হয়, অথচ সেই চুক্তিতে জার্মানিকে সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য, শুধুমাত্র জার্মানিকে যুদ্ধাপরাধী করে তাদের উপর বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধের সমস্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বলা হয়, যা ছিল সম্পূর্ণ প্রতিহিংসা মূলক। আর এই প্রতিহিংসা মূলক আচরণের মধ্যেই ২য় বিশ্বযুদ্ধের উত্থানের কারণ নিহিত।
১ম ভার্সাই চুক্তি:
১ম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির সাথে মিত্রশক্তির যে চুক্তি হয় তা ইতিহাসের ২য় ভার্সাই চুক্তি হিসেবে স্বীকৃত। এর আগে ১৭৮০ সালে এই ভার্সাই নগরীতেই ব্রিটেন ও আমেরিকার মধ্যকার এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। আমেরিকার স্বাধীনতা প্রশ্নে ব্রিটেন আমেরিকার সাথে এ চুক্তি করে। গ্রেট ব্রিটেনের অতিরিক্ত কর আরোপের ফলে আমেরিকার অনেকগুলো প্রদেশ বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়।

আমেরিকার এক একটি প্রদেশ স্বাধীন হতে থাকলে এই স্বাধীনতার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসেবে ব্রিটেন আমেরিকার সাথে ১৭৮০ সালে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরে এই চুক্তি সম্পাদন করে। ১ম ভার্সাই চুক্তি আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের একটি ধাপ ছিল মাত্র। তিন বছর পর ৩ সেপ্টেম্বর ১৭৮৩ সালে আমেরিকা পূর্ণ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
প্যারিস শান্তি সম্মেলন:
২য় ভার্সাই চুক্তির পূর্বে প্যারিসে একটি শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণ ও পরবর্তীতে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১ম বিশ্বযুদ্ধের মিত্র ও সহযোগী শক্তিবর্গ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সম্মেলনে জার্মানির বিপক্ষে যেসকল দেশ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং যুদ্ধ চলাকালীন জার্মানির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক চিহ্ন করে এমন ৩২ টি দেশ অংশগ্রহণ করে। এ সম্মেলনের মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জ, ইতালির ভিট্টোরিও অরল্যান্ডো, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জর্জেস ক্ল্যামেনকু এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন।
প্যারিস শান্তি সম্মেলনের একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে কোন পরাজিত দেশসমূহের প্রতিনিধিকে আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়নি। প্যারিস শান্তি সম্মেলনের পরবর্তী উদ্যোগ হিসেবে এই ভার্সাই চুক্তি সাক্ষরিত হয়।
ভার্সাই চুক্তি:
প্যারিস শান্তি সম্মেলনে ১ম বিশ্বযুদ্ধের মিত্র ও সহযোগী শক্তিবর্গ ব্যতীত আর কোন দেশকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়নি। অক্ষশক্তি কে আলোচনার কোন সুযোগ ই দেয়া হয়নি। তাই প্যারিস শান্তি সম্মেলনের পর অক্ষশক্তির সাথে আলোচনা ও সন্ধি স্থাপনের লক্ষ্যে ভার্সাই রাজপ্রাসাদে একটি বৈঠকের আহ্বান করা হয়।
১৯১৯ সালের ২৮ জুন ভার্সাই রাজপ্রাসাদে মিত্রবাহিনীর নেতৃবৃন্দের সাথে জার্মানি আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। সেদিন মিত্রবাহিনী কর্তৃক গৃহীত শান্তিচুক্তি পত্রে জার্মানি স্বাক্ষর করে। দুই শত পৃষ্ঠা সম্বলিত ইংরেজি ও ফারসি ভাষায় লিখিত চুক্তিতে ১৫ টি অধ্যায়ে ৪৩৯ টি ধারা সন্নিবিষ্ট আছে। জার্মানি সংক্রান্ত শর্তাদি ছাড়াও এতে লীগ অফ নেশনস, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দপ্তর ও একটি স্থায়ী আন্তর্জাতিক বিচারালয় স্থাপনের শর্তগুলিও সন্নিবিষ্ট ছিল। মিত্রবাহিনীর নেতৃত্বে ছিল ব্রিটেনের ডেভিড লয়েড জর্জ, ফ্রান্সের জর্জেস ক্ল্যামেনকু ও যুক্তরাষ্ট্রের উড্রো উইলসন। এ তিনজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি সন্ধির চুক্তিপত্র তৈরি করে। যে চুক্তিপত্র তৈরিতে জার্মানির সাথে কোন ধরণের আলোচনা করা হয়নি। এমনকি এসব চুক্তিপত্র জার্মানিকে নিঃশর্তভাবে মেনে নিতে বাধ্য করা হয়।

