ফুটবলের রাজপুত্র ডিয়েগো ম্যারাডোনা : পৃথিবীর অধিকাংশ ফুটবল প্রেমীর চোখে যিনি সর্বকালের সেরা
আজকের কিংবদন্তির যে গল্পটি আপনাদের বলব, তার যুগে বিশ্বজুড়ে ছিল না ইন্টারনেটের প্রচলন, অথবা ইউটিউব ঘেঁটে ইচ্ছা করলেই কেউ ইচ্ছেমতো ভিডিও ক্লিপ দেখতে পারত না! তবুও সে সময় তিনি কাঁপিয়েছিলেন পুরো দুনিয়া। ‘হ্যান্ড অফ গড’ খ্যাত এই তারকাকেই ফুটবলের সর্বসেরা খেলোয়াড় হিসেবে মানেন বিশ্বের অধিকাংশ ফুটবলবোদ্ধারা। যদি কোন ফুটবল ভক্তকে ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ফুটবলার বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে হয়তো প্রথমেই তার মুখ থেকে উচ্চারিত হবে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি খ্যাত ডিয়েগো ম্যারাডোনার নাম।
তবে কয়েক প্রজন্ম পরে কেউ হয়তো আর গল্প করবে না, কিভাবে ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা ইংল্যান্ড রক্ষণভাগকে বিধ্বস্ত করেছেন, অথবা ১৯৯০ সালে কিভাবে নেপোলি ফুটবল ক্লাবের সমর্থকরা নিজ দেশকে সমর্থন না করে ম্যারাডোনার পক্ষে জয়ধ্বনি গেয়েছে, কিংবা ১৯৯৪ সালে এই ফুটবল ঈশ্বর নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জেতার পর কি রকম প্রাণবন্ত উদযাপন করেছিলেন! প্রবীণ আর্জেন্টিনা অথবা ম্যারাডোনা সমর্থকরা হয়তোবা এসব গল্পই তাদের পরবর্তী প্রজন্মগুলোকে শুনিয়ে থাকবেন। ম্যারাডোনার সেই ইতিহাসগড়া গল্পগুলোই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়।
ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা! আর্জেন্টাইন রাজধানী বুয়েনস আয়ার্স শহরের ভিলা ফিওরিতো নামক জায়গায় ১৯৬০ সালে জন্ম তার। ছোটকাল থেকেই অনেক কোলাহলের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছেন ম্যারাডোনা। পরিবারে তার ভাই বোনের সংখ্যা ছিল মোট ৭ জন। তবে অন্যদের চেয়ে তিনি ছিলেন একটু আলাদা। ফুটবল নিয়ে সারাদিন মেতে থাকতেন তিনি। লস কেবোলিতাস ক্লাবের হয়ে খেলার সময় তিনি প্রথম সবার নজর কাড়েন।
পুরো আর্জেন্টিনা জুড়ে সহসাই তিনি ‘বিস্ময় বালক’ বনে যান। কোন ম্যাচের অর্ধসময়ের বিরতিতে এই ১০ বছরের বালক দর্শকদের তার পায়ের অনবদ্য কৌশল দেখিয়ে মাতিয়ে রাখতেন। খর্বকায়, বাঁ-পেয়ে এই খেলোয়াড় বল নিয়ন্ত্রণ, ড্রিবলিং, পাসিং আর প্লে মেকিংয়ে ছিলেন অন্য সবার থেকে অনেক ধাপ উপরে। ক্ষুদে ম্যারাডোনা তখনকার সময়ে একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, “আমার জীবনে দুইটি স্বপ্ন- বিশ্বকাপ খেলা আর সেটি জয় করা!”
মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি আর্জেন্টাইন প্রথম বিভাগের তলানির ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের মূল দলে যোগ দেন। অন্যদিকে ১৯৭৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অভিষেক হয়। আর্জেন্টাইন লিগে আর্জেন্টিনোসের হয়ে তিনি ৫ বার সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। এছাড়া তিনি ১৯৭৯ এবং ১৯৮০ সালে ‘সাউথ আমেরিকান প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার’ খেতাবও অর্জন করেন।
তবে তিনি তার জীবনের প্রথম বড় কষ্টটি পান যখন ১৯৭৮ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়। কোচ সিজার লুইস মেনত্তি মনে করেছিলেন যে, একজন ১৭ বছরের বালক হিসেবে ম্যারাডোনা বিশ্বকাপের মত বড় টুর্নামেন্টের চাপ নিতে পারবেন না। দুর্ভাগ্যবশত তিনিই ছিলেন শেষ খেলোয়াড় যাকে কিনা ২২ সদস্যবিশিষ্ট স্কোয়াড থেকে ছাটাই করা হয়। তবে পরের বছরই তিনি পুরো বিশ্বকে নিজের সামর্থ্যের জানান দেন। ১৯৭৯ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ কাপ’ এ নিজ দেশ আর্জেন্টিনাকে শিরোপা এনে দেন তিনি।
অন্যদিকে ক্লাব পর্যায়ে খ্যাতনামা আর্জেন্টাইন ক্লাব বোকা জুনিয়র্স থেকে তাঁর ডাক আসে। ১ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় বোকা জুনিয়র্স। ১৯৮১ সালে বোকা জুনিয়র্সের হয়ে আর্জেন্টাইন চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার মধ্য দিয়ে ম্যারাডোনার জয়রথ শুরু হয়।
এরপরই ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার সুযোগ আসে ম্যারাডোনার কাছে! এফসি বার্সেলোনা তৎকালীন ট্রান্সফার রেকর্ড ভেঙে ৫ মিলিয়নের বিনিময়ে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে কিনে নেয়। অবশ্য তাদের এই প্রচেষ্টা বিফলে যায়নি। ১৯৮৩ সালে তিনি বার্সেলোনাকে লিগ কাপ এবং স্প্যানিশ কাপ জেতান। ১৯৮৪ সালে ম্যারাডোনা একই ক্লাবের হয়ে জেতেন সুপার কাপ।
কিন্তু নিঃসন্দেহে তাঁর ক্লাব দ্বৈরথের সবচেয়ে সাফল্যঘন মুহূর্তগুলো এসেছিল ইতালির নেপোলি ক্লাবের হয়ে। তখনকার অপেক্ষাকৃত অসফল ক্লাব নেপোলিকে তিনি ১৯৮৭ এবং ১৯৯০ সালে দুইবার ক্লাব শিরোপা এনে দেন। ইটালির দক্ষিণাঞ্চলের এই ক্লাবকে আরও এনে দেন ১৯৮৭ সালে কোপা ইটালিয়া, ১৯৮৯ সালের উয়েফা কাপ এবং ১৯৯১ সালের ইটালিয়ান সুপার কাপ শিরোপা।
ফুটবলে তাঁর সর্বোচ্চ সাফল্যের কাছে হয়তোবা এসব শিরোপা অনেকটাই মলিন। কতজন ফুটবলার-ই বা বিশ্বকাপ ইতিহাসে পুরোপুরি একক নৈপুণ্যে নিজের দেশকে সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল শিরোপা উপহার দিতে পেরেছেন! ১৯৮৬ সালে তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন। একটি পুরোপুরি তারকাহীন দলকে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ এনে দিয়েছেন। কষ্টদায়ক হলেও সত্যি, ফুটবল মাঠে তাঁর তীক্ষ্ণ প্রতিভা সত্ত্বেও আবেগপ্রবণ এবং পরিবর্তনশীল চিন্তাধারা তার ক্যারিয়ারকে বার বার বিতর্কিত করেছে। তবুও তিনি ভক্তদের মনে সর্বদা তার ফুটবল কারুকার্যের জন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
বিশ্ব পর্যায়ে খুব কম ক্রীড়াবিদই ম্যারাডোনার মতো একাধারে এত প্রশংসা এবং সাফল্য অর্জন করেছেন। পায়ের অসম্ভব সব কেরামতি আর অতুলনীয় ড্রিবলিং কৌশল ফুটবল মাঠে গোল তৈরি করে দেওয়ার পথে তাঁকে অপ্রতিরুদ্ধ করে তুলেছিল। মাঠে চতুর্দিক থেকে কড়া পাহারায় থাকা সত্ত্বেও তিনি ডিফেন্ডারদ্র বেষ্টনী থেকে এমনভাবে বল কাটিয়ে নিয়ে বের হয়ে যেতেন, যেমনটি কেউ আগে কখনো দেখেনি!
