রোডস এর মূর্তি পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম এক আশ্চর্য যা ছিল হেলেনিয় যুগের সবচেয়ে বড় এবং গৌরবান্বিত মূর্তি। সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় সবার শেষে অবস্থানরত এই নিদর্শন নির্মিত হয়েছিল যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর দেব-দেবীদের প্রতি ধন্যবাদ প্রদর্শনের প্রতীক রূপে। এই মূর্তি দেখতে অনেকটা স্ট্যাচু অব লিবার্টির মত এবং ভূমিকম্পে গুঁড়িয়ে যাওয়ার আগে সগৌরবে দাঁড়িয়ে ছিল ৬০ বছর। তবে মূর্তিটি ঠিক কোথায় অবস্থিত ছিল বা গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর এই মূর্তির কি পরিণতি হয়েছিল তা নিয়ে এখনও বেশ রহস্য ছড়িয়ে আছে।
প্রাচীন যুগ থেকেই এজিয়ান এবং মেডিটেরিয়ান সমুদ্রের মাঝে ছেদ এবং প্রাচীন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা ছিল গ্রীসের ছোট দ্বীপ রোডস। খ্রিস্টপূর্ব ৪০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজধানী রোডস যার নকশা করা হয়েছিল দ্বীপটির উত্তর উপকূলে অবস্থিত প্রাকৃতিক বন্দরকে ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৭ সালে দ্বীপটি জয় করে হ্যালিকার্নেসাস এর মসোলাস কিন্তু পরে খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ সালে তা চলে যায় পারস্যের দখলে। অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এর হাতে পারস্যের কবল মুক্ত হয় রোড আইল্যান্ড।
খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকের শেষের দিকে রোডস আইল্যান্ড এবং মিশরের রাজা ১ম টলেমী মৈত্রী স্থাপন করে ম্যাকেডোনিয়ার রাজা ১ম অ্যান্টিগোনাস মোনোফ্থ্যালমাস এর বিরুদ্ধে। শত্রুদলের সাথে সন্ধি স্থাপনের অপরাধে খ্রিস্টপূর্ব ৩০৪ সালে অ্যান্টিগোনাস তার পুত্র ডেমিট্রিয়াসকে পাঠায় শাস্তি স্বরূপ রোডস শহর দখল করার উদ্দেশ্যে দ্বীপে আক্রমণ করার জন্য। ৪০০০ সৈন্য এবং বিপুল অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ডেমিট্রিয়াস দ্বীপে আক্রমণ চালায় এবং সেই যুদ্ধ চলে প্রায় একবছর যাবত। ৩০৫ সালে এই যুদ্ধে সহায়তা করার জন্যে টলেমীর প্রেরিত মিত্র বাহিনী রোডস আইল্যান্ডে পৌছায়। মিত্র বাহিনীর আগমনের ফলে অ্যান্টিগোনাস বাহিনী পিছু হটে এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত সকল অস্ত্র ও জিনিস পত্র ফেলে রেখে দ্বীপ ত্যাগ করে। রোডিয়ান বাহিনী এই যুদ্ধের জয় উদযাপনের জন্যে অ্যান্টিগোনাস বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র শস্ত্র বিক্রি করে দেয় এবং এর থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সূর্য দেবতা হেলিয়োস কে উদ্দেশ্য করে বিশাল এক ভাস্কর্য স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশাল এই ভাস্কর্যই হয়ে উঠে কলোসাস অব রোডস।
২০০০ বছর পর নির্মিত স্ট্যাচু অব লিবার্টি এবং কলোসাস অব রোডস উচ্চতার দিক দিয়ে যেমন সমান, তেমনি দুই স্থাপনার অন্তর্নিহিত অর্থও এক- পরাধীনতার শিকল ছেড়ে স্বাধীনতা লাভ। প্লিনি দ্য এলডার, একজন গ্রীক ইতিহাসবেত্তা যিনি কলোসাস নির্মিত হওয়ার পর বেশ কয়েক শতক জীবিত ছিলেন, তার মতে, কলোসাস নির্মাণ করতে সময় লেগে গিয়েছিল প্রায় এক যুগ এবং ভাস্কর্যটির নির্মাণ সম্পন্ন হয় খ্রিস্টপূর্ব ২৮০ সালে। রোডসের জনগণ ধরে নিয়েছিল যে বিশাল ভাস্কর্যের কারণে শহর গৌরবান্বিত, সেই ভাস্কর্যের কোন বিনাশ নেই, কখনই ধ্বংস হবেনা। কিন্তু জনগণের চিন্তার সাথে প্রকৃতি ততটা একমত ছিল না। সবাইকে ভুল প্রমাণিত করে ভূমিকম্পের কারণে ধসে পরে রোডস আইল্যান্ড এর গর্ব এই বিশাল মূর্তিটি।
