২০১১’র শেষের দিকে ভাইরাল হওয়া “Why This Kolavari Di’’ গানটার কথা মনে আছে? গানটার গায়কের কথা? ঐযে কালো করে খোঁচা খোঁচা দাড়ির রোগা-পটকা ছেলেটি। যে একই সাথে নায়ক, লেখক, ডিরেক্টর, প্রোডিউসার, প্লেব্যাক সিংগার (playback singer), স্ক্রিপ্ট রাইটার (script writer), লিরিকিস্ট (lyricist) । তাঁর অবশ্য আরেকটি পরিচয় আছে। সে সুপারস্টার রজনীকান্তের মেয়ে জামাই। নাম তাঁর “ধানুশ”।
‘Raanjhanaa’ হলো ধানুশের এখন পর্যন্ত করা সর্বশ্রেষ্ঠ মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেখতে সাদামাটা হলেও, অভিনয় প্রতিভার দিক দিয়ে যে সে কারও চেয়ে কম যায় না, তা আপনি এই মুভিটি দেখলেই বুঝতে পারবেন। মুভির সময়কাল ২ ঘণ্টা ১১ মিনিটের পুরো সময়টাই আপনি স্ক্রিনের দিকে মন্ত্রমুগ্ধ নজরে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য।

২০১৩ সালের জুন মাসের দিকে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে ধানুশ ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন সোনম কাপুর, অভয় দেওল, সারা ভাস্কর, মোঃ জিসান আইয়ুব প্রমুখ।
সোনম কাপুরকে অন্যান্য মুভির মত ‘শো-পিস’ হিসেবে না দেখে এখানে একজন সত্যিকার অভিনেত্রী হিসেবে দেখবেন। অন্তত অভিনয়ে কোনো খুঁত খুঁজে পাবেন না আশাকরি। আর অভয় দেওলের কথা তো নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।
মুভিটির ডিরেক্টর হলেন আনন্দ এল. রাই (Anand L. Rai) । এই ডিরেক্টরের আরও দু’টি মাস্টারপিস মুভি হলো, ‘Tanu Weds Manu’ এবং ‘Tanu Weds Manu Returns’। আপনি যদি এই দু’টি মুভি আগে দেখে থাকেন, তাহলে বুঝতে পারবেন এই ডিরেক্টরের কাছ থেকে কি পেতে পারেন।
তামিল এবং হিন্দি দুই ভাষায় মুক্তি পাওয়া এই মুভিটি প্রোডিউস করেছেন কৃষিকা লুল্লা (Krishika Lulla) এবং ডিরেক্টর আনন্দ এল. রাই স্বয়ং। বাজেট ছিল ২৫ কোটি রুপি। বক্স অফিস থেকে আয় করা হয়েছে ১৮০ কোটি রুপি। তারমানে বাজেটের প্রায় ৭ গুনেরও বেশি।

Source: Twitter
বলিউড মুভির প্রাণ হলো এর গান। এই মুভিটিও এর ব্যতিক্রম নয়। এই মুভির প্রতিটি গান আপনার মনে বাজবে। প্রতিটি গান শুনার পর আপনি গুনগুন করে গাইতে বাধ্য। ভাবছেন বাড়িয়ে বলছি? আসলে অস্কারজয়ী এ. আর. রহমানের ডিরেক্ট করা গান সম্পর্কে বলতে গেলে এথেকে কম করে বলা সম্ভব না। আমি সাধারণত হিন্দি মুভি দেখার সময় গানের অংশগুলি টেনে টেনে দেখি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ঘটল। টানলাম তো না ই, বরং একই গান রিউওয়াইন্ড করে দুই-তিন বার করে শুনলাম।
এই ছবির প্রতিটা ডায়লগ অন্যরকম। একটা থেকে আরেকটা বেশি ভাল লাগার মত। বাজি ধরে বলতে পারি, এমন গালভর্তি ডায়লগের সমাহার আপনি খুব বেশি মুভিতে পাবেন না।