তাঁর সবচেয়ে তুঙ্গে থাকা মুহূর্তে তিনি দলের সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতেন এবং নিজের সর্বস্ব দিয়ে দলকে এনে দিতেন কাপ বা লিগ শিরোপা।
আর্জেন্টিনা , স্পেন, ইটালি আর স্কটল্যান্ডের ভক্তরা তাকে সম্মান প্রদর্শন করে বিশ্বজয়ী হিসেবে। তারা এটাও মানেন যে, তিনি ফুটবলের সর্বকালের সবচেয়ে বড় তারকাগুলোর মধ্যে একজন। ইংল্যান্ডের ফুটবল ভক্তরাও ম্যারাডোনাকে সমীহ না করে পারেন না, যদিও ১৯৮৬ সালের ‘হ্যান্ড অফ গড’ এর স্মৃতি তাদের এখনও কাঁদায়। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে আর্জেন্টিনা হারিয়েছিল ২-১ ব্যবধানে আর ম্যারাডোনা উঁচুতে লাফিয়ে হাতের সাহায্য নিয়ে একটি গোল করেছিলেন। জর্জ ভালদানোর উদ্দেশ্যে বাড়ানো ম্যারাডোনার পাসটি প্রতিরোধ করেন ইংলিশ ডিফেন্ডার স্টিভ হজ এবং বলটি নিজ পেনাল্টি বক্সেই পাঠান তিনি। ক্ষুদে ডিয়েগো বক্সের ভিতরে দৌড়াতে থাকেন এবং শেষ পর্যন্ত নিজের সুযোগটি কাজে লাগান। গোলরক্ষক পিটার শিল্টনকে পরাস্ত করে নিজের বামহাতটি উঁচিয়ে বল প্রতিপক্ষের জালে জড়ান।
বুদ্ধিমান ম্যারাডোনা পরবর্তীতে গোলটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন, “গোলটি হয়েছে অনেকটা ম্যারাডোনার হেডের মাধ্যমে এবং অনেকটা ঈশ্বরের হাতের মাধ্যমে”।
তবে ম্যাচে এমন একটি আশ্চর্যজনক গোলের মাত্র ৫ মিনিট পরেই এই আর্জেন্টাইন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় বিপক্ষদলের ৬ জনকে কাটিয়ে অভূতপূর্ব একটি গোল করেন, যার ফলে এমনকি তার বিদ্বেষীদের কাছেও তিনি সম্মান এবং প্রফুল্লের পাত্র বনে যান। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে তিনি এছাড়া আরও ৩ টি গোল করেন এবং আরও ৫ টি অ্যাসিস্ট করেন। অবশেষে দলের জন্য এই আর্জেন্টাইন জিতে নেন ১৯৮৬ সালের ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ জয়মুকুট। সত্যি বলতে কি, ঐসময় ‘ফুটবল ঈশ্বর’-খ্যাত ডিয়েগো ম্যারাডোনা ছাড়া আর্জেন্টাইনদের পক্ষে হয়তো ফুটবলের সর্বোচ্চ দলীয় সম্মান জেতা সম্ভব ছিল না।
আরজেন্টিনোস জুনিয়র্সের যুবদল কোচ ফ্রান্সিস্কো করনেজো, যিনি ম্যারাডোনাকে প্রথম আবিষ্কার করেন তিনি বলেন, “যখন ডিয়েগো আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে প্রথম ট্রায়ালের জন্য এসেছিল তখন তার প্রতিভায় আমি সত্যি বিস্মিত হয়েছিলাম এবং বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে সে ছিল মাত্র ৮ বছরের বালক। আমরা তার আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে বলল যে তার কাছে কোন আইডি কার্ড নেই। আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে সে আমাদের মিথ্যা বলছিল, কারণ তার শরীরের গঠন একটি বালকের মতো হলেও সে একজন প্রাপ্তবয়স্কের মতো খেলছিল। যখন আমরা পরে নিশ্চিত হলাম যে, তার কথা সত্যি তখন আমরা তার উপর খাঁটি আস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম।”
সাবেক আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় জর্জ ভালদানো বলেন, “কৌশলগত দিক থেকে সে ছিল ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে নিখুঁত খেলোয়াড়!”
আর্জেন্টাইন বিশ্বকাপজয়ী ফুটবল তারকা অসি আরদিলেস বলেন, “লোকে আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে থাকে যে কে বেশি ভাল খেলোয়াড় ছিল, পেলে নাকি ম্যারাডোনা। কিন্তু আপনি আসলে এই দুজনের মধ্যে তুলনা করতে পারেন না। পেলে প্রচুর গোল করত, ম্যারাডোনা গোল তৈরি করে দিত। অবশ্য ম্যারাডোনাও অনেক গোল করেছে, তবে সে গোলের প্রচুর সুযোগ তৈরি করেছে, শুধুমাত্র তার পাসগুলো দিয়ে নয়, বরং তার দলের অন্যদের সুযোগ করে দিয়ে। কারণ বিপক্ষ দলের ২ অথবা ৩ জন খেলোয়াড় সর্বদা ম্যারাডোনার পিছনে আঠার মতো লেগে থাকত। তার সবচেয়ে সাফল্যের মুহূর্ত এসেছে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ডের মানুষ প্রায়ই ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোলটির সমালোচনা করে থাকে, তবে ওই ম্যাচের ২য় গোলটি ছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বকালের সেরা গোল।”
buy semaglutide 14 mg pill – purchase desmopressin online cheap where to buy desmopressin without a prescription
lamisil drug – griseofulvin pills order grifulvin v pills
zyprexa iv
zetia 10 mg generic