কলোসাস অব রোডস এর স্থপতি ছিলেন চার্লস অব লিন্ডোস এবং তার উপর দায়িত্ব ছিল ভাস্কর্যটিকে সে সময়ের যে কোন স্থাপনার থেকে দ্বিগুণ উঁচু করে নির্মাণ করার। ভাস্কর্যের ভিত্তি ছিল সাদা মার্বেল পাথরের। মূর্তির মূল কাঠামো তৈরি হয়েছিল পাথরের উপর ব্রোঞ্জ এবং লোহার পাতের প্রলেপ দিয়ে। পিলন অব বাইজেন্টিয়াম বইয়ে পাওয়া যায় যে, বিশাল এই মূর্তি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ১৫ টন ব্রোঞ্জ এবং ৯ টন লোহা, যদিও পরিমাণটা বর্তমান যুগের স্থপতিদের কাছে সামান্যই বলে মনে হতে পারে। মূর্তিতে ব্যবহৃত ব্রোঞ্জের যোগান এসেছিল অপ্রচলিত উৎস থেকে – শত্রুদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত সরঞ্জাম। শত্রু দলের ৯তলা ভবনের সমান রণ তোরণ ছিল ব্রোঞ্জের আরেকটি উৎস। মূর্তির নির্মাণ কাজ যখন শেষ হল তখন এই বিশাল মূর্তিকে নিয়ে কাব্য রচিত হয়েছিল যা সংরক্ষিত আছে গ্রীক এনথলজিস অব পোয়েট্রি তে আর এই কবিতাকে ধরে নেয়া হয় কলোসাস কে উদ্দেশ্য করে লেখা আসল কাব্য।
কলোসাস অব রোডস এর বিশালতা ছিল অতিমানবীয় পর্যায়ের। কলোসাস এর উচ্চতা ছিল ১০৭ ফিট (৩০ মিটার) যা একে প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনায় পরিণত করেছে। মূর্তিটির থাইয়ের অংশ একাই ছিল ১১ ফিট লম্বা (৩ মিটার) চওড়া, পায়ের গোড়ালি ছিল লম্বায় ৫ ফিট (১.৫ মিটার)। কলোসাস অব রোডস দেখতে কেমন ছিল বা কোন অঙ্গ ভঙ্গিমায় এই ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছিল তা নিয়ে কারো কোন সঠিক ধারণা নেই। মধ্যযুগীয় চিত্রসমূহ থেকে শুধু একটা বিষয়ই নিশ্চিত করা যায় তা হল, ভাস্কর্যটি অবশ্যই পদদ্বয় সম্প্রসারিত করে বন্দরের প্রবেশমুখ জুড়ে দাঁড়িয়ে ছিল না। যদি তাই হত তাহলে পুরো নির্মাণটি বন্দরের প্রবেশমুখ বন্ধ হওয়ার কারণ হত।
বিশালাকার এই মূর্তি দেখতে কেমন ছিল তার কিছু ধারণা পাওয়া যায় সেই যুগের কিছু মুদ্রার গায়ে খোদাই করা চিত্র থেকে। সেই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী এবং গল্পকারদের ভাষ্য থেকে বিশালাকায় এবং অত্যন্ত সুন্দর এক মূর্তির বর্ণনা পাওয়া যায়। কালক্রমে যে বর্ণনা সকলের কাছে জানা তা হল- বস্ত্রবিহীন এক পুরুষমূর্তি, যার বাম কাঁধ অথবা বাহুতে জড়িয়ে আছে বস্ত্র, গর্বের সাথে ফিরে আছে সূর্যের দিকে, এক হাতে জ্বলন্ত মশাল আর আরেক হাতে আছে তীক্ষ্ণ বর্শা। অনেকের মতে, মূর্তির মাথায় ছিল সূচালো মুকুট, চোখের উপর হাত দিয়ে ফিরাচ্ছিল সূর্যের আলো, অথবা হাতটি ব্যবহার করা হয়েছিল মশাল ধরার কাজে, যে ভঙ্গিমা পরবর্তীতে দেয়া হয়েছিল স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে। যদিও আজ পর্যন্ত বিশালাকায় এই মূর্তির সত্যিকারের আকার এবং উপস্থিতি সম্পর্কে সঠিক কোন বিবৃতি পাওয়া যায়নি, তবুও পুরনো চিত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত ধারনার তুলনায় আধুনিক ধারণা কিছুটা হলেও তথ্যবহুল।