ভার্সাই চুক্তির ধারা:
দুইশত পৃষ্ঠা সম্বলিত ভার্সাই চুক্তিপত্রে ১৫ টি অধ্যায়ে ৪৩৯ টি ধারা সন্নিবেশ করা হয়। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা ধারা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।
১. যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত ধারা। ভার্সাই চুক্তিতে জার্মানির প্রতি ঘৃণা প্রকাশ্য ছিল। জার্মানিকে অর্থনৈতিক ভাবে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মিত্রশক্তি প্রতিনিধি। মোট ক্ষতিপূরণ দাড়ায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার কোটি ডলারে। যা যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানির জন্য প্রদান করা বাস্তবিক পক্ষে সম্ভব ছিলো না। জার্মানি ক্ষতিপূরণের অতি সামান্য অংশ দিতে গিয়েই দেউলিয়া হয়ে যায়।
২. ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির সামরিক শক্তি নামেমাত্র সংখ্যায় নিয়ে আসার জন্য বলা হয়। জার্মানির সৈন্য সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। সর্বোচ্চ এক লক্ষ সেনাবাহিনী থাকতে পারবে জার্মান সেনাবাহিনীতে। আর সে সকল সেনাবাহিনী শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে বলে স্থির করা হয়। সাধারণ সৈন্য সর্বোচ্চ ১২ বছর ও অফিসার সর্বোচ্চ ২৫ বছর সেনাবাহিনী তে থাকতে পারবে।
বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনী তে ভর্তি প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়।
জার্মানির নৌবাহিনীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। নৌবাহিনীর সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ পনের হাজার থাকতে পারবে। যেসকল সাবমেরিন ও রণতরী রয়েছে, তা মিত্রশক্তির কাছে সমর্পণ করবে।
জার্মানিতে কোন বিমানবাহিনী থাকতে পারবেনা।
৩. জার্মানি কোন ধরনের অস্ত্র আমদানি রপ্তানি করতে পারবেনা। সাবমেরিন, ভারী কামান, ট্যাংক ও বিষাক্ত গ্যাস তৈরি অথবা নিজ দখলে রাখতে পারবেনা।
৪. ফ্রান্স কে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ আলসাস (Alsace) ও লাউরেইন (Lorraine) নামক দুটো স্থান হস্তান্তর করবে জার্মানি। উত্তর শ্লেষ-উইক (Northern Schleswig) হস্তান্তর করবে ডেনমার্কের কাছে। প্রুশিয়ান এলাকা গুলো পোল্যান্ড কে দিয়ে দিতে হবে।
৫. জার্মানি থেকে অস্ট্রিয়াকে পৃথক করে ফেলা হবে।
৬. বিভিন্ন মহাদেশে জার্মানির কলোনিগুলো মিত্রপক্ষ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে। এসকল কলোনি আর কখনো জার্মান সাম্রাজ্যভুক্ত হতে পারবেনা। ব্রিটেন, ফ্রান্স নিজেদের মধ্যে ক্যামেরুন ও টোগোকে ভাগ করে নিবে। জার্মান নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক এলাকা দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হস্তান্তর করে দিতে হবে।
৭. এ সকল শর্ত কার্যকর করার নিশ্চয়তার লক্ষে রাইন নদীর পশ্চিম তীরবর্তী জার্মান ভূখণ্ডে মিত্রশক্তি ও তাদের সহযোগী সেনাবাহিনীর দখলে ১৫ বছর থাকবে।

ভার্সাই চুক্তির সমালোচনা:
ভার্সাই চুক্তি আধুনিক কালের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কমূলক বিষয়। জার্মান জাতি এটিকে ‘Dictated peace’ বা বিজিতের উপর বিজেতার জবরদস্তি মূলক চাপানো শান্তিচুক্তি ও জার্মানির সর্বস্ব হরণের চুক্তি বলে মনে করে।
ভার্সাই চুক্তিতে সরাসরি জার্মানির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় শক্তিবর্গের ও ইউরোপীয় জনগণের তীব্র অসন্তোষ ও ঘৃণার সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। এ চুক্তির মাধ্যমে মিত্রশক্তির অক্ষশক্তির প্রতি বিরুদ্ধ মনোভাব স্পষ্ট আকারে ফুটে উঠে।
সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হতে বিজয়ী ও পরাজিত উভয় পক্ষের সম্মতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে জার্মানির কোন মতামত নেয়া হয়নি। জার্মানিকে শর্তহীন ভাবে চুক্তিপত্রের শর্তগুলো মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছিলো। জার্মানি চুক্তিপত্রে আপত্তি জানালেও তা নিঃশর্তে মেনে নেয়ার জন্য জার্মানিকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়, আবার যুদ্ধের হুমকিও দেয়া হয়। তাই জার্মানি নিঃশর্তে চুক্তি পত্রে লিখিত সব শর্ত মেনে নেয়।
ভার্সাই চুক্তির আগে উড্রো উইলসনের চোদ্দ দফায় প্রত্যেক দেশকে অস্ত্র ও যুদ্ধের সরঞ্জামাদি হ্রাস করার কথা বলা হয়। অথচ ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে শুধুমাত্র জার্মানিকে অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম হ্রাস করতে বাধ্য করা হয়।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত জার্মানির স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে তাদের উপর ক্ষতিপূরণের বিশাল বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। নৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু জার্মানির শিল্প বাণিজ্য ধ্বংস করার পাকাপাকি বন্দোবস্ত করা হয় এ চুক্তির মাধ্যমে। অপরদিকে তাদের উপরই আবার বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। এ যেন হাঁসকে উপবাসী রেখে তার কাছ থেকে সোনার ডিম আদায় করার মত।

ভার্সাই চুক্তির ফলাফল:
Germany was punished, disarmed and humiliated.
১ম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সায় চুক্তির মাধ্যমে জার্মানিকে সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু করে দেয়া হয়। একটি শক্তিশালী ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা সম্পন্ন দেশকে পূর্বে কখনো এভাবে পদানত করার দৃষ্টান্ত দেখা যায় না। স্বভাবতই এ চুক্তি মেনে নেয়া জার্মানির পক্ষে অসম্ভব ছিল।
চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার বছরেই জার্মানিতে নাৎসি বিপ্লবী পার্টির অভ্যুদয় ঘটে। নাৎসি দল দ্ব্যার্থহীন ভাষায় ভার্সাই চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। জার্মানির গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং ফ্যাসিবাদী হিটলারের অভ্যুদয়ের পেছনে এই ভার্সাই চুক্তির সরাসরি কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। এই অসন্তোষকে মূলধন করে নাৎসি প্রধান হিটলার ভার্সাই চুক্তিকে অস্বীকার করেন এবং পরবর্তীকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেন।
ভার্সাই চুক্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিক Riker মন্তব্য করেছেন, It’s greatest condemnation is that it contained within it the germs of a Second World War.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই রোপিত হয়েছিলো ভার্সাই চুক্তিতেই। ফলে ইউনাইটেড নেশনের মত শান্তি স্থাপনকারী আন্তর্জাতিক সংগঠন গুলো নিরুপায় হয়ে পড়েছিল। ভার্সাই চুক্তিই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য করে দিয়েছিল।
order avodart without prescription buy ondansetron generic zofran 4mg us
order levofloxacin for sale levaquin 250mg price
As a Newbie, I am permanently searching online for articles that can aid me. Thank you
Real clear web site, appreciate it for this post.
Hi there, I found your blog via Google while looking for a related topic, your website came up, it looks great. I have bookmarked it in my google bookmarks.
7, infection without neutropenia 7 vs cialis generic tadalafil
Loving the information on this web site, you have done outstanding job on the articles.
It’s a shame you don’t have a donate button! I’d most certainly donate to this excellent blog!
I guess for now i’ll settle for bookmarking and adding your RSS feed to my Google account.
I look forward to brand new updates and will talk about this website with
my Facebook group. Chat soon!
[…] https://itibritto.com/versai-treaty/ […]