Source: DNA India
কাহিনীর প্রথমের প্রেক্ষাপট মূলত বারানসির (Varanasi/Banaras)। ওখানের মন্দিরের পূজারীর ছেলে কুন্দন শঙ্কর। শিশু বয়সেই যে প্রেমে পড়ে অন্য ধর্মের মেয়ে জোয়য়া (zoya) হায়দারের। প্রথম দেখাতেই প্রেম। তারপর জোয়য়া’র বাড়ির সামনে সারাদিন ঘুরঘুর। নিজের স্কুলে ক্লাস না করে জোয়য়ার স্কুলের সামনে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকা। এভাবেই চলতে থাকে। শিশুকালের প্রেমের কথা কৈশোরে গিয়ে কুন্দন জোয়য়ার কাছে প্রকাশ করে। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর জোয়য়া মেনেও নেয়। কিন্তু জোয়য়ার বাড়ির লোকেরা সব জেনে যাওয়ার পর বেঁকে বসে এবং তাকে দিল্লী তে পড়তে পাঠিয়ে দেয়।
এদিকে দিন গড়িয়ে চলে। কুন্দন কিশোর থেকে যুবকে পরিণত হয়। সে হয়ে উঠে আরও লাগামছাড়া, আরও বেপরোয়া। যদিও অনেক বছর দেখা নেই, তবুও সে কিন্তু জোয়য়াকে ভুলেনি এতদিনেও। এদিকে কুন্দনের ছোটবেলার বান্ধবী ‘বিন্দিয়া’ আবার কুন্দনের প্রেমে মাতোয়ারা। কিন্তু কুন্দন তাকে একদমই পাত্তা দেয়না। একদিন খবর আসে জোয়য়া দিল্লী থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসছে অনেকদিন পর। খবর পেয়ে সে এবং তার বন্ধু ‘মুরারি’ যায় স্টেশনে তাকে স্বাগত জানাতে। কিন্তু গিয়ে সে যারপরনাই হতাশ হয়। কারণ কিশোর বয়সের প্রেমের কথা জোয়য়া ততদিনে পুরোপুরি ভুলে বসে আছে। একসময় জোয়য়ার মনে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয় আবার। কিন্তু এবার শুধু বন্ধু হিসেবে। কুন্দন জানতে পারে দিল্লী তে জোয়য়ার বয়ফ্রেন্ড আছে, যে তাকে দেখতে আসছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। হঠাৎ করে এক বিশাল ভুল বুঝাবুঝির কারণে ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা। যার ফলে জোয়য়া পুনরায় ফিরে যায় দিল্লী। তার পিছু নিয়ে কুন্দনও চলে যায় দিল্লী জহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটিতে এবং ঘটনাক্রমে জড়িয়ে পড়ে ছাত্ররাজনীতির সাথে।

‘Raanjhanaa’ শব্দটির বাংলা অর্থ হলো ‘প্রিয়তম/প্রিয়তমা’। একজন তার প্রিয়তম/প্রিয়তমার জন্য কতটুকু মরিয়া হতে পারে, মুভিটি দেখলে বুঝতে পারবেন। বুঝতে পারবেন, রাজনীতি এবং ক্ষমতা দখলের জন্য একজন রাজনীতিবিদ কতটুকু ভয়ংকর হতে পারে। যারা এটিকে নিছক এক প্রেম কাহিনী মনে করে এড়িয়ে যাবেন, তাদের জন্য একবুক আফসোস।
প্রথমবার মুভিটি দেখেছিলাম হাই কোয়ালিটির হলপ্রিন্টে। দেখতে কোনো সমস্যা হয়নি যদিও। প্রথম ১৫-২০ মিনিট দেখার পর আমি একটা ধারণা করে নিয়েছিলাম যে, কাহিনী এরপর কি টাইপের হতে পারে। সত্যি বলতে কি, চিরাচরিত বাংলা মুভির কাহিনীর মতই মনে হচ্ছিল আমার কাছে। তারপর হটাৎ করে আসল কাহিনী শুরু হলো। আমার সব জল্পনা-কল্পনা অকস্মাৎ ধূলিসাৎ হয়ে গেল। আর আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত ল্যাপটপের স্ক্রিনে দুচোখ আটকে রাখলাম। কিশোর-কিশোরী চরিত্রে ধানুশ-সোনমের অভিনয় দেখার মত। সাজগোজ, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি দেখে তাদের চেনে না এমন যে কেউ তাদের কিশোর-কিশোরী ভাবতে বাধ্য। সাধে কি আর সে বছরের ফিল্মফেয়ারে বেস্ট ডেবিও এওয়ার্ড ধানুশের হাতে গিয়েছে?
যাই হোক আর বেশি কিছু বলতে যাব না, নিজের অজান্তেই হয়তো স্পয়লার দিয়ে ফেলব। এতে আপনাদের মুভি দেখার আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে। মুভিটি যখন দেখবেন, সব আপনা আপনিই অনুভব করতে পারবেন। হ্যাপি ওয়াচিং।
generic dutasteride celecoxib 200mg for sale order ondansetron
levaquin 500mg sale levaquin 500mg generic