বিশালাকায় এই মূর্তি খ্রিস্টপূর্ব ২২৬ সালে ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়ার পূর্বে রোডস আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল প্রায় ৫৬ বছর ধরে। সেই ভূমিকম্পে শহরের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে যায় এবং মূর্তিটির হাঁটুর অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। কথিত আছে, মিশরের রাজা ২য় টলেমী ইউরোগেটস মূর্তিটি সংস্করণের জন্য রোডিয়ানদের অর্থ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু রোডিয়ানরা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। তারা ডেলফির ভবিষ্যৎবেত্তার শরণাপন্ন হয় এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে, সূর্য দেবতা হেলিওস কোন ভাবে মূর্তিটির কারণে বিরক্ত কিনা যার জন্য তিনি ভূমিকম্প দিয়ে সেটিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও মূর্তিটি ভেঙে গিয়ে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছিল, তারপরও সেই ভাঙ্গা মূর্তি দেখতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল এবং অবাক হয়েছিল দৃশ্যটি অবলোকন করে। প্লিনি দ্য এলডার এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন,
“ Even as it lies, it excites our wonder and admiration. Few men can clasp the thumb in their arms, and its fingers are larger than most statues. Where the limbs are broken asunder, vast caverns are seen large masses of rock, by the weight of which the artist steadied it while erecting it.”
৯০০ বছর পর্যন্ত বা খ্রিস্টপূর্ব ৬৫৪ সালে আরবের আক্রমণের আগ পর্যন্ত মূর্তিটি অস্পৃষ্ট ছিল। মূর্তির যে অংশগুলো বাকি ছিল, বলা হয়ে থাকে, সেই অংশ গুলো গলিয়ে মুদ্রা, যন্ত্রপাতি, অস্ত্র এবং হস্তশিল্পে পরিণত করা হয়েছিল। লিজেন্ড বলে, সিরিয়া থেকে আগত এক পুরনো জিনিসের ব্যাপারী ১০০০ উটের পীঠে করে মূর্তির বাকি অংশগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। অনেকে বিশ্বাস করতে চায় নি যে এই মূর্তির আসলেও কোন অস্তিত্ব ছিল কারণ অনেকেই বিশ্বাস করত যে, এত বিশাল মূর্তি নির্মাণ করতে যে প্রযুক্তির দরকার তা সেই যুগে ছিল না। যদিও, বর্তমানে গবেষণার ফলে রোডস বন্দর এবং কলোসাস নিয়ে বেশ কিছু তথ্য ও প্রমাণ বের হয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় যে, বিশাল মূর্তিটি সেই পর্বতের চুড়ায় অবস্থিত ছিল যে পর্বতে বর্তমানে একটি মধ্যযুগীয় দুর্গ দাঁড়িয়ে আছে। বিশেষজ্ঞরা কলোসাস অক্ষত থাকার সময়কার বেশ কিছু নকশা কাটা পাথর খুঁজে পেয়েছে। সেই পাথরগুলোই পরবর্তীতে একটি দুর্গ বানাতে ব্যবহার করা হয়েছিল যা রোডস আইল্যান্ড বন্দরের প্রবেশমুখে অবস্থিত। প্রচলিত আছে যে, দুর্গের পাথর গুলো সেই পাথর যা কলোসাস নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল।
zofran help with nausea
wellbutrin sr vs wellbutrin xr
lamisil pill – forcan buy online buy griseofulvin cheap
zyprexa brand name
semaglutide 14 mg pill – order semaglutide 14 mg generic cheap DDAVP