কেউ কেউ বলে সুগন্ধি আবিষ্কার করা হয়েছিলো মেসোপটেমিয়া সভ্যতায়, যখন অন্যরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো এটা আরবের সৃষ্টি ৷ এখনো আরবের একটি স্থানকে বলা হয় “সুগন্ধির ভূমি ” ৷ খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ বছর পূর্বে মিশরে সুগন্ধির অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়, যেখানে বিশ্বাস করা হতো সুগন্ধি হচ্ছে ঈশ্বরের ঘাম এবং মিশরের মমিগুলোর সমাধিতে ‘অঞ্জলি ‘ হিসেবে ধূপ ব্যবহার করা হতো ৷
মানুষ প্রথম যখন সুগন্ধি আবিষ্কার করেছিলো তখন এটি ব্যবহার করা হতো ঈশ্বরকে অর্পণের জন্য ৷ সুগন্ধিযুক্ত আঠা অঞ্জলি দেয়া হতো পুজোর বেদির আগুনে ৷ সুগন্ধি শব্দটির ল্যাটিন অর্থ “ধোঁয়া” ৷ এটা প্রকৃতিগতভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় যে, বহু বছর পূর্ব থেকেই নারী, পুরুষরা শরীরের দূর্গন্ধ দূরীভূত করতে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন সতেজ ও স্বচ্ছ ঘ্রাণানুভূতির জন্য ৷
চীনের তরুনীরা শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে সুগন্ধিযুক্ত তৃণ ব্যবহার করতো এবং ফারাওদের যুগে সভাসদরা লিলিফুলের সুঘ্রাণযুক্ত পরচুলা পরতেন ৷ ধর্মীয় ব্যবহারের বাইরে সুগন্ধির প্রথম প্রয়োগের কথা উল্লেখ আছে যীশুর জন্মের চারশত বছর পূর্বে, তখন আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট এর দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য তাঁর বুকের বর্মতে সুগন্ধি দিয়ে সম্মান জানানো হতো ৷
প্রথম সুগন্ধির বাণিজ্যিক ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায় জেনেসিস এর বইয়ে, যদিও সেটা গঠনগত ভাবে ধূপ ছিলো ৷ যখন যোসেফের ভাইদের সবাই মিলে তাঁকে বিক্রি করে দিয়েছিলো মিশরগামী সওদাগরদের নিকট, যারা সুগন্ধিযুক্ত আঠা, বৃক্ষের নির্যাস এবং বাহারি মশলা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলো ৷ এটা উল্লেখ আছে যে, রাণী ক্লিউপেট্রা নিজেকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো ধূপের ধোঁয়া দিয়ে ৷
মক্কাতে পবিত্র কাবা ঘরের দেয়ালগুলো সুগন্ধি দিয়ে সিক্ত করা হয় ৷ ইতালির ট্যাম্পল অফ মিনারভা এর দেয়াল গুলো নির্মাণের সময় এর উপরিস্তরে দুধ ও জাফরান মিশ্রিত প্রলেপ ব্যবহার করা হয় ৷ বর্তমানেও আপনি যদি আপনার আঙুলে মুখের লালা লাগিয়ে ট্যাম্পল এর দেয়ালে ঘষেন তাহলে সেখান থেকে জাফরান এর স্বাদ পাবেন এবং সুবাস অনুভব করবেন ৷
প্রাচীন ভারতীয় মহাকাব্য ‘রামায়ণ’-এ প্রকাশ পায় যে, তৎকালিন সময়ে পরিষদবর্গদের চন্দন কাঠের নির্যাস মিশ্রিত সুগন্ধি দিয়ে সিক্ত করা হতো এবং যোদ্ধাদের সুগন্ধিযুক্ত গুঁড়ো দিয়ে আচ্ছন্ন করা হতো যা ছিলো যুদ্ধ যাত্রা শুরুর একটি ধাপ ৷ ভারতীয় সম্প্রদায়দের নিকট আতরওয়ালারা পরিচিত একজন স্তম্ভ হিসেবে ৷ তারা হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ধৌত করতো চন্দনের নির্যাস, আগরজল ও কস্তুরী দিয়ে ৷
আরবের প্রসাধনী সামগ্রী সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান আহরণ করা যায় ইউসুফ আল কিন্দি এর সুগন্ধি প্রসাধনী সামগ্রী বিষয়ক গ্রন্থ “রসায়ন ও পাতন” (খ্রিস্টাব্দ ৮৩০ -৮৭০) থেকে ৷ পারস্যে ৭ম শতকে সুগন্ধি প্রসাধনী সামগ্রী প্রস্তুত একটি শিল্পের মাধ্যম ছিলো ৷ ৭ম শতকে বাগদাদ ছিলো সুগন্ধি ব্যবসায়ের কেন্দ্র ৷ আরবের সুগন্ধি বণিকরা পুরো আরব সাম্রাজ্যে সুগন্ধি সামগ্রী বিক্রি করতো ৷ ব্রিটেনের ধর্মযোদ্ধারা আরব থেকে ফিরে আসার সময় ক্রয় করে নিয়ে আসতো আরবের বিখ্যাত সুগন্ধি, এভাবেই ব্রিটেন আবিষ্কার করেছিলে সুগন্ধি সামগ্রীর সৌন্দর্য্য ও মোহনিয়তা ৷
সুগন্ধি পাতন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে ইরানিরা ৷ ইবনে সিনা দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম, যিনি রসায়নের মূলনীতিসমূহ সুগন্ধি প্রস্তুত প্রনালীতে ব্যবহার করেছিলেন এবং ফুলের মন মাতানো সৌরভ সুগন্ধি সামগ্রীতে সঞ্চিত করতে পেরেছিলেন ৷ এভাবে ১৩শ শতকে পারস্য সুগন্ধি তৈরীর কাঁচামাল প্রস্তুতে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত করেছিলো ৷
যখন সুগন্ধি ভালো ভাবে প্রস্তুত করা হয় তখন এটা টিকে থাকে কয়েক দশক মোড়কে আবদ্ধ অবস্থায় ৷ আরেকটি ব্যাপার লক্ষনীয় যে, মিশরীয় সুগন্ধির স্থায়ীত্ব শক্তি স্বীকৃত ছিলো । ১৯২২ সালে যখন তুতেনখামেন “তুত” এর সমাধি ফলক খোদাই করা হয়, সুগন্ধি তৈলের প্রলেপ যা তিন হাজার বছরের পুরনো উপাদান দিয়ে নামাঙ্কিত করা হয়েছে তা এখনো ছড়িয়ে দেয় মহিমান্বিত সুঘ্রাণ ৷
how to buy prandin – cost jardiance 25mg brand empagliflozin 